somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অরিত্রির খোলাচিঠি

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তোমরা কি আমাকে চিনতে পারছো? আমি অরিত্রি। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছো, অরিত্রি অধিকারী। 'অধিকারী' টাইটেলটা এখন আর ভালো লাগে না আমার। একটা সময় অনেক কিছুই অধিকার করে থাকতাম; ভালোবাসার অধিকার নিয়ে কথা বলতাম বাবা-মায়ের সাথে, পিচ্চি বোনটাকে আদর করতাম অধিকারের জায়গা থেকে, শিক্ষকদের সম্মান করতাম ছাত্রীর অধিকারে, বন্ধুদের সাথেও খুনসুটি করতাম অধিকার নিয়েই। কিন্তু এখন আর কিছুই অধিকার করে নেই আমি। সব অধিকার, চাওয়া-পাওয়া, আকাঙখা, হতাশা, আবেগ, অনুভূতি থেকে চলে গিয়েছি অনেক অনেক দূরে।
.
তোমরা যখন মায়ের কোলে মাথা রেখে লেপের নিচে আরামে ঘুমাচ্ছো, আমি তখন আমার বাবা-মায়ের থেকে অনেক অনেক দূরে। তোমাদের মাথার উপরে মেঘ, তারও অনেক উপরে বসে বসে একা একা কাঁদছি। আমার ভীষণ একা লাগছে, জানো? মনে হচ্ছে, সেদিন আত্মহননের পথটা আমার বেছে নেওয়া ঠিক হয়নি। মনে হচ্ছে, আমি যেন হেরে গেছি! আমি তো হেরে যাওয়ার পাত্র ছিলাম না! কত কষ্ট করে দিনরাত খেটে পড়ে দেশের সেরা স্কুল অ্যান্ড কলেজে চান্স পেয়েছিলাম! বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে নিয়মিত ক্লাসে যেতাম, ভালো ফল করার চেষ্টা করতাম। কত স্বপ্ন ছিলো বুকের মাঝে নিজেকে নিয়ে, একদিন অনেক বড় কিছু হবো বলে, সবকিছু শেষ হয়ে গেলো! কেন করলাম আমি এমন? কেন নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না?
.
বিশ্বাস করো বন্ধুরা, আমি মোটেও ভীরু কাপুরুষ নই। আমি এটাও খুব ভালো করে জানি যে আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। কিন্তু আমি আসলে তখন খুব অসহায় বোধ করছিলাম। চোখের সামনে আমার জন্মদাতা বাবা-মায়ের অপমান আমি সহ্য করতে পারিনি। যে বাবা আমাদের দুটি বোনের পড়ালেখার জন্য শত কষ্টেও সবকিছু করতে রাজি ছিলেন, যে মা একা হাতে সংসার সামলে আমাদের বড় করেছেন, আমার এক ভুলের জন্য তাঁদের অমন অপমান আমি সইতে পারিনি। আমি দেখলাম, আমার বাবা-মাকে একবার বসতেও বলা হলো না, চা তো দূরের কথা। রুমভর্তি স্যার-অভিভাবকদের সামনে তাঁদেরকে বাজেভাবে তিরষ্কার করা হলো, যেন আমাকে জন্ম দিয়ে তাঁরা অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছেন! আমাকে নাকি টিসি দিয়ে দেওয়া হবে! এতো কষ্ট করে এখানে কতজনকে পিছনে ফেলে কতটা প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে চান্স পেয়েছি! অথচ.. আমাকে এই স্কুল থেকে বের করে দেবে? দিলে আমি কোথায় গিয়ে ভর্তি হবো? সবাই আমাকে দেখে হাসাহাসি করবে। আমি কোথাও মুখ দেখাতে পারবো না হয়তো! এসব ভেবেই..
.
আমার কি দোষ ছিলো, বলতে পারো বন্ধুরা? মানলাম মোবাইল ব্যবহার করা বা সাথে রাখা ঠিক না। কিন্তু দিনকালের যা অবস্থা, আমি একটা হবু ষোড়শী মেয়ে.. মা দুশ্চিন্তা যাতে না করেন, সবসময় যোগাযোগ রাখা যায়, তাইতো মোবাইল! মোবাইল থাকলেই যে সবাই তা দিয়ে নকল করবে বা প্রেম করবে তা কি ঠিক? আমি অন্যায় করেছি পরীক্ষার হলে মোবাইল নিয়ে, এজন্য স্যারেরা আমাকে বকাঝকা করতে পারতেন, অথবা ফেইল করাতে পারতেন। কিন্তু আমার বাবা-মায়ের কি দোষ? তাদের চোখে জল আমি সইতে পারিনি বন্ধুরা! আমাকেও কি আমার দোষটা বুঝিয়ে বললে আমি শুনতাম না?
.
বন্ধুরা,
আমি চলে আসার পর তোমরা আমার জন্য কেঁদেছো, কাঁদছো, প্রতিবাদ করছো। উপর থেকে দেখে আমার আরও কষ্ট হচ্ছে। তোমরা আমাকে এতো ভালোবাসো জানলে আমি এই পথ বেছে নিতাম না। আমি তোমাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি তো আর ফিরে আসতে পারবো না তোমাদের মাঝে। তোমাদের কারো যেন আমার মতো মরতে না হয় সেই কামনা করি। আমার বাবা-মা আর ছোট বোনটাকে একটু দেখে রেখো। আর যখন তোমরা অনেক বড় হবে, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার, মন্ত্রী-সচিব, কিংবা প্রিন্সিপাল হবে, তখন সাধারণ, দুর্বল আর অনুজদের প্রতি তোমাদের আচরণ যেন হয় মানবিক। এইটুকুই চাওয়া শুধু তোমাদের কাছে আমার। ভালো থেকো সবাই। ভালোবাসা নিও।

কল্পনাঃ দেব দুলাল গুহ।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×