somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাকতালীয় দেনা পরিশোধ!

১১ ই মে, ২০২২ দুপুর ২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আমার জীবনে কাকতালীয় ঘটনা এত বেশী ঘটে, যে কাকতালীয় ঘটনা ঘটাই যেন আমার জন্য স্বাভাবিক হয়ে দাড়িয়েছে।



আমি সাধারণত কারও কাছে দেনা থাকলে সেটা সময় মত পেমেন্ট করি। সময় বাড়াতে বলতে লজ্জা লাগে। আর ঘোরাঘুরি তো একদমই পছন্দ করি না। একমাত্র আমার আপন বড় ভাই বাদে কেউ বলতে পারবে না যে আমি কখনও টাকা দিতে সময়ক্ষেপন করেছি। দেনা থাকলে আমি হাতে টাকা আসামাত্রই দেনা আগে পরিশোধ করি।

একবারের একটা ঘটনা বলতে আজকের পোষ্ট। এই ঘটনা আজ থেকে ৭বছর আগে হয়ে থাকলেও এখনও আমাকে নাড়া দেয়। এখনও আমাকে অনুপ্রেরণা জাগায়। এটা আমি প্রায়ই আমার পরিচত মহলে বলি, কেন যেন মনে হয় এটা অন্যদেরও মনোবল জোগাবে।

২০১৫ সালের মার্চ মাস (সাল নিশ্চিত, মাস মার্চ বা এপ্রিল হবে)। সকাল ১১:৩০; আমি চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে কাঁদছি। কারণ, আমি একজনকে কথা দিয়েছি তাকে দুপুর ১২টার মধ্যে ১৬,০০০ টাকা দেনা পরিশোধ করবো এবং ঠিক ঐ সময়ে আমার কাছে এক হাজার টাকাও নাই!

এই লোকের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক। তার কাছ থেকে বাকিতে পন্য আনি, সব সময় ঠিকঠাক পেমেন্ট করি। একবারও এদিকসেদিক হয় নি। এজন্য উনিও আমাকে চোখ বুজে লাখ খানেক টাকার প্রোডাক্ট বাকিতে দিয়ে দেন। তবে এবার ৫০হাজার টাকার প্রোডাক্ট আনবার সময় তিনি বিশেষ ভাবে অনুরোধ করেছিলেন যেন সময় মত পেমেন্ট করি, উনার বিশেষ একটা কাজে টাকাটা লাগবে।

ঘড়িতে তখনও সময় ২০ মিনিট বাকি। আমি জানি না যে উনাকে কি বলবো, কি করে দেনা পরিশোধ করবো। আমি সমানে আল্লাহর কাছে সমাধান চেয়ে যাচ্ছি। আগের তিনদিনে কয়েকজন দেনাদারের কাছে ফোন দিয়েছিলাম টাকার জন্য; তারা কেউই টাকা দেয় নি। ধার নেবার মত খুব কাছের তেমন কেউ নাই। যা দু-একজন আছে, তারা তখন টাকা ইনভেষ্ট করছে পহেলা বৈশাখ কেন্দ্র করে ব্যবসার জন্য।

লেখায় বারবার সময় উল্ল্যেখ করছি, এটা গুরুত্বপূর্ণ; এজন্যই মনে আছে ঠিকঠাক ভাবে।

ঘড়িতে তখন ১১:৪৯, আমি বলাচলে ৯৯% হতাশ। তবুও মনের একটা কোনে আশা আছে। আল্লাহকে বারবার বলছি, আল্লাহ তুমিতো আমাকে কখনও টাকার জন্য লাঞ্ছিত করনি। আজকেও তুমিই আমার সমাধান।

১১:৫২তে আমার গলা শুকিয়ে কাঁঠ। পাশের রুমে স্ত্রী ঘুমিয়ে আছে; সে একটু অসুস্থ। তার ভাগ্য ভালো যে স্বামীর এই প্রেসার ওয়ালা মুখ দেখতে হচ্ছে না। এমন সময় একটা ফোন বেজে উঠলো। পরিচিত নম্বর। এই ভদ্রলোকের সাথে বেশ কয়েক মাস আগে একটা ওয়েব ডিজাইনের বিষয়ে কথা হয়েছিলো।

ফোন ধরতেই অপর পাশ থেকে ভদ্রলোক বললেন, ভাই, আপনিতো ৫০ হাজার টাকার কোটেশন দিয়েছিলেন। আমার ৩৫হাজার বাজেট। এর থেকে বাড়তে পারবো না। আপনার পক্ষে যদি সম্ভব হয়, তাহলে এসে ওয়ার্ক অর্ডার নিয়ে যান।

