somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সবুজ রোদে হলুদ টিয়া

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দমবন্ধ এক অস্থিরতায় পায়চারী করছে মিতু। বৈঠকখানার পুবের জানালা হতে দক্ষিনের জানালা পর্যন্ত প্রচন্ড অস্থিরতায় হাঁটাহাঁটি করছে সে। একবার মোবাইল স্ক্রিনটায় তার চোখ, আরেকবার স্কুলবাড়ির পাশে কোমর ভেঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা নারকেল গাছটার দিকে। ওর এই অকারণ উদ্বেগ দেখলেই যে কেউ বুঝবে যে, সে খুব করে কারো জন্য অপেক্ষা করছে। মাঝে মাঝে ভেতরবাড়ির দিকের দরজায়ও সন্তর্পনে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে সে।

উঠোনের এক কোনে বড় পাকঘরটায় রান্না করছেন মা। এই মাত্র ডাল তেলে দিলেন। পাঁচফোড়নের এক মৌমাতাল সুঘ্রান ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। তার চোখ ফাকি দেওয়া মনে হয় স্বয়ং বিধাতারও সাধ্যি নেই। তবুও মিতু সেই অসাধ্য সাধন প্রায়ই করে ফেলে। মাঝে সাঝে ধরা খায়। তবে তা তার অসাধ্য সাধন করে ফেলার তুলনায় সেসব এ্তই কম যে মিতুর তার জন্য তেমন কোনো আফসোস নেই।

"ট্রেইন থেকে নামসি এইমাত্র। আর দশমিনিটের মধ্যে পৌছে যাবো। তুমি বৈঠকখানার জানলায় থাকবা। মনে থাকে যেন।" এই এসএমএসটা করেছে রাতুল ২৯ মিনিট আগে অথচ এখনও কেনো যে তার টিকির দেখাটাও মিলছেনা। ভেতরে ভেতরে প্রচন্ড রাগ উঠছে ওর। সাথে অস্থিরতাও। আরে সেই সাত সকাল থেকেই তো নারকেলগাছটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ ব্যাথা হয়ে গেলো ওর।

আর একবার এসএমএস করতে মোবাইলের বোতামটা টিপতেই স্কুলবাড়ির পাশ দিয়ে দেখা গেলো ব্যাগ হাতে রাতুলকে। সাথে সাথে বর্ষার মেঘ মেঘ রোদ্দুর আকাশ যেন ঝিকমিকিয়ে এক উদাস বেলা হয়ে গেলো আর কোমর ভাঙ্গা নারকেল গাছের ঝিরিঝিরি পাতাগুলো বুঝি এক ঝলক হাওয়ার টানে ঝিলমিলিয়ে হেসে উঠলো। সেউ সবুজ হাসিটা ছুয়ে গেলো মিতুর চোখে মুখে।

জানালার নীল ফুল তোলা পর্দাটা একটুখানি সরিয়ে উঁকি দিলো সে। রাতুল ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে। মানে হাসছে নিশ্চয়ই কিন্তু এতদূর থেকে ওর মুখে হাসিটা ঠিক দেখা যাচ্ছে না। যদিও মিতু নিশ্চিৎভাবে জানে যে রাতুলর মুখে এখন মিটিমিটি হাসি।

এই যাহ্‌! হলো এইবার! কাজীচাচার পাল্লায় পড়ছে রাতুল। চাচা হাত পা নেড়ে কি কি যেন বলছে । নিশ্চয় বলছে,
- কি ব্যপার বেডা? কহন আইলা? আজ বিয়াইনে নাকি কাল হাঝবেলায়?
আর রাতুল নিশ্চয় বলছে,
- না চাচা কেবলি আইলাম।
-তা কয়দিন থাকবা? ঈদে কয়দিন ছুটি?
- ঈদের পরেই পরীক্ষা চাচা। ঈদের তিনদিন পরই যাইতে হবে। শুধু ঈদ বইলাই আসা। নাইলে আসা হইতোনা চাচা।
এসব কথোপকথন অবশ্য শোনা যাচ্ছেনা। তবু মিতুর ইন্দ্রীয় খুব প্রখর। তাই সব বুঝে নিচ্ছে সে।
যত্তসব।কাজিচাচা এই পথে যাবার আর সময় পেলোনা। ভ্রু কুচকে ওঠে মিতুর। রাগে গজ গজ করতে থাকে সে।
আবার হাসি ফুটে ওঠে মিতুর মুখে। কাজীচাচা হাঁটতে শুরু করেছেন । আর রাতুল এগিয়ে আসছে এই দিকে।
মিতুকে অনেক দূর থেকেই জানালায় দেখেছে সে। জানালাটার পাশে এসে যখন ও দাঁড়ালো হঠাৎ তখন মিতুর এতক্ষনের এত অস্থিরতা কই যে পালালো আর সেখানে এসে জড়ো হলো কথা থেকে যে এক রাশ রাজ্যের লজ্জা। রাঙা হয়ে উঠলো মিতুর দু গাল। বেগুনি রঙের সালোয়ার কামিজ আর সবুজ ওড়নায় ওকে তখন দেখাচ্ছিলো ঠিক যেন এক সতেজ কলমীলতা ফুল।
- কেমন আছো মিতু?
-ভালো। লজ্জায় চোখ তুলে তাকাতে পারছেনা কেনো সে, এটা ভেবে মিতুর নিজের উপরে প্রচন্ড রাগ লাগতে শুরু করলো। কিন্তু সেই রাগ আর লজ্জা মিলে মিশে এমন এক মুখ হলো তার যে রাতুল হেসে ফেললো।
জানালার শিক ধরা হাতটা ধরে কি যেন বলতে গেলো রাতুল। সাথেসাথেই ভেতর বাড়ি থেকে মায়ের গলা ভেসে এলো।
- মিতু উ উ উ । জানালায় কি করিস এতক্ষন!
রাতুলের হাতের মধ্যে ধরা হাতটা যেন সাথে সাথে জানালার শিকসহ কেঁপে উঠলো ওর।
- আসছি মা। এখুনি....
হেসে ফেললো রাতুল। তাড়াতাড়ি বললো বিকালবেলা আমাদের বাড়িতে আসিস। ভুলিসনা যেন।
ততক্ষনে ওর হাতের মাঝে মিতুর কোমল পেলব আঙ্গুলগুলো মোচড়া মুচড়ি শুরু করে দিয়েছে। ছেড়ে দিতেই দৌড়ে পালালো মিতু।

শব্দ করে হেসে ফেললো রাতুল আর তারপর বাড়ির দিকে পা বাড়ালো।

অসমাপ্ত

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:০২
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×