somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘুড়ি স্কুল

০৯ ই আগস্ট, ২০২৩ বিকাল ৫:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঠিক এক বছর আগে আমি একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেখানে বলেছিলাম ঘুড়ি স্কুলের শিশুদের আমরা তথ্য প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ দিতে চাই। বন্ধুদের সহায়তা চেয়েছিলাম।
যে শিশুরা বস্তিতে থাকে, পথে থাকে; যাদের মায়েরা অন্যের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে, বাবা ড্রাইভার- এমন এক দল শিশু শিখবে কম্পিউটার। তারা কাজ করবে ল্যাপটপ, ডেস্কটপ কম্পিউটার সহ স্মার্ট ফোনে এই ছিল ভাবনা। কিন্তু সমস্যা হলো স্কুলে তখন কোন কম্পিউটার নেই, ল্যাপটপ নেই। কীভাবে কি করবো তা নিয়ে নিজেই প্ল্যান করলাম।
বরাবরের মতোন ভরসা ছিল আমার বন্ধুরাই।

তো এই প্ল্যান আমি ঘুড়ি স্কুলের বাচ্চাদের বললাম। তারা অবিশ্বাস নিয়ে আমার কথা শুনলো, কিন্তু পুরোপুরি অবিশ্বাসও করতে পারছে না কারণ আমি যা বলি তারা সেটাকে নিশ্চিত ধরে নেয়। তারা আমাকে ডাকে বড় স্যার। বড় স্যার বলেছেন যেহেতু এটা হবেই।
স্কুলের অনেক বিষয়ে তারা আমার উপর ভরসা করে, আমিও সাধ্যানুযায়ী তাদেরকে গাইড করি।

কেন আমি হুট করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তারও কারণ ছিল। স্কুলের বাচ্চারা চাইলে তাদের শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে আমার রুমে আসতে পারতো। তারা এসে দেখতো আমি কম্পিউটারে কাজ করছি, গান শুনছি, ফেসবুকিং করছি- এরা দেখতাম খুব আগ্রহ ও তৃষ্ণা নিয়ে এইগুলো দেখতো। তাদের মধ্যে যারা চঞ্চল তারা কেউ কেউ চট করে একটু মাউজের উপর হাত রাখতো। বিস্ময় নিয়ে ইউটিউবের কোন গানের দিকে তাকিয়ে থাকতো। ওদের এই আগ্রহ দেখে সবাইকে ডেকে একদিন বললাম,
স্কুলে কম্পিউটার আসছে। প্রথমে বড় গ্রুপ এবং তারপর ছোটদের এভাবে পর্যায়ক্রমে সবাইকে আমরা কম্পিউটার শেখাবো। তোমাদের সবার জন্য এই কম্পিউটার ও ল্যাপটপ উন্মুক্ত থাকবে। বিকালে পাঠাগার ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ চলবে।
এই ঘোষণা শুনে তারা ব্যাপক আনন্দিত ও উত্তেজিত।

আমি এই নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিলাম।
তেমন কোন সাড়া পেলাম না। কিন্তু আমি দমে যাইনি। চেষ্টা চালু রাখলাম।
বন্ধুদের কদিন জ্বালালাম।
স্কুলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের বার্তা দিলাম। আমার যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে তারা পাশে এসে দাঁড়ালো। তাদের মাধ্যমেই কদিনের মধ্যে আমরা এরেঞ্জ করলাম দুটি ল্যাপটপ, দুটি ডেস্কটপ কম্পিউটার এবং একটি স্মার্ট ফোন।
এর সাথে আমরা ওদের জন্য একটি স্মার্ট টিভি কিনলাম।
সবমিলিয়ে দারুণ উত্তেজনা।

প্রথম ব্যাচে আয়না, মীম, শারমিন, শাপলা তারা খুব ভালো করলো। পরবর্তীতে আমরা মীম কে দিয়ে আরো একটি গ্রুপকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিলাম। এভাবে এক বছরের মাথায় ৩ টি ব্যাচকে আমরা তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করলাম। এখন তারা সবাই অফিস ও ইন্টারনেট ইত্যাদিতে স্বাচ্ছন্দ। গুগল মিট, ম্যাসেঞ্জার ও জুম ব্যবহার করে মিটিংও করতে পারে।
সামাজিক মাধ্যম ব্যাবহার করে আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারে।
সবার ইমেইল এড্রেস আছে।

ঘুড়ি স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে সবচেয়ে ভালো যারা শিখেছে এমন ৭ জনকে আমরা জাপানি ল্যাংগুয়েজ ও কালচার প্রোগ্রামে অন্তর্ভুক্ত করেছি। সেখানে অন্য দুটি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে তারা এখন সেই কোর্স করছে। এখন পর্যন্ত তাদের পারফরম্যান্স খুব ভালো।

এই শিশুরা এক বছর আগেও কেউ ভাবেনি তাদের স্মার্ট ফোন থাকবে, তারা ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করবে বা ডেস্কটপ ইউজ করবে কিন্তু আজ সেই সবই বাস্তব। সত্যি। এই আনন্দ আর গর্ব ওদের চোখে মুখে যখন দেখি তখন ভালো লাগে খুব।
এই ভালো লাগা একটা নেশা।

আমি যাদের জ্বালিয়েছি তাদের সবাইকে গভীর ভালোবাসা জানাই। রিদা, খান সাহেব, শাফি, স্কুলের বন্ধু হাসিব, আবু সাইদ লিপু ভাই আপনারা পাশে না থাকলে এই সব সম্ভব হতো না।
এই শিশুদের সকল অর্জন আপনাদেরকে উতসর্গ করলাম।























সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০২৩ বিকাল ৫:১৮
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×