somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্য বুক অব রেনে শ্যা

২৩ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক.
আমাদের জাহাজটা শেষ রাতের দিকে ডুবেছিল। বাহিরে ঠিক কি হচ্ছিল টের পাচ্ছিলাম না। শুধু শব্দ শুনে নিচ থেকে অনুমান করতে পারছিলাম টর্নেডোর আঘাতটা বেশ ভাল মতই লাগছে। খড় কুটোর মত জাহাজটাকে বার বার শূণ্যে ছুঁড়ে দিচ্ছিলো দীর্ঘ কয়েকটা সেকেন্ডের জন্য। পরক্ষণেই প্রচণ্ড ঝাকি খেয়ে আছড়ে পড়ছিল পাহাড় প্রমান ঢেউ গুলোর গোড়ার দিকে। তারপর হয়ত আবারও ঢেউয়ের চূড়ায় তুলে শূণ্যে ছুঁড়ে দেয়া। আমাদের যে সেলটায় রাখা হয়েছিল সেটা একেবারেই জাহাজের খোলের নিচ দিকের একটা জায়গায়। পানির লেভেলের সমান সমান। ছোট্ট একটা জানালা মত আছে গোলাকার, সেটাতেও মোটা মোটা শিক লাগানো। পানি সেই জানালা থেকে তিন চার ফিট নিচে থাকার কথা। যদিও টর্নেডোর ঝাপ্টায় আর বোঝার উপায় থাকছে না পানির অবস্থাটা। খুপরি টাইপের সেল। দরজা বাহির থেকে বন্ধ, তালার ঝন ঝন শব্দ আসছে কেবল জাহাজের আছাড় খাওয়ার সময়। মেঝেতে খড় বেছানো। মাটির পানির সরাটা এর মধ্যেই ভেঙে চৌরির হয়ে গেছে। ইঁদুরের বন্দী দশা হয়েছে আমাদের। সেলে আমি ছাড়াও আরো দুইজন ছিল। লং আইল্যান্ডের কিনা বোঝা যাচ্ছিল না। তবে বেশ ভূষায় মাল্লা কিংবা জেলে শ্রেণীয় লাগছিল। কথা বার্তাও রীতিমত তুবড়ি ছোটানো। হড় বড় করে যে কি বলে দুয়েকটা শব্দ ধরতে পারলেও বাকিগুলো কানের পাশ কেটেই বেরিয়ে যায়। শিক্ষিত না। ফ্রেঞ্চ জানে না বোধ হয়। আমার আবার ইংরেজী বিদ্বেষ রয়েছে। সব কথা একারণেই ধরতে পারছিলাম না। আর যতটুকু ইংরেজী জানি সেটাও বই খাতার ভদ্র ইংরেজী। লোকাল ল্যাঙ্গুয়েজের সঙ্গে তেমন একটা পরিচয় নেই। বয়সে দুজনেই আমার চেয়ে দশ পনেরো বছরের ছোট হবে। আছাড় খাওয়ার সময়টা জানালা দিয়ে হুড় মুড় করে বানের মত পানি ঢুকে যাচ্ছে দেখে তাৎস্বরে চেঁচাচ্ছে দুটোই। অনুমান ভুল করলাম নাকি? মাল্লা হলে তো এতো সহজে ভয় টয় পাওয়ার কথা না। যাগ্যে, এদের নিয়ে না ভাবলেও চলবে আমার। খুনের আসামী হয়ে মানুষ নিয়ে চিন্তা ভাবনা না করলেও চলে।
আমি এক কোনায় চুপচাপ ছোট একটা খুঁটির সঙ্গে দড়ি দিয়ে নিজেকে বেঁধে রেখেছিলাম। যেভাবে আছাড় খাচ্ছি, তাতে বাঁধা না থাকলে এতক্ষণে নাক মুখের বারটা বেজে যেতো। বাকি দুজনেও একই ভাবে বেঁধে ফেলেছে নিজেদের। দরজার খোলার উপায় নেই। ধাক্কা ধাক্কি করে রেখে দিয়েছে বহু আগেই। আমি বসেই আছি। এতো আছাড় খেয়েও আমাদের কেউই এখনো বমি করেনি। বোঝাই যাচ্ছে সমুদ্রে আজকেই নতুন না।
ওপরে কি হচ্ছে ঠিক বোঝা যাচ্ছিলো না। তবে তিন মাস্তুলের কোনো একটা ভেঙে পড়ার শব্দ স্পষ্ট পেয়েছিলাম। বাহিরের এতই বেশি শব্দ যে মানুষের চিৎকার কিংবা অন্য কিছুর শব্দ আলাদা ভাবে বোঝার উপায় নেই। এমনকি একেবারে পানির কাছে, জানালার কাছে এসে বিদ্যুতের কমলা শিখাগুলো যখন পড়ছিল- সেগুলোরও কোনো আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল না ঠিক ভাবে। কেবল একটানা বাতাসের গর্জন আর পানির উন্মাদ হুংকার। তবে মাস্তুলটা যখন ভাঙল- জাহাজটা টর্নেডোর সেন্টার অতিক্রম করছে। এখানে ঝক ঝকে চাঁদের আলোও দেখা যায় মিনিট খানেকের জন্য। পানিও চুপচাপ। তবে বেশি সময় লাগেনি। সেন্টারে গিয়েই কড় কড়াৎ শব্দে মাস্তুল একটা ভেঙে পড়ল। জাহাজটাও মুহূর্তের মধ্যেই একপাশে কাঁত হয়ে গেল খনিকের জন্য। বেশ চিৎকার চেঁচামেচিও শুনতে পাচ্ছিলাম। আমাদের ক্ষুদে জানালাটার পাশ দিয়ে দুজন মাল্লার পতন দৃশ্যও বেশ আনন্দ নিয়ে উপভোগ করলাম। ওগুলোকে তোলার সময় নেই। নিচ থেকেই শুনতে পাচ্ছি ওপরে বুড়ো কোঁদালমুখো হারামী ক্যাপ্টেনটা কুঠার মেরে মাস্তুলটাকে আলাদা করে ফেলার নির্দেশ দিচ্ছে জরুরী কন্ঠে। সেন্টার পজিশন থেকে বের হওয়ার আগেই যদি মাস্তুলটা কুপিয়ে আলাদা না করা যায়- এভাবে কাঁত হয়ে সেকেন্ড হাফ টর্নেডোতে ঢোকা মাত্রই পানির নিচে তলিয়ে যাবে। আমার সঙ্গের দুই বন্দীর বুঝতে পেরেছে ব্যাপারটা। ওপরের লোকগুলোর কি হবে সেটা জানি না, তবে আমরা তিনজন যে খাঁচা বন্দী ইঁদুরের মত পানিতে ডুবে মরবো- তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরেই আবার বাঁদরের মত লাফালাফি আর চেঁচামেচি শুরু করে দিলো ওরা। অন্ধকারে তো আর কারো মুখ দেখা যাচ্ছে না, কেবল জানালা দিয়ে আসা হাল্কা সবুজাভ আলোতে বোঝা যাচ্ছে দুজনেই আতঙ্কিত। খুব সম্ভব জেল হয়েছে। মৃত্যু দণ্ড জাতীয় কিছু হয়নি আমার মত। আমাকে তো আয়োজন করে ঝোলানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
আমি নির্বিকার মুখে বসে রয়েছি। ভিজে গেছি টের পাচ্ছি। সেই সঙ্গে ওপর থেকে আসা কুঠারের অনবরত শব্দ। মরিয়া হয়ে উঠেছে মাস্তুলটা আলাদা করার জন্য। নির্মল চাঁদের আলোটা ঘোলাটে লাগছে। কেবল সবুজে নীল একটা ভাব। নিচের বন্দীদের জন্য কেউ এসে দরজা খুলে দেবে না। তাই অপেক্ষাও করছি না আমি কারো জন্য। কিন্তু বাকি দুজন রীতিমত বিলাপ করে শুরু করেছে। দড়ি খুলে দরজায় লাথি মারা আরাম্ভ করেছে। এখন চারপাশে শব্দ কম, এখন ডাক না শুনলে পরে আর সুযোগ পাবে না। আর মাস্তুল আলাদা না করতে পারলে তো খেল খতম!
