somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাহলে কি শিক্ষাই আমাদের বন্ধী করে ফেলছে একটা গন্ডির ভিতরে?

০৯ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
বেশ কয়েক বছর আগের কথা। আমাদের এক বড় ভাই সৌদী আরবে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। মক্কায় গিয়েছেন ওমরাহ করতে।



ওমরাহ শেষে এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করতে করতে একটা বাংলাদেশী দোকানে ঢুকেছেন, কথায় কথায় মালিকের সাথে পরিচিত হয়েছেন। মালিক হঠাৎ জিজ্ঞাসা করলেন বেতন কত? উনি বললেন ৭হাজার রিয়াল বেসিক আর সব মিলিয়ে ১০হাজারের মত আসে। তখনকার হিসাবে প্রায় ২,২০,০০০ টাকা।

মালিক ওনার দিকে তাকিয়ে বললো, তা এ খরচ দিয়ে কি বাচ্চার ডায়াপার কেনার টাকা বাঁচে? দেশে কি বাবা-মা কে কিছু পাঠাতে পারেন?

ঐ দোকানী আসলে তার হিসাবের মধ্যে থেকে বলেছে। সৌদীতে ১০,০০০ রিয়াল দিয়ে কয়েক বছর আগে কেন, বর্তমানেও বেশ ভালো ভাবেই পরিবার নিয়ে থাকা যায়। তবে ঐ দোকানীর ইনকাম প্রচুর, স্বভাবতই তার খরচও প্রচুর। তাই তার হিসাবে ১০হাজারে কিচ্ছুই হয় না।

এমন হাজারো উদাহরণ পাবেন এখানে, শুধু এখানে না, দেশেও। আমাদের শিক্ষিত জনতা যত ইনকাম করতে পারে, অশিক্ষিত জনতা তার থেকে অনেক বেশী ইনকাম করতে পারে। সমাজে হয়ত অশিক্ষিতরা তেমন মান পায় না, কিন্তু ইনকামের দিক থেকে বেশ এগিয়ে তারা।

আমার এক স্কুল বন্ধু আছে, ডেসটিনিতে যোগ দিয়ে ইন্টারমিডিয়েটেই লেখাপড়া ছেড়েছে। ডেসটিনি গেলো, মাঠে মারা খেলো। এরপর সে কসমেটিকস এর ব্যবসা শুরু করেছে। বর্তমানে আমার বন্ধুর নিজের একটা বাড়ি আছে, প্রাইভেটকার না থাকলেও নিজের চলার মত একটা বেবি-ট্যাক্সি (টেম্পু) আছে, তাতে ড্রাইভারও আছে।

ওর একার না এমন, আমাদের স্কুল ফ্রেন্ডদের মধ্যে ড্রপআউট প্রায় সবারই এই দশা। কেউ হয়ত আড়তে দোকান দিয়েছে, কেউ হয়ত দুইটা রেষ্টুরেন্ট চালাচ্ছে। খুব ক্লোজদের মধ্যে আমরা মোট ৪জন অনার্স মাস্টার্স শেষ করেছি। একজনের শুধু তিতাসে চাকরীর সুবাদে ঘর-বাড়ি হয়েছে, বাকি তিনজন এখনও মাসের বেতন দিয়ে টেনেটুনে সংসার চালাচ্ছি। আমি বিদেশে, আমারও বলতেগেলে সেই দশা।

সৌদী আরবে অনেক বাংলাদেশীর সাথে পরিচয় আছে, কেউ গাড়ি ঠিক করে, কেউ ইলেক্ট্রিকের কাজ করে, কেউ লন্ড্রির দোকান দেয়, কেউ বাকালা (মুদি দোকান) দেয়। এদের সবারই কম বেশী আমার থেকে ইনকাম বেশী। এদের অনেকেই আবার বৈধ্য কাজ করলেও আছে অবৈধ্য ভাবে। (এ বিষয়টা বুঝতে হলে আমার বৈধ কাগজ-পত্র থাকার পরও কেন সৌদী পুলিশ মানুষকে দেশে পাঠিয়ে দেয়? লেখাটা পড়তে হবে)।

আমি চাকরীর বাইরে তেমন কিছু করি না, বা করতে পারি না। আব্বা-আম্মাকে দেখি না প্রায় সাড়ে তিন বছর। মূলত খরচের ভয়ে যেতে পারি না। মাঝে মধ্যে মন চায় দেশে চলে যাই। কিন্তু আটকে যাই একটা প্রশ্নে, দেশে গিয়ে কি করবো?

