
এক সময় ৮৭ ভাগ মানুষের ধর্ম ইসলাম এ দেশের মিডিয়ায় ছিল খুবই অবহেলিত। কী এক অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা যেন জারি করা ছিল ইসলাম ও মুসলমান সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয়ের উপর। একবার একটি মোবাইল ফোনের বিজ্ঞাপনে ‘মাশাআল্লাহ’ শব্দটিও দু’একবার প্রচারের পর কেটে দিতে হয়েছিল। একটি বেসরকারি বিমান সংস্থা সফরের দোয়া সুবহানাল্ লাজি সাখখরা লানা হাযা... পড়তে মানা করে দিয়েছিল কেবিন ক্রুদের। যেটি বাংলাদেশ বিমানসহ দেশের প্রতিটি প্রাইভেট বিমান কোম্পানি পড়ে থাকে। সে কোম্পানি অবশ্য লোকসান দিতে দিতে এখন ব্যবসায় লালবাতি জ্বালিয়ে চলে গেছে। আলেম উলামারা কেবল এক সময় অধিবেশনের শুরুতে তিলাওয়াত ইত্যাদিতেই ছিলেন। ইফতার, সাহরি ও নিছক বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানেই তাদের দেখা যেত। বর্তমানে আল্লাহর রহমতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মুগ্ধ হয়ে মানুষ তাদের দেখে টিভির পর্দায়। সারা বিশ্বে পবিত্র কোরআন হিফজ ও তিলাওয়াত একটি ইসলামি সংস্কৃতি। বিশ্বের প্রায় দু’শ কোটি মুসলমান এটি পালন ও উৎযাপন করেন। রমজান মাস এর ভর মওসুম। পৃথিবীর দেশে দেশে লক্ষ কোটি কিয়ামুল্লাইল, কোরআন খতম, তারাবি ও তাহাজ্জুদের জামাতে অসংখ্য অগণিত বার কোরআন পাঠ হয়। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মুসলিম দেশ বাংলাদেশ এখন কোরআনের অনন্য বাগান। গত ২৫ বছর ধরে বাংলাদেশে হিফজুল কোরআন শিক্ষা এতই উৎকর্ষ লাভ করেছে যে মক্কা, মদীনা, মিসর, জর্ডান, কাতার, কুয়েতসহ আরব জাহানের নানা জায়গায় অনুষ্ঠিত কোরআনের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ ১ম ২য় ও ৩য় স্থান অধিকার করছে ধারাবাহিকভাবে। এর মধ্যে প্রথম হওয়ার পরিমাণই সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা বিশ্বের বড় বড় সব হোটেল, সম্মেলন কেন্দ্র, প্রাসাদ ও অনুষ্ঠানস্থলে যখন পতপত করে ওড়ে তখন বাংলাদেশের আলেম উলামা পীর মাশায়েখ হাফেজ কারী ও ধর্মপ্রাণ নাগরিকদের বুক গর্বে ফুলে ওঠে। স্বাধীনতা তাদের কত বড় সম্মান, স্বকীয়তা ও আত্মপরিচয় দান করেছে, তা ভেবে তারা আনন্দিত হন। মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন। কৃতজ্ঞতা ভরে স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের। স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিদের। যদিও বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশ অনুল্লেখযোগ্যই রয়ে গেছে। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে নিত্য তামা অথবা ব্রোঞ্জ জয় করা দেশ কিছু একটা করে দেখালেই জাতি স্পন্দিত হয়ে ওঠে। বিমানবন্দরে সংবর্ধনা, পুরস্কার, গাড়ি, ফ্ল্যাট ইত্যাদির ধারা শুরু হয়। কিন্তু ইসলামি সংস্কৃতিতে একটানা ২৫ বছর ধরে বাংলাদেশের হাফেজ ছেলেরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলেও এদের নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যথা নেই। এরা অবশ্য দুনিয়ায় কোন প্রশংসা, প্রাপ্তি বা পুরস্কারের জন্য লালায়িতও নয়। এরা শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কোরআনচর্চা করে থাকে।

