গতোকাল রাত সাড়ে এগারটায় ফোন পেলাম। একটি আয়োজনে প্রায় ১০০ বেশী মানুষের খাবার বেঁচে গেছে! আমাদের সাথে তারা যোগাযোগ করেছে খাবারগুলো সংগ্রহ করা যায় কিনা! আমরা ফোন পাবার পর আরো ৩ট অর্গানাইজেশনের সাথে যোগাযোগ করলাম। তাদের কোন টীম পাঠাতে পারবে কিনা জানতে।
একটি সংস্থার লোকজন কুমিল্লা। তারা নিতে পারছে না। অন্য একটি সংগঠনের একটি টিম ব্যস্ত। অন্য ভলান্টিয়াররা এভেইলএবল না। তাছাড়া রাত বাজে ১২টা। ওয়েদার খারাপ।
বুলবুল এর প্রভাবে রাত নেমেছে আগেই আজ। দিনভর টিপটিপে বৃষ্টি। কেউ নেই আশেপাশে।
তারপর জানালাম আরো একজনকে। তারা সময় নিলো।
রাত বাজে ১২-১৫, জানলাম তারাও পারছে না!
তারপরই আমরা ঘুড়ি থেকে প্রথমবারের মতোন প্রস্তুতি নিলাম খাবার সংগ্রহের জন্য। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অনেকেই আমরা এই কাজটি করি। কোন অনুষ্ঠান/আয়োজনের খাবার বেঁচে গেলে, তা সংগ্রহ করি এবং সংরক্ষণ করে পরবর্তীতে দুস্থ অসহায় শিশু অথবা আর্তজনের মাঝে বিলিয়ে দেই।
আমি কবি অয়ন আবদুল্লাহকে ফোন দিলাম।
সে ফোন ধরে না।
পরে ফোন দিলাম তুষারকে। তাকে রেডি হতে বলে উবারে কল দিয়ে গাড়ি নিলাম।
রাস্তাঘাট খালি। আমরা দ্রুতই এগুতে থাকলাম। আমরা সূত্রাপুর থানার সামনে পৌঁছলাম পৌনে একটায়। সেখানে অপেক্ষা করছিলো ফাহিম ও দিপ। দেরি না করে দুটি ডেকচি ও ২টি ব্যাগে খাবারগুলো রাখা হলো। একেবারে গরম বিরিয়ানি!
চারপাশ বিরিয়ানির গন্ধে মৌ মৌ!
আমি ফিরে আসার জন্য আবার উবার খুঁজতে লাগলাম। আমাদের তারা ধন্যবাদ দিলো এতো রাতে খাবার সংগ্রহের জন্য। আমরা তাদের কৃতজ্ঞতা জানালাম খাবারগুলো অসহায় মানুষদের মাঝে দেবার উদ্যোগের জন্য।
ফেরার সময়েও রাস্তা খালিই পেলাম।
প্রায় ১০০ জনের বেশী মানুষের জন্য খাবার সংগ্রহ করে ফিরতে পেরে ভালো লাগছিলো। এটা সুখ। আনন্দ তৃপ্তি। যারা এমন কাজে কখনো যুক্ত হননি তারা চেষ্টা করেও এই আনন্দ আর সুখের খোঁজ পাবেন না। আমরা যারা বস্তির শিশু, পথের শিশুদের নিয়ে কাজ করি তারা জানি এ সব শিশুরা একটু ভালো খাবারের জন্য কেমন উন্মুখ হয়ে থাকে। ভাল কিছু পেলে তার কিভাবে খায়, খুব কাছে থেকে আমরা দেখছি।
আমি আর তুষার রাত ২টার দিকে এক রঙ্গা এক ঘুড়ি তে পৌঁছলাম। তারপর সে সব খাবার সংরক্ষণ করে রেখে ঘুমাতে ঘুমাতে বাজলো রাত ৩টা।
ঘুমিয়ে যাবার আগেও চোখে ভাসছিলো- গভীর রাতে সংগ্রহ করে নিয়ে আসা এই খাবার খেয়ে ১০০র বেশী শিশু কি আনন্দ পাবে, কি তৃপ্তি নিয়ে খাবে সে দৃশ্য!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৫৪