somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হায়দারাবাদের ডায়েরী….

২৫ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হায়দারাবাদের ডায়েরী….
ইন্ডিয়ার স্বাধীনতা দিবস উদযাপন (এনআইআরডি) (১৫/০৮/২০১৪)
হায়দারাবাদের এনআইআরডি ক্যাম্পাসে এসেছি চার দিন হয়ে গেল। কিভাবে চারটি দিন কেটে গেল বুঝতেই পারিনি। আজ ইন্ডিয়ার স্বাধীনতা দিবস। ইন্ডিয়ার সকল মানুষের জন্য বিশেষ একটি দিন। এনআইআরডি ক্যাম্পাসেও দিনটি বিশেষভাবে উদযাপন করা হবে। ইন্টান্যাশনাল ইনসারভিস স্টুডেন্ট হিসেবে আমিও বিশেষভাবে আমন্ত্রিত…
মোবাইল এ অ্যালার্ম দিয়ে রেখেছিলাম। সকাল-সকাল ঘুম থেকে উঠে পরলাম। সাদা শার্ট ও কালো ব্লেজার (ফরমাল ড্রেস) পরে রওয়ানা হলাম অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্য। সকাল ৯:০০টার মতো বাজে। অসম্ভব সুন্দরভাবে এনআইআরডি ক্যাম্পাসের মেইন বিল্ডিং এর সুপ্রশস্ত চত্তর স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের জন্য সাজানো হয়েছে। সমস্ত ক্যাম্পাসের সকল লোক সেখানে উপস্থিত। স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েরা ধবল সাজে সেজেছে প্যারেড করার জন্য । উপস্থিত বেশিরভাগ পুরুষ ও মহিলার পরনে সাদা রংয়ের জামা-কাপড়। দেখতে ভালো লাগছিল । সাদা রং, পবিত্র ও প্রশান্তির…
পিজিডিআরএম ও অন্যান্য কোর্সের ইন্টারন্যাশনাল ইনসারভিস স্টুডেন্ট মিলে বিভিন্ন দেশের ২৫ জনের মতো প্রতিনিধি উপস্থিত হয়েছে। ঘানা, সুদান, ফিজি, ইয়েমেন, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া, ভিয়েতনাম, শ্রীলংকা, মালয়েশিয়াসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশের স্টুডেন্ট। আমি একা বাংলাদেশের।
ঘড়ির কাটা মেপে জাস্ট ৯:৩০ এর দিকে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেল। অনুষ্ঠানের শুরুতেই এনআইআরডির ডিজি (আইএএস অফিসার) ড:এম ভি রাও ইন্ডিয়ার পতাকা উত্তোলন করলেন। তারপর স্বাগত বক্তব্য দিলেন। সাবলীল ইংরেজীতে অসাধারন বক্তৃতা। শুনতে ভালো লাগছিল। দেশপ্রেম কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি তার বক্তৃতায় সেটা প্রকাশ পাচ্ছিল। আরও কত পথ পারি দিতে হবে সেই স্বপ্নের কথা শোনাচ্ছিলেন…
স্বাগত বক্তব্যর পরেই সাত-আট বছরের একটি মেয়ে দেশপ্রেম নিয়ে একটি দীর্ঘ কবিতা আবৃত্তি করলেন। এত দীর্ঘ কবিতা এতটুকু একটি মেয়ে কিভাবে মনে রাখলো সেটাই একটা বিস্ময় মনে হলো। তারপর বেশ কয়েকটি দেশাত্নবোধক গান হলো…
এরপর বিদেশি শিক্ষার্থীরা একে একে লাল গালিচায় ডিজির সাথে পরিচিত হলেন এবং ক্রেস্ট উপহার নিলেন। মাইক্রোফোনে আমার নাম ঘোষিত হলো। হেটে গিয়ে ডিজির সাথে পরিচিত হলাম। ছবি তুললাম। তিনি উপহার হিসেবে আমার হাতে ক্রেস্ট তুলে দিলেন…
