somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৬১তম জন্মদিন

১৩ ই নভেম্বর, ২০০৯ রাত ৩:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলা কথা সাহিত্যের ভুবনে জীবিত কিংবদ›তী হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ৭০ দশকের গোঁড়ার দিকে প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশিত হওয়ার পরেই বাংলাদেশের সাহিত্যানুরাগী পাঠক, লেখক, সমালোচক এবং প্রকাশকদের মধ্যে হইচই পড়ে যায়। প্রখ্যাত বাংলা ভাষাশাস্্র পন্ডিত আহমদ শরীফ এই গ্রন্থটির ভুমিকাতে দ্ব্যর্থহীন ভাবে বাংলা সাহিত্যের আকাশে হুমায়ূন আহমেদ নামক এক উজ্জল নক্ষত্রের ঘোষনা করেন। ‘শঙ্খনীল কারাগার’কে প্রয়াত কবি শামসুর রাহমান বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস হিসাবে গণ্য করেছেন।

বিটিভিতে প্রচারিত তাঁর ধারাবাহিক নাটক ‘বহুব্রীহি’তে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নের তাগিদ এবং একটি টিয়া পাখির মুখে ‘তুই রাজাকার’ সংলাপ দিয়ে সারা দেশবাসীর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রচন্ডভাবে পূনরূজ্জীবিত করেছিলেন। টেলিভিশনে একের পর এক দর্শক নন্দিত নাটক রচনার পর হুমায়ূন আহমেদ ১৯৯০ এর গোড়ার দিকে চলচ্চিত্র নির্মান শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক তারই উপন্যাস ‘আগুনের পরশমনি’ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মান করে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরুষ্কার। তারপর একে একে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ‘দুই দুয়ারী’ ‘চন্দ্রকথা’ ‘শ্যামল ছায়া’ ‘আমার আছে জল’ ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’ এর মতো অসম্ভব জনপ্রিয় ছবি নির্মান করে চলেছেন।

হুমায়ূন আহমেদ এ পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক গল্পগ্রন্থ এবং উপন্যাস রচনা করেছেন। তিনি একাধারে উপন্যাস, ছোট গল্প, গান এবং কবিতা লেখেন। টেলিভিশন নাটক এবং চলচ্চিত্রের কাহিনী ও সংলাপ রচনার পাশাপাশি এইডস, কলেরা ও ডায়রিয়া প্রতিরোধ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক ডকুমেন্টারির সংলাপ রচনা করে অভুতপুর্ব সাড়া জাগিয়েছেন । প্রায় হঠাৎ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ণ বিভাগের অধ্যাপনা ছেড়ে দিয়ে, তিনি এখন পুরোদমে লেখালেখি, চলচ্চিত্র ও নাটক নির্মানে ব্যস্ত সময় কাটান।

‘গল্প-সমৃদ্ধি’ তাঁর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য। তাঁর গল্প-উপন্যাস মুলত: সংলাপ প্রধান। পরিমিত বর্ণনায় সামান্য পরিসরে, কয়েকটি মাত্র বাক্যের মাধ্যমে চরিত্র চিত্রণের অদৃষ্টপুর্ব প্রতিভা তাঁর রয়েছে। সকল রচনাতেই একটি প্রগাঢ় শুভবোধ ক্রিয়াশীল থাকে; ফলে ‘ভিলেইন’ চরিত্রও তাঁর লেখনীতে লাভ করে দরদী রূপায়ণ। এছাড়াও তিনি অনায়াসে এবং বিশ্বাসযোগ্য ভাবে অতিবাস্তব ঘটনাবলীর অবতারনা করেন, যাকে একরূপ যাদু বাস্তবতা হিসাবে গণ্য করা হয়। তিনি নিজেকে তাঁরই সৃষ্ট চরিত্র ‘হিমু’ এবং ‘মিসির আলী’র মাঝে খুঁজে পান।

বাংলা একাডেমী’র বই মেলাসহ পৃথিবীর যেখানেই বাংলা বইয়ের মেলা সেখানেই তাঁর বই সর্বাধিক বিক্রি হয়। পশ্চিম বাংলার পাঠক, দর্শকদের কাছেও তিনি অসম্ভব জনপ্রিয়। সা¤প্রতিক সময়ে তাঁর রচিত বিভিন্ন বই ইংরেজী ভাষায় অনুবাদ হচেছ। ‘গৌড়ীপুর জংশন’ উপন্যাসটি এ পর্যন্ত সাতটি বিদেশী ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

ঢাকা’র ধানমন্ডীতে নির্মিত ‘দখিন হাওয়া’ এবং ঢাকার অদূরে তাঁরই নন্দন কানন ‘নুহাশ পল্লীতে’ এই স্বল্পবাক, প্রচার বিমুখ লেখক এক ধরনের অন্তরাল জীবন-যাপন করেন। বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরষ্কার একুশে পদকসহ অসংখ্য পুরষ্কারে তিনি ভূঁষিত হয়েছেন। দেশ বরেন্য এই লেখককে তাঁর ৬১তম জন্মদিনে জানাচিছ প্রানঢালা শুভেচছা।

লেখক: গবেষক, ইউনিভার্সিটি অব নিউক্যাসল, অষ্ট্রেলিয়া।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×