আমি যেন হঠাৎ পায়ের নিচে মাটি পেলাম। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম, যদি আগামী ৫/৬ মিনিটের মধ্যে আমাকে আপনি ১৬হাজার টাকা দিতে পারেন। তাহলে আমি ৩৫ না, ১৬তেই কাজ করে দিবো। তিনি একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন। একটু হেসে বললেন, মনে হচ্ছে দেনার টাকা শোধ করতে হবে। আমি হ্যাঁ বললাম। তিনি বললেন যদি ইসলামী ব্যাংকে হয়, তাহলে একাউন্ট নম্বর দিন। আমি এক্ষুনি দিচ্ছি; অন্য কোন ব্যাংকে হলে আমি কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আর আপনাকে ১৬ হাজার নয়, ৩৫ হাজারই দিবো ওয়েব সাইটটি করবার জন্য (পরে অবশ্য উনার থেকে ২৫হাজার নিয়েছিলাম আমি)।

আমার যার কাছে দেনা, তার ইসলামী ব্যাংকের একাউন্ট। তাই দ্রুত তাকে একাউন্ট নম্বরটা দিয়ে দিলাম। মনে হলো যেন ঘাড় থেকে হাজার কেজি ওজনের পাথর নেমে গেলো। ১২:০৩ এ উনি আমাকে ফেসবুকে ম্যাসেজ দিলেন; পেমেন্টের স্ক্রীণশট। ট্রান্সিকশনের সময় ১১:৫৯!

খুব খুশি মনে ঐ বিক্রেতাকে ফোন দিলাম, বললাম যে টাকা ১২টার আগেই পৌছে গেছে। তিনি হেসে বললেন, ভাই, আপনার তো ১২টার মধ্যেই দেওয়ার দরকার ছিলো না। আজকে দিনের মধ্যে দিলেই হতো। অনেক ধন্যবাদ জানালেন তিনি। জানালেন নতুন প্রোডাক্ট এসেছে; দরকার হলে নিয়ে যেতে।

গতপরশুদিন হঠাৎই টাকা পয়সার একটা সমস্যার কারণে চিপায় পড়লে হাতিরেও ব্যাঙ লাথি দেয়! শিরোনামে পোষ্ট দিয়েছিলাম।

ঐদিনের হিসাবে আমার মোট দরকার ছিলো ৬,০০০ + ৪,০০০ রিয়াল। আমার কাছে জমানো ছিলো মাত্র ৬,০০০ রিয়াল। সর্টেজ ৪,০০০ রিয়ালের। এই ৪,০০০ দরকার ১৫ তারিখ সন্ধ্যার মধ্যে। এদিকে ৬,০০০ রিয়ালের পেমেন্টটা করার দরকার ছিলো ঐ দিনেই। তাই করে দিয়েছিলাম। ভরসা ছিলো ৪,০০০ জোগাড় হয়ে যাবে।

গতকাল বুঝতে পারলাম যে আমার আসে ৬,০০০ রিয়াল পেমেন্ট করতে হবে না; করতে হবে ২,০০০ রিয়াল! অর্থাৎ যে ৬,০০০ পেমেন্ট করেছি, তার থেকে চার্জ ২,০০০ কেটেছে; বাকিটা আমার একাউন্টে চলে আসবে। মোদ্দা কথা আমার যে ৪,০০০ রিয়ালের দরকার; সেটাই আমি ফেরৎ পাচ্ছি। না বেশী, না কম।

কারও চোখে এটা খুব চোট কোন কাকতালীয় ঘটনা হতে পারে। আমার জন্য নয়। কারও কাছে পাওনা টাকা দেরীতে দিবো বলতে যে লজ্জা, সেই লজ্জার থেকে আমি বেঁচে গিয়েছি।

সূরা মারিইয়ামের ৪নং আয়াতে যাকারিয়্যা আলাইহিস সালামের দোয়া আল্লাহ উল্ল্যেখ করেছেন, "হে আমার রব, আপনার নিকট দো‘আ করে আমি কখনো ব্যর্থ হইনি’।" আলহামদুলিল্লাহ। আমার জীবনেও এই কথা খেটে যায়।

আমার রব আমাকে কখনও ব্যর্থ হতে দেননি।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৫:৪৪
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×