somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুমায়ূন আহমেদ স্যারঃ একজন লেখকের প্রতি ভালবাসা ও কিছু কথা

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজন গুণী লেখক কিংবা নির্মাতার প্রতি ভালবাসা, শ্রদ্ধাবোধ থাকা স্বাভাবিক। তাঁর প্রতি সেই শ্রদ্ধাবোধ এবং ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ করাটাও দোষের কিছু না। কিন্তু সেটা তখনই কেবল দোষের হয়ে দাঁড়ায় বলে আমি মনে করি- যখন সেই নির্মাতা কিংবা লেখকের চরিত্রের প্রতি ভালবাসা দেখাতে গিয়ে সেটাকে দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করা হয় এবং অবিকল রূপ দিয়ে গিয়ে নাক-মুখ-চোখ-কান সব বসানো সত্ত্বেও উলটো পালটা জায়গায় যখন সেগুলোকে বসিয়ে দেয়। একজন স্রষ্টার হাতেই তার সৃষ্টি সবচেয়ে সুন্দর রূপে ফুটে উঠতে পারে- তার বাহিরে এসে ভক্তরা যতই চেষ্টা করুক না কেন- সেই চরিত্রকে কখনই নিজের হাতে গড়তে পারবে না। হুমায়ূন আহমেদ স্যারের বাকের ভাই চরিত্রটা আমার জীবনের সবচেয়ে দূর্বল ও সবচেয়ে ভালবাসার একটা সৃষ্টি। এবং আমি জানি এই চরিত্রটির প্রতি তাঁর নিজের কতটা ভালবাসা থাকতে পারে। ঠিক একই হিসেব হিমু, মিসির আলী কিংবা বড় চাচার ক্ষেত্রেও। হুমায়ূন আহমেদ যখন নিজের হাতে তাঁর চরিত্রগুলোকে সাদা কাগজের ভুবন থেকে ছোট পর্দার নড়বড়ে প্রিন্টের ফিল্মে ভরেও দর্শকদের কাছে নিয়ে আসতেন- সেটা ছিল সারা দিন মুটেগিরি করে দিন শেষে ত্রিশটাকা জমিয়ে রাতের বেলা রাস্তার পাশের বেড়ায় ঘেরা সস্তা হোটেলে ডাল ভাত খাওয়ার সময় জীবনের সেরা বিনোদন। আধপেট খেয়ে রাস্তার ধারের কোনো টিভি মেকানিকের দোকানে ভীড় করে সাদা কালো টিভির সামনে বসে বাকের ভাইয়ের নানান ভুল ভাল ইংরেজী ডায়লোগ, আনিসের সাপ দেখে ভয় পাওয়া কিংবা বড় চাচার কফিনে আটকা পরার ঘটনাগুলো দেখে নিমেষেই ভুলে যেত সারা দিনের হাড় ভাঙ্গা খাটুনির কথা। এক চিলতে হাসি কিংবা হয়ত দম ফাটা হাসিতেই ভরে যেত মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে দিনমজুর, রিক্সাওয়ালা শ্রেণী পর্যন্ত সব মানুষের মুখগুলো। কলমের জোরে মানুষের হৃদয় পর্যন্ত পৌছানো সম্ভব- কিন্তু সাধারণ মানুষের মন পর্যন্ত পৌছানো সবার পক্ষে সম্ভব না। যারা বই পড়ে না, হয়ত সাদা কাগজ ভরানো অক্ষরে ঠাসা মোটা মলাটের ভেতরে বাঁধা বইগুলো যাদের কাছে দুর্বোধ্য- তাদের কাছ পর্যন্ত পৌছে গিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ নামের মানুষটি। সবাই পারে না। নক্ষত্রের আলো বুকে ধারণ করার শক্তি থাকতে হয়। এই মানুষটার তা ছিল।
