somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সান্তা ক্লজের শহর রোভানিয়েমি: উৎসবের আনন্দের মাঝেই বাড়ছে সামরিক উপস্থিতি

১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফিনল্যান্ডের ল্যাপল্যান্ডের রাজধানী রোভানিয়েমি—যা “সান্তা ক্লজের অফিসিয়াল হোমটাউন” হিসেবে বিখ্যাত—প্রতি বছর শীতকালে বিশ্বের নানা দেশের পর্যটকে সরগরম থাকে। আর্কটিক সার্কেলের ঠিক ওপরেই সান্তার “অফিস”, রেইনডিয়ার স্লেজ রাইড, এমনকি ফিনিশ ডিজাইন ব্র্যান্ড মারিমেকোর বিশেষ স্টোর—সব মিলিয়ে শহরজুড়ে উৎসবের আবহ।

কিন্তু এবার ক্রিসমাস সিজিনে পর্যটকদের ভিড়ের পাশাপাশি আরও একটা জমায়েত দেখা যাচ্ছে—নাটোর হাজারো সৈন্য। ইউরোপ–রাশিয়া উত্তেজনার সময়ে রোভানিয়েমি এখন আন্তর্জাতিক সামরিক কার্যক্রমের কেন্দ্রেও পরিণত হচ্ছে।

কেন বাড়ছে সামরিক উপস্থিতি?

রোভানিয়েমির কাছে রোভাজারভি অঞ্চলে রয়েছে পশ্চিম ইউরোপের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া এলাকা। রাশিয়ার সীমানা থেকে মাত্র ৫৫ মাইল দূরের এই এলাকায় সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে হাজার হাজার নাটো সৈন্য প্রশিক্ষণ নিয়েছে সম্ভাব্য রুশ হামলার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে।

শিগগিরই রোভানিয়েমি হবে ফিনল্যান্ডের ফরওয়ার্ড ল্যান্ড ফোর্সেস (FLF)-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি—যা সুইডেন নেতৃত্বাধীন একটি নাটো ব্যাটলগ্রুপ, পূর্ব সীমান্তে প্রতিরোধ ফোর্স হিসেবে কাজ করবে।

পর্যটকদের চোখে যুদ্ধের ছায়া

রেইনডিয়ার সাফারির সময় স্কটল্যান্ড থেকে আসা পর্যটক ডোনা ও তার মেয়ে লায়লা হঠাৎ আকাশে সামরিক বিমানের শব্দ শুনে অবাক হয়ে যান। একই অভিজ্ঞতার কথা জানান জার্মানির হান্না শলিকার—

“ইউরোপে যুদ্ধ চলছে—আর সান্তার শহরেও সেই রিয়েলিটি থেকে পালানোর উপায় নাই” বলেন তিনি।

সান্তা পার্ক, যেখানে ভূগর্ভে তৈরি বিশাল “সান্তার গুহা”, আসলে রোভানিয়েমি শহরের মানুষের জন্য একটি বোমাশেল্টার হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে।

হান্নার ভাষায়, “ভাবতে ভয় লাগে—আমরা রাশিয়ার এত কাছে। আবার মনে হয়, অন্তত সান্তা পার্কটা তো একরকম বাংকার!”

কেন এই উত্তেজনা?

রাশিয়া–ইউরোপ সম্পর্ক সবচেয়ে টানটান অবস্থায় রয়েছে। ভ্লাদিমির পুতিন সম্প্রতি বলেছেন, ইউরোপ যদি যুদ্ধ শুরু করে, তবে রাশিয়া প্রস্তুত। ফিনল্যান্ডের ৯০০ মাইল দীর্ঘ রুশ সীমান্তের বড় অংশের দায়িত্ব ল্যাপল্যান্ডের ওপর।

ফিনিশ সামরিক দপ্তরের সতর্কতা—ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হলে রাশিয়া সীমান্তে আরও সৈন্য মোতায়েন করবে। কোলা উপদ্বীপ—যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরমাণু অস্ত্র ঘাঁটি রয়েছে—রাশিয়ার জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নাটোর মহড়া: ল্যাপল্যান্ড স্টিল ২৫

গত সপ্তাহে রোভাজারভিতে প্রায় ১,০০০ সৈন্য—ফিনল্যান্ড, সুইডেন ও যুক্তরাজ্য থেকে—অংশ নেয় “ল্যাপল্যান্ড স্টিল ২৫” মহড়ায়। এর আগেই অনুষ্ঠিত হয় “নর্দার্ন স্ট্রাইক ২২৫”, যেখানে যোগ দেয় ২,০০০ ফিনিশ ও পোলিশ সৈন্য।

