আপনি আপনার ক্ষমতা সম্পর্কে জানেন। আপনি খুব ভালোই ধারনা রাখেন আপনার লেখার প্রভাব কোথায় কোথায় পরে। আপনার যেকোন মতামত অনেক বড় ব্যপার। আপনি অনেক জ্ঞানী মানুষ। আপনার মতামতকে আমরা অনেক বড় করে দেখতে শিখেছি।
কিছুদিন থেকে কালের কন্ঠে আপনার ফাউনটেন পেন পড়ছি। আপনার অমচনীয় কালিতে লেখা আত্মজিবনী। অনেক আগ্রহ নিয়ে পড়ছি। প্রিয় লেখকের অনেক তথ্য জানতে পারছি। নিজেকে অন্যভাবে একাত্ম করতে পারছি। সেখানে আপনি খুব সুন্দর করে বলেছেন আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের ছোট্ট একটা ভুল নিয়ে। বলেছেন গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের ভুল করতে নেই। আপনার কাছ থেকে এই তথ্যটি পেলাম। আমি সম্পূর্ণ একমত।
কালের কন্ঠের Click This Link এই লেখাটি পড়ে আমি খুবই শঙ্কিত হয়ে যাই। আপনিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। এই মন্তব্য করা কি ঠিক হল?
আমি বিশ্বায়নের বিপক্ষে নই। তবে এমন কোন বিষয় চাইনা যাতে আমার নিজের ক্ষতি হয়। যেকোন দেশ থেকে চলচ্চিত্র আমদানী করতে আমার কোন আপত্তি নেই যদি তা ভালো ছবি হয়। এই ইন্ডিয়ান চলচ্চিত্রগুলোন কি ভালো? আমি অনেকগুলোন হিন্দি ছবি দেখার চেষ্টা করেছি এবং ফলাফল ভয়াবহ। আমি ৯৫% সময় সেগুলোকে বিভিন্ন হলিউড ফিল্মের নকল হিসেবে পেয়েছি। আমাকে আপনি দয়াকরে বলবেন কেন নকল ছবিগুলোন দেখতে হবে? চুরি করা গুণকে কি সমাদর করা উচিৎ? আমি এটা করতে পারব না।
আমরা অনেক হলিউড ফিল্মকে অশ্লীল বলে দূরে সরাই। কিন্তু তুলনা করে দেখেছি মুম্বাইয়ের ছবিগুলো আরো অশ্লীল। যে দেশের সকল বিপনন ব্যবস্থাই এখন যৌনতার সুরসুরিতে চলে তা’র কাছ থেকে কি আশা করবেন? কেন বলছি একটু ব্যাখ্যা করি:
টুয়েনটি টুয়েনটি ক্রেকেট বিশ্বকাপ চলছে এখন। স্টার ক্রিকেট নামের ভারতীয় একটা চ্যানেল এটি সম্প্রচার করে। খেলায় প্রতি ওভারের সময়ে বিজ্ঞাপন দেখায় (যদিও সেটা আমি দেখতে চাইনা)। এই বিজ্ঞাপনের একটা অংশ সুগন্ধির। যেখানে রগরগে যৌনতা ছাড়া আর কিছুই নেই।
আমি ফটোগ্রাফি করি। নগ্নতা, যৌনতা, অ্শ্লীলতা এই বিষয়গুলোন আলাদা আলাদা ভাবে বুঝি। ইন্ডিয়ানদের যৌনতা সামগ্রী হতে পারে, আমাদের দেশে এখনো ঠিক হয়ে ওঠেনি। আমি রগরগে যৌনতা পারিবারিক টিভি রুমে দেখতে চাই না। আমার অনাগত সন্তানের কথা চিন্তা করলে এখন চোখে অন্ধকার দেখছি।
