somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উপন্যাসঃ জোছনাময়ী (একটা পর্ব পড়তে দিলাম ব্লগের পাঠকদের মতামতের জন্য)

১৫ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্লাসের শেষ বেঞ্চে শোয়েবের পাশে বসে নিয়মিত ক্লাস করলেও ইদানিং মেহরীনের সামনে শোয়েব বেশ আড়ষ্ট হয়ে থাকে। সেশন্যাল ক্লাস ছাড়া নিজে থেকে পারতপক্ষে খুব একটা কথাবার্তাও বলে না মেহরীনের সাথে। তবে এই অবস্থার জন্য শোয়েবকে এক বিন্দুও দায়ী করে না মেহরীন। শোয়েব এখন যা আচরণ করছে তা খুবই স্বাভাবিক আচরণ। ছেলেটা সিরিয়াস শক পেয়েছে, মনে করেছে মেহরীন স্যারের প্রস্তাবে শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে যাবে। ওদের ক্লাসে কীভাবে যেন শোয়েবের প্রেমের প্রস্তাব দেয়ার ঘটনা ফাঁস হয়ে গেছে। মেহরীনকে প্রস্তাব দেয়ার কয়েকদিন পরেই শোয়েব জানতে পেরেছে শিবলি স্যারের ঘটনা। অধিক শোকে পাথর হয়ে গেছে এখন শোয়েব। নিয়মিত হইচই করে বেড়ানো ছেলেটা এখন প্রায়ই চুপচাপ ক্লাসের শেষ বেঞ্চে বসে থাকে। ক্লাস শেষ হবার সাথেই সাথেই রুম থেকে বের হয়ে যায়। মেহরীন খোঁজখবর নিয়েছিল কোথায় যায় শোয়েব। হলে যেয়ে নিজের রুমে শুয়ে থাকে। মেহরীন শোয়েবকে হ্যাঁ বা না কোনকিছুই বলেনি। আসলে বলা বা চিন্তা করার সুযোগই পায়নি মেহরীন। আরেকটা উটকো ঝামেলা নিয়ে মহা ব্যতিব্যস্ত এখন ও।

শোয়েবকে নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করার সময় এতদিন আসেনি। অথচ শোয়েব ছ্যাকামাইসিন খেয়েছে ধরে নিয়ে নিদারুণ শোকে এখন দিন কাটাচ্ছে। স্যারের উপর ক্ষিপ্ত মেহরীন উনাকে শায়েস্তা করার জন্য অনেক ভেবেচিন্তে অন্য বুদ্ধি বের করলো। হাতির বাইরে বের হয়ে থাকা গজদন্ত এবং খাবার চিবানোর দাঁত এক না। শিবলি স্যার ওকে চিনতে বিরাট ভুল করেছে। ওকে যে পরিমান যন্ত্রণা দিয়েছে তাতে এত সহজে মেহরীন উনাকে ছেড়ে দেবে না। শাস্তি একটা দেবেই ও। সারাজনমের জন্য যেন ওকে বিয়ের করার শখ মিটে যায়। তুলা রাশির মেয়ে মেহরীন।


.......
আজকে বেছে বেছে কলাপাতা রংয়ের সেই পোষাকটাই পড়ে এসেছে মেহরীন। সকালবেলা ক্লাসে ঢুকেই সোজা একদম বামপাশে যেয়ে বসতেই শোয়েব নড়েচড়ে বসলো। মেহরীনকে একবার দেখেই শোয়েবের চোখ ছানাবড়া অবস্থা!
- আমাকে আজকে দেখতে কেমন লাগছে শোয়েব?
- হুম, ভালো।
- শুধু ভালো, না অনেক ভালো?
- অনেক ভালো।
- অন্যদিকে তাকিয়ে বলছো কেন? আমার দিকে তাকিয়ে ভালো করে দেখে বলো।
শোয়েব মাথা ঘুরিয়ে মেহরীনের দিকে তাকিয়ে বড় বড় কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার মনোযোগ দিয়ে ক্লাসনোট লেখা শুরু করলো। মেহরীন আজকে প্ল্যান করে এসেছে শোয়েবের মাথা ও আবার নষ্ট করবে। থ্রি-কোয়ার্টার জামার হাতার কাপড় কনুয়ের আরো উপরে তুলে শোয়েবের ক্লাস খাতার উপর নিজের ডানহাত নিয়ে রাখলো মেহরীন।
- কালকে রাতে অনেক কষ্ট করে মেহেদী লাগিয়েছি। দেখতো কেমন লাগছে?