বি.টি.ভি.তে “কোথাও কেউ নেই” নাটকটি যখন দেয়া হচ্ছিল- আমার বয়স খুব সম্ভব চার কি পাঁচ হবে। প্রায় আঠারো উনিশ বছর আগের কথা। হুমায়ূন আহমেদের বানানো সেটাই আমার দেখা প্রথম নাটক ছিল। আমার এখনো সেই সময়ের সব কথা মনে আছে। মনে আছে বাকের ভাইয়ের লাশ নিতে আসা মোনার মুখটা। তারপর নদীর পার দিয়ে আদিগন্ত বিস্তৃত মেঠো পথটা ধরে মোনার চলে যাওয়া ডুবতে থাকা সূর্যের রক্তিম দিগন্তটার দিকে। আমি সেখানেই বিদায় জানিয়েছিলাম মোনা কিংবা বাকের ভাইকে। আমি চাইনি এর পরেও আরো কিছু ঘটুক। আমার স্মৃতিতে মোনার চলে যাওয়া দিগন্তের লাল হয়ে আসা সেই পথটা চিরকালের জন্য গেঁথে দিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। আমি এই স্মৃতিতে আর কোন নতুনত্বের প্রলেপ দিতে চাইনি। ওটাই ছিল আমার দেখা শ্রেষ্ঠ হুমায়ূনী নাটক এবং হুমায়ূন আহমেদের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি।
বাংলাদেশের হুমায়ূন আহমেদ বলে যে কেউ একজন আছে- বোধ করি বহুব্রীহি, অয়োময়’এর সময়েও মানুষ হয়ত তেমনটা টের পায়নি যতটা না পেয়েছিল বাকের ভাইয়ের এই নাটক বি.টি.ভি.র পর্দায় আসার পর। আর এই একটা নাটক দিয়েই তিনি বাংলাদেশের প্রতিটা পরিবারের খুব আপন একজন মানুষ হয়ে উঠেছিলেন। যিনি কিনা আমাদের রান্না ঘরের চিনির বয়মের অবস্থা জানতেন, জানতেন আলমারির কোনো একটা ছোট কোণায় প্রতি মাসে মা একশো একশো করে টাকা জমিয়ে রাখতেন দুধের টিনে, তিনি জানতেন সন্ধ্যা হলেই বাবা বেত হাতে আমাদের পড়ার টেবিলের সামনে গম্ভীর মুখে এসে বসতেন, দু মিনিট যেতে না যেতেই ট্রান্সলেশন জিজ্ঞেস করতেন, শব্দার্থ জিজ্ঞেস করতেন। তিনি জানতেন অফিসের বড় সাহেবেরা কীভাবে দিনের পর দিন বেঁধে দেয়া সময় ভেঙ্গেও অহেতুক খাটিয়ে নিতে পারে, তিনি জানতেন এই বাংলাদেশের প্রতিটা অলিতে গলিতে কত ছেলে ছোকরা মোটর সাইকেলে বসে সান গ্লাস লাগিয়ে বাকের ভাইয়ের মত ঘুরে বেড়ায়- তিনি জানতেন আমরা কোথায় কীভাবে বেঁচে আছি। বোধ করি দ্বিতীয় আর কোন মুক্তিযুদ্ধত্তর বাংলাদেশী নাট্য নির্মাতা আমাদের বেঁচে থাকাটাকে এত নিঁখুত করে ছোট পর্দায় তুলে আনতে পারেননি। তিনি পেরেছিলেন। কারণ তিনি হুমায়ূন আহমেদ।
সেই হুমায়ূন আহমেদের প্রতি ভালবাসা থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু না। বরং ভালবাসা না থাকাটাই হয়ত ভ্রুঁ কুঁচকে তাকাবার মত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমস্যাটা হল তাঁর প্রতি ভালবাসা দেখাতে গিয়ে আমাদের মাঝে অনেকেই গুলিয়ে ফেলেছেন যে স্রষ্টার হাতেই তাঁর সৃষ্টিগুলো পূর্ণতা পায়। কিছু অসমাপ্ত জিনিসের মাঝেও পূর্ণতা থাকে- যদি সেটা জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় সব বদলে দেয়া স্রষ্টার হাতে হয়ে থাকে। হুমায়ূনের সৃষ্টি চরিত্রগুলোও ঠিক তাই। তিনি যতটুকু করেছেন, যা করেছেন- এক বাক্যে আমি বলে দিতে পারি- তিনি মাপ জোখ ঠিক রেখে সব করেছেন। কোথাও কোনো ছন্দ পতন ছিল না। কোথাও কোনো অসামঞ্জস্য ছিল না। বাকের ভাইয়ের নাটকটা অসমাপ্ত ধাঁচের হলেও সেটাই ছিল তাঁর সবচেয়ে অসাধারণ সৃষ্টি।