ভারত দেশটার জন্য আমি এখন টিভি দেখি না। যে চ্যানেলগুলোন এক সময় দেখতাম তার সবগুলোনই এখন ভারত থেকে সম্প্রচারিত হয়। এবং যেকোন ভালো চ্যানেলকে কিভাবে রেইপ করা যায় তার খাঁটি কারিগর ভারত। কেন? বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপন নামক যন্ত্রনার কারনে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি এখন আর দেখি না। আর অন্য চ্যানেলগুলোর কথা বাদ দিলাম। হুমায়ূন স্যার আপনি কি জানেন বাংলাদেশে ইন্ডিয়ান পণ্যের বিপনন-বিজ্ঞাপন ব্যবস্থায় অনেক কম টাকা ব্যয় করা হয়? কারন তাদের টেলিভিশন আগ্রাসন সেই কাজটি করে দেয়। আমাদের বিজ্ঞাপন ইন্ডাস্ট্রির জন্য অনেক বড় ক্ষতি।
তাদের তৃতীয় শ্রেণীর টিভি চ্যানেলগুলোন আবার পয়সা দিয়ে দেখতে হয়। একজন লোকের অনেক গুলোন বউ ছিল আবার সেই অনেক বউদের অনেকগুলোন স্বমী ছিল টাইপ কাহিনী গুলোন পয়সা(!) দিয়ে আমরা দেখি। দেখতে বাধ্য হই। কেন হই? আমাদের দেশের চ্যানেলগুলোকে সি ব্যান্ডে ট্রান্সমিট করা হয়। যা দেখার জন্য অনেক বড় ডিশ অ্যান্টেনা লাগে। যার ইন্সটলেশনও অনেক ঝামেলার। তাই আমরা ক্যাবল অপারেটরদের কাছ থেকে চ্যানেলগুলোন দেখি। আমি কি কি দেখতে চাই সেটাও বড় ব্যাপার নয়! তারা কি কি দেখাবে সেটাই ফাইনাল। কোন অপশন নাই। আমরা সবাই জিম্মি ম্যাংগো পিপল (আম জনতা)। যদি টিভি চ্যানেলগুলোন কু ব্যান্ডে (Ku) সম্প্রচার করতো তাহলে অনেক ছোট ডিশ (আসলেই একটা থালার সাইজ) দিয়ে দেখতে পারতাম। কিন্তু এই কাজটি করা হয়না। ক্যবল অপারেটরদের ব্যবসায়ীক ক্ষতি বিবেচনা করে। আবার ক্যাবল অপারেটরদের আজেবাজে চ্যানেলগুলোন নিতে বাধ্য করে একটা মাত্র প্রতিষ্ঠান। যার নাম ন্যাশনওয়াইড কমিউনিকেশন। এই প্রতিষ্ঠানটি ভারতের সব অখাদ্য চ্যানেলের একমাত্র পরিবেশক এবং রাজনৈতিকভাবে অনেক সক্রিয়। এখানেও মনোপলি। সরকার এগুলোন নিয়ে ভাববে কেন? সরকার তো নৃত্বাত্ত্বিক বিষয়ে ভাববে না। ভাববে কিভাবে বিরোধি দলকে প্যাচে ফেলান যায়। আর কোন প্রতিষ্ঠিত নামকে কিভাবে পরিবর্তন করা যায়। চলছে চলবে। খুব অবাক হবো না কোনদিন আমাদের দেশের চ্যানেলগুলোতে ইমপোর্টেট ভারতীয় সিরিয়াল দেখলে।
ইন্ডিয়া তাদের চ্যানেলগুলোকে প্যাকেজ আকারে এখন কু ব্যান্ডে সম্প্রচার করছে পয়সার বিনিময়ে (টাটা স্কাই, িডস টিভি, এয়ারটেল)। হুমায়ূন স্যার আপনি কি সরকারকে অনুরোধ করতে পারেন না আমাদের দেশের চ্যানেলগুলোকে একই ভাবে সম্প্রচার করার জন্য? এই সম্প্রচার হবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিচার করে। যেখানে বাংলাদেশি পনে্যর বিজ্ঞাপন থাকবে। থাকবে আমাদের নিজস্ব মডারেশন। এই কাজটি করা অনেক জরুরী। তাহলে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও মানুষ বিনোদনের চাহিদা মেটাতে পারবে। কারন এই ধরনের িডস রিসিভার ২০০০টাকায় পাওয়া যায়।