মেহেদী দেয়া হাত শোয়েব খুব পছন্দ করে। মেহরীন একেবারে হাতের কনুই পর্যন্ত মেহেদী দিয়েছে। ডিজাইনটা মারাত্মক সুন্দর। শোয়েব নোট লেখা বন্ধ করে অপার বিষ্ময়ে মেহরীনের ফর্সা ডানহাত'টার দিকে তাকিয়ে আছে। আজকের মতো এই ক্লাস শেষ ওর। শোয়েব শত চেষ্টা করেও সেই ফর্সা হাতের উপর থেকে চোখ সরাতে পারছে না। কোথায় এখন এই হাত ধরে শোয়েবের নিশ্চিন্তে বসে থাকার কথা? অথচ এখন এটা দেখলেই ওর অস্বস্তি লাগছে। কার কাছে যেন শোয়েব শুনেছে মেহরীনকে কিছুদিন আগে স্যারের রুমেও যেতে দেখা গেছে। এই হাত এখন ওর দেখার অধিকারও নেই। এই মেয়ে ওর এখন প্রেমিকাও না। শুধু শুধু লোভ করে কোন লাভ নেই। টিচারদের কাছ থেকে প্রস্তাব পেলে কোন মেয়েই সহজে না করে না। শিবলি স্যার আগামী টার্মেই বিদেশে যাচ্ছে। যাবার আগে নির্ঘাত বিয়েটা করে রেখে যাবে। এই টার্ম তো পরের কথা, বুয়েটের বাকি দিনগুলি কীভাবে মেহরীনের সাথে ও ক্লাস করবে সেটা ভেবেই কোন কূলকিনারা পায়নি ও। গতকাল প্রায় সারারাতই ঘুমাতে পারেনি শোয়েব। কিছুতেই চোখে ঘুম আসছিল না মেহরীনের স্যারের রুমে যাবার কথা শুনে। স্যারের সাথে মেহরীনের বিয়ে হয়ে গেলে নিশ্চিত একটা টার্ম ড্রপ দিতেই হবে শোয়েবের। এছাড়া কোনভাবেই এখানে পড়াশুনা করা সম্ভব হবে না। জোর করেই নিজের চোখ খাতা রেখে ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে গেলো শোয়েব।

মেহরীনের হঠাৎ করেই খুব খারাপ লাগলো শোয়েবের জন্য। ছেলেটা অযথাই অনেক কষ্ট পাচ্ছে। শোয়েব যে ওকে অসম্ভব পছন্দ করে সেটা খুব ভালো করেই জানে ও। ক্যাফেটেরিয়াতে একবার যেই তুঘলকি কাণ্ড ঘটিয়েছিল ওকে নিয়ে! নিজের অজান্তেই মেহরীনের কান দুইটা লালাভ হয়ে উঠলো। বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে আলতো করে নিজের ডানহাত শোয়েবের হাতের উপর রাখতেই একলাফ দিয়ে শোয়েব দাঁড়িয়ে গেলো। গর্ধবটা এতদিনেও মানুষ হলো না। মৃদুস্বরে মেহরীন একটা ধমক দিতেই আবার বসে পরলো শোয়েব। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে শোয়েব এখন মেহরীনের দিকে তাকিয়ে আছে। এইমাত্র যেটা ঘটলো তার কোন ব্যাখ্যা ওর কাছে কি আছে? নাহ! ঘটনার মাথামুণ্ডু কিছুই না বুঝে হতভম্ব হয়ে শোয়েব মেহরীনের দিকে তাকিয়ে রইলো।
- আজকে ক্লাস শেষে তোমাকে নিয়ে একটা জায়গায় ঘুরতে যাবো শোয়েব। ঠিক আছে?
- কোথায় যাবে?
- বাংলাবাজারে। কিছু বই কিনবো। একা এতদূর যেতে সাহস পাচ্ছি না। প্লীজ আমার সাথে চলো, কিছু বই কিনে নিয়ে আসবো।
মেহেরিন কী বই কিনবে সেটা খুব ভালো করে জানে শোয়েব। এখানে আগেও ওর সাথে গিয়েছে। কোন কোন প্রকাশনীর দোকানে যাবে সেটাও জানে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে শিবলি স্যার'কে রেখে ওকে কেন এখন টানাহ্যাঁচড়া করা হচ্ছে বই কিনতে যাওয়ার জন্য? পাটা-পুতার ঘষাঘষির মাঝখানে পরছে না তো ও? শেষে এই যাবার জন্য স্যারের কোপানলে না পরতে হয় ওকে?
- আমার সাথে কেন, স্যারের সাথে যাও। উনি অনেক খুশি হবে তুমি সাথে নিয়ে গেলে।
- ওই হারামজাদার নাম তুমি আরেকবার আমার সামনের উচ্চারণ করলে আমি এখনই এই বেঞ্চ থেকে উঠে অন্যদিকে চলে যাবো। আর কোনদিনও আমি তোমার পাশে বসবো না।