আমি পুরো বিষয়টা উপভোগ করছি খুব। মাস্তুল সম্ভবত আলাদা করা যাচ্ছে না। দড়িগুলো কেটে ফেলছে, বিশাল বিশাল দড়িগুলো পানিতে আছড়ে পড়ছে। জানালাটার কাছেও বাড়ি খাচ্ছে কয়েকটা এসে। জীবন্ত সাপের মত কিলবিল করে উঠছে দড়িগুলো। কিন্তু আসল জিনিসই কেটে আলাদা করা যাচ্ছে না। অবশ্য এতো কম সময়ে সেটা করাও মুশকিল।
দেখতে দেখতেই চাঁদটা হারিয়ে গেল ঘন কালো মেঘ আর সমুদ্রের গর্জনের আড়ালে। আবার শুরু হয়ে গেল পাতার মত দোলা দুলি এই জাহাজের। গলুইয়ের নাকটা কোনো কারণে ভেঙে গেল এর মাঝেই। শুধু যে গলুই গিয়ে ক্ষান্ত হল তা না, জাহাজের খোলেও ফাটল ধরেছে। সম্ভবত পানির ঢেউ সরে গিয়ে একেবারে সমুদ্রের তলার কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিল জাহাজটাকে, কোরাল কিংবা ধারালো প্রবালে লাগিয়ে দিয়েছে। এদিকে ডুবো পাহাড় থাকা বিচিত্র কিছু না। কোনদিকে খোল গেছে বোঝা যাচ্ছে না। তবে জাহাজ যে সেকেন্ড হাফ টর্নেডোতে এসে ভাল মতই দম ছেড়েছে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। কারণ, দরজার নিচ দিয়ে স্রোতের মত পানি ঢোকা শুরু করেছে। শুধু যে দরজার নিচ দিয়ে, তা না। জাহাজটাও কাঁত হয়েছে একেবারে জানালার দিক বরাবর। জানালা উপুর হয়ে পরেছে সাগরের মধ্যে। দুই দিক দিয়েই পানি ঢুকছে প্রচণ্ড বেগে!
সঙ্গে বন্দী দুজনের মুখ দেখতে পাচ্ছি না। কেবল বুঝতে পারছি গলায় ক্রুশ ধরে মন্ত্র পড়ে নিচ্ছে শেষ বারের মত। চেঁচামেচি বন্ধ হয়ে গেছে। জাহাজ কাঁত হয়ে পানির নিচে ঢুকে যাচ্ছে দ্রুত। চারপাশের শব্দ হঠাৎ করেই কমে একেবারে নিঃশব্দ হয়ে গেছে। পানি ঢোকার আওয়াজ কেবল। বুঝতে পারছি পানির নিচের দিকে দ্রুত নামছে। আমি আমার খুঁটিটার সঙ্গে আনুভূমিক হয়ে ঝুলছি এখন শূণ্যে। জাহাজ কাঁত হয়ে যাওয়ার কারণে এ অবস্থা। ওপরের মানুষগুলোর কি হয়েছে বোঝা যাচ্ছে না। তবে পানির নিচে নীলাভ একটা আলো। জানালা দিয়ে ফ্যানার মত প্রবল বেগে পানি আসার সময় সেকেন্ডের জন্য মনে হল জানালাটার কাছে কারো হাত ছোঁড়ার দৃশ্য দেখলাম। ভুল নাও হতে পারে। কারণ এখন চারপাশে জালে তোলা মাছের মত মাল্লাদের হাবু ডুবু খাওয়ার কথা। শালার ক্যাপ্টেন হারামজাদাটা কোথায় ডুবেছে দেখার ইচ্ছা ছিল।
কিন্তু চোখের পলকেই যেন পুরো সেলটা পানিতে ভরে গেল। আমি বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে নিলাম শেষ মুহূর্তে। ফাঁসীতে ঝুলিয়ে মারার চেয়ে পানি উত্তম মনে হচ্ছে। কোমরের দড়িটা খুলে ফেললাম খুঁটিটা থেকে। মুক্ত অবস্থায় মৃত্যু ভাল। অন্য দুজনকে দেখা যাচ্ছে না। অন্ধকার। তবে পানির ভেতরে হাত পা ছোড়া ছুড়ির আলোড়ন টের পাচ্ছি। জায়গা খুব সামান্য সেলটাতে। তবে পানি ঢুকে যাওয়ায় মাছের মত ডিগবাজি দিয়ে চলাচল করা যাচ্ছে। জানালাটার কাছে চলে এলাম আমি। বাঁচার আশা করছি না। মৃত্যুটাকে উপভোগ করতে চাচ্ছি অন্য দুজনের মত আতংকিত না হয়ে। জানালার শিক চেপে ধরে তাকিয়ে আছি দ্রুত ধেয়ে আসতে থাকা ডুবন্ত একটা পাহাড়ের চূড়ার দিকে। দানবের মত শক্তি নিয়ে যেন সমুদ্রের একেবারে তলদেশে ঠেশে দিচ্ছে অদৃশ্য কোনো শক্তি। হালকা নীলচে আলোতে পানির নিচেই দেখতে পেলাম অন্য মাল্লাদের শরীরগুলো পানির ভেতরের ঘূর্ণীতে পরে ছিটকে চলে যাচ্ছে এদিক থেকে ওদিকে। সাঁতরেও লাভ নেই। পা টেনে পানির নিচে ধরে রেখেছে প্রচণ্ড পানির স্রোত।
আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম ছুটে আসতে থাকা পাহাড়টার দিকে। রহস্যময় দেখাচ্ছে সব কিছু। এত ঝড় ঝাপ্টার মাঝেও বিচিত্র কতগুলো ঈল মাছের মত খুব বড় জিনিস ঘুর পাক খাচ্ছে পাহাড়ের চূড়াটার চারপাশে। যেন পাহারা দিচ্ছে। আমি একটু অবাক হয়ে খেয়াল করলাম চূড়াটা ঠিক আমাদের সেল বরাবর ছুটে আসতে। কিংবা আমরা ছুটে যাচ্ছি!
তারমানে শুধু পানিতে ডুবেই নয়, থ্যাতলা হয়ে মাংসের চপের মত মরতে হবে! বিস্মিত হয়ে টের পেলাম পানির ভিতরেও অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে আমার। প্রচণ্ড বেগে উল্কা পিণ্ডের মত পৃথিবী পৃষ্ঠে আছড়ে পড়ার মত আমাদের ভাঙা জাহাজটা পাহাড়ের চোখা চূড়াটার দিকে ছুটে যাচ্ছে। শিকের মধ্যে গেঁথে ফেলবে যেন মাছের মত!
সব কিছু যেন হুট করেই স্থির হয়ে গেল কিছুক্ষণের জন্য। চোখের সামনে ধেয়ে আসতে থাকা পাহাড়টা যেন শ্লথ হয়ে গেল আচমকাই। পানির বুদবুদ কিংবা মাল্লাদের লাশগুলোর ঘুরপাক খাওয়া- সবই খুব ধীর গতিতে ঘটছে আমার চারপাশে। বিচিত্র এক নৈঃশব্দতা!
মোনিকের কোমল মায়াবী কণ্ঠটা কানের কাছে বেজে উঠলো, “আসো মৃত্যু গ্রহণ করি আমরা রেনে শ্যা। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকো। কারো বিদায়ের অপেক্ষা নয়, আরেক ভুবনের যাত্রা কেবল! ভালোবাসি!”
আমি অস্পষ্ট ভাবে মোনিকে মিষ্টি মুখটা দেখতে পেলাম। বড় বড় বিশাদাক্ষী মেলে চেয়ে আছে অষ্টাদশী সেই তরুণী......
আমি বিড়বিড় করে পানির মধ্যেই বাকি নিঃশ্বাসের বুদবুদ উড়িয়ে বলে উঠলাম, “তবে আসো.... আরেক জীবনের আলো উন্মোচন করি!”

সঙ্গে সঙ্গে সব থেমে থাকা ঘটনাগুলো যেন ভয়ংকর গতি প্রাপ্ত হল! উল্কার বেগে পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে আছড়ে পড়লো আমাদের জাহাজটা। তীব্র একটা ঝাঁকি খেয়ে জানালা থেকে পেছন দিকে ছিটকে পড়লাম আমি। মুহূর্তের মধ্যেই সামনের জানালা সহ দেয়ালটা গায়েব হয়ে গেল। মর মর করে ভেঙে দুমড়ে মুচড়ে পুরো সেলের ছাদ সহ অনেকখানি দেয়াল ছিঁড়ে ফেলল যেন কাগজের মত! আমি ঠিক মত কিছু দেখতে পাচ্ছিলাম না। বাতাস শেষ হয়ে যাওয়া ফুসফুসটা পাগল হয়ে উঠেছে। রক্ত উঠে আসবে যেন। নিজের অজান্তেই নিঃশ্বাস নিতে গিয়ে মাথার ভেতরে যেন আগুনে বোমার বিস্ফোরণ ঘটালাম! টের পাচ্ছি বাহিরের পানির স্রোত আর টান আমাকে সেল থেকে বের করে ফেলেছে অন্যান্য লাশগুলোর সঙ্গে। কোথায় যাচ্ছি কি হচ্ছে কিছুই বোঝার মত অনুভূতি আমার মাঝে অবশিষ্ট নেই তখন। কেবল উষ্ণ পানির মাঝে অসম্ভব পানির চাপ টের পাচ্ছি। আমাকে পিষে ফেলতে চাচ্ছে যেন অদৃশ্য কোনো থাবা। কালো নীল পানির মাঝে কিছু দেখাও সম্ভব না। তবু চোখে মেলে তাকালাম। কয়েক মুহূর্তের জন্য মনে হল আমাকে তীব্র শক্তিতে কেউ আবার উল্কার গতিতে ছুঁড়ে মেরেছে। তবে পানির তলার দিকে যাচ্ছি না কোথায় যাচ্ছি ধরতে পারছি না। কেবল সামনের দিকে ক্রমশই সাদাটে আলোর মত কিছু উজ্জ্বল হওয়া শুরু করেছে ধীরে ধীরে। আমি কামানের গোলার মত ছুটে যাচ্ছি সেদিকে......