কী সুন্দর দৃশ্য। আট থেকে বার বছরের ফুলের মত হাফেজ শিশুরা যখন পবিত্র কালামে পাক পাঠ করে তখন তাদের দেখে মনে হয় বেহেশতের পাখিরা পৃথিবীতে নেমে এসেছে। সারাদেশে প্রাইভেট টিভি চ্যানেলগুলোর গড়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রোগ্রামই হচ্ছে এখন ইসলামিক জিনিয়াস, ট্যালেন্ট হান্ট, হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা, ইসলামি ঐতিহ্য মন্ডিত সিরিয়াল ইত্যাদি। সিরিয়াস দর্শকরা হৃদয়ের প্রশান্তির জন্য এসব প্রোগ্রামের পুরোটাই গভীর মনোনিবেশসহ নিয়মিত দেখে থাকেন। পবিত্র রমজানে এর দর্শক আরো বেড়ে যায়। পাশাপাশি সাহরি, ইফতার, তারাবি, জুমা ইত্যাদি নির্ভর অনুষ্ঠান ছাড়াও দীনি প্রশ্নোত্তর, ইসলামিক তথ্য ও জ্ঞান বিষয়ক ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান দেশের সকল প্রাইভেট চ্যানেলে দিন দিনই জনপ্রিয় হচ্ছে। এসবই বাংলাদেশের শতকরা ৮৭ ভাগ মানুষের স্বাভাবিক জীবনের দাবি। গুটিকয় নাস্তিক (যারা কোন ধর্মেই বিশ্বাস করে না), মুরতাদ (যারা মুসলমানের ঘরে জন্ম নিয়েও ইসলামকে অপছন্দ করে অধর্মকে গ্রহণ করেছে), বিধর্মী (যারা সাম্প্রদায়িক মনোভাব সম্পন্ন অমুসলিম) কেবল এ অবস্থাটি সহ্য করতে পারছে না। তারা সুযোগ পেলেই ইসলাম ও মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকার ছিনিয়ে নিতে চাইছে। শতকরা ৮৭ ভাগ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানছে। নানারকম অধর্ম ও অপসংস্কৃতি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের উপর চাপিয়ে দিতে চাইছে। ভাঁওতাবাজির মাধ্যমে ভবিষ্যত প্রজন্মকে অমুসলিম ধ্যান ধারণায় গড়ে তোলার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। এ যেন এক আগ্রাসন। জটিল আকার ধারণ করা এক যুদ্ধ।
বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা তার সংগ্রামী জীবনের অভিজ্ঞতায় বাম নাস্তিকদের সাহচর্য যেমন পেয়েছেন, ধর্মপ্রাণ মানুষ ও তাদের আস্থাভাজন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পথপ্রদর্শক আলেম উলামা পীর মাশায়েখ ও ধর্মীয় নেতৃবর্গের সাথেও তার পাঁচ প্রজন্মের ওঠা বসা। সবদিক বিবেচনায় তিনি কওমী মাদরাসার সর্বোচ্চ সনদের মান ও স্বীকৃতি ঘোষণা করেছেন। যার সুপ্রভাব দেশব্যাপী স্পষ্ট। তিনি পাঠ্যসূচিতে নাস্তিক, মুরতাদ ও ধর্মবিদ্বেষীদের আরোপিত মারাত্মক সাম্প্রদায়িকতা, অসঙ্গত পাঠ্য বিষয়াদি দূরীভূত করে একে তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে এনে জাতির নিকট প্রশংসিত ও চির কৃতজ্ঞভাজন হয়েছেন। আর ৮৭ ভাগ মুসলমানের পাঠ্যসূচিতে এত জঘন্যতা প্রবেশ করিয়ে কুচক্রী মহল লজ্জিত বা অনুতপ্ত তো নয়ই বরং তারা চোরের মার বড় গলার মতই চিৎকার চেঁচামেচি করে চলেছে। প্রধানমন্ত্রীকেই বরং তারা রীতিমত গালমন্দ করছে। যদিও তাদের পাল্টা বিচারের সম্মুখীন হওয়ার কথা ছিল। শিক্ষিত লোকদের উচিত, পাঠ্যসূচির গোটা বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দেখা। পরিবর্তন ও সংশোধনের আগে ও পরের পূর্ণ বিবরণটি জেনে রাখা। ধর্মপ্রাণ মানুষ আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ সব দলেই আছেন। ইসলামী দলগুলো তো ধর্মপ্রাণ লোকজনের দ্বারাই গঠিত। তারা যখন মুসলমান নামধারী কিছু লোককে দেখেন ইসলামের চরম বিরোধিতা করতে, তখন খুবই কষ্ট পান। বুদ্ধিজীবী পরিচয়ে কিছু লোকও এদেশে আছেন যারা মূলত ললিতকলা কিংবা গান নাটক অভিনয় দালালি বা বিজ্ঞাপন ব্যবসায়ী। কিছু আছেন কোন যোগ্যতা বা দক্ষতা নাই কিন্তু সংস্কৃতি জগতের তারাই সর্দার। তারা আবার সেরা বুদ্ধিজীবীও। সারা বিশ্বে বুদ্ধিজীবী কথাটির কী অর্থ আর বাংলাদেশে কী অর্থ জনগণ সে পার্থক্যটাই ধরতে পারছে না। ইসলাম ও মুসলমানের কোন প্রসঙ্গ এলেই এসব তথাকথিত বুদ্ধিজীবী তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন। সুযোগ পেলেই ইসলাম ও মুসলমানের যে কোন নিদর্শনকে ধোলাই করে ছাড়েন। কিছু বুদ্ধিজীবী আছেন যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, সাংবাদিক, কলামিস্ট বা পেশাজীবী। কিন্তু ইসলামবিদ্বেষে ভরপুর। পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাদের ক্রোধ, ক্ষোভ আর বিদ্বেষ। চেহারা সুরত দেখেই বোঝা যায় মন ও মননে অস্বাভাবিক কিছু ধারণ করে আছেন। মনে শান্তি নেই। শোনা যায়, চরিত্র ও নৈতিকতার দিকও দুর্বল। কথাবার্তাও অসঙ্গতিপূর্ণ। লেখা লিখেন ভাঁওতাবাজের মত। মিথ্যা গল্প, তথ্য ও আবেগ মিশিয়ে স্বার্থবাদী লেখা লিখেন। কোন্ শক্তি বলে আবার তাদের একই লেখা একাধিক কাগজে ছাপা হয়। মনে হয় কারো ইচ্ছায় তৈরি অর্ডারি লেখা সিন্ডিকেটেড রূপে মিডিয়ায় এসেছে। এর মিথ্যা ও ভুল ধরিয়ে দিয়ে পাল্টা লেখা ওসব মিডিয়া আর ছাপে না। ওসব লেখার মূল প্রেরণা দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মকে ইসলাম থেকে দূরে সরানো। নাস্তিক বানানো। নৈতিক ও সামাজিক শৃংখলা থেকে বিমুখ করে লাগামহীন পশুবাদের দিকে ধাবিত করা।

হেফাজতে ইসলামের কার্যক্রম, কওমী সনদের স্বীকৃতি, সুপ্রিম কোর্টের সম্মুখ থেকে গ্রিকদেবীর মূর্তি অপসারণ ইত্যাদি প্রসঙ্গ নিয়ে প্রাইভেট চ্যানেলগুলো ইদানীং খুবই ব্যস্ত। যেসব আলেমের জীবন সংগ্রাম তাদের কাছে কোন বিষয় নয়। যাদের সুখ দুঃখ সাফল্য ব্যর্থতা এ দেশের মিডিয়ার আলোচ্য বিষয় নয়। কোটি কোটি মানুষের সাথে সম্পৃক্ত ও জনপ্রিয় এসব আলেম উলামা পীর মাশায়েখের কোন পজেটিভ নিউজ যাদের মিডিয়ায় কোন দিন স্থান পায়নি। এক হেফাজতের উত্থানে এবং প্রধানমন্ত্রীর মনোযোগের পাত্র হওয়ায় এরা হয়ে গেছেন মিডিয়ার নিত্যদিনের আলোচ্য। কিছু মিডিয়ার অবিচার এখনো মানুষের স্মরণে আসে। কী জঘন্য চেহারা আর নোংরা ভাষায়ই না তারা নিরীহ আলেম সমাজ ও ছাত্রজনতার প্রতি বিষোদগার করেছে। রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, বায়তুল মোকাররম ও শাপলা চত্বরে ৫ মে ২০১৩ যে ক’জন ধর্মপ্রাণ মানুষকে হত্যা করা হয়, যাদের লাশ নিয়ে শাপলার সমাবেশস্থলে হেফাজত রাত পর্যন্ত রোদন করেছিল, এরপর গভীর রাতে আরো কিছু লাশ যখন রাজপথে পড়ে গেল তখন এনিয়ে মিডিয়ার প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল? কেমন ছিল দায়িত্বশীলদের ভাষা ভাব ও বক্তব্য? যারা শত শত বছর কোরআন রক্ষা, মুখস্থ ও চর্চা করার জন্য নিবেদিত তাদেরই কোরআন পোড়ানোর অপবাদ দিয়ে বছরের পর বছর যখন গালমন্দ করা হয় তখন কী ছিল মিডিয়ার ভূমিকা? সত্য উদঘাটন যদি মিডিয়ার কাজ হয় তাহলে এ দায়িত্ব কি আমাদের মিডিয়া পালন করেছে? ইসলাম ও ইসলামি ব্যক্তিত্ব যে মিডিয়ায় চির অপাংক্তেয় সে মিডিয়ায় এখন কিছু আলেম মুফতি নেতা ও বুদ্ধিজীবীকে যত্ম করে ডেকে নেয়া হচ্ছে। কারণ গতানুগতিক টক শো মানুষ আর দেখে না। তারা বার্নিং ইস্যুতে দুই পক্ষের বিতর্ক শুনতে চায়। চিরায়ত বাংলার ধর্মীয় বাহাস, কবির লড়াই ও শরীয়ত মারফত বিতর্কের মত। যদিও আলেমরা নিয়ম করে টিভি বিতর্ক দেখার লোক নন কিন্তু সোশাল মিডিয়ার কল্যাণে সারা দুনিয়ায় ইসলামপন্থীরা এসব বিতর্ক বার বার দেখার সুযোগ পায়। ছাত্র-তরুণ ও মা-বোনেরা বিতর্কে আলেম উলামাদের যুক্তি শুনে জানতে ও শিখতে চেষ্টা করে তাদের দীনি ভাবনা ও মতাদর্শটুকু। আর দেশবাসী কৌতূহল ভরে দেখে ইসলাম বিদ্বেষী মিডিয়াকর্মী, উপস্থাপক, বুদ্ধিজীবী ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের অসার বক্তব্য, যুক্তিহীন গলাবাজি, মূঢ়তা, মূর্খতা ও বিদ্বেষপূর্ণ হস্তপদ সঞ্চালন। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ অধ্যাপক, পালের গোদা গবেষক, হোতা মার্কা সাংবাদিক ও ঢেড়াপেটানো বুদ্ধিজীবীদের সম্মিলিত হুমকি ধামকি, মুখ ভ্যাংচানি, অপ্রাসঙ্গিক হঠকারি বিষয় উস্থাপন, অবান্তর অপবাদ, সাজানো ও সমন্বিত আক্রমণ উপেক্ষা করে একজন নিরীহ মুফতি মাওলানা বা ইসলামী সংগঠক যে সহজ সরল যুক্তি উপস্থাপন ও বক্তব্য পেশ করছেন তা দেখার মত। দেশের মানুষ এত বছর পর যেন তাদের প্রিয়জনদের টিভিতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছে। জননন্দিত বিষয় ও বক্তব্য সরলমনা ও অনভ্যস্ত আলেমদের মুখ থেকে উচ্চারিত হতে শুনে তওহীদী জনতা আনন্দিত। তারা আরো বেশি খুশি তথাকথিত নামীদামী জ্ঞানীগুণী ও মহা বুদ্ধিজীবীদের অন্যায় আস্ফালন আর নির্মম পরাজয় দেখে। যারা যুক্তির চেয়ে শক্তির পথকেই বেশি পছন্দ করেন। কথায় হেরে গিয়ে জামার হাতা গোটান। আলেমদের জবাব টুকু শোনার আগেই তারা অধৈর্য হয়ে তার কথায় বাধ সাধেন। কথায় ডালপালা বের করে অন্য প্রসঙ্গে চলে যান। খুব আকর্ষণীয় বক্তব্যের সময় উপস্থাপক কৌশলে অন্য কথা জুড়ে দেন। তাছাড়া, ‘একটি বিরতি নিতে হচ্ছে’ অস্ত্র তো চ্যানেলগুলোতে আছেই। এটির যথাযথ ব্যবহারও কেউ কেউ করেন চতুর পক্ষপাতিত্বের সাথে।
এ সময়ের আলোচিত টকশো সৈনিকদের মধ্যে হেফাজত নেতা মুফতি ফয়জুল্লাহ, মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন, মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা হুমায়ুন আইয়ুব উল্লেখযোগ্য। তারা তাবড় তাবড় ব্যক্তির সাথে টকশোতে যোগ দিচ্ছেন। একজন গিয়ে বসছেন তিন চারজনের মোকাবেলায়। ভাবতে আশ্চর্য লাগে, কওমী মাদরাসায় কেমন লোক তৈরি হয়, তা কি এরা এসব বিতর্কে বসেও টের পান না। নাতির বয়সী তরুণ আলেমদের মুখোমুখি হয়ে তারা ঘেমে নেয়ে উঠেন।
