এমন লোকেদের আমি বুদ্ধি দেই ব্যবসা করার। একথা শুনলেই লোকে খ্যাক করে হাসে, টাকা পাবো কই? আজকে তারই উত্তর খুঁজে বের করতে চেষ্টা করবো।
আমার ব্লগে একজন ব্লগার বেশ আগে মন্তব্য করেছিলেন যে আমি মধ্যপ্রাচ্যে ভালো একটা চাকরীতে আছি ও ভালো আছি এটা নাকি মাঝে মধ্যে দেখানোর চেষ্টা করি। আমি উত্তর করেছিলাম, মাঝে মাঝে না সব সময় এটা দিয়ে। তাছাড়া আমার বিভিন্ন পোষ্ট পড়লে আপনি সহজেই বুঝে যাবেন যে আমি আমার বিভিন্ন কর্মকান্ড লেখার চেষ্টা করি। আজকেও সেটার খুব একটা অন্যথা হবে না। তাই, ধৈর্য্য থাকলে পড়ুন, না হয়.......
আমার ব্যবাসর শুরু বহুকাল আগে, সেই বহুকাল আগের কথা বলবো না। বলি ২০০৮ এর কথা।
২০০৮ এ ঢাকায় আমি নতুন। কিচ্ছু চিনি না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। সম্বল বলতে ভাইয়ের টাকায় বিবিএ করবো এটাই। আর একটা জিনিষ ছিলো, সেটা হচ্ছে বাসা থেকে টাকা না নেওয়ার ইচ্ছা। প্রবল ইচ্ছা।
কম্পিউটারে বড় বড় করে কম্পোজ করলাম, বাসায় গিয়ে কম্পিউটার রিপেয়ার করি। ঝিগাতলা থেকে শ্যামলী পর্যন্ত এই পোষ্টা লাগিয়ে দিলাম। দিন তিনেক যেতে না যেতে বেশ সাড়া পেলাম। এর কম্পিউটার কাজ করছে না, ওর এই সমস্যা। রিপেয়ার শুরু করে দিলাম। রিপেয়ার করতে গিয়ে বহু কিছু শিখলাম।
এক সময় পরিচয় হলো এক ভাইয়ের সাথে। তিনি নিজে পারেন না, অন্যকে শেখান টাইপের মানুষ। বললেন অর্ডার সাপ্লাইয়ের কাজ করেন। সেটা কি? একজন থেকে অর্ডার নিবেন, অন্যজন থেকে সেটা এনে বিক্রি করবেন। মাস কয়েক এদিক সেদিক ঘুরে প্রথম অর্ডার পেলাম। তিনদিনের মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার টাকার পণ্য কিনে তাকে দিতে হবে। বিল পাবো মাস খানেক পর। ঐ বড় ভাইকে ধরলাম। তিনি খ্যাক খ্যাক করে হেসে বললেন, টাকা জোগাড় করে তিন এফ (F)এ। Friends, Family & Fools! আপনাকে সেটা দাড় করাতে হবে।
মাত্র দুদিনের মধ্যে এই তিন এফকে পটিয়ে টাকা জোগাড় করে পন্য কিনে হাজির হলাম। এই শুরু। এরপর প্রায় টানা ২বছর এই কাজ করেছি।
এক সময় দেখলাম এই কাজে আমার পোষাচ্ছে না। তখন পেলাম ঝিগাতলার এক মামাকে, তার জুস সেই মাপের ছিলো, কিন্তু কিছু টাকার জন্য ব্যবসা বড় করতে পারছে না। মাত্র ২০ হাজার টাকা ইনভেষ্ট করে তার পার্টনার হয়ে গেলাম। প্রতিদিন সন্ধ্যায় তাকে সময় দিতাম।
২০১১ এর দিকে এসে কোথাও একটা বিজ্ঞাপন দেখলাম। তারা ডোমেইন হোস্টিঙ বিক্রি করে। যেহেতু ততদিনে আমি টুকটাক ওয়েব ডিজাইনের কাজ পারি, এটা করে দেখা যায়। কষ্ট করে খুঁজে বের করলাম যারা ডোমেইন হোস্টিং রিসেলার হিসাবে দেয়। শুরু করবো, কিন্তু প্রথমেই দরকার হাজার ১০ টাকার। পকেটে টাকা নাই এমন না। তবে যেহেতু কোন অভিজ্ঞতা নাই, তাই তখনই নামলাম না।
এক ভাই কবিতা লিখতেন, তাকে বোঝালাম তার একটা ওয়েব সাইটের কত দরকার। তিনি আমতা আমতা করে পকেট থেকে ৫হাজার টাকা বের করে দিলেন। আর একটা প্রতিষ্ঠানকে বোঝালাম তাদের ওয়েব সাইটের কত দরকার। তারা এডভান্স হিসাবে ৮হাজার দিলেন। ব্যাস, ব্যবসা শুরু করে পারি নাই, ৩হাজার টাকা এক্সট্রা। শুরু হয়ে গেলো। এখনও সেটা চলছে। মাসে মাসে রিনিউয়ালের যে টাকা আসে, তাতেই মোটামুটি বেশ হয়ে যায়।
এরপর এক সময় চায়না থেকে টুকটাক প্রোডাক্ট ইম্পোর্ট করে, চকবাজার থেকে কিছু প্রোডাক্ট নিয়ে একটা ছোট্ট ইকমার্স শুরু করলাম। খুব সিলেক্টেড প্রোডাক্ট, কিন্তু কোয়ালিটি সেই মাপের। বেশ ভালোই চলছিলো, কিন্তু হঠাৎ একটা সিদ্ধান্তের কারণে সৌদী চলে আসলাম।
--------------------------
আপনি কি ব্যবসা করতে চান কিন্তু টাকা নাই?