যারা অবৈধ্য ভাবে কাজ করছে, তাদের যখন জিজ্ঞাসা করি, যদি ধরা খান, দেশে পাঠায় দিবে তো। তাদের সরল উত্তর, দেশে গিয়া মুদি দোকান দিবো! কিন্তু আমি পারি না। শুধু আমি না, যতজন শিক্ষিত লোকজনের সাথে কথা বলেছি, সবার একই উত্তর।

আমাদের অফিসে এক ক্লিনার ছিলেন, বাংলাদেশী। তার চাকরী গিয়েছে, অফিস এখন একটা কম্পানির মাধ্যমে লোক নেয়। তিনি যাওয়ার সময় যা টাকা পেয়েছেন, সেটা দিয়ে দেশে একটা খামার টাইপের কিছু করেছেন। আমি কেন সেই সাহস পাই না? অন্য শিক্ষিতরা কেন সেই সাহস পায় না?

আমার সারা জীবনের একটা শখ হচ্ছে আমার একটা রেষ্টুরেন্ট থাকবে, দুর্দান্ত একটা রেষ্টুরেন্ট। এটা এখন অনেকেই করছে। তবুও মাঝে মধ্যে কেমন লাগে, লেখাপড়া করে বিবিএ-এমবিএ করে রেষ্টুরেন্টের ক্যাশে বসবো? মানুষ কি ভাববে? আমার শশুর মাঝে শুনেছিলেন আমার এইসব আজগুইবি কথাবার্তা, তিনি যে স্পষ্ট মর্মাহত হয়েছেন তা বুঝতে পেরেছি। আর আমার আব্বা? তিনি নিরব হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে গিয়েছিলেন।

আমি বহু শিক্ষিত বেকারের সাথে কথা বলেছি, তাদের কাছে জানতে চেয়েছি কেন তারা বেকার থাকছে কিন্তু রিক্সা নিয়ে নামতে পারছে না। কেন তারা বেকার থাকছে কিন্তু ইলেক্ট্রিকের কাজ শিখে কাজ করতে পারছে না। কেন তারা বেকার থাকছে কিন্তু মটরসাইকেল রিপেয়ারিং এর কাজ শিখে কাজ করতে পারছে না। সবার উত্তর, হ্যাঁ ১০০% সবার উত্তরই একই, এত লেখাপড়া করে ওগুলি করবো?

আমাদের খুলনার মানুষের একটা সমস্যা আছে, তারা কম্ফোর্টজোনের ভিতরে থাকতে অত্যাধিক পছন্দ করে। তারা প্রয়োজন মাফিক ইনকাম হলে সেটা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে পারে। আমার প্রতিবেশী একজন তার ছোট ছেলেকে লেখাপড়া বেশীদূর করান নাই। কারণ বড় ছেলে বেশী পড়ালেখা করে তার মাছের ঘেরে কাজ করতে পারে না, প্রেস্টিজে বাঁধে। তাই ছোট ছেলেকে বেশী লেখাপড়া না করিয়ে মাছের ঘেরে কাজ করান।

কোথাও যেন পড়েছিলাম শিক্ষা নাকি আমাদের মনকে মুক্ত করে, আমি এই ক্ষেত্রে তার উদাহরণ বা সত্যতা পানিনি। বরং দেখেছি, শিক্ষা আমাদের একটা গন্ডির ভিতরে আটকে রেখেছে। দোষটা হয়ত আমাদেরই, শুধু নিজেদের দোষ ঢাকতেই হয়ত শিক্ষাকে দোষ দিচ্ছি। নাকি আসলেই শিক্ষা দায়ী?

Photo by John Salvino on Unsplash

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৫
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×