চমকে উঠে শোয়েব সত্যিই জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালো। সূর্য আজকে সত্যিই ঠিকমতো উঠেছে তো? মেহরীন আর যাই হোক মিথ্যে কথা বলে না। কিন্তু কাহিনি কী?
- সত্যি করে বলতো মেহরীন, তোমার সাথে স্যার কোন অশোভন বা অশালীন আচরণ করেছে?
- করলে কী করবে?
- শুধু একবার বলে দেখো। তারপর দেখো আমি কী করি?
- ভার্সিটির টিচারের গায়ে হাত তুলবে?
- দরকার পরলে তুলবো। তোমাকে নোংরাভাবে অপমান করবে আর আমি ছেড়ে দিবো?
ঝট করে আগের কিছু স্মৃতি ফিরে আসতেই মেহরীনের মনে পড়ে গেলো মাথা গরম শোয়েবের পক্ষে যে কোন অঘটন ঘটানো সম্ভব। তাড়াতাড়ি মেহরীন বলে উঠলোঃ
- না না। সেরকম কিছু ঘটেনি। উনাকে আমার একদম পছন্দ হয়নি। তুমি আবার না জেনে উল্টাপাল্টা কিছু ভেবে থেকো না। সত্যি বলছি!

সত্যি কথা বলছে নাকি পরীক্ষা করার জন্য শোয়েব নিজের দুইহাতের মাঝে মেহরীনের ডানহাতটা টেনে নিলো। মেহরীন সেটা দেখেও না দেখার ভান করে মাথা ঘুরিয়ে ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে তাকিয়ে রইলো।

কাকে দিয়ে কী কাজ হবে সেটা ভালো করেই জানে মেহেরিন। গতকালকে সন্ধ্যার পর ৩০০ টাকা খরচ করে বাসার উল্টোদিকের পার্লারে যেয়ে দেড়ঘন্টা সময় নষ্ট করে হাতে মেহেদী দিয়েছে ও। সময় এবং টাকা কোনটাই যে বৃথা যায়নি শোয়েবের চোখের দিকে তাকালেই সেটা টের পাওয়া যাচ্ছে। গাধাটা বুঝতেই পারেনি মেহেদি পার্লারে যেয়ে দিয়েছে ও। ক্লাসের বাকী সময়টা শোয়েব এভাবেই মেহরীনের ডানহাতটা ধরে বসে থাকলো। একদম শেষ দিকের বেঞ্চ হওয়ার কারণে এটা কারো চোখেই পড়লো না।

মেহরীন এখন মহাখুশি। ওর প্ল্যানের প্রথম অংশ আশাতীতভাবে সফল হয়েছে। মেহরীন নিশ্চিত ছিল শোয়েবকে পটাতে ওর বেশি সময় লাগবে না। এই ছেলে অনেক আগে থেকেই ওর জন্য ফিদা হয়ে আছে। এর জন্য ও নিজেও কিছুটা দায়ী। কেন যেন শোয়েবকে প্রশ্রয় দিতে ওর নিজেরও ভালো লাগে। আপাতত এভাবেই কয়েকদিন যাক। শোয়েব ওর সাথে আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে আসুক। এরপর ওর প্ল্যানের দ্বিতীয় অংশ বাস্তবায়ন করবে ও।


........
মেহরীন মোবাইলে ফোনকল কেটে দিয়েই শোয়েবকে হাতের ইশারায় ডাক দিলো। সেন্ট্রাল লাইব্রেরির উলটো দিকের খোলা মাঠে শোয়েব সহ বেশ কয়েকজন বন্ধু বান্ধবীদের নিয়ে অনেকদিন পরে আড্ডায় বসেছে মেহরীন। শোয়েব উঠে ওর কাছে আসতেই মেহরীন নিজেও উঠে দাঁড়ালো। মাঠ বসা সবার দিকে ফিরে বললোঃ
- আমি শোয়েবকে নিয়ে একটু পলাশী যাচ্ছি। কিছু ফটোকপি করতে হবে। সেখান থেকে ফিরে আমরা সোজা ক্লাসে চলে যাবো।

