somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: ভয় -০২

২৪ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১ম পর্ব - Click This Link

খোকনের পাশ থেকে উঠে এসে সবগুলো ঘর ঝাঁট দেয় বীথি। তারপর ভাত বসায়। তরকারি রাঁধে। মুনিরা বেগম ও খোকন ঘুম থেকে উঠলে ওদেরকে খাইয়ে, নিজে খেয়ে, বাসন কুশন মেজে সব কাজ শেষ করে কলেজের জন্য তৈরি হয়। এইচ এস সি পাস করে গ্রামের কলেজটাতেই বিএ পড়ছে ও।
বাবার কারনে আজ কলেজে পড়তে পারছে
বীথি। নয়তো আজ ওর পড়াশুনাটাও বন্ধ হয়ে যেতো মুনিরা বেগমের জ্বালায়। বীথির বাবা মুনিরা বেগমের অনেক যন্ত্রণা সহ্য করেছেন বীথিকে পড়ানোর জন্য। তবু কিছুতেই তিনি মেয়ের পড়াশোনা বন্ধ হতে দেন নি। কিন্তু এবার বীথির পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যাবে হয়তো। বাবা তো আর বেঁচে নেই। কে বাঁচাবে ওকে এবার? দুশ্চিন্তায় পড়ায়
মন বসে না বীথির আজশোনী

----আইজ কলেজ যাইতে অইবো না। ঘরে থাকো।
বীথি ঘর থেকে বের হতে যাবে ঠিক তখনই মুনিরা বেগম এসে বললেন কথাটা।
----কিন্তু আমার তো আইজ খুব দরকারি একটা ক্লাস আছে।
----থাকুক দরকারী কেলাস। কইসি যাইবি না তো যাইবি না। মুখে মুখে কতা কইবি না কইয়া দিলাম। অনেক কেলাস করসো। আর দরকার নাই।
বীথি মুনিরা বেগমের কথার কোন উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে কলেজের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরে। ওদিকে মুনিরা বেগম পেছনে গজগজ করতে থাকেন।
---শইলে তেল বাড়সে তুমার। দাঁড়াও,
আইজ বাইতে আসো। বুজামু মজা কারে কয়।
আজকাল বীথির সাহস কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু সাহস করে কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে আসলেও মনের ভেতর উদ্বেগ কাজ করতে থাকে। মুনিরা বেগম ওর কলেজে যাওয়া কখনোই পছন্দ করেন নি। তার ইচ্ছের বিরুদ্ধেই ও কলেজে আসা যাওয়া করছে। আজ বাড়িতে থাকার জন্য বলেছেন। নিশ্চয়ই এর পেছনে উনার কোন উদ্দেশ্য আছে। দুশ্চিন্তার রেখা ফুটে উঠে বীথির কপালে।

আজ কলেজে আসলাম খান এসেছেন।  জমিদার বাড়ির ছেলে আসলাম খান। জমিদার বাড়িতে এখন আর কেউই থাকে না। তবে প্রায়ই গ্রামে বেড়াতে আসেন আসলাম খান। গ্রামে আসলে গ্রামটা ঘুরে ঘুরে দেখেন। গ্রামের মানুষের এটা সেটা উপকার করে বেড়ান। স্কুল কলেজ পরিদর্শন করেন।

এই কলেজটা উনারই দেয়া। যখন তিনি গ্রামে আসেন গ্রামের মানুষ এটা সেটা সমস্যা নিয়ে তার কাছে হাজির হয়। তিনি গ্রামের মুরুব্বীদের নিয়ে তখন বসেন এবং লোকগুলোর সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। আসলাম খানের বয়স প্রায় পঁয়ত্রিশ কি ছত্রিশ হবে। বিরাট বড়লোক। বিয়ে করেছিলেন দুই বছর আগে। কিন্তু সেই বিয়ে বেশিদিন টিকলো না। টিকলো না মানে, মাস খানেক হলো উনার স্ত্রী মারা গেছেন। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর এই প্রথম গ্রামে আসলেন তিনি।