আমার চারপাশে ঝুলে ঝুলে রয়েছে আমার জাহাজের বাকি সব ক্রু’রা। লাশগুলো গা ছেড়ে দিয়েছে। অদ্ভুত নীল আলোর পানির মাঝে ঝুলছে এখানে সেখানে। মাঝে মাঝে জাহাজের খোলের টুকরো আর দড়ি..... আমি কোনো রকম নড় চড় ছাড়াই লাশগুলোকে পাশ কাটিয়ে তীর বেগে ধেয়ে উঠে চলেছি সেই অদ্ভুত আলোটার দিকে......
চোখ বন্ধ হয়ে আসছে আপনা আপনি। শরীরের শেষ শক্তিটুকু ফুরিয়ে এসেছে। ফুসফুসটা ফেটে গেছে বোধ হয় বেলুনের মত পাঁজরের ভেতরে। আমি অপেক্ষা করছি মৃত্যুর.... নাকি এটাই মৃত্যু?


মাথার পেছন দিকটায় অসহ্য ব্যথা নিয়ে জেগে উঠলাম নিকষ কালো রাত্রী নামা আকাশের নিচে কোনো সৈকতে। একটা একটা করে তারা ফুটতে শুরু করেছে মেঘহীন কৃষ্ণকায় আকাশটায়। বেঁচে আছি কিনা বুঝতে পারছিলাম না। তবে জেগে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পেটের ভেতর ঢুকে যাওয়া সমস্ত লোনা পানি অবশেষে যেন বিদ্রোহ করার সুযোগ পেলো। হড় হড় করে বমি করে দিলাম সৈকতের বালু বেলায়। পায়ের কাছেই ছোট ছোট ফেনীল ঢেউ এসে ভাঙছে। এলোমেলো ডানা ঝাপটানো বাতাস। সুর সুর করে কানের ভিতর ঢুকে শব্দ সৃষ্টি করেই বেরিয়ে যাচ্ছে পরক্ষণে। মাথা ঘোরাচ্ছিল অনেক। পরিষ্কার ভাবে কিছু দেখতে পাচ্ছিলাম না। তবে মাথা আর বা পায়ের পেছন দিকে বড় ধরণের ক্ষত আবিষ্কার করলাম। রক্ত জমে কাল হয়ে গেছে। কিসে লেগে কেটেছে বুঝতে না পারলেও এটা বুঝলাম এই দুই ক্ষতের অসহনীয় যন্ত্রণা আমাকে দ্বিতীয় দফায় সংজ্ঞাহীন করে দিতে যাচ্ছে। নিস্তেজ হয়ে আসছে পুরো শরীরটা। উঠে দাঁড়াতে গিয়েও ধপ করে পড়ে গেলাম বালুর ওপর। জ্ঞান হারাতে হারাতে আকাশের তারাগুলোর দিকে তাকালাম আবার। ঘোলাটে হয়ে আসছে দ্রুত। কতক্ষণ পর জ্ঞান ফিরেছিল আমার? জাহাজ ডোবার সেরাতেই? নাকি আরেকটা দিন গিয়ে পরের রাতে? জানা গেল না। তার আগেই আবার জ্ঞান হারালাম।

দ্বিতীয়বার জেগে উঠলাম দিনের উজ্জ্বল আলোতে। তখনো জানতাম না আমার জন্য কত বড় বিস্ময় অপেক্ষা করছে.....

দুই.
সমুদ্রের পানির গর্জন আর মৃদু মন্দ ঢেউয়ের ধাক্কায় দিনের আলোতে চোখ মেলে তাকালাম। লোনা পানি লেগে চোখের পাপড়ি জমাট বেঁধে গিয়েছিল। চোখ খুলতে গিয়ে টের পেলাম পাপড়ি জোড়া লেগে আছে। রোদ উঠেছে বেশ। তাঁতানো রোদ যাকে বলে। পুড়িয়ে দিচ্ছে, আবার ভেজা বাতাস এসে পরক্ষণেই শীতল করে দিচ্ছে। চোখের সামনে হাত দিয়ে সূর্যটাকে আড়াল করে কোনোক্রমে উঠে বসলাম। এতো আলোতে চোখ সয়ে আসতে সময় নিচ্ছিলো। মাথায় পেছন দিকে ভোঁতা একটা ব্যথা। বাম পা’টা অবশ হয়ে গেছে প্রায়। নড়াতে পারছি না। সারা শরীরে কাঁটা ছেঁড়া আর বিশেষ একটা নেই, তবে প্রচণ্ড ব্যথা টের পাচ্ছিলাম সমস্ত মাংসপেশি গুলোতে। দানবের মত ঢেউ আর পানির অদৃশ্য টান পিষে দিয়েছে ভাল মতই ঝড়ের রাতে আমাকে। একেবারে অকেজো হয়ে গেছি কিনা বুঝতে পারছিলাম না। চোখে আলো সয়ে আসার জন্য সময় নিলাম একটু।
ধীরে ধীরে উজ্জ্বল আলোটার তেজ কমে আসতে লাগলো। চোখের সামনে থেকে হাতের ছাউনিটা সরিয়ে ভাল করে চারপাশে তাকাবার সুযোগ পেলাম প্রথম বারের মত।
আমি যেখানটায় বসে রয়েছি- সেটা কোন দ্বীপ কিংবা বড় কোনো আইল্যান্ড নয়। জেগে থাকা ছোট্ট একটা উঁচু চর মাত্র। ঝড়ের সময় তলিয়ে যায় এসব চর। অনেকটা উঁচু বালুর ঢিবির মত জায়গাটা। কোনো গাছপালা, ঘাস লতাপাতা, জন মানব নেই। থাকার মধ্যে দু চারটা লাল কাঁকড়া দেখতে পাচ্ছি। বালি খুঁড়ে ঢুকে যাচ্ছে, আবার বের হচ্ছে। রোদ পোহাচ্ছে নাকি খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে আবার কিছু ফেলে এসেছে কিনা দেখার জন্য ঘরে ঢুকছে- বোঝা গেল না। অতি ছোট্ট, মাত্র পনেরো মিটারের এই জেগে থাকা আইল্যান্ডে প্রাণী বলতে কেবল আমি আর এই গুটি কয়েক লাল কাঁকড়া। আমি অলস ভঙ্গিতে বসে থাকলেও কাঁকড়া গুলোকে তেমন একটা অলস মনে হচ্ছে না। চোখের পলকে চরটার এই মাথা থেকে ঐ মাথা ছুটে যাচ্ছে। আবার ফিরে আসছে।
ছেঁড়া এই দ্বীপটার পানি থেকে মাত্র তিন- চার হাত ওপরে হবে। ভাল করে জোয়াড়ের সময়ে আদৌ থাকে নাকি তলিয়ে যায় বুঝতে পারলাম না। কারণ তলিয়ে গেলে তো আমারও ভেসে যাওয়ার কথা ছিল। নাকি ভেসে ভেসে গতরাতের জোয়াড়েই এসেছি আগে যেখানে আটকেছিলাম সেখান থেকে? সাগরের পানি স্বচ্ছ নীল, আকাশটাও ঠিক একই রকম। কোথায় যে দিগন্ত মিলেছে দুই নীলে- বোঝার উপায় নেই। কেবল পার্থক্যটুকু দেখা যায় পেঁজা তুলোর মত ধব ধবে দুধের মত মেঘের স্থির হয়ে থাকা দেখে। বহু ওপরে ঝুলে রয়েছে সেই মেঘগুলো। মেঘহীন বাকি অংশে অনেক উপরে সী গাল উড়ছে। আসলেই সী গাল? নাকি অন্যকিছু? ডাঙ্গা ছাড়া তো সী গাল থাকার কথা না। সূর্যটা সেগুলোকেও ছাড়িয়ে ওপরে উঠে পূর্ণ দাপটে জ্বলছে। এভাবে বেশিক্ষণ থাকলে গায়ের চামড়া পোড়া শুরু হতে আর দেরি হবে না। সান বার্নে ফোসকা ধরে যাবে শরীরের যতটুকু বেরিয়ে রয়েছে আলোতে। আমি দ্বীপের যে পাশের ঢালে বসে রয়েছি, সে দিকে কেবল অথৈ সাগর। সমুদ্র সগর্জনে এগিয়ে আসছে প্রতি মুহূর্তে। আর কোনো ডাঙ্গার দেখা নেই। আর বসে থাকার কারণে পেছনের দিকটা দেখা সম্ভব হচ্ছে না। কারণে ঢালটা সামান্য হলেও আমার বসে থাকা উচ্চতার চেয়ে বেশি। উঠে দাঁড়াতে হবে দেখার জন্য ওপাশে কি আছে। ওলটানো মাটির শানকির মত এই চরটা। আমি শানকির একেবারে কিনারে রয়েছি, পায়ের কাছেই সাগরের পানি এসে ফেনা ছোটাচ্ছে। শানকির পেছন দিক দেখতে হলে ওলটানো কেন্দ্রটায় আগে উঠে দাঁড়াতে হবে।
বা পায়ে ভর দিয়ে ওঠা সম্ভব না। ডান পা’টাই ভরসা। ধীরে ধীরে গায়ের শক্তি সব একত্র করে উঠে দাঁড়ালাম। প্রথম চেষ্টায় পারলাম না। লবণের আস্তরণে সারা শরীরের ওপর হালকা একটা বালুময় স্তর পরে গেছে। উঠে দাঁড়াতে গিয়ে যেন খসে খসে পড়তে লাগল সেই লবণের প্রলেপগুলো। শরীর অচল প্রায়। পেশীগুলো বিদ্রোহ করছে। উঠতে গিয়েও তাই পড়ে গেলাম শুরুতেই। বালুর ওপরে বসে বা পায়ের ক্ষতটা ভাল করে পর্যবেক্ষণ করে নিলাম। ভাঙা কাঠের টুকরা জাতীয় কিছু কিংবা ডুবন্ত প্রবালে লেগে অনেকখানি চিরে গেছে। হা হয়ে রয়েছে মাংস। সেলাই ছাড়া জোড়া নেবার প্রশ্নই আসে না। আমি ডান শার্টের হাতাটা টেনে ছিঁড়ে ফেললাম। পাতলা কাপড়। বা পায়ের কাটা অংশটা ভাল করে পেঁচিয়ে বেঁধে নিলাম। সেলাইয়ের বিকল্প হিসেবে যদি কাজে লাগে আরকি। যদিও সমুদ্রের লবণ পানিতে যে কতক্ষণ এ অবস্থায় ছিল কে জানে। পঁচা ধরলে অবাক হবো না। একটা শক্ত লাঠি টাঠি পেলে ভাল হতো। ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ানো যেতো। ভয়াবহ তৃষ্ণা আর ক্ষুধায় সমস্ত ভেতরটা মোচর খাচ্ছে। খাবার না পেলেও অন্তত পানি দরকার। জিভ আর গলা শুঁকিয়ে আসছে যত সময় যাচ্ছে।
পা বেঁধে দৃঢ় মনোবলে আবার উঠে দাঁড়ালাম ডান পা টায় ভর দিয়ে। ধীরে ধীরে এগোতে লাগলাম চরটার কেন্দ্রের দিকে। অমানুষিক যন্ত্রণা টের পাচ্ছি সারা শরীরটায়। তবু দাঁতে দাঁত চেপে হজম করে নিলাম। বালু এর মাঝেই গরম হয়ে উঠেছে। পা খালি আমার। বুট জুতো ঝড়ে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। খালি পায়েই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে এলাম কেন্দ্রে। আইল্যান্ডের পেছনের অংশে ভ্রুঁ কুঁচকে তাকালাম চোখ ছোট ছোট করে। সঙ্গে সঙ্গে আনন্দের একটা শিহরন বয়ে গেল ভেতরটা জুড়ে।
আমি যে অংশটায় রয়েছি সেটা কেবল একটা বিচ্ছিন্ন চর। মূল দ্বীপটা খুব বেশি একটা দূরে না। তবে কমও না। অন্তত কোয়াটার মাইলের চেয়ে একটু বেশি তো হবেই। আমি যেটায় দাঁড়িয়ে আছি সেটাও দ্বীপের অংশ ছিল হয়তো এককালে। কিন্তু পানির প্রবল প্রবাহ আর মাটি সরে যাওয়ার কারণে মূল দ্বীপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এতো দূর থেকে দ্বীপটার খুঁটি নাটি জিনিস পরিষ্কার বোঝা যাওয়ার কথা না। কারণ উপবৃত্তাকারে ফুলে রয়েছে এখান থেকে দ্বীপের সামনে পর্যন্ত। তবে সাদাটে সৈকত কিংবা পাহাড়গুলো স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে। সৈকতের ঐ দিকটা মানে মূল দ্বীপের এপাশটা, যেটা আমার দিকে রয়েছে- ধব ধবে সাদা সৈকতের খানিক পরেই সুউচ্চ পাহাড়ের দেয়াল। অন্তত তিন চারশো ফুট তো হবেই। বৃত্তাকারে সেই পাহাড়ের দেয়াল দ্বীপটাকে ঘিরে রয়েছে চারদিক থেকে। এতদূর থেকে কোন ফাঁক ফোঁকড় দেখা না গেলেও অনুমান করলাম কাছে গেলেই সরু ক্যানেল কিংবা ফাটল পেয়ে যাবো অন্যপাশে বা দ্বীপের মধ্যভাগে যাওয়ার জন্য। পাহাড়গুলো সবুজ গাছপালা আর পাহাড়ি লতায় ভরে রয়েছে। কয়েকটা বিশালাকায় দানব বৃক্ষ বাঁকা ভাবে আনুভূমিক হয়ে অনেক ওপর থেকে ঝুলছে পাহাড় থেকে সৈকতের ওপর। বিশাল বিশাল মোটা দড়ির মত লতা ঝুলে নেমে এসেছে সেখান থেকে সৈকতের খানিক ওপরে। বাতাসে দুলছে। তবে ছোঁয়ার মত উচ্চতায় নেই। এত দূর থেকে দেখেও অনুমানেই বোঝা যাচ্ছে দ্বীপটা অনেক বড়। খাবার আর মিষ্টি পানির জন্য ভাবতে হবে না। সৈকতেই বেশ কয়েকটা নারকেল গাছ দেখা যাচ্ছে। পানি আর খাবারের ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
কথাটা ভাবা মাত্রই ঝিমিয়ে থাকা শরীরটায় আচমকা নতুন একটা শক্তি অনুভব করতে লাগলাম। অতদূর পর্যন্ত এই পা দিয়ে সাঁতরে যেতে পারবো কিনা জানি না, কিন্তু যেতে হবেই। দেরী করলাম না আর। লাল কাঁকড়াগুলোর দিকে এক নজর তাকিয়েই খোঁড়াতে খোঁড়াতে পানির দিকে হাঁটতে লাগলাম। মাটির ওপরে শরীরটার ওজন যতটা বেশি লাগছিল, পানিতে নামা মাত্রই অর্ধেক হয়ে গেল যেন। অনেকটা নির্ভার মনে হতে লাগলো। শার্টের কাপড় দিয়ে বাম পা’টা পেঁচিয়ে নেয়াতে সরাসরি লোনা পানি লাগছে না ক্ষতটায়। তবে একটু পরেই চির চির করে জ্বলা শুরু করে দিল মাথা আর পায়ের ক্ষত। যতটা সম্ভব পরিশ্রম না করে ভেসে ভেসে দ্বীপটার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করতে লাগলাম। পানি আশ্চর্য রকমের শীতল। ব্যথাটা তাই টের পেতে দিচ্ছে না ঠিক মত। স্বচ্ছ হওয়ার কারণে অনেক নিচ পর্যন্ত দেখা যায় সাগরের। নীলচে পানির ওপর সূর্যটা খাড়া ভাবে পড়েছে দেখে সব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রঙ বেরঙের ছোট ছোট মাছের ঝাঁক এমন ভাবে ছুটে যাচ্ছে, ঠিক যেন বড় কোনো একটা মাছ! নিচেই খুব বেশি না, দশ বারো ফুট হবে- অনেকগুলো প্রবালের পাহাড় ভাসছে মেঘের মত। সেইগুলোর মাঝে ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ করে ঢুকে অন্য গর্ত দিয়ে সাঁ করে বেরিয়ে আসছে লাল নীল মাছের ঝাঁক, ফোয়ারার মত এদিক ওদিক ছোটাচ্ছে। এমনকি চার পাঁচটা মহা গুরু গম্ভীর পাতলা ফিন ফিনে জেলে ফিসকেও দেখা গেল। জ্বলছে যেন অনেকগুলো চিক চিকি কিংবা জরি। মানুষের হৃদপিণ্ডের সঙ্গে অনেক মিল, ছাতার মত শরীরটা অনবরত সংকুচিত আর প্রসারিত হচ্ছে। উড়ে বেড়াচ্ছে নিচের নীল জগতে। মাঝে মাঝে মাছের ঝাঁক এসে পাশ কেটে তীর বেগে বেরিয়ে যায়, সেই সময়টা খুব বিরক্ত হয়ে তাকায় যেন। অনেকগুলো স্টার ফিস প্রবালের গায়ে মাকড়শার মত সেঁটে রয়েছে। ধ্যান করছে যেন। দৃষ্টি খুব বেশি দূর পর্যন্ত দেয়া সম্ভব হচ্ছে না পায়ের যন্ত্রণা আর সাঁতারের কারণে। তবু মাঝে মাঝে তাকিয়ে বিস্মিত হয়ে যাচ্ছি। বিশাল এক রূপকথার পরী কিংবা স্বর্ণ জগৎ যেন। এক সঙ্গে এতো রঙের ছড়াছড়ি যে চোখ ধাঁধিয়ে যেতে চায় মাঝে মাঝে। দম আটকানো সৌন্দর্য পানির নিচে। সমুদ্রের তলদেশটা খুব একটা গভীরে না। দেখা যায় অস্পষ্ট ভাবে। ক্রমশ বালুর আর রঙিন ফুটকীর তলদেশটা উঠে চলেছে ঢাল বেয়ে দ্বীপের দিকে। মাটির কাছাকাছি অনেকগুলো বড় বড় অন্ধকার গর্ত দেখা যাচ্ছে। গুহা মুখের মত। অন্ধকারে ঘাপটি মেরে হয়ত বসে রয়েছে নিশাচর কোনো ভয়ংকর প্রাণী, সুযোগ পেলেই বেরিয়ে এসে শিকার ধরবে। আমি দ্রুত সাঁতরে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকি। শেষ মুহূর্তে কোনো বিপদ বাঁধাতে চাই না। এদিকের সাগরে হাঙ্গর আছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। তাই ঝুঁকি নিয়ে লাভ নেই। রঙিন জগৎটা থেকে জোর করে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে দ্বীপটার দিকে তাকিয়ে সাঁতরে যেতে লাগলাম। এগিয়ে আসছে দ্বীপটা প্রতি মুহূর্তে। পায়ের অবস্থা এমন না হলে আরো দ্রুত চলে আসতে পারতাম। নারকেল গাছগুলোর দিকে চোখ পড়তেই গতি বাড়িয়ে দিলাম আরো।