এই যে, ব্যবসা করতে চাই, কিন্তু টাকা নাই, এইটা একটা বড় ভুল ধারণা। আসলে আপনি ব্যবসা করতে চান না। হয় চান অন্যের টাকায় জুয়া খেলতে, অথবা আপনি হুদাই ভাব লন!
২০০৫ এর দিকে খুলনায় একটা সেমিনারে ছিলাম। সেখানে মাইক্রোসফট অফিস প্রোগ্রামের উপর একটা সেমিনার ছিলো। আমি প্রশ্ন করেছিলাম যে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড দিয়ে দুর্দান্ত কাজকাম কিভাবে করা যায়। একজন উত্তর করলেন, তুমি যতটুকু জানো, ঠিক ততটুকুকে সুন্দর করে করো, হুড়াতাড়ার কিছু নাই। আর শিখতে থাকো।
যদি টাকা নাই, আবার ব্যবসা করতে মন চায়, তাহলে আপনাকে সেটাই করতে হবে। আপনার পকেটে যা আছে তার মাধ্যমে কি করতে পারবেন সেটাই আপনাকে প্লান করতে হবে। আপনি ঐটার মধ্যে দিয়ে কিছু করতে পারলেই না আপনি ব্যবসায়ী। ইলন মাস্কের সমান টাকা হলে এই করবেন ঐ করবেন এইসব গালগল্পের সময় কই?
এই ভিডিওটা একটু দেখুনঃ
--------------------------
সুমন মিয়া (ভন্ড)
কামরাঙ্গির চরে এক চাচার সাথে পরিচয় হয়েছিলো। তার ভাষ্য মতে তার বড় মেয়ে সুমন মিয়া নামের এক ভন্ডর প্রেমে পড়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে বিশাল এক অপরাধ করেছে। এই সুমন কয়েকদিন পর এসে শশুরকে জানালো যে সে শশুরের সনপাপড়ির ব্যবসায় কাজ করতে চায়।
চাচা মিয়া নিজেই সনপাপড়ি তৈরী করে সদরঘাটে ফেরি করে বিক্রি করেন। জামাইকে বিশ্বাস করে সনপাপড়ি দিলেন। শ দুয়েক টাকায় বিক্রি করা যাবে। জামাই তাই নিয়ে লাপাত্তা!
কয়েকদিন পর জামাই একগাদা কাগজ আর পলিপ্যাক নিয়ে হাজির। শশুরের সনপাপড়িকে সে প্যাকেটজাত করে মুদি দোকানে বিক্রি শুরু করে দিলো।
ভন্ড সুমন এতই ভন্ড যে, যে সনপাপড়ি খুচরা ২০০ টাকায় বিক্রি হবার কথা, সেটাই সে পাইকাড়ি ৩৫০ টাকায় বিক্রি করে ফেলল! শশুর এখনো ভেবে পান না যে এই ভন্ডের ভন্ডামির আর কত বাকি।
-----------------------
আমি বুঝি যে আপনি ইলন মাস্কের মত ধনী ব্যবসায়ী হতে চান। আমিও চাই। বরং ইলন মাস্ক আমার কাছে টাকা ধার করতে আসবে, এসে বাসার সামনের বেঞ্চে বসে থাকবে এমন কিছু চাই। কিন্তু সেটা যে ধরা চোটেই হবে এমন না।
আপনাকে শুরু করতে হবে আপনার লেভেল বুঝে। আপনার যতটুকু আছে, ততটুকু দিয়ে শুরু করতে হবে।
আমাদের এক স্যার পরীক্ষার আগে সবক দিতেনঃ শুরু করবি পাশমার্ক তোলা দিয়ে। সেটা হলে সেকেন্ড ডিভিশনের মার্ক তুলবি, সেটা হলে ফার্স্ট ডিভিশনের মার্ক তুলবি; এরপর পারলে স্টার বা স্ট্যা্ন্ড করবি।
আপনার ব্যবসাটাও তাই করতে হবে। প্রথমে থাকা-খাওয়ার খরচ তুলেন। সময় লাগবে বড় কিছু হতে। কিন্তু হবে, লেগে পড়ে থাকতে হবে।
Photo by Josh Appel on Unsplash
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ৯:৪৩