এসএসসি পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই সবাই বিভিন্ন শিক্ষকের কাছে এইচএসসির জন্য পড়া শুরু করে দিলো। আর আমি গেলাম ঢাকা ঘুরতে।
বাসার সবাই আশাকরে বসে আছে যে আমি ভালো রেজাল্ট করে পাশ করবো। এদিকে আমি জানি যে আমাকে কোন শিক্ষক চাইলেও পাশ করাতে পারবে না। বিশেষ করে রসায়নের শিক্ষক যদি আমাকে ১৭ দিতে চান, তাহলে তার নিজের কিছু উত্তর কেটে নতুন করে লিখে দিতে হবে।
কিভাবে যেন রেজাল্ট ভালো হয়ে গেলো! সব থেকে বেশী মার্ক পেলাম রসায়নে! আমাদের স্কুলের রসায়নের শিক্ষক বললেন, 'আমারতো চাকরী ছেড়ে দেওয়া উচিৎরে!'
যাই হোক, রেজাল্টের পরদিনই বড় ভাই সাইকেলের পিছনে বসিয়ে নিয়ে গেলেন আবুল স্যারের কাছে। তিনি সরকারী দিবা নৈশ (ডে-নাইট ওরফে ডিনামাইট) কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক। তবে তিনি বাসায় ব্যাচ করে গণিত পড়ান। শুধু বল বিদ্যা বাদ দিলে এইচএসসি এর গণিতের জন্য আবুল স্যার এলাকায় সেরা। প্রতি বছর উনার কাছে টেষ্ট পরীক্ষার পর প্রায় শ'দুয়েক ছাত্র আলাদা সময়ে আলাদা ব্যাচ করে পড়ে।
যাই হোক। আবুল স্যারের কথাবার্তা প্রথম দিনেই খুব ভালো লেগে গেলো। উনি চরম মাত্রায় পজেটিভ চিন্তাধারর মানুষ ছিলেন। এবং উনিও চাইতেন আমরা যেন সে ভাবেই গড়ে উঠি।
আমাদের পড়ার ব্যাচের নাম ছিলো KST - খাঁটি সরিষার তেল।
মাঝে মধ্যেই ছাত্র-ছাত্রীদের সময়ের সমস্যার কারণে উনি ব্যাচ চেঞ্জ করে এক ব্যাচের ছাত্র-ছাত্রীদের অন্য ব্যাচে নিয়ে যেতেন। আমাদের ব্যাচের সময়টা খুবই দুর্দান্ত ছিলো। দুপুর ২টা থেকে ৩টা। এই সময়ে সবাই আসতে চাইতো। কারণ এর পর আর একজন শিক্ষকের কাছে যাওয়ার সময় থাকতো।
তো আমাদের ব্যাচে স্যার একবার একটা মেয়েকে জয়েন করাতে চাইলেন, কিন্তু আমরা বেঁকে বসলাম। ধীরে ধীরে এক সময় এটা প্রমাণ হয়ে গেলো যে আমাদের ব্যাচে কোন মেয়ের প্রবেশ আমরা মেনে নিতে চাই না। তখনই স্যার আমাদর ব্যাচের নাম দিয়ে দিলেন খাঁটি সরিষার তেল।
স্যার আমাদের বিভিন্ন কথা বলতেন, যার অনেকাংশ জুড়েই ছিলো নীতি কথা। আমরা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতাম, জীবন ঘনিষ্ঠ এই কথাগুলি খুব ভালো লাগতো আমাদের।
স্যারের কথার প্রমান অনেক পেয়েছি, এখনও পাচ্ছি।
স্যার একবার বলেছিলেন, দুনিয়ার সব থেকে খারাপ মানুষটিও ধরাচোটে বলবে না যে তুমিও খারাপ হও। সে হয়ত কাউকে ধীরে ধীরে, বা দ্রুত খারাপ করে ফেলবে। কিন্তু মুখে বলবার সময় ঠিকই ভালো হতে বলবে।
চোরকেও দেখেছি চুরি না করার উপদেশ দিতে, খুনিকে দেখেছি খুনি না হওয়ার উপদেশ দিতে, মাস্তানকে দেখেছি মাস্তান না হওয়ার উপদেশ দিতে, চাটুকারকে দেখেছি চাটুকার না হওয়ার উপদেশ দিতে, গুটিবাজকে দেখেছি গুটিবাজি না করার উপদেশ দিতে, দলবাজকে দেখেছি দলবাজি না করার উপদেশ দিতে......
জীবনে বহুবার এই ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। স্যারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রতিবারেই বেড়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০২২ বিকাল ৩:৩৯