বনে, তুষারে, হেলিকপ্টার ও ট্যাঙ্ক নিয়ে কল্পিত যুদ্ধে অংশ নেয় সৈন্যরা।

১৯ বছর বয়সী সুইডিশ ট্যাঙ্ক চালক আলভা স্টর্মার্ক বলেন, “ইউরোপে যুদ্ধ চলছে—রাশিয়া কাছে—তাই সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্যই আমরা প্রস্তুত হচ্ছি।”

“নতুন কোল্ড ওয়ার”–এর শঙ্কা

ফিনল্যান্ডের যেগার ব্রিগেডের কমান্ডার কর্নেল মার্কো কিভেলা বলেন, ল্যাপল্যান্ডের কৌশলগত গুরুত্ব এখন আরও বেড়েছে। তার ভাষায়, “রাশিয়া কোলা উপদ্বীপে নিজেদের সামরিক কাঠামো নতুনভাবে সাজাচ্ছে—যা নতুন এক ধরনের কোল্ড ওয়ারের ইঙ্গিত দেয়।”

লম্বা মার্চ, তুষারাচ্ছন্ন পথ—সবকিছু কঠিন হলেও ২৩ বছরের ফিনিশ কনস্ক্রিপ্ট রেবেক্কা ব্রুয়েন বলেন, “যখন দেশের জন্য প্রস্তুতি, ভয় পাই না—কারণ আমরা ভালোভাবে প্রশিক্ষিত।”

নর্ডিক সহযোগিতা: পূর্ব ফ্ল্যাঙ্ককে আরও শক্তিশালী করা

সুইডেন, ফিনল্যান্ড ও নরওয়ের সামরিক কর্মকর্তারা রোভানিয়েমিতে বৈঠক করে FLF গঠনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করছেন। নাটোর পূর্বসীমা শক্তিশালী করাই তাদের লক্ষ্য।

সুইডেনের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইকেল কারলেন বলেন, “ল্যাপল্যান্ডের বরফাচ্ছন্ন, কঠিন পরিবেশ—সামরিকভাবে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু আমাদের সক্ষমতা দেখাতে হবে—যাতে যুদ্ধের প্রয়োজনই না পড়ে।”

ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের প্রধানমন্ত্রীও যৌথ বিবৃতিতে সামরিক ও সিভিল প্রস্তুতি আরও বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

উৎসবের শহর নাকি সামরিক ঘাঁটি—দুটোই

রোভানিয়েমি একদিকে সান্তা ক্লজের আনন্দময় শহর—হাজারো শিশুর স্বপ্নঘেরা গন্তব্য।
অন্যদিকে ইউরোপের ভূরাজনীতিতে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কৌশলগত জায়গা হয়ে উঠছে।

বরফে ঢাকা এই শান্ত শহর যেন এখন দুই বাস্তবতার মাঝখানে দাঁড়ানো—উৎসবের আলো আর যুদ্ধের প্রস্তুতি।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৌলবাদ: ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যর্থ প্রযুক্তি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫১




মজার বিষয়—

আজকের মৌলবাদীরা রোকেয়া বেগমকে মুরতাদ ঘোষণা করে বুক ফুলিয়ে হাঁটে, অথচ নিজেদের অস্তিত্ব টিকেই আছে যাদের ঘৃণা করে— সেই “কাফেরদের” বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিতে। ইতিহাস পড়লে এদের বুকফুলা হাওয়া বের... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতী এখন পুরোপুরিভাবে নেতৃত্বহীন ও বিশৃংখল।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩



শেরে বাংলার নিজস্ব দল ছিলো, কৃষক প্রজা পার্টি; তিনি সেই দলের নেতা ছিলেন। একই সময়ে, তিনি পুরো বাংগালী জাতির নেতা ছিলেন, সব দলের মানুষ উনাকে সন্মান করতেন। মওলানাও জাতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট

লিখেছেন আরোগ্য, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৬



ওসমান হাদী অন্যতম জুলাই যোদ্ধা, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র, স্পষ্টবাদী কণ্ঠ, প্রতিবাদী চেতনা লালনকারী, ঢাকা ৮ নং আসনের নির্বাচন প্রার্থী আজ জুমুআর নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর গুলিবিদ্ধ হয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×