     কলেজে এসে সব কিছু ঘুরে ঘুরে দেখছেন তিনি। বীথিদের ক্লাসেও আসলেন। বিধ্বস্ত চেহারা। দেখলেই বুঝা যায় খুব বেশী আঘাত পেয়েছেন।
স্ত্রীকে ভীষণ ভালবাসতেন মনে হচ্ছে। বীথির বাবা জমিদার বাড়িতেই কাজ করতেন। সেই সূত্রে বীথি আসলাম খানের পূর্ব পরিচিত। তাই ক্লাসে দেখা হলে উনি টুকটাক কথা বলেন বীথির সাথে। ভালমন্দের খবর নেন। আজও বীথিকে দেখে এগিয়ে এলেন,
---কেমন আছ বীথি?
---ভাল। আপনি কেমন আছেন, স্যার।
---ভাল। কিন্তু তোমাকে দেখে তো ভাল মনে হচ্ছে না। চোখের নিচে কালি পড়েছে। বিষণ্ন মলিন চেহারা। অন্যমনস্ক আর দুশ্চিন্তাগ্রস্থ লাগছে। এই বয়সেই এত স্ট্রেস! কী হয়েছে বলো তো।
মলিন হেসে বীথি উত্তর দেয়--
---না স্যার তেমন কিছু না। এই একটু অসুস্থ।
---ও আচ্ছা। ডাক্তার দেখাও। এই বয়সে এভাবে চোখের নিচে কালি পড়া ঠিক না।
---আচ্ছা স্যার, দেখাবো।
---আর শোন, যদি কোন সমস্যা থাকে আমাকে বলতে পারো। আমি দুই তিনদিন আছি এখানে। আমাদের বাড়িতে আসতে পারো।
---না স্যার, কোন সমস্যা নাই। হলে আপনাকে বলবো।
এরপর টুকটাক এটা সেটা সবাইকে জিজ্ঞেস করে সেখান থেকে চলে যান আসলাম খান।
আসলাম খান চলে যেতেই আবার চিন্তিত হয়ে পড়ে বীথি।

বীথিকে আজ ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে। কলেজ থেকে ফেরার পর পরই মিনারা বেগম বীথিকে খবরটা জানালেন। দেখতে আসবে মানে সব কিছু ঠিকঠাক। শুধু বিয়ের তারিখটা ঠিক হবে আজ। শুনে খুব একটা অবাক হলো না বীথি। এমন একটা কিছু ঘটবে ও আগেই আন্দাজ করেছিলো।

শত অনুনয় বিনয়েও কোন কাজ হল না। মুনিরা বেগম নিজের সিদ্ধান্তে অটল রইলেন। সেই থেকে বিছানায় পড়ে কেঁদে চলেছে বীথি। খাওয়া দাওয়া কিছুই করেনি। অবশ্য এতে মুনিরা বেগমের কিছুই যায় আসে না। বীথি খেলো কি খেলো না তার খোঁজ তিনি কোনদিনই নেন নি। বীথি কেঁদে কেটে একসার হচ্ছে তাতেও মুনিরা বেগমের কিছু যায় আসে না। এখন উনার একটাই লক্ষ্য বীথির বিয়ে দিয়ে নিজের ও নিজের ছেলের আখের গোছানো। সেটা করতে গিয়ে যদি বীথির সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চোরমারও হয়ে যায় তাতে তার কী।

বিথি একবার ভেবেছিল পালিয়ে যাবে। কিন্তু পালিয়ে যাবে কোথায় ও? ওর তো কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। এমন সময় খোকন এসে ঘরে ঢুকল।

---বুবু তুই পলাইয়া যা। এই বিয়াতে তুই কিছুতেই রাজী হইস না। মায় একটা বুইড়ার লগে তোর বিয়া ঠিক করসে। ব্যাটায় বিদেশ থাকে। অইহানে ওর বউ বাইচ্চা সবই আছে। হের বাইচ্চা কাইচ্চারও বিয়া হইয়া গেসে। ব্যাটায় দেশেও একটা বিয়া কইরা বউ রাইখা আবার চইলা যায়। ব্যাটার আগে যে বউটা দেশে আসিলো ঐ ব্যাটি কার লগে জানি ভাইগা গেসে। তাই বুইরা ব্যাটায় অহন তোরে বিয়া করতে চায়। মায় ঘটকের কাছে তোর ছবি দিয়া রাখসে। হেই ছবি দেইখা বুইড়া তোরে বিয়া করনের লাইগা পাগল হইয়া গেসে। হের বাড়ি আমাগো পাশের গেরামেই।