পানিতে থাকতেই দ্বীপের মাটি পায়ে লাগলো। সৈকতের ওপর উঠে এলাম। ক্লান্তি টের পাচ্ছি না। বা পায়ের দিকে তাকাবার মত ধৈর্য্য নেই। পাগলের মত ছুটে গেলাম নারকেল গাছগুলোর দিকে। সৈকতের ওপরেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিশ ত্রিশটা শুঁকনো নারকেল। সঙ্গে ছুরি টুরি না থাকলেও নারকেল ভাঙা এমন কোনো কঠিন কাজ না। আশেপাশে প্রচুর প্রবাল পাথর বেরিয়ে রয়েছে সৈকতের বালু ফুঁড়ে। একটা নারকেল তুলে এনে সোজা সেই প্রবালের ওপর সজোরে আঘাত করতেই ফেটে গেল। ফাটল দিয়ে বের হতে থাকা মিষ্টি পানিতে হাতে কবজি ভিজে যাচ্ছে, আমি সাথে সাথে মুখ হা করে ওপরে ধরলাম নারকেলটা। ভয়াবহ তৃষ্ণার্ত বুকটা মুহূর্তেই জুড়িয়ে গেল। কিন্তু একটার পানি খেয়ে যেন তৃষ্ণা আরো বেড়ে গেল। শাঁস খাওয়া বাদ দিয়ে আরো তিন চারটা এনে ভেঙে আগে পানি খেয়ে গলা ভিজিয়ে নিলাম। তারপর নারকেল ফাটিয়ে ভেতরের শাঁস খেতে লাগলাম অভুক্তের মত। পায়ের ব্যথাটা টের পাচ্ছি না এখন আর তেমন। বালুর ওপরেই পা ছড়িয়ে বসে হেলান দিয়ে রয়েছি পাথরটার গায়ে। খেতে খেতে দেখছি সৈকতের ওপর লাল কাঁকড়ার দৌড়া দৌড়ি। এখানে লাল কাঁকড়া ছাড়াও ছোট ছোট কতগুলো কালচে ইঁদুর টাইপের প্রাণীও লক্ষ্য করলাম। আগে দেখিনি কখনো এগুলো। নাম কি কে জানে। কাঁকড়াগুলোর চেয়েও দ্রুত গতি এগুলোর। মাটির ভেতর গর্ত করে ঢুকে পড়তে সময় নিচ্ছে না একটুও। পুরো পুরি দেখা যাচ্ছে না ঠিক ভাবে। তবে কালচে শরীর আর ইঁদুরের মত মুখ দেখে চেনা চেনা লাগছে। লেজ নেই। গায়ে লোমও নেই, চকচকে কালচে শরীর। সূর্যের আলোয় চিক চিক করে ওঠে। কি এগুলো? অন্য কোথাও আছে বলেও তো মনে হচ্ছে না। হাতের কাছে নিজের ডায়েরি আর পেনসিলটার তীব্র অভাব অনুভব করলাম। অচেনা জীবের নমুনা নিয়ে যেতে না পারলেও ছবি আর বৈশিষ্ট্য লিখে ফেলতাম। জীব বিজ্ঞানের অধ্যাপক যে ছিলাম এককালে সেটা টের পেলাম প্রাণীটার ছবি আর বৈশিষ্ট্য লিখে নেয়ার ইচ্ছাটা দেখে।
জোর করে চিন্তাটা মাথা থেকে সরিয়ে দিলাম। এখন আর সেই আগের সময়টা নেই। গবেষণা করার মত সময় কিংবা শ্রম দেয়ার ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলেছি। আগের সেই প্রফেসর রেনে শ্যা আমার মাঝে আর অবশিষ্ট নেই। এখন সে একজন নিখাদ ফাঁসীর আসামী। যাকে রয়েল নেভীর লোকজন পেলেই জলদস্যুদের মত লোকসম্মুখে দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে দেবে। যাতে কেউ আমার পথে আর পা না বাড়ায়।
খাওয়া শেষ হতেই আসল ক্লান্তিটা টের পাওয়া শুরু করলাম। সাঁতরে আসার পরিশ্রম আর অবসাদ ছেঁকে ধরল যেন আমাকে। হাত পা’ই আর নাড়াতে পারছি না। মাথা আর পায়ের আঘাত আমাকে দূর্বল করে দিয়েছিল প্রচণ্ড ভাবে। মাত্র ঘন্টা খানেক আগে জেগে ওঠা শত্বেও পাথরের গায়ে হেলান দিয়ে ওখানেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম। প্রচণ্ড রোদ থেকে পাথরটা আমাকে আড়াল করে রেখেছিল বলে এই প্রথম গায়ের চামড়া যেন সূর্যের হাত থেকে রক্ষা পেল। তপ্ত রোদের মধ্য দুপুরেও তাই ঘুমিয়ে পরলাম।

মোনিকের চেহারাটা দেখতে পাচ্ছিলাম ঘুমের মাঝে। সাদা একটা ঢল ঢলে স্লিপিং ড্রেস পরে বিছানায় বসে আছে। মাথায় সেই আগের মত লম্বা কোঁকড়ানো ঝাঁকড়া চুল। চিরুনি চালাবার সাধ্য নেই সেই চুলে। ওর সোনালী চুলগুলোই পেয়েছে আমাদের মেয়েটাও। ওর কোলেই শুয়ে রয়েছে এলিসা। পাঁচ ছয় মাস বয়সের সেই ছোট্ট মানুষটাই। কোনো পরিবর্তন নেই। ঘুমিয়ে কাঁদা হয়ে আছে মায়ের কোলে। তরুণী মোনিকের মুখে লালচে একটা লাজুক আভা। আমাকে দেখেই গুঁটিয়ে গেছে মেয়েকে নিয়ে। প্রথম সন্তান হওয়ার পর মোনিকের লজ্জ্বা কাটতেই যেন পেড়িয়ে যাচ্ছিলো বছর। পৃথিবীতে যেন সে’ই প্রথম মা হয়েছে। মেয়েকে কোলে নিয়ে প্রায়ই একা একা চুপচাপ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। আমি অবাক হয়ে দেখতাম সদ্য মা হওয়া এই তরুণীর মাঝে কত বিস্ময় আর আনন্দ উথাল পাথল করেছে ছোট্ট মেয়েটার নিঃশ্বাসের সাথে সাথে। ঘুমের মাঝে কতবার হাসলো তার মেয়ে সেই হিসেব রাখছে সে খুব উৎসাহ নিয়ে। আমি কিছু বলতে গিয়েও থেমে যেতাম। মাতৃত্ব তার একান্তই অনুভবের বিষয়। আমি তার ছেলেমানুষী লাজুক মুখটা দেখতে ভালোবাসি। মেয়েকে স্তন্য দেয়ার বিষয়টাও যেন তার জন্য বিরাট কৌতূহল আর লজ্জার। আমার সামনে থেকে বরাবরই গায়েব হয়ে যাওয়ার অভ্যাস। আমি হা হা করে অট্টহাসি নিয়ে পাশের ঘরে লুকিয়ে যাওয়া এই শিশুর মত তরুণীকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠতাম, “তোমার সঙ্গে আমার সংসার হচ্ছে চার বছরের ওপর হয়ে গেল- এখনো এতো লজ্জা পাও কীভাবে!”
ওপাশ থেকে খটাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়ার শব্দ পাওয়া যেত। সে নিশ্চিন্ত হতে চাইছে আমি যেন ওপাশে না যেতে পারি! আমি হাসতে থাকতাম উচ্চ স্বরে। ঠিক তেমনি আজও যেন সেই লাজুক তরুণীকেই দেখলাম। এলিসাকে কোলে নিয়ে বসে রয়েছে বিছানায় পা তুলে। আমাকে দেখেই জমে গেছে, ঘুরে বসেছে অন্য দিকে। আমি স্মিত হেসে ওকে পেছন থেকে বলছি, “ভালোবাসি তোমাকে প্রিয়। তোমার সমস্ত সারল্যকে ভালোবাসি!”
মোনিক লাল হয়ে উত্তর দিল, “দূর হও তো এ ঘর থেকে!”