কওমী মাদরাসায় অতীতে ‘মুনাযারা’ নামক একটি বিষয় বাধ্যতামূলক ছিল। ইহুদী, খৃস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, নাস্তিকতা, যুক্তিবাদ, প্রকৃতিবাদ, সংশয়বাদ ইত্যাদি নিয়ে তুলনামূলক পড়াশোনা ও বিতর্ক আয়োজনের জন্য। কওমী আলেমরা ষাটের দশকেও কমিউনিজম, পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্র, সাম্রাজ্যবাদ ইত্যাদি বিষয়ে মাদরাসায় বিতর্ক অনুষ্ঠান করতেন। বিতার্কিক আলেমদের বলা হতো মুনাযের বা তর্কবাগিশ। ইদানীং এ শাস্ত্র ও অনুশীলনটি কিছুটা দুর্বল হয়ে গেলেও বর্তমানে নানা বিতর্কে আবারও আলেমদের যুক্তি বক্তব্য উপস্থাপন ও কথার পিঠে কথার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। টিভি টকশোতে অংশগ্রহণের যোগ্য আলেম তৈরির জন্য বহু মাদরাসায় প্রশিক্ষণ কোর্স শুরু হয়েছে। টিভি বিতর্কে যাওয়া আলেমরা নিজেরাও অনেকের সাথে কথা বলে, পড়া শোনা করে ও নিয়মনীতি জেনে এখন স্টুডিওতে যাচ্ছেন। তারা শত উস্কানিতেও রেগে না গিয়ে ঠান্ডা মাথায় প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করার কৌশল ভালই রপ্ত করে নিয়েছেন।
গত সপ্তাহে একজন বিশাল বুদ্ধিজীবী একজন আলেমকে প্রশ্ন করলেন, মূর্তি ও ভাষ্কর্যের মধ্যে যে পার্থক্য আছে সেটা কি আপনার জানা আছে? মাওলানা সাহেব রেগে না গিয়ে বললেন, ঢাকা ও কলকাতার যে কোন বাংলা অভিধান খুলে আপনি দেখে নিতে পারেন কোন পার্থক্য আছে কিনা। আমি বললে তো সেটা ঠিক না-ও হতে পারে। ডিকশনারিতে তো মূর্তি ও ভাস্কর্য একই অর্থে লেখা হয়েছে। একজন বুদ্ধিজীবী বললেন, কওমী মাদরাসায় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় না কেন? জবাবে মাওলানা সাহেব বললেন, বাংলাদেশের কোন্ আইনে আছে যে মাদরাসায় জাতীয় সঙ্গীত গাইতে হবে? ১৯৭৮ সালের জাতীয় সঙ্গীত আইন কি আপনি ভাল করে পড়েছেন? যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান ইত্যাদিতে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় না সে কারণেই মাদরাসায় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় না। এটি ব্রিটিশ ও পাকিস্তানী আমলেও গাওয়া হয়নি। তখন আর কথা না বাড়িয়ে বুদ্ধিজীবী ও তার দোহারেরা কথার মোড় ঘুরালেন, যদিও রাগে গোস্বায় তারা গর গর করছিলেন। গ্রিক দেবী বিষয়ে এক অনুষ্ঠানের নামই দেয়া হয় ‘মা তোর বদনখানি মলিন হলে’। চ্যানেলটির লোকজন গ্রিকদেবী থেমিসকে তাদের মা বলে মেনে নিয়ে তার অপসারণকে মায়ের বদনখানি মলিন হওয়া ভেবে তারা নয়ন জলে ভাসছেন বলে ধরে নিয়েছিলেন। অথচ এ নিয়ে অতিথিদের দু’জনের একজনও কোন আপত্তি করলেন না। জাতীয় সঙ্গীতের এই মা তো হচ্ছেন বাংলা মা, বর্তমানে বাংলাদেশ। গ্রিক দেবী থেমিস কবে আবার বাংলাদেশের মানুষের মা হলেন? এত স্থূল ও হাস্যকর বিষয়ও যখন আমাদের গুণীসমাজকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয়, তখন দেশবাসী তাদের উপর ভরসা রাখবে কেমন করে? এর চেয়ে বরং নবাগত আলেম ও মুফতিদের বক্তব্য যুক্তি ও উপস্থাপন, তা যত ¤্রয়িমান ও সাদামাটাই হোক দেশবাসীর কাছে তাই ভাল লাগছে। হাজার ঘৃণা, বিদ্বেষ, অবমূল্যায়ন, অপপ্রচার ও বিমাতাসূলভ আচরণ সত্তে¡ও জনপ্রিয় দেশপ্রেমিক ইসলামপন্থীরা উঠে আসছেন। এদের সরলতা, সততা ও নিষ্ঠার সামনে বিরোধীরা পরাজিত হবেই। এদের ভালোবাসা শুভকামনা, যুক্তি, অহিংস কর্মপন্থা ও রাতদিন শত্রু বন্ধু নির্বিশেষে সকলের হেদায়েতের আন্তরিক দোয়ার বৃত্ত থেকে ইসলাম বিদ্বেষীরা পালাবার পথও পাবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১৭ রাত ২:৩৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