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামল খোকন। বীথি বেকুবের মতো চেয়ে রইলো খোকনের দিকে। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না ও। কোনরকমে খোকনকে জিজ্ঞেস করল,
---এইসব তুই কী কইতাসস ভাই?
---ঠিকই কইতাসি বুবু। বুইড়া ব্যাটায় মায়ের কাছ থাইকা তোরে কিইন্না নিসে। বিয়ার আগে মারে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিবো আর বিয়ার পরে আরও পাঞ্চাশ। কালকেই মনে হয় বিয়া হইয়া যাইবো। আইজ আইয়া মারে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়া যাইবো।

বীথি পাথর হয়ে বসে রইল। কী করবে কিছুই বুঝতে পারছিল না ও। পাশের বাড়ির ভাবী এসে ওকে শাড়ি পড়ালো। সাজিয়ে দিলো। ও পুতুলের মত সব করে যাচ্ছিল। ওর বোধশক্তি সব যেন হারিয়ে গিয়েছিল।

সন্ধ্যার পর ওরা এলো। পাশের বাড়ির ভাবী ওকে ধরে ধরে নিয়ে ওদের সামনে বসালো। লোকগুলো সব কী সব কথা বলছিল বীথির কানে কিছুই ঢুকছিল না। ও ঘোর লাগা চোখে চেয়ে দেখলো স্যুট টাই পড়া, পেটমোটা, দাঁড়িওয়ালা একটা বয়স্ক  লোক ওর দিকে তাকিয়ে লাজুক লাজুক হাসছে। আর লোকটার সাথের লোকগুলো ওকে নিয়ে কী সব রসিকতা করছে আর খেক খেক করে হেসে চলেছে।। বীথির সমস্ত শরীর গুলিয়ে উঠলো।  ভীষণ বমি পেলো ওর। ও ঘর থেকে দৌড়ে বাইরে চলে গেলো।

     রাত বারোটার কাছাকাছি। লোকগুলো খেয়েদেয়ে চলে গেছে। ঠিক হয়েছে আগামীকাল দুপুরে বিয়ে পড়ানো  হয়ে যাবে। বীথি চুপচাপ শুয়ে আছে। নিজেকে বড় অসহায় মনে হচ্ছে ওর। চোখ দিয়ে অবিরত জল গড়িয়ে পড়ছে। একবার পালিয়ে যাওয়ার চিন্তা করছে তো একবার গলায় ফাঁস লাগানোর চিন্তা করছে। বীথি আজ এই ঘরে একা। খোকন অন্য ঘরে শুয়েছে। মুনিরা বেগম এই ঘরে বীথিকে তালাবদ্ধ করে রেখেছেন। উনার সন্দেহ বীথি যেকোন সময় পালিয়ে যেতে। বীথি ভেবে দেখলো পালিয়ে যাওয়ার কোন রাস্তা নেই। তাছাড়া পালিয়ে যাওয়ার কোন জায়গাও নেই। তাই গলায় দড়ি দেয়াই মনস্থির করলো ও।

এমন সময় হঠাৎ ওর মনে পড়লো আসলাম খানের কথা। উনি কি ওকে সাহায্য করতে পারেন না। উনি তো বলেছেনই কোন সমস্যা হলে বীথি যেন উনার কাছে যায়। বীথি চট করে শোয়া থেকে উঠে বসলো। বন্ধ দরজাটার দিকে তাকিয়ে আবার মনটা ভেঙে গেলো। এমন সময় দরজাতে তালা খুলার আওয়াজ হলো।  দরজা খুলে চুপিসারে খোকন এসে ঢুকলো ভেতরে। খোকনকে দেখে যেন প্রাণ ফিরে পেলো বীথি। খোকন বলল,

----বুবু মা ঘুমাইয়া পড়সে। আমি চুপিচুপি চাবিটা চুরি কইরা আনছি। তুই ভাগ। এই দিক আমি সামলামু। যা বুবু। তোর হাতে আর সময় নাই।