কিন্তু বহুদিন পর আজকে যখন রেদওয়ান রনি পরিচালিত “সেই সময়ে সেই সব মানুষেরা” (নামটা সম্ভবত এটাই, আমার কাছে পুরোটা নেই শুরু থেকে) দেখতে বসেছিলাম। বছর খানেক আগের নাটক। দেখা হয়নি ডিস নেই বলে। আমার বন্ধু নেট থেকে ডাউনলোড করে দিয়েছে দেখার জন্য। বেশ নাম ডাক শুনেছিলাম, সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ এই নাটক নিয়ে। তাই আগ্রহের বশেই আজ দেখতে বসলাম। সঙ্গে ছিল পাশের বাসার আজাদ। ছেলেটা ক্লাস নাইনে উঠবে এবার। ওর প্রসঙ্গে বললাম এ কারণে যে ছেলেটা আগে কখনো “কোথাও কেউ নেই’ “আজ রবিবার” কিংবা “হিমু” দেখেনি। এক সঙ্গে সব হুমায়ূনী চরিত্র দেখতে পাবে বলে তাকে দেখতে আনা। যেহেতু হুমায়ূন আহমেদের বই সে এখনো পড়েনি- বই পড়ার অভ্যাস নেই ছেলেটার। তাই ভাবলাম নাটক দেখুক। সবাই যেহেতু এত প্রশংসা করেছে- ভালই হবে হয়ত।
যাহোক, ছেলেটাকে দীর্ঘ তিন ঘন্টার মত সময় লাগিয়ে নাটকটা দেখালাম- নিজেও দেখলাম। এবং দেখা শেষে দীর্ঘ একটা মুহূর্ত চুপ করে থম মেরে বসেছিলাম পিসির সামনে। পেছন থেকে আজাদ এক সময় গলা খাকারি দিয়ে উঠল, “ভাই, নাটক তো ফাস কেলাস বানাইছে! হিমু ভাইরে ভালই লাগছে। তয় বাকের ভাই, বড় চাচা এইগুলারে পুরাই বেহুদা কেরেক্টার লাগছে। ফাউল জিনিস!”
আমি জবাব দেয়ার অবস্থাতে ছিলাম না তখন। কারণ নাটকটা দেখে আমি নিজেই হতভম্ব। একজন লেখক কিংবা নির্মাতার প্রতি ভালবাসা থাকা খুব ভাল কথা- কিন্তু সেটার বহিঃপ্রকাশ যদি এমন হয় যে সে নিজেই সেই চরিত্রগুলোকে ঘেটে বেড়াবে- তখন সেটা আর ভালবাসা থাকে না। হয়ে যায় লেখকের অবমাননা আর তাঁর সৃষ্ট চরিত্রের বিকৃতি। “সেই সময়ে সেই সব মানুষেরা” নাটকটায় সেই সব বিকৃতির ছড়াছড়ি হয়ে আছে। আজকের একটা ছেলে যখন এই নাটক প্রথম দেখবে- সে ধরেই নেবে বাকের ভাই কিংবা বড় চাচা- মিসির আলি চরিত্রগুলো কোনো মাপেরই কিছু নয়। অথচ আমি এই নাটকটা শেষ হওয়ার পরেও মোনার চলে যাওয়া সেই গোধূলির রাস্তাটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। আজাদ দেখতে পায়নি। কারণ আজাদ যে নাটকটা দেখেছে সেখানে কোথাও গোধূলির আলোয়া মেঠো পথ ধরে কারো চলে যাওয়া ছিল না, ছিল না ইট পাথরের দেয়ালে ঠাসা এক শহরে আমাদের জীবনগুলো। খুব অবহেলায় সব যেন ছুড়ে দেয়া হয়েছে সেই যুগের কাঁপতে থাকা টি.ভি পর্দার অসাধারণ চরিত্রগুলোকে। নাটকটা দেখার পর আজাদের কথাটা শুনে আস্তে আস্তে ওর দিকে ফিরে তাকালাম আমি। কিছু একটা বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না। একটা নিঃশ্বাস ফেলে ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “রাতে কিছু করবে নাকি?”
“নাহ। ইস্কুল ছুটি। ক্যান?”