হুমায়ূন স্যার আপনি লিখতে পারতেন ‘কেন বাংলাদেশ সরকার আজেবাজে ইন্ডিয়ান চ্যানেলগুলোর কাছ থেকে বিজ্ঞাপণ প্রচার করার জন্য অতিরিক্ত টাকা নিবে না’ কিন্তু আপনি তা করেন নি। আপনি তাদের ফিল্মকেই দেখলেন। যে ফিল্ম সস্তা মানের হেরোইনখুরি (গাজাখুরি শব্দটা লজ্জিত) কাহিনি ছাড়া আর কিছুই নয়।
আপনি লিখতে পারতেন ‘যেহেতু ভারতী ছবি এই দেশে নিষিদ্ধ তাহলে কেন ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলোকেও নিষিদ্ধ করা যাবে না’ তা আ্পনি লিখেন নি। আপনি অনেক বড় মাপের মানুষ। এত ছোট বিষয় নিয়ে অবশ্য আপনি লিখবেন না। আপনি আপনার লেখনী দিয়ে অনেক সুক্ষভাবে মানুষকে নাড়াতে পারেন। আর আপনার প্রিয় দেশটার সংস্কৃতিকে যে অনেক সুক্ষভাবে নাড়িয়ে দিচ্ছে তা দেখেন না? আপনার দেশটার ইন্ডাস্ট্রি নষ্ট হচ্ছে তাও দেখছেন না।
স্যার আমি দেশের হলগুলোতে ভালো সিনেমা দেখতে চাই। ভারতীয় সিনেমা যদি দেখান স্পষ্ট করে বলতে হবে যে এটা কোন সিনেমার নকল (আমি ১০০ভাগ সিওর নকলবাজি না করে ওরা কিছু করতে পারবেনা) এবং এটার ভালো ছবি (!) হওয়ার যোগ্যতা। আর শুধু ভারতীয় ছবি কেন ফরাশি, ইটালিয়ান, জাপানিজ, পোল্যান্ড, ইংল্যান্ডের ফিল্মগুলোন কি বিশ্বায়নের বাইরে? এগুলো কয়েকটা হলে না এনে বেশী আকারে আনা হোক। প্রতিযোগিতা করলে অরিজিনালের সাথে করি। কপি কালচারের সাথে না।
আপনি দেশী কায়দায় নাচে গানে ফাইটে ভরপুর একটা বাংলা সিনেমা বানিয়ে দেখুন তো! বুঝতে পারবেন আমাদের সমস্যাগুলোন কোথায়। তখন আপনি অন্য লেখা লিখবেন। আমি আশা করব আপনি এরপরে অবশ্যই আর একটি লেখা লিখবেন। যে লেখায় আপনি সরকারকে অনুরোধ করবেন চলচ্চিত্র বিষয়টাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে অন্তর্ভুক্ত করার। আপনি অনুরোধ করবেন দেশে অনেক ভালো একটা ফিল্ম ইন্সটিটুট করার জন্য। আপনি আপনার ক্ষমতার ব্যাপারে যেমন জানেন, আমরাও জানি। কোন একটার পরিবর্তনকে অনেক মূল থেকে করতে হয়। আপনি এই কাজটি করুন প্লিজ। অনেক সম্ভাবনার দেশ আমাদের। এই সম্ভাবনাগুলোন আপনার ক্ষমতা দিয়ে সবাইকে দেখিয়ে দিন।
শুভ কামনা।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১০ দুপুর ১২:২৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