বীথি ভাইকে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে চুমু খেয়ে বলল,

---তোর এই ঋণ আমি কেমনে শোধ করমু ভাই। তুই যা করলি আমার মায়ের পেটের ভাইও মনে হয় তা করতো না।

---হইসে, অহন আর কথা কইয়া সময় নষ্ট করিস না। কিন্তু তুই যাবি কার কাছে বুবু।

এইবার যেন চিন্তায় পড়ে যায় খোকন। বোনকে তো ঘর থেকে ভাগিয়ে দিচ্ছে, কিন্তু বোন যাবে কোথায় এই চিন্তা এতক্ষণ তার মাথায় আসেনি। এখন আসতেই গভীর ভাবনায় পড়ে গেল সে।

কষ্টের মাঝেও বীথির হাসি পেলো আবার ভাইটার জন্য মায়াও লাগলো। ভাইকে সান্ত্বনা দিয়ে বীথি বলল,

----তুই ভাবিস না ভাই। আছে একটা জায়গা। আমি ঐখানেই যাইতেসি। দেখি কী হয়। তুই নিজের খেয়াল রাখিস।

বোনের কথায় খোকন যেন কিছুটা আশ্বস্ত হল। বলল,

---তুইও নিজের খেয়াল রাখিস বুবু।

বীথি একটা চাদর গায়ে দিয়ে নাক মুখ ঢেকে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। ঝড়ো বেগে  রাস্তা দিয়ে হাঁটতে লাগলো ও। আজ মনে হয় জ্যোৎস্না। চাঁদের আলোয় সব ফর্সা হয়ে আছে। তবু এত রাতে একা রাস্তায় ভীষণ ভয় লাগছিল ওর। চারদিক নিরব নিস্তব্ধ। শুধু ঝিঁঝিঁ পোকার দল ডেকে চলেছে অবিরত। হঠাৎই চাঁদটাকে এক রাশ কালো মেঘ এসে ঢেকে ফেলল। চারপাশ আঁধারে ঢেকে গেলো। স্বপ্নের কথা মনে পড়ে গেলো বীথির। স্বপ্নে সে এমনই রাত দেখে।

      হঠাৎ সামনে কালো একটা ছায়া দেখতেই ভয়ে চমকে ওঠে পেছনে তাকালো ও। নাহ, কোন মানুষ না। ওঠা তালগাছের ছায়া। চাঁদটা আবার মেঘের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসতেই হঠাৎ করেই ছায়াটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। তবু বীথির গা ছমছম করতে লাগলো কেবলই মনে হতে লাগলো কেউ যেন ওর পেছন পেছন আসছে।  বুকের ভেতরটা ছটফট করতে লাগলো। হাঁটার গতি আরো বাড়িয়ে দিলো ও।

হাঁটতে হাঁটতে এবার প্রাণপনে দৌড়তে শুরু করলো। এবার পেছন ফেরে তাকানোর সাহসটাও হারিয়ে ফেলল বীথি। দৌড়তে দৌড়তে এক পায়ের চটি ছিঁড়ে গেলো। ছেঁড়া চটি পরে দৌড়তে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। চটি জোড়া খুলে ফেলে দিলো তাই। খালি পায়েই ছুটতে লাগলো। চটি না থাকায় পায়ে ব্যথা লাগছিল খুব। ধারালো কিছুতে লেগে কেটেও গেলো অনেকটা। রক্ত বের হতে লাগলো দর দর করে। কিন্তু সেসব তোয়াক্কা না করেই ছুটছে বীথি অবিরত।

জমিদার বাড়ি যেতে আরও খানিকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। কিন্তু ওর কেবলই মনে হচ্ছে এই পথ আর শেষ হবে না। তার আগেই ও মরে যাবে। কেউ ওকে মেরে ফেলবে। আশ্চর্য! কিছুক্ষণ আগেও ও মরার কথাই ভাবছিল। আর এখন মৃত্যুভয় এসে ওকে আঁকড়ে ধরেছে। এসব কথা ভেবে দৌড়তে দৌড়তে একসময় ও পৌঁছে গেলো জমিদার বাড়ির গেটে। জমিদার বাড়ির গেটে একজন দারোয়ান থাকে সব সময়। সে গেটের কাছে একটা টুলে বসে ঝিমুচ্ছিল। দারোয়ানকে দেখে বীথি যেন প্রাণটা ফিরে পায়। হাঁপাতে হাঁপাতে ও দারোয়ানকে ডাকে,

