somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জলবায়ু পরিবর্তন বিতর্ক : ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

২৯ শে জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ৯:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জলবায়ু পরিবর্তন বিতর্ক : ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
২য় কিস্তি
(ব্র্যাকেট বদ্ধ সংখ্যা ফুটনোট নির্দেশক)
জলবায়ু সংক্রান্ত যে কোন আলোচনায় যে বিষয়টি খুব স্পষ্টভবেই লক্ষ্য করা যায় তা হলো এগুলো শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন টেকনিক্যাল বিষয়, নীতিকৌশল নিয়ে আলোচনার মাধ্যমেই শেষ হয়ে যায়। আশ্চর্যজনকভাবে এসব কথাবার্তায় অনুপস্থিত থেকে যায়-কিভাবে সাধারণ মানুষ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে জলবায়ু সংক্রান্ত জ্ঞান পৌছে দিচ্ছেন এবং কিভাবে এই বিষয়টি যখন মানুষের কাছে পৌছে যাচ্ছে তারা কিভাবে মোকাবেলা করার কথা ভাবছে ইত্যাদি।

জলবায়ু সংক্রান্ত বিতর্কের অন্যতম প্রধান দিক হলো কিভাবে এই বিষয়টি একটি রাজনৈতিক খেলায় পর্যবসিত হচ্ছে। বিভিন্ন শ্রেণী, পেশার মানুষের কাছে এ সংক্রান্ত জ্ঞান কিভাবে পরিবেশন করা হচ্ছে এবং কিভাবেই বা জনমত গঠন করা হচ্ছে? কারণ, শেষ পর্যন্ত জনগণের চাপই লক্ষ্য, কৌশল বাতলে দিতে পারে। এছাড়াও এই সমস্যাটি সমাধানের ক্ষেত্রে কী ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হতে পারে? কারা এর ফলে লাভবান হবে? এতে কি ধরনের ব্যায় হবে ইত্যাদি প্রশ্ন ও এই বিতর্কের ইতিহাসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সংক্ষেপে বিতর্কের ঐতিহাসিক বিকাশ বর্ণনা করা হলো -

ধরিত্রী কী উষ্ণ হয়ে যাচ্ছে?: ১৮০০-১৯৫০
অনেকের মাঝেই একটি ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে ; আর তা হলো জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ভাবনা-চিন্তা একবারেই সামপ্রতিক বিষয়। কারণ, প্রাতিষ্ঠানিক বা আনুষ্ঠানিকভাবে বৈশ্বিক পরিসরে আলোচনা শুরু হয় ১৯৭৯ সালে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের মাধ্যমে এবং ১৯৮৮ সালে আইপিসিসি গঠিত হয়। কিন্তু জলবায়ু ভাবনার মূল উনবিংশ শতাব্দীতে প্রোথিত। ১৯২৭ সালে ফরাসী বিজ্ঞানী জ্যাঁ ব্যাপটিস্ট ফুরিয়ার গ্রীণ হাউস গ্যাস চিহ্নিত করেন এবং ১৯৩০ সালের মানুষের ভাবনায় উষ্ণতার পরিবর্তনের দিকটি চলে আসে। ১৯৩৯ সালে টাইম ম্যাগাজিন এ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয় “আবহাওয়াবিদদের মনে কোন দ্বিধা নেই যে, বর্তমান সময়কালের জন্য হলেও তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।”(৯)

ঐ সময়কালে জলবায়ূ পরিবর্তনে মানুষের যে ভূমিকা থাকতে পারে তার খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য ছিলনা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে ঐশ্বরিক বিষয় হিসেবে ধরে নেওয়া হতো। কিন্তু ১৯৩৮ সালে বিজ্ঞানী জি. এস. ক্যালেন্ডার সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করেন যে, খনিজ তেলের ব্যবহার জলবায়ু পরিবর্তনে ভুমিকা রাখতে পারে এবং এর কারণ হলো কার্বন ডাই অক্সাইড। জলবায়ু পরিবর্তনে মানুষের ভূমিকা এতই সামান্য ধরে নেওয়া হতো যে, যদিওবা মানুষের কর্মকান্ডের ফলে জলবায়ু প্রভাবিত হতে পারে তথাপি এটা অত্যন্ত দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। এমনকি বিজ্ঞানী অ্যারেনিয়াস, যিনি ১৮৯৬ সালে প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন যে মানব কর্মকান্ড সৃষ্ট কার্বন ডাই অক্সাইড জলবায়ুকে প্রভাবিত করতে পারে, তিনি ও আশা করেছিলেন, “মানুষ বহুকাল ধরে ভালো জলবায়ু ভোগ করে যাবে যাতে উৎপাদনও বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।” (১০) এই উক্তির মাত্র অর্ধশতক বছর পরেই সারা বিশ্বের মানুষ দেখতে পেয়েছে যে মানুষ পারমানবিক শক্তির অধিকারী হয়েছে যা পরিবেশকে ব্যপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে এমনকি এর সমাপ্তি টানতে পারে। ১৯৫০ এর দশকে সাধারণ জনগণের মাঝে এই সচেতনতা তৈরী হয়েছিল যে দূষণের ফল ভয়াবহ হতে পারে। ১৯৫৩ সালে লন্ডনে এবং ১৯৬৬ সালে নিউইয়র্কে ভয়াবহ স্মগ বা (ধোয়াশা) তৈরী হয় এবং এর ফলে দুষণ জণিত মৃত্যুর হার ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।

