বাংলা কথা সাহিত্যের ভুবনে জীবিত কিংবদ›তী হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ৭০ দশকের গোঁড়ার দিকে প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশিত হওয়ার পরেই বাংলাদেশের সাহিত্যানুরাগী পাঠক, লেখক, সমালোচক এবং প্রকাশকদের মধ্যে হইচই পড়ে যায়। প্রখ্যাত বাংলা ভাষাশাস্্র পন্ডিত আহমদ শরীফ এই গ্রন্থটির ভুমিকাতে দ্ব্যর্থহীন ভাবে বাংলা সাহিত্যের আকাশে হুমায়ূন আহমেদ নামক এক উজ্জল নক্ষত্রের ঘোষনা করেন। ‘শঙ্খনীল কারাগার’কে প্রয়াত কবি শামসুর রাহমান বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস হিসাবে গণ্য করেছেন।
বিটিভিতে প্রচারিত তাঁর ধারাবাহিক নাটক ‘বহুব্রীহি’তে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নের তাগিদ এবং একটি টিয়া পাখির মুখে ‘তুই রাজাকার’ সংলাপ দিয়ে সারা দেশবাসীর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রচন্ডভাবে পূনরূজ্জীবিত করেছিলেন। টেলিভিশনে একের পর এক দর্শক নন্দিত নাটক রচনার পর হুমায়ূন আহমেদ ১৯৯০ এর গোড়ার দিকে চলচ্চিত্র নির্মান শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক তারই উপন্যাস ‘আগুনের পরশমনি’ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মান করে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরুষ্কার। তারপর একে একে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ‘দুই দুয়ারী’ ‘চন্দ্রকথা’ ‘শ্যামল ছায়া’ ‘আমার আছে জল’ ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’ এর মতো অসম্ভব জনপ্রিয় ছবি নির্মান করে চলেছেন।
হুমায়ূন আহমেদ এ পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক গল্পগ্রন্থ এবং উপন্যাস রচনা করেছেন। তিনি একাধারে উপন্যাস, ছোট গল্প, গান এবং কবিতা লেখেন। টেলিভিশন নাটক এবং চলচ্চিত্রের কাহিনী ও সংলাপ রচনার পাশাপাশি এইডস, কলেরা ও ডায়রিয়া প্রতিরোধ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক ডকুমেন্টারির সংলাপ রচনা করে অভুতপুর্ব সাড়া জাগিয়েছেন । প্রায় হঠাৎ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ণ বিভাগের অধ্যাপনা ছেড়ে দিয়ে, তিনি এখন পুরোদমে লেখালেখি, চলচ্চিত্র ও নাটক নির্মানে ব্যস্ত সময় কাটান।
‘গল্প-সমৃদ্ধি’ তাঁর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য। তাঁর গল্প-উপন্যাস মুলত: সংলাপ প্রধান। পরিমিত বর্ণনায় সামান্য পরিসরে, কয়েকটি মাত্র বাক্যের মাধ্যমে চরিত্র চিত্রণের অদৃষ্টপুর্ব প্রতিভা তাঁর রয়েছে। সকল রচনাতেই একটি প্রগাঢ় শুভবোধ ক্রিয়াশীল থাকে; ফলে ‘ভিলেইন’ চরিত্রও তাঁর লেখনীতে লাভ করে দরদী রূপায়ণ। এছাড়াও তিনি অনায়াসে এবং বিশ্বাসযোগ্য ভাবে অতিবাস্তব ঘটনাবলীর অবতারনা করেন, যাকে একরূপ যাদু বাস্তবতা হিসাবে গণ্য করা হয়। তিনি নিজেকে তাঁরই সৃষ্ট চরিত্র ‘হিমু’ এবং ‘মিসির আলী’র মাঝে খুঁজে পান।
বাংলা একাডেমী’র বই মেলাসহ পৃথিবীর যেখানেই বাংলা বইয়ের মেলা সেখানেই তাঁর বই সর্বাধিক বিক্রি হয়। পশ্চিম বাংলার পাঠক, দর্শকদের কাছেও তিনি অসম্ভব জনপ্রিয়। সা¤প্রতিক সময়ে তাঁর রচিত বিভিন্ন বই ইংরেজী ভাষায় অনুবাদ হচেছ। ‘গৌড়ীপুর জংশন’ উপন্যাসটি এ পর্যন্ত সাতটি বিদেশী ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
ঢাকা’র ধানমন্ডীতে নির্মিত ‘দখিন হাওয়া’ এবং ঢাকার অদূরে তাঁরই নন্দন কানন ‘নুহাশ পল্লীতে’ এই স্বল্পবাক, প্রচার বিমুখ লেখক এক ধরনের অন্তরাল জীবন-যাপন করেন। বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরষ্কার একুশে পদকসহ অসংখ্য পুরষ্কারে তিনি ভূঁষিত হয়েছেন। দেশ বরেন্য এই লেখককে তাঁর ৬১তম জন্মদিনে জানাচিছ প্রানঢালা শুভেচছা।
লেখক: গবেষক, ইউনিভার্সিটি অব নিউক্যাসল, অষ্ট্রেলিয়া।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