“সন্ধ্যার সময় বাসায় চলে এসো। আরেকটা নাটক দেখাবো।” বিড়বিড় করে উত্তর দিলাম।
আজাদ ঘাড় কাত করে উঠে চলে গেল। আমি তখনো থম মেরে বসে আছি পিসির সামনে।

সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত আমি আজাদকে “আজ রবিবার” আর “কোথাও কেউ নেই” নাটক দুটো দেখালাম আমার পিসিতে। রাত সাড়ে এগারোটায় আমার বাসা থেকে এগারো বছর বয়সী একটা ছেলে শার্টের হাতায় চোখের পানি মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেছে। আমার কষ্ট লাগেনি একটুও। কারণ সে বাকের ভাইয়ের চলে যাওয়াতে কেঁদে দিয়েছে। এর আগের সময়টাতে মতি আর বড় চাচার নানান কান্ড কারখানা দেখে হেসেছিল। দীর্ঘক্ষণ হাসার পর “কোথাও কেউ নেই” দিয়ে ছেলেটা আজ আমার দেখা শৈশবের সেই দিগন্তের পথটা নিয়ে চলে গেছে। সত্যি বলতে কি আমি নিজেও কেঁদেছি অনেক দিন পর। কাঁদার মাঝেও সুখ আছে। শৈশবের সেই দিগন্তটা আমি চাইলেই প্রতিদিন একবার করে হলেও দেখতে পারতাম নাটকটা চালিয়ে দিয়ে- কিন্তু কোনোদিন সাহস হয়নি সেই ছোটবেলার পর থেকে। কিন্তু আজকে আজাদকে দেখানোর জন্য হলেও নাটকটা চালিয়ে দিয়ে বসেছিলাম মূর্তির মত। ফিরে গিয়েছিলাম সেই সব দিনগুলিতে। যেখানে হুমায়ূন স্যার আমাকে একটা বিশাল দিগন্ত দিয়ে গেছেন।
সামান্য একটা নাটক নিয়ে আমার এত আবেগ দেখানো খুব অস্বাভাবিক হতে পারে অনেকের কাছেই। কিন্তু আবেগটা কোথায় কেউ যদি খুঁজতে আসে- আমি এক বিনা দ্বিধায় বলে দিতে পারবো- একজন লেখকের সৃষ্টিকে তাঁর হাতেই থাকতে দেয়া উচিত- গভীর ভালবাসা দেখাতে গিয়ে কখনো সেই চরিত্রকে দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করার অর্থ হল সেটাকে বিকৃত করা। কেন মিছিমিছি এসব করতে যাওয়া?
সত্যজিৎ রায়ের প্রফেসর শঙ্কু কিংবা ফেলুদার মত বিখ্যাত লেখা গুলোরও অনেক অসমাপ্ত কাহিনী আছে। কিন্তু সেগুলোকে পূর্ণ করতে যাওয়ার কোনো অর্থ নেই। অপূর্ণ সৃষ্টিরও আলাদা মহিমা রয়েছে। হুমায়ূন আহমেদ স্যার হঠাৎ করেই চলে যাওয়ার পর ফেসবুক, পত্র-পত্রিকা নানান জায়গায় হিমু-মিসির আলী নিয়ে হাজার কাহিনী, হাজার ধাঁধাঁর খেলা, ক্যুইজ প্রতিযোগীতা, গল্প প্রতিযোগীতা হতে দেখেছি আমি- যেখানে আবেগি পাঠকেরা নিজের কলমের নিবে তুলে নিয়েছেন হুমায়ূন আহমদ স্যারের অসাধারণ সেই সব চরিত্রগুলোকে। আপন ইচ্ছায় নাচিয়েছে যে যেমন পেরেছে। আমার সবচেয়ে অপছন্দের জিনিস এটাই- কারো চরিত্রকে নিয়ে টানা হেঁচড়া করা আমার একেবারেই পছন্দ না। ভালবাসা প্রকাশের হাজারটা উপায় আছে। নিজেকে লেখকের জায়গায় বসিয়ে তাঁর চরিত্রগুলোকে নাড়া চাড়া করা উচিত না। কেননা লেখক নিজে যখন সেটা দেখেন- খুশি হতে গিয়েও থমকে যান এক সময়, তীব্র একটা কষ্ট দানা বেঁধে ওঠে ক্রমশ তাঁর ভেতরে- কারণ তাঁর অতি ভালবাসায় সৃষ্ট সেই চরিত্র গুলোকে যখন অন্য আদলে চোখের সামনে ঘুরে বেড়াতে দেখেন- কষ্ট লাগাটাই স্বাভাবিক।
রেদওয়ান রনিও হয়ত স্যারকে অনেক ভালবাসেন, কিন্তু ভালবাসার প্রকাশটা সম্পর্কে তার কোন ধারণা আদৌ আছে বলে আমার মনে হয় না। সেই সঙ্গে ইন্টারনেট-পত্র পত্রিকায় যারা নিজেরা হিমু-মিসির আলির কাহিনী লিখে যাচ্ছেন গভীর ভালবাসার চোটে- তাদেরকেও আমি অকাট মূর্খ বলে মনে করি। কারো তৈরি কোনো চরিত্রের প্রতি মমত্ব জাগা খুবই সাধারণ ঘটনা যদি সেটা সেই মাপের হয়ে থাকে- কিন্তু সেটার ভুল প্রয়োগে নতুনদের মাঝেও যে ভুল ধারণা সৃষ্টি হতে পারে- এটা অনেকেই বুঝতে পারছে না।
নিজের কথাই বলি, হুমায়ূন আহমেদ স্যারের মৃত্যুর পর আমি অনেকদিন লিখতে পারিনি। স্যারের প্রতি আমার ভালবাসার শেকড় গেঁথেছিল তাঁর নাটকগুলো আর মিসির আলী পড়ে। হিমুও পড়তাম প্রচুর। কিন্তু আমি তো কখনো আবেগের বশে স্যার চরিত্রগুলো নিয়ে লিখতে বসিনি? বসতে তো পারতাম- আমিও তো তাঁর লাখ লাখ পাগল ভক্তদের একজন- কেন বসিনি তাহলে?