মেহরীন আর কোন কথা না বলে শোয়েবকে নিয়ে আর্কির পিছনের রাস্তা দিয়ে সোনালী ব্যাংকে যাবার রাস্তার দিকে দ্রুত হাঁটা শুরু করলো। শোয়েব কিছুটা অবাক হলেও মুখে কিছুই বললো না। ফটোকপি করার ব্যাপারে ও কিছুই জানে না। মেহরীন বেশ জোরে হাঁটছে। সাধারনত এত জোরে হাঁটে না ও। কিছুটা জোরে কদম ফেলে মেহরীনের পাশে দাঁড়াতেই মেহরীন ওর দিকে তাকিয়ে আঙ্গুল দিয়ে আর্কির বাউন্ডারি হাফ-দেয়ালের একটা বিশেষ জায়গা দেখিয়ে বললোঃ
- শোয়েব দেখো, ঠিক এই জায়গায় তুমি আমাকে প্রোপোজ করেছিলে।
- করে কী লাভ হয়েছে? পুরো টার্ম ধরেই আমাকে ঘুরাচ্ছো। রাজি তো হচ্ছো না!
- আমার সাথে প্রেম করতে চাও?
- হ্যাঁ চাই।
- আমি যা বলবো তাই করতে পারবে?
- হ্যাঁ পারবো।
- তাহলে আমার হাত ধরে হাঁটো। শোন, বড় কিছু জীবনে পেতে হলে অনেক কিছু স্যাক্রিফাইস করতে হয়। পারবে?
শোয়ের নির্দ্বিধায় মেহরীনের ডানহাত ওর বামহাতের ভিতরে নিয়ে হাঁটতে শুরু করলো। শোয়েবের বুক এখন ধুকধুক করছে। মেহরীন কি ওর প্রস্তাবে এখন হ্যাঁ বলে দেবে? গত তিনদিন ধরে মেহরীন খুব ভালো ব্যবহার করছে, ঠিক আগের মতো।
- অবশ্যই। তোমার জন্য আমি সবকিছু করতে পারবো। শুধু একবার বলেই দেখো?
মেহরীন ঘাড় ঘুড়িয়ে শোয়েবের দিকে ফিরে একবার ভালো করে দেখে নিয়ে বললোঃ
- তোমার টাফেস্ট কম্পিটিটর শিবলি স্যার এখন ঐদিক থেকে আসছে। আমি এইমাত্র মোবাইল ফোনে খবর পেয়েছি। তুমি ভালোমতো আমার হাত ধরে রাখবে। মনে রাখবে, এটাই তোমার শেষ সুযোগ আমাকে পাবার। স্যার যেন দেখে মনে করে আমাদের অনেকদিন ধরে প্রেম চলছে। কিন্তু এটা দেখলে উনি উনার সাবজেক্টে তোমাকে আমাকে সোজা মুলিবাঁশ দেবে। আগেই জানিয়ে দিলাম, রেজাল্ট খারাপ হলে পরে আমাকে দোষ দিতে পারবে না। বুঝতে পারছো আমি কী বলতে চাইছি?

শোয়েব মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে আগে বিনম্র শ্রদ্ধা জানালো এতবড় সুযোগ পাবার জন্য। আজকে যে কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠেছিল ও? নির্ঘাত মায়ের। না হলে এত বড় পয়মন্ত সুযোগ ওর জীবনে আসে কীভাবে? মেহরীনের হাত ছেড়ে দিয়ে সাথে সাথেই একেবার গাঁ ঘেষে হাঁটা শুরু করলো। নিজের বামহাত দিয়ে মেহরীনের কাঁধের কাছটা ধরে বেশ অন্তরঙ্গ ভঙ্গীতে হাঁটছে এখন শোয়েব। শিবলি স্যারকে এখন রাস্তার ঐ প্রান্তে দেখা যাচ্ছে। মেহরীন কপট রাগের ভঙ্গীতে শোয়েবের দিকে ফিরে বললোঃ
- সুযোগের সদ-ব্যবহার করছো তাই না? এর শাস্তি তুমি অবশ্যই পাবে।
শোয়েব দেঁতো হাসি দিয়ে মেহরীনকে বললোঃ
- সারা টার্ম ধরে উনি আমাকে যা কষ্ট দিয়েছেন, তার শোধ আমি এখন একবারে উসুল করে নেবো।