হায়দারাবাদের আকাশ আজ পরিস্কার। রোদের তেজ বেশ প্রখর। তবে অস্বস্তিকর নয়। অল্প সময়ের মধ্যেই অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেল। অনুষ্ঠান শেষে প্রশস্ত বাগানে সবাই একসাথে সকালের নাস্তা সারলাম।দুটো রাইচ বল, সবজি, একটু ছচ, দুটো জিলাপা, একটা পাপড় ভাজা ও চা…
বিকেল বেলায় তেলেগ্ননা স্টেটের এক বন্ধুর সাথে রওয়ানা হলাম ইন্ডিয়ার তেলেগু সিনেমা দেখার জন্য। বন্ধুর নাম রনজিৎ। আমার বন্ধুর বাড়ি তেলেগ্ননা প্রদেশের বরঙগাইল জেলায়… প্রথম যে সিনেমায় গেলাম, যেয়ে দেখি সব টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে। ইন্ডিয়ানরা সিনেমা পাগল জানতাম। সিনেমা হলে তারা সিনেমা দেখে সেটাও জানতাম। কিন্তু এতটা পাগল সেই দৃশ্য দেখার অভিঙ্গতা হয়ে গেল। দলে-দলে সকল বয়সের লোকজন এসেছে সিনোমা হলে সিনেমা দেখার জন্য। তারা লাইন ধরে টিকিট কাটছে। অবাক ব্যাপার হলো একই সিনেমায় একই সাথে বেশ কয়েকটি সিনেমা চলছে এবং যে যার পছন্দ মতো সিনোমার টিকেট কেটে সিনেমা দেখছে।
প্রথম সিনেমার টিকিট না পেয়ে কাছাকাছি অন্য একটি সিনেমা হলের উদ্দেশ্যে ছুটলাম। আমার বন্ধু দোকান থেকে একটি পত্রিকা নিয়ে সিনেমার সিডিউল দেখে নিল।তারপর স্কুটার নিয়ে আমরা ছুটলাম বিগ সিনেমাসের উদেশ্যে।
সারাদিন অনেক রোদ ছিল… হঠাৎ করে আকাশ মেঘলা হয়ে গেল, এবং অল্প সময়ের মধ্যেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল… আমার বন্ধু রনজিতের ভাষ্য মতে আচানক বারিষ … সত্যি আচানক বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। স্কুটার থেকে নেমে দৌড়ে ঢুকে গেলাম বিগ সিনেমাসে। লাইনে দাড়িয়ে টিকিট কাটলাম। সিনেমার নাম সিকেন্দার। সিণেমার নায়ক তামিল মেঘাস্টার সুরিয়া আর নায়িকা সামান্থা। সিনোমাটি একই দিনে তামিল ও তেলেগু ভাষায় মুক্তি পাচ্ছে। সিনেমা শুরু হতে এখনও বেশ কিছু সময় বাকি আছে। সিনেমা হলের পাসের দোকান থেকে ইন্ডিয়ান স্নাকস খেলাম।
বিশাল সিনোম হল। সিনেমা হলের পাঁচটি স্ক্রিন। আমাদের টিকিটে খেলা তিন নম্বর স্ক্রিন। আমরা তিন নম্বর স্ক্রিন খুঁজে বের করলাম। ঢুকে গেলাম সিনেমা হলে। সিনোমা শুরু হলো। বিশাল স্ক্রিন। ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেম। কি পরিস্কার প্রিন্ট। দেখতে ভালো লাগছিল। সিনেমার কাহিনি আর দশটা হিন্দি কিংবা তামিল কিংবা তামিল সিনেমার মতোই। কিন্তু বিষয় হলো, প্রত্যেকটি লোক এনজয় করছিল।সিনেমার প্রত্যেকটি দৃশ্যের সাথে প্রত্যেক দর্শক একাত্ন ছিল । আমাদের দেশের বাংলা সিনেমার এরকম দিন কি কোন দিন আসবে না ? আমরা সিনেমা হলে গিয়ে এভাবে মজা করে সিনেমা দেখতে কি কোন দিন পারব না ? নাকি শুধু আতলামির দোহায় দিয়ে দিনকে দিন নিজের সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাব ? মনের মধ্যে শুধু এই প্রশ্ন জাগ্রত হচ্ছিল…


৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×