---চাচা, ও চাচা একটু উঠেন।
বীথির ডাকে দারোয়ান ধড়মড় করে উঠে বসে। বীথিকে চিনতে তার একটু সময় লাগে। এত রাতে বীথিকে এখানে দেখে সে যার পর নাই বিস্মিত হয়।  চোখ কচলে আবার তাকায়। ভাবে স্বপ্ন দেখছে কী না। বীথি তখন আবার বলে ওঠে,

---চাচা, আমারে আপনে বাঁচান। আমার বড় বিপদ।
---তুমি বীথি না? এইখানে? এত রাইতে তুমি মাইয়া মানুষ কেমনে আইলা?
---ঐসব পরে কইমু চাচা। তার আগে আমারে স্যারের কাছে নিয়া যান। আমার ভীষণ দরকার উনারে।
---না না, এত রাইতে স্যাররে ডাকন যাইব না। কী সমস্যা আমারে কও।

---চাচা আমি আপনের পায়ে পড়ি, স্যাররে একটু ডাইকা দেন। একটু কথা কইমু। স্যারই আমারে কইসে কোন সমস্যা অইলে স্যারের কাছে আইতে।

---কইসে বুঝলাম। কিন্তু এত রাইতে আইতে কইসে নাকি। তুমি কালকে আহো।

---কালকে আমার সব শেষ অইয়া যাইবো। কালকে আওন গেলে কি এত রাইতে মাইয়া মানুষ আমি একলা এইহানে আই? একটু ডাইকা দেও চাচা।

দারোয়ান একটু সময় কিছু ভাবে। তারপর বীথিকে নিয়ে ভেতরে যায়। আসলাম খান জেগেই ছিলেন। দারোয়ানের কাছে বীথির কথা শুনে তিনি বেরিয়ে এলেন।

---কী ব্যাপার বীথি, এতরাতে তুমি এখানে? কী হয়েছে? আর কী অবস্থা করেছ নিজের!
---স্যার আমার বড় বিপদ।
বীথি তখনও হাঁপাচ্ছিল। আসলাম খান বললেন,
---আগে তুমি শান্ত হয়ে বস। পায়ে কী হয়েছে? রক্ত পড়ছে মনে হচ্ছে।
---কিছুনা স্যার।
আসলাম খান উঠে ভেতরে গেলেন। ফিরে আসলেন এক গ্লাস পানি আর একটা ফাস্ট এইড বক্স হাতে নিয়ে। পানিটা তিনি বীথির দিকে বাড়িয়ে দিলেন। বীথি লজ্জিতভাবে গ্লাসটা হাতে নিলো। ওর সত্যি খুব তৃষ্ণা পেয়েছিল। তাই লজ্জা  ঝেড়ে ঢকঢক করে সবটুকু পানি খেয়ে ফেলল ও। আসলাম খান বীথির পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন। তারপর হাত দিয়ে বীথির পা'টা ধরলেন। বীথি চমকে ওঠে পা'টা তাড়াতাড়ি সরিয়ে বলল,
---ছি ছি একি করছেন স্যার আপনি?
---চুপ করে বসে থাকো।
বলে জোর করে বীথির পা'টা ব্যান্ডেজ করে দিলেন। বীথি লজ্জায় একেবারে মাটির সাথে মিশে যাচ্ছিল। এত বড় মানুষটা ওর মত একটা অতি সাধারণ মেয়ের পায়ে ধরছেন এটা যেন ও ভাবতেও পারছিল না। ব্যান্ডেজ বাঁধা শেষ করে উঠে বসে আসলাম খান বললেন,

---এবার বল কী হয়েছে?
---স্যার আমার বিয়ে।
---কী বলছ? বিয়ে? এই বয়সে?
---আমি এই বিয়ে করতে চাই না স্যার। আপনি আমাকে বাঁচান।
---অবশ্যই বাঁচাবো। কিন্তু আগে আমাকে সবটা খুলে বল।

(চলবে)
রচনাকাল
৩০-১০-২০১৮

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:৩৩
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×