মেহরীন কী বলবে সেটা ভেবে বের করার আগে স্যার ওদের সামনে চলে আসলে শোয়েব এই অবস্থাতেই হাসিমুখে বললোঃ
- আসসালামু আলাইকুম স্যার।
শোয়েবকে এভাবে সালাম দিতে দেখে মেহরীন রীতিমতো অবাক। এতো দেখি খাল কেটে আস্ত কুমির ডেকে আনছে শোয়েব। এই ছেলের সাহস তো দেখি আসলেই বেশি। শিবলি স্যার সালামের উত্তর দেয়া তো দূরের কথা, রীতিমতো হতম্ভব হয়ে একবার শোয়েব, একবার মেহরীনের দিকে তাকাচ্ছেন। এতবড় একটা ঘটনার কিছুই জানেন না উনি? এই বজ্জাত মেয়ে তো এইজন্য উনার কোন কথাই পাত্তা দিতো না। একটা সামান্য ছাত্রের জন্য শিক্ষককে পায়ে ঠেললো বেকুব মেয়েটা। এত আস্ত গাধা দেখি!
- ক্লাস না করে কোথায় যাচ্ছো তোমরা এখন?
শোয়েব এই প্রশ্নটার জন্যই অপেক্ষা করছিল। হাসিমুখে স্যারের দিকে তাকিয়ে বললোঃ
- স্যার, আজকে আমাদের এ্যাফিয়ার এ্যানিভার্সারী। বাইরে ডেটিংয়ে যাচ্ছি এখন।
দুর্দান্ত সাহসী মেহরীনের পর্যন্ত গলা শুকিয়ে এলো এই ভয়াবহ ডায়ালগ শুনে। স্যারের সামনে দুইজন মিলে হাত ধরে হাঁটার যে প্ল্যান করেছিল মেহরীন সেটা তো নস্যি শোয়েব এখন যা করছে তার সাথে। হাত পা হালকা কাঁপছে এখন ওর। শোয়েবের আজকে হয়েছে কী? এত সাহস ও পেলো কোথায়? এই টার্মে ডাইরেক্ট ফেইল না করিয়ে দেয় ওদের দুইজনকে!

শিবলি স্যার স্তব্ধ হয়ে গেলো কিছুক্ষণের জন্য শোয়েবের এই একবছরের হিসাব শুনে। হায় খোদা কাকে উনি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন!
- ফাজিল, বেয়াদপ কোথাকার। একক্ষন ক্লাসে যাও।
- স্যরি স্যার। আজকে আর আমরা ক্লাস করবো না, বাইরে ঘুরতে যাবো। এ্যানিভার্সারী তো আর সারা বছর থাকে না।

স্যারকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই শোয়েব প্রায় টেনেই মেহরীনকে নিয়ে সেখানে থেকে চলে আসলো। সোনালী ব্যাংকের পাশ দিয়ে ছোট গেট দিয়ে পলাশীতে বের হবার পর এই রোমাঞ্চকর দমবদ্ধ অবস্থা থেকে অবশেষে ছাড়া পেলো মেহরীন। বেশ বড় বড় করে দুইজনই শ্বাস নিলো মুক্ত বাতাসে। এই টার্মে নির্ঘাত একটা ডি মাইনেস আজকে কনফার্ম করে ফেলেছে শোয়েব ওদের দুইজনের জন্য। এফও দিতে পারে, বলা যায় না।
- তুমি কী আন্দাজ করতো পারছো এর ফলাফল কী হতে পারে? কী ধরনের শাস্তি পাবে বলে আশা করছো তুমি?
- ফোর টুতে উঠে একসাথে দুইজন এই কোর্সটা আবার নিবো। তুমি তো বলেছো বড় কিছু পেতে হলে কিছু জিনিস স্যাক্রিফাইস করতে হয়। তোমাকে পাবার জন্য আস্ত তিন ক্রেডিটের একটা কোর্স স্যাক্রিফাইস করলাম। সন্তুষ্ট হয়েছ?
- উম! যাও তখন দুষ্টামি করার জন্য যে শাস্তিটা দেবো ভেবেছিলাম সেটা মাফ করে দিলাম।
- তুমি মানুষ না অন্যকিছু?
- কেন কী করেছি আমি?
- এত্তবড় উপকার করলাম আর এত সামান্য প্রতিদান দিলে?
- প্রতিদান? যা করেছ তা তো পুরোটাই নিজের জন্যই করেছো। একধাক্কায় পুরো রাস্তা ফাঁকা করে ফেললে।
- রাস্তা কি আসলেই পুরোপুরি ফাঁকা হয়েছে?