আমি হাসছি। স্বপ্নের মধ্যেই টের পাচ্ছি আমি স্বপ্ন দেখছি। ঘুম খুব শীঘ্রই ভেঙে যাবে। মমতাময়ী এই তরুণীকে ছেড়ে আমাকে আবার উঠে যেতে হবে বাস্তব পৃথিবীতে। ঝাপসা হয়ে আসা শুরু করেছে সমস্ত দৃশ্যপট। মোনিক আর ওর কোলের বাচ্চাটাও মিলিয়ে যেতে আরাম্ভ করেছে। বিচিত্র শব্দ পাচ্ছি ঘুমের ভেতরেই। সেই শব্দটাই জাগিয়ে তুলছে আমাকে। ঢাকের শব্দের মত কিছু। বহু দূর থেকে ভেসে আসছে......

সন্ধ্যা হয়ে গেছে যখন ঘুম ভাঙল। পাথরটার কাছেই মাটিতে শুয়ে পড়েছিলাম ঘুমের মধ্যেই। বসে বসে ঘুমানো কতক্ষণ সম্ভব? চোখ কচলে তাকালাম চারিদিকে। রাত নেমে এসেছে। আকাশে নক্ষত্রের কালো পর্দাটা যথারীতি মেলে ধরা হয়েছে আগের মত। কালো তারা জ্বলা আকাশটা প্রতিবিম্ব হয়ে বেষ্টন করে রেখেছে সাগরটাকে। সাগরের পানি কালো হয়ে যায়নি আকাশের মত সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে। বরং বিচিত্র রকমের নীলচে সবুজ একটা আভা ছড়াচ্ছে সেই পানি। বিস্ময়কর! এদিকের পানিতে কি কোনো ধরণের মৌলের পরিমাণ বেশি নাকি? এরকম উজ্জ্বল বর্ণ কেন? যেন সমস্ত সাগরটা জ্বলছে নিজে নিজে। পানিতে ঢেউ নেই প্রায়। স্থিরও হয়ে নেই। মৃদু ঢেউ রয়েছে, তার মাঝ দিয়েও পানির নিচের অনেকটাই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। নানান ধরণের মাছ, সামুদ্রিক আগাছা, লতা পাতা দুলছে ধীর গতিতে সেখানে। আমি উঠে দাঁড়ালাম গভীর বিস্ময় নিয়ে। তরল কোনো পদার্থের নিজে থেকে জ্বলার কথা না। পানি কোনো জ্বালানী বা দাহ্য পদার্থ না। এটার নিজস্ব রঙ আছে। দিনের আলোতে বোঝা না গেলেও রাতের বেলা বোঝা যাচ্ছে এই পানি জ্বলছে নিজে নিজে। আলো রয়েছে এর শরীরে। পানির নিচের কোনো উৎস থেকে কি এই আলো আসছে? প্রশ্ন জাগলো মনের ভেতর। দ্বীপে আসার সময় সেই কালো গুহার মত যে গর্ত গুলো দেখেছিলাম পানির নিচে- সেগুলোতে লাইট ফিস বা হ্যারিকেন মাছ জাতীয় কিছু নেই তো? যেগুলো এখানে উঠে এসে সাগরের পানি উজ্জ্বল করে দিয়েছে? কিন্তু সেরকম হওয়া সম্ভব কি করে? লাইট ফিস গভীর তলদেশের মাছ। এতো ওপরে থাকার প্রশ্নই আসে না। যেখানে আলো পৌছায় না, সেখানে এরা থেকে। এটা তো খুব বেশি গভীর জায়গা না। ফ্যাদোমের হিসাবে আর কত হবে, বিশ পঁচিশ? এতও অল্পের মধ্যে অন্য কোনো আলোক উৎসেরও সম্ভাবনা দেখছি না। হাঁটতে লাগলাম পানির দিকে নিজের অজান্তেই। পায়ের নখ ভিজিয়ে দিচ্ছে জ্বল জ্বলে নীলে সবুজ পানিগুলো এসে। আমি আঁজলা ভরে সেই পানি তুলে নিলাম। বিস্মিত হয়ে গেলাম। হাতের ভেতরেও জ্বলছে। তবে বেশিক্ষণ বিস্ময় ধরে রাখা গেল না। কারণ আলোটা খুব কাছ থেকে দেখেই বুঝে গেলাম কি হয়েছে। অতি সূক্ষ্ম ধরণের খুবই ছোট অসংখ্য সামুদ্রিক শৈবাল ভাসছে পানিটায়। আলোটা সেখান থেকেই ছড়াচ্ছে। পাতলা ফিন ফিনে সেই সুতো বা তন্তুর মত শৈবালের গা থেকেই আলো আসছে। নীলচে একটা আলো। গায়ের ক্লোরোফিল আর নিজস্ব নীলাভ রঙ মিলিয়ে রঙটা সবুজাভ নীলে পরিণত হয়েছে। সাগরের এদিকটার পানিতে এতই বেশি ছড়িয়ে রয়েছে সেই শৈবাল যে সমস্ত পানিটাই আলোকিত করে দিয়েছে। যেন তরল কোনো আলো!
সুনসান নীরবতা চারপাশে। কেবল তীব্র ঠাণ্ডা হাঁড় কাঁপানো বাতাস। গায়ে কাপড় বলতে শুধু একটা শার্ট, ভেস্ট আর ভারী কাপড়ের প্যান্ট। শীত কাটানোর জন্য খুব একটা ভাল উপকরণ না। আমি কেঁপে উঠলাম সামান্য। শীতের চোটে- বলার অপেক্ষা রাখে না। হাতের পানিটা ফেলে দিয়ে ঘুরে দাঁড়ালাম। এখানে সৈকতে রাত কাটানোর বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। দ্বীপের ভেতরে যাওয়ার রাস্তা খুঁজতে হবে। এই বাতাসে থাকলে এক রাতেই বরফ হয়ে যাবো। সৈকতটাও খুব একটা লম্বা না। মাত্র একশো মিটারের মত হবে। তারপরেই পাহাড়ের দেয়ালের সঙ্গে মিশে সাগরের নিচে চলে গেছে। বাকি অংশে পানি ফুঁড়ে পাহাড়গুলোই দাঁড়িয়ে রয়েছে দ্বীপ ঘিরে। সৈকতের অস্তিত্ব নেই সেখানে। এমনকি সৈকতটা চওড়াতেও বেশি সুবিধার খুব। বড় ধরণের জোয়াড় এলে ডুবে যাবে। নারকেল গাছে উঠে বসে থাকতে হবে তখন। দ্বীপের ভেতরে যাওয়াটাই এখন আসল দরকার। পেটে যেহেতু ক্ষুধা তৃষ্ণা নেই এখন, দ্বীপের ভেতরে যাওয়ার রাস্তা খোঁজা প্রয়োজন।
নক্ষত্রের আলোতে হাঁটা শুরু করলাম পাহাড় গুলোর দিকে। শিস কেটে আসছে বাতাস অনেকক্ষণ থেকেই টের পাচ্ছি। শব্দ হচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে পাহাড়ের ফাঁক ফোকড় রয়েছে কোথাও। সেখান দিয়ে বাতাস ঢুকে বের হচ্ছে। শব্দটা ওখান থেকেই আসছে। ঝুলতে থাকা লতা আর ঝোপ ঝাঁড় ভরা পাহাড়ের কাছে এসে দাঁড়ালাম। দানবীয় প্রহরীর মত ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রয়েছে সেই পাহাড়। গম্ভীর। আমি কান পেতে বোঝার চেষ্টা করলাম শিসের মত শব্দটা ঠিক কোন জায়গা থেকে হচ্ছে। ভাল করে খেয়াল করতেই মনে হল ঠিক নিচে নয় শব্দের উৎসটা। আরো ওপরে। একটু পিছিয়ে গিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম কোন অংশ থেকে হচ্ছে। চাঁদ সবে দিগন্তে ওঠা শুরু করেছে সূর্য দয়ের মত। হলদে বিশাল একটা চাঁদ। দিগন্তের দিকে তাকালে তরল সোনা সোনা পানি দেখে চট করে ভুল হয়ে সূর্যোদয় না চন্দ্রোদয়! তারার আলো কিংবা সমুদ্রের শৈবালের আলোটাকে ফিকে করে দিয়ে আলো ফেলেছে ঠিক পাহাড়গুলোর গায়েই। আমার জন্য দেখার সুবিধা হয়ে গেল। এখন তাকানো মাত্র দুটো পাহাড়ের মাঝামাঝি সন্ধিস্থলে বিশ পঁচিশ ফুট ওপরে খুব সরু চকে চোখে পড়ার মত একটা খাঁজ দেখা গেল। অনেকটা সুড়ঙ্গের মত ফাটলটা। পাহাড়গুলো তার ওপর দিয়ে আবার এক হয়ে উঠে গেছে দেয়ালের মত। মাঝখানে কেবল একটা সরু ফাটল। ঝুলতে থাকা লতা আর আগাছা প্রায় ঢেকে দিয়েছে সেই মুখটাকে। দিনের বেলাও দেখা যেত সেটা। তবে তখন তাকানর মত অবস্থায় ছিলাম না দেখে তাকাইনি। এখন আরেকটু পিছিয়ে এলাম সৈকতের দিকে। ভাল করে বোঝার চেষ্টা করলাম ওটা কেবলই একটা ফাঁটল, নাকি দ্বীপের ওপাশে যাওয়ার মত কোনো সুড়ঙ্গ। তবে উচ্চতাটা দেখে আর নিজের পায়ের অবস্থা দেখে সামান্য শঙ্কিত হলাম। বিকল্প কোনো রাস্তা রয়েছে কিনা দেখার চেষ্টা করলাম। নেই সম্ভবত। যেখানটায় দাঁড়িয়ে রয়েছি- সেখান থেকে পুরো জায়গাটাই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। হয় এই খাঁড়া পাহাড় বেয়ে উঠতে হবে পুরোটা, আর নয়তো সেই ফাটল পর্যন্ত ওঠার চেষ্টা করতে হবে। অন্য কোন উপায় নেই হাতে।