বিজ্ঞান ও গণমাধ্যমের বিশেষ অভিজ্ঞতা: ১৯৫০ দশক থেকে ১৯৮০ দশক
বিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে প্রকৃতি ও পরিবেশ সংক্রান্ত ভাবনা চিন্তা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতে থাকে। অ্যান্থনি গিডেন্স বলেছিলেন ”আমরা এখন প্রকৃতি আমাদের কি করতে পারব সে বিষয়ে চিন্তিত নই বরঞ্চ আমরা প্রকৃতির কি সর্বনাশ করেছি তাই নিয়ে চিন্তিত। ”(১১)

১৯৫৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া ব্যুরো’র প্রধান ঘোষণা করেন যে, বিগত ৫০ বছরে তাপমাত্রা গড়ে ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৬১ সালে সিন্ডি কীলিং প্রস্তাব উপস্থাপন করেন যে ১৯৫৯ সাল থেকে প্রতিতবছরই বায়ুমন্ডলে অধিকহারে কার্বন ডাই অক্সাইড এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৭২ সালে বিশ্বব্যপী ব্যাপকহারে প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নে খরার কারণে খাদ উৎপাদনে বিপর্যয়, এল নিনো’র ফলে পেরুভিয় অঞ্চলে মৎস্য সংকট, এছাড়াও অন্যান্য অঞ্চলে খরার কারণে সমস্যা দেখা দেয়। পরবর্তী কয়েক বছর তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্বা খাদ্য সংকটে পড়ে যায়। এমতাবস্থায় ১৯৮০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি তথা জ্বালানীর উপর স্বনির্ভরতার বিষযটি প্রেসিডেন্ট নিক্সন জোর দিয়ে উত্থাপন করেন। পুরো ৭০’দশক জুড়েই বিজ্ঞান, বিজ্ঞানী এবং গণমাধ্যমের প্রচারণায় গুরুত্বপূণ বিষয়ে পরিণত হয জলবাযুর স্থিতিশীলতা।

৭০’এর মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ করেই তাপমাত্রা কমে যেতে থাকে যা নতুন আলোড়ন তৈরী করে। এর কারণ ছিল বায়ু দূষণ এবং ঐ সময় কিছু গবেষণায় দাবী করা হয় যে তাপমাত্রা আরো কমে যেতে পারে। আবার অন্যদিকে অধিকহারে কার্বন ডাই অক্সাইড এর কারণে তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। অর্থাৎ একই সঙ্গে উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং কমে যাওয়ার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছিল। উষ্ণতা কমে যাওয়ার উপর যে একমাত্র সংবাদপত্রের খবর প্রথমে প্রকাশিত হয়েছিল তার রেশ ধরে বিতর্ক কয়েকবছর চলেছে। ৮০’এর দশকে বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে আরো নতুন সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির করা সম্ভব হয়। গ্রীণল্যান্ড এবং দক্ষিণ মেরুতে বরফের উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা (১২) করে যে ফল পাওয়া যায় তা বস্তুত পক্ষে ছিল কম্পিউটার মডেলের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের যাচাইকরন এবং দু'টোই মিলে যায়।

৮৮’র গ্রীষ্মকাল: আইপিসিসি’র জন্ম
উপরোক্ত বিষয়গুলোর সাথে সাথে নতুন যে বিষযগুলো আলোচনায় আসে তা হলো - বিভিন্ন দেশে ক্রান্তীয় বনাঞ্চল কমে যাওয়া, এসিড বৃষ্টি এবং ওজোন স্তরে ছিদ্র তৈরী হওয়া যার ফলে ১৯৮৭ সারে মন্ট্রিল প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৮৮ সালে জলবায়ু পরিবর্তনের বিতর্কে ঘৃতাহুতি করেন নাসা’র বিজ্ঞানী জেমস হ্যানসেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন- “বাজে কথা বলা বন্ধ করে একথা লিখুন যে - গ্রীণ হাউজ প্রভাব-ই দায়ী কারণ এর স্বপক্ষে শক্তিশালী সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে”। আইপিসিসি ৮৮তে জন্ম লাভ করলেও এর জন্ম প্রক্রিয়া শুরু হযেছিল জাতিসংঘের বিভিন্ন অংগসংস্থা নিয়ে আয়োজিত ৮৫ সালের এব কর্মশালায়। সেখানে বিজ্ঞানীরা তাপমাত্রা বৃদ্ধির ব্যাপারে একমত হওয়ার ফলে এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়ানোর জন্য প্রাতিষ্ঠানিক পাটাতনের প্রয়োজনীয়তা উদ্ভুত হয়। শার্দূল আগারওয়ালার মতে- যেন ঐ অবস্থায়ই কোন নীতিকৌশল গ্রহণ করা না হয় তাই যুক্তরাষ্ট্র সরকার পুরো প্রক্রিয়া দেরী করে দেওয়ার জন্যই আইপিসিসি’র প্রস্তাবটি করেছিল।

প্রথম কিস্তির জন্য
Click This Link


চলবে

(৯) টাইম, ২রা জানুয়ারী, ১৯৩৯।

(১০) Arrhenius, Svante (1908), Worlds in the Making, P. 63

(১১)http://news.bbc.co.uk/hi/english/static/events/reith_99/week2/week2.htm

(১২) গাছের বলয় পরীক্ষা করে যেমন বয়স নির্ণয় করা যায় তেমনি জমে থাকা বরফের ভিতরে থাকা গ্যাসের উপসি'তিও বরফের বয়স এবং এ সময়ে বায়ুমন্ডলে বিভিন্ন গ্যাসের পরিমান কি ছিল তা নির্ণয় করা যায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১১:০১
১২টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×