মুখ টিপে হাসছে মেহরীন। ধান্দাবাজ ছেলে, ওর মুখ থেকে শোয়েব কী শুনতে চাইছে সেটা খুব ভালো করেই জানে ও। ছেলেদের বেশি লাই দিতে নেই। দিলেই বানরের মতো মাথায় উঠে বসবে। বরং আরো বেশ কিছুদিন ওর পিছনে পিছনে ঘুরুক। মেহরীন যে কত দূর্লভ একটা মেয়ে সেটা ভালোমতো বুঝুক। সারাজীবন মনে থাকবে ওকে পাবার জন্য কত কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে।
- ক্যাম্পাস থেকে যখন বের হয়েছি আর ফিরবো না আজকে। চলো কোথাও ঘুরে আসি শোয়েব? তোমাকে আজকে খুব ভালো কোথায় খাওয়াবো আমি।
শোয়েব সরু চোখে মেহরীনের দিকে তাকিয়ে আছে। ওকে দিয়ে কাজ উদ্ধার করে অল্প কিছু পুরষ্কার দিয়ে ফুটুস হবে না তো? এত অল্পকিছুতে শোয়েবের পোষাবে না। দুই একটা ফলে ওর হবে না। আস্ত গাছই ওর দরকার।
- আমরা কি আজকে ডেটিংয়ে যাচ্ছি?
মেহরীন ঝট করে এই প্রশ্নের উত্তর দিলো না। খুব ট্রিকি প্রশ্ন। শোয়েব খুব বুদ্ধিমান ছেলে। এইজন্যই মেহরীন ওকে পছন্দ করে। শোয়েবের দিকে ফিরে খুব সুন্দর করে একটা উভয়বোধক হাসি দিলো। এখন শোয়েব যা ইচ্ছে তাই বুঝে নিক। এই কাজ শোয়েব ওর সাথে বহুবার করেছে। সুতরাং এটা ওর পাওনা।

শোয়েব খুব কনফিউজড হয়ে গেলো এই হাসি দেখে। দ্বিতীয়বার এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করাও বিশ্রি দেখায়। বরং ও অন্যরাস্তায় হাঁটা শুরু করলোঃ
- জাহাঙ্গীরনগর ভার্সিটিতে অতিথি পাখি এসে ভরে গেছে। দেখতে যাবে? সারাদিনের প্ল্যান হবে এটা। রাজি আছো?
ইচ্ছে করেই শোয়েব সারাদিন ধরে ঘুরে বেড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। মেহরীন কোনভাবেই আজকে ওকে না বলতে পারবে না। এতবড় সুযোগ ও কোনভাবেই হাতছাড়া করবে না।
- আমাকে শেষে বাসায় পৌছে দিয়ে আসবে তো?
- অবশ্যই। নিশ্চিন্ত থাকো। কোনদিন পৌছে দিয়ে আসিনি বলো?

কথা অতিশয় সত্য। শোয়েব যথেষ্ঠ কেয়ারিং এইসব ব্যাপারে। আজকে ওর জন্য যা করেছে তাতে এই সুযোগটা ওকে দেয়াই যায়। যদিও ওদের মাঝে কোন প্রেমের সর্ম্পক নেই, শোয়েবের সাথে একটা ভার্চুয়াল ডেটিং করে দেখাই যায় প্রেমিক হিসেবে পারফরম্যান্স কেমন হবে? শোয়েবের প্রস্তাবের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতেও সাহায্য করবে এটা।

হাসিমুখে এগিয়ে এসে নিজের ডানহাত শোয়েবের দিকে এগিয়ে দিলো মেহরীন।


অফ টপিকঃ এই উপন্যাস আমি খুব ধীরস্থিরে লিখছি। বুয়েট নিয়ে আগে লিখিনি। এটাই প্রথম। এটার জন্য লেখা দুইটা কবিতা আমি আগে ব্লগে পোস্ট দিয়েছিলাম। নীচে লিংক দিলাম।
কবিতাঃ কপালে টিপ
কবিতাঃ অবহেলা

লেখা কেমন হচ্ছে জানাবেন। আপ্নাদের মতামতের অপেক্ষায় থাকবো।

@ জোছনাময়ীঃ মহিউদ্দিন মোহাম্মাদ যুনাইদ, ২০২০
.
সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইল।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীল আকাশ, নভেম্বর ২০২১

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫৪
১৫টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×