বাম পায়ের বাঁধনটা আরেকটু ভাল করে কষে বেঁধে নিলাম। তারপর হাঁটা শুরু করলাম সেই ফাটলটার দিকে। পাহাড় বেশ খাঁড়া। উঠতে হলে ঝোপ ঝাড় খামচে ধরে ধরে উঠতে হবে। আর ঝোপ ছিঁড়ে গেলে করার কিছু নেই, বিশ পঁচিশ ফুট ওপর থেকে শক্ত পাথরের ওপর এসে কোমর ভাঙতে হবে। পাহাড়ের নিচের অংশে বালু নেই, সব পাথর আর চোখা চোখা প্রবালের ছড়া ছড়ি।
চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে দম নিলাম। তারপর এগিয়ে গেলাম পাহাড়ের গায়ের ঝোপগুলোর দিকে। খামচে ধরে উঠতে লাগলাম। হাতের আঙুলে জোর থাকলেও বা পায়ের পেশিতে কোনো শক্তি পাচ্ছি না। তিন হাত-পায়ে ভর করে ভারী শরীরটাকে টেনে তুলতে লাগলাম। একেবারে খাঁড়া বলাটা ভুল হয়েছে, খুব সামান্য হলেও পা রেখে দম নেয়ার মত জায়গা পাচ্ছি। দশ ফুটের মত উঠেই হাফাতে লাগলাম। কিন্তু পাত্তা দিলাম না। মাঝপথে এভাবে জিরাতে গেলে পরে আর শক্তি পাবো না। দ্রুত নিজেকে টেনে ওঠাতে লাগলাম সেই ফাটলটার দিকে। চাঁদের আলো থাকায় সুবিধা হয়েছে, শক্ত ঝোপ বুঝে হাত দিতে পারছি। সময় খুব ধীর গতিতে এগুচ্ছে। একটু একটু করে ওপরে উঠছি। সুড়ঙ্গের খুব কাছে উঠে এসেছি এমন সময় মনে হল বহু দূর থেকে ঢাকের মত কোনো শব্দ ভেসে এলো। কাঠের ফাঁপা গুঁড়িতে বাড়ি মেরে যেরকম শব্দ সৃষ্টি করা হয়, অনেকটা সে ধরণে। সঙ্গে শঙ্ক কিংবা শিঙা জাতীয় কিছুর ভারী গুরু গম্ভীর আওয়াজ। অবাক হলাম! মানুষ আছে নাকি এই দ্বীপে! শব্দ শুনে তো আদিবাসী ধরণের মনে হচ্ছে।
আরো দ্রুত ঝোপ আর মাটি খামচে সুড়ঙ্গ মুখটার কাছে উঠে এলাম। ঝুলতে থাকা লতাগুলো সাহায্য করল এবারে। সেগুলো ধরে দোল খেয়ে একেবারে ভেতরে অন্ধকারের মাঝে গিয়ে পড়লাম। হাপরের মত ওঠা নামা করছে বুকটা। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি। শিস কেটে শব্দ হচ্ছে নেই নিঃশ্বাস ফেলার সময়। এতো অল্প পরিশ্রমে ঘেমে নেয়ে গেছি, তেষ্টায় গলা শুঁকিয়ে কাঠ। ফাটলটার ভেতরে স্যাঁতস্যাঁতে মাটি। শ্যাওলা আর ফার্ন দিয়ে ভরে রয়েছে। তবে চাঁদের আলো আসায় তেমন একটা অন্ধকার লাগছে না। বসে খানিকক্ষণ জিরিয়ে নিয়েই আবার উঠে পরলাম। সময় নষ্ট করা যাবে না। থাকার মত একটা ভাল জায়গা খুঁজে বের করতে হবে। এই গুহার মত জায়গাটাও খারাপ না, তবে বাতাসের জন্য থাকা যাবে না। খোঁড়াতে খোঁড়াতে অন্যদিকে হাঁটে লাগলাম। লম্বাটে সুড়ঙ্গের মত, ছাদটা ক্রমশ উঁচু হচ্ছে। এতক্ষণ মাথা ঝুঁকিয়ে থাকতে হচ্ছিল। যতই এগোচ্ছি ছাদ উঠে যাচ্ছে। লতা পাতা ঝুলে রয়েছে ওপর থেকে পর্দার মত। হাত দিয়ে সরিয়ে সরিয়ে এগোতে হচ্ছে। পিচ্ছিল হয়ে আছে কয়েক জায়গায় পানি জমে। সম্ভবত বৃষ্টির সময় কোনো রাস্তা দিয়ে সেই পানি আসে। এখানে এসে জমা হয়। তবে খুবই সামান্য। পানির তেষ্টা ছিল। কিন্তু অন্ধকারে আসলেই ভাল পানি না ময়লা পানি বোঝা যাচ্ছিলো না দেখ ছুঁতে গেলাম না। যতই সামনে যাচ্ছি ঢাক আর শিঙার শব্দটা তত বেশি চড়া আর স্পষ্ট হচ্ছে। পেছন থেকে বিরাট চাঁদটা একেবারে গুহার মুখে উঠে এসেছে যেন আমাকে পথ দেখাতে। কমলা একটা চাঁদ। সেই চাঁদের ওপর গুহার ছাদের লতা গুলো দুলছে বাতাসে। আমি এগিয়ে যাচ্ছি।
প্রায় সিকি মাইল লম্বাটে ছিল সুড়ঙ্গটা। কোনো আঁকা বাঁকা কিংবা উঁচু নিচু জায়গা ছিল না। অন্যপাশে বেরিয়ে এলাম খোলা একটা ছোট চত্বরে। খুব অবাক হয়ে দেখলাম সামনে আর কিছু নেই, হঠাৎ করে খাঁড়া ভাবে নেমে গেছে বহু নিচে ছড়ার মত একটা কিছুটে। বাহিরের সৈকতের লেভেল থেকেও আরো অনেক নিচে হবে এপাশের ভূমি। সামনে ঘন বন জঙ্গল। স্পষ্ট কিছু বোঝার উপায় নেই। রাতের অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না। এমনকি এপাশে ভয়ংকর বৃষ্টি নেমেছে। আকাশ জোড়া মেঘ, যদিও মেঘটাও খুব নিচ দিয়ে নেমে এসেছে। ঘন ঘন বজ্রপাত আর বৃষ্টি হচ্ছে এপাশে। আমি হতবাক হয়ে সুড়ঙ্গের পেছন দিকে তাকালাম। ওপাশের বিশাল চাঁদটা এখনো আমার গুহা জুড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে! আর এপাশে ভয়াবহ ঝড় আর বৃষ্টি! কি অদ্ভুত!
সামনের জঙ্গল্টা ধাপে ধাপে আরো নেমে গেছে যতদূর চোখ যায়। তবে সবই অস্পষ্ট। দ্বীপটা এতই বিশাল যে পুরোটা এখান থেকে দেখে অনুমান করাও মুশকিল। তবে বহু দূরে সব কিছু ছাড়িয়ে, এমনকি এই পাহাড়ের উচ্চতা ছাড়িয়েও উঠে গেছে আগ্নেয়গিরির পাহাড়। পাশাপাশি তিনটা পাহাড়। নিভে রয়েছে। তবে এক নজর দেখলে এই রাতের বেলাও বোঝা যায় যে পাহাড়গুলো কিসের। কোনো গাছ পালার নাম বংশও নেই সেখানে। আগ্নেয়গিরিতে সেটা থাকেও না। আর ঘন ঘন বজ্রপাতের আলোতে ক্ষণিকের জন্য দেখা যায় ছাইয়ে ঢাকা সেই পাহাড়গুলোর বাহ্য দিকটা।
দ্বীপটা যে গোলাকারও না সেটাও বুঝতে পারলাম। চারপাশে পাহাড়ের দেয়াল নেই। এইপাশেই ছিল শুধু। বাকি দিকগুলো সব খোলাই মনে হচ্ছে। যদিও অতদূর পর্যন্ত দৃষ্টি যাচ্ছে না। বিরাট বিরাট কিছু গাছ পালা জঙ্গলের উচ্চতা ছাপিয়ে মাথা তুলে উঠে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আশে পাশেই কোথাও স্রোতধারা রয়েছে। শব্দ পাচ্ছি। দেখা যাচ্ছে না। রহস্যময় লাগছে দ্বীপটাকে। কেমন যেন একটা কালো চাদরে নিজেকে বেষ্টন করে রেখেছে। হাতের বাম দিকের অংশটা খোলা সাগরের দিকে চলে গেছে। সে দিকে থেকেই আচমকা গুরু গম্ভীর ঘন্টার ধ্বনি ভেসে এলো। কি হচ্ছে বুঝতে পারছিলাম না। তবে অদ্ভুত পূর্ণিমা আর ঝড় বাদলের রাতে দেখতে পেলাম ঐ দিকের সাগর থেকে পর পর কয়েক ঝলক আগুনের দলা জ্বলে উঠল। শব্দটা কানে এসে পৌছাতে সামান্য সময় নিলো। কামান দাগানর শব্দ!