বসিনি শুধু এটা ভেবে যে আমি জানি লেখকদের প্রতি ভালবাসা তাঁদের চরিত্রগুলোকে নিজের হাতে তুলে নিয়ে নয়- ধারণ করতে যদি পারা যায়- তবেই লেখকের প্রতি যথার্থ সম্মান জানানো হবে।
আমি অনুরোধ করবো (যেহেতু ফেসবুকেই টুকটাক মানুষজন আমার লেখাটা পড়ছেন) শুধু হুমায়ূন আহমেদ স্যার নয়- প্রিয় যে কোন লেখকের প্রতি ভালবাসা জানাতে গিয়ে কখনো তাঁদের চরিত্রগুলোকে নিয়ে অহেতুক লিখবেন না। কারণ আপনি যাই করুন না কেন- সেটা অবশ্যই বিকৃতিই হবে। অন্য কিছু নয়।
সত্যজিতের শঙ্কু, সুনীলের কাকাবাবু, হুমায়ূনের হিমু-মিসির আলী- সবকিছুই আমার ভাল লাগে। কিন্তু ভাল লাগলেই কি লেখতে হবে?
বাংলাদেশের দুই দশক ধরে টি.ভি. পর্দার পেছনে থাকা সেই মানুষটা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন বটে- কিন্তু তাঁর জন্য আমাদের ভালবাসা কমে যায়নি। বোধ করি কখনো কমবেও না। কারণ হুমায়ূন আহমদ আমাদের সবার ঘরের মানুষ ছিলেন। আমাদেরই একজন ছিলেন। তিনি আমাদের সাথেই প্রতি সপ্তাহে মেঝে দখল করে ছোটদের সাথে নাটক দেখতে বসতেন, তিনি রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে রঙ চা খেতে খেতে কুলি মুটেদের দলে মিশে নাটক দেখতেন শীতের রাতে মেকানিকের দোকানের সামনে ভীড় জমিয়ে।
তিনি আমাদের মানুষ ছিলেন। ক’জন হুমায়ূন পারে এটা?
ভবিষ্যতের মানুষগুলোকে তাই ভ্রান্ত ধারণা থেকে মুক্তি দিন। কে জানে আপনার অসতর্কতার কারণে ফেসবুক কিংবা পত্রিকায় দেয়া নতুন হিমুর কাহিনী পড়ে নতুন কেউ ভুল হিমুকে চিনতে শুরু করবে- যাকে কিনা আমরা চিনি না, হুমায়ূন চিনতেন না। খুব কি দরকার এটা?
আমাদের হুমায়ূন স্যারকে আমাদের নতুনদের চেনানোর কাজটা আমাদেরকেই করতে হবে। যাতে ওরা বাকের ভাইয়ের ফাঁসির ঘটনা দেখে শার্টের হাতায় চোখের পানি মুছতে মুছতে বাসায় চলে যায়। আর আমার মত হয়ত লাল হয়ে আসা একটা দিগন্তের পানে চলে যাওয়া মেঠো পথ দেখবে সারা জীবন ধরে। হুমায়ূন স্যারের সেই উপহারটুকু ওদের কাছে পৌছে দেয়াটা এখন আমাদের হাতেই।
আমাদের এত কাছের এই মানুষটাকে যদি ওরা না চিনলো- কেমন করে হয়?
হুমায়ূন আমাদের জন্য আরো কত শত শৈশব রেখে গেছেন। তাঁকে আরো যে কত প্রজন্মের প্রয়োজন জানে কেউ?
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×