চমকে উঠলাম আমি! সাগরের দিক থেকে দ্বীপের ঐ অংশে কামান দাগান হচ্ছে কেন? তীক্ষ্ণ চোখে তাকালাম আমি। সব দেখে যাচ্ছে না অন্ধকার আর বৃষ্টির কারণে। তবে জ্বলন্ত কমলা রঙের গোলা গুলো এসে দ্বীপের ঐ অংশের জঙ্গলে পরা মাত্র বেশ কিছু গাছ শব্দ করে ভেঙে উড়ে গেল। দেখলাম হুড় মুড় করে অনেকগুলো পাখি শব্দ করতে করতে উড়ে যাচ্ছে। এদিক থেকেও গান ফায়ারের শব্দ পাচ্ছি। তবে দেখতে পাচ্ছি না কে বা কারা করছে। ঢাকের শব্দটা আরো চড়া হয়েছে। দ্বীপের বেশ কিছু অংশ থেকে শিঙা আর মুখে করা বিচিত্র উলু ধ্বনির মত শব্দ শোনা যেতে থাকলো। আমি ঝুঁকে বসে পরলাম খোলা জায়গাটায়। শুয়ে দেখার চেষ্টা করলাম। দুই পক্ষে যুদ্ধ বেঁধেছে। এক পক্ষ সাগরে রয়েছে, অন্য পক্ষ জঙ্গলের ভেতর। কিন্তু কাদের মধ্যে লেগেছে সেটাই স্পষ্ট না। সাগরের দলের কাছে জাহাজ থাকাটাই স্বাভাবিক, কিংবা ওদিকেও কোন ছেঁড়া আইল্যান্ড থাকতে পারে। সেখান থেকে এদিকে কামান দাগানো হচ্ছে। এপাশের শিঙা আর উলু ধ্বনি শুনে জংলী মনে হলেও এদের কাছেও যে বন্দুক রয়েছে সেটাও পরিষ্কার। আদিবাসীদের কাছে বন্দুক আসে কীভাবে? কারা এরা? আর সাগরেই বা কারা রয়েছে?
বা দিকের মেঘ অনেকটাই সরে গেছে ডান দিকে, সাগরের ঐ অংশে কারা যুদ্ধ করছে দেখার জন্য আমি সবে আরেকটু ঝুঁকে তাকাতে যাবো- ঘাড়ের কাছে শীতল ধাতব একটা স্পর্শ অনুভব করলাম। সঙ্গে সঙ্গে জমে গেলাম। প্রায় উপুর হয়েই শুয়ে পরেছিলাম আমি। ঝট করে সরে যাওয়ার উপায় নেই। ধীরে ধীরে মাথা ঘুরিয়ে তাকালাম সেদিকে।
চাঁদের বিশাল গুহা মুখটার সামনে এক হাতে একটা পুরনো বন্দুক আমার গলায় ধরে তাকিয়ে রয়েছে কম বয়সী এক তরুণ। পেশিবহুল শরীর। কৃষ্ণাঙ্গ। সারা গায়ে সাদা রঙ দিয়ে নানান আঁকি বুঁকি করা। মাথা থেকে ঝাঁকরা বেণী করা চুল ঝুলছে। কাঁধময় ছড়িয়ে পরেছে সেই চুল। বুকে ধনুক ঝুলিয়ে রাখা। পিঠে তূণ। দুই হাঁটুর সামান্য নিচ থেকে পাখির পালক দিয়ে ছোট ছোট বলয় করে রেখেছে। মাথাতেও পাখির পালকের একটা বেড়। কোমর থেকে ধারলো ভোজালী ঝুলছে। চাঁদ কিংবা বজ্রপাতের আলোয় ঝিক করে জ্বলে উঠল সেটা। ছেলেটার অন্য হাতে পাহাড় থেকে নেমে আরা মোটা একটা লতা। হুট করেই কীভাবে হাজির হয়েছে বুঝতে পারলাম। যুদ্ধ লেগেছে দেখে এই দিকের গুহা মুখের সুরক্ষার জন্য প্রহরী পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। লতা দিয়ে ঝুলে ঝুলে এখানে এসে নেমেছে। আর নামা মাত্রই আমাকে পেয়ে গেছে। বাহ! তিক্ত হয়ে বলে উঠলাম মনে মনে, “চমৎকার! কি দারুণ যোগাযোগ!”
আমি তাকানো মাত্র সতর্ক ভঙ্গিতে আমার গলায় বন্দুকের নল ঠেকিয়ে বিজাতীয় ভাষায় কিছু একটা বলে উঠল। কিন্তু ভাষাটা আমার পক্ষে বোঝা সম্ভব না। ইংরেজী আর ফ্রেঞ্চ দুই ভাষাতেই দ্রুত বলে উঠলাম আমি, “আমি বন্ধু! আমি বন্ধু!!” কিন্তু ছেলেটা মুখ দেখে মনে হল না যে আমার কথা বুঝতে পেরেছে। আমি অতি সাবধানে দুই হাত তুলে উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করতেই গলার চামড়ায় সুঁচ ফোঁটার অনুভূতি হল। অবাক হয়ে তাকাতেই দেখলাম পাখির পালক লাগানো বিষমাখা ডার্ট ছুঁড়ে মেরেছে আমাকে। কিন্তু ছেলেটার হাতে তো পাইপ দেখতে পাচ্ছি না! মারল কে?
ডার্টটা টেনে ছোটাতে ছোটাতেই হাঁটু ভেঙে বসে পরেছি। দ্রুত নিস্তেজ হয়ে আসছে সমস্ত শরীর। মাটিতে শুয়ে পরার আগ মুহূর্তে দেখলাম বজ্রপাতের আলোয় এক হাতে মোটা এক লতা অন্য হাতে লম্বা একটা পাইপ নিয়ে বেরিয়ে এসেছে ষোল সতেরো বছর বয়সী এক মেয়ে। তবে কৃষ্ণাঙ্গ নয় ছেলেটার মত। ল্যাটিন অ্যামেরিকানদের মত চামড়া। ডার্টটা সেই মেরেছে। সতর্ক ভঙ্গিতে সঙ্গীর দিকে তাকিয়ে হড় বড়িয়ে কিছু বলে উঠল মেয়েটা। আমি জ্ঞান হারাচ্ছি না। কেবল সব কিছু ঘোলাটে হয়ে আসছে শুধু। সব শুনতে পাচ্ছি, তবে অস্পষ্ট।
টের পাচ্ছি আবছা ভাবে ছেলেটা এসে আমার হাত পিছ মোড়া করে বেঁধে ফেলছে শক্ত লতা দিয়ে। দুই পা’ও। আমি কিছুই করতে পারলাম না। এমনকি কথা বলারও শক্তি পাচ্ছি না। এক দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রয়েছি। কি আশ্চর্য! কোথায় যেন মোনিকের সঙ্গে মেয়েটার আশ্চর্য একটা মিল রয়েছে! ঝাঁকড়া কোঁকড়ানো চুল? নাকি বড় বড় চোখগুলোয়?
বুঝতে পারলাম না। অর্ধ সংজ্ঞা অর্ধ সংজ্ঞাহীন অবস্থায় তরল এক জগতে প্রবেশ করেছি আমি। কোনো অনুভূতিই টের পাচ্ছি না ঠিক মত। শুধু বুঝতে পারছি ছেলেটা আমাকে অবলীলায় কাঁধে তুলে নিয়ে সেই লতায় ভর করে দোল দিয়ে ছুটে যাচ্ছে তীব্র গতিতে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে। দ্রুত নেমে আসছে নিচের জঙ্গলটার দিকে। আমি শুধু আধখোলা চোখে বজ্রপাতের আলোয় দেখতে পাচ্ছি পায়ের নিচে ছুটন্ত বন জঙ্গল আর চক চকে গাছ পালা, পাহাড়ি নালা আর ক্যাম্প ফায়ার। কিন্তু কোথাও থামছি না। বাতাসে ভেসে উড়েই চলেছি ছেলেটার কাঁধে করে।
আচ্ছা, মেয়েটাও কি আসছে পেছন পেছন? মোনিক? ওকি সত্যি মোনিক? ফিরে এসেছে? আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। রাতের গভীর নিস্তব্ধতা কিংবা মেঘের শব্দ ছাপিয়ে যাচ্ছে ঘন ঘন ভারী কামান দাগানোর শব্দ। মানুষ জনের চিৎকার চেঁচামেচির শব্দগুলোও কেমন তরঙ্গের মত ঢেউ তুলে আসছে আমার কাছে।
(চলবে)
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×