রাস্তা আটকে দেব, থেমে যাবে সব
লোক সংখ্যারা হবে বিশ্রী-সরব
প্রাইভেট মিনি আর স্টেট-বাস থেকে
টিটকিরি দেবে লোকে আমাদের দেখে
সানগ্লাস পড়া এক খাকি অফিসার
বেতারে জানাবে যেটা আছে জানাবার
স্কুটারে ব্যস্ত এক মিডিয়ার ছেলে
ভাবছে এমন শট একবারই মেলে
ভিখিরির ট্যাক থেকে পড়ে যাবে টাকা
পথ আটকানো প্রেমে মাধুকরী রাখা
ভিক্ষে কিসের বল? দাবীতেই জোর
দুজনে আটকে দেব রাস্তার মোড়
আমাদের আশ্লেষে আইন কামাল
ঠোঁটের ভেতরে ঠোঁট ভিজে বেসামাল
জিভের ভেতরে জিভ, বোজা চোখে চোখ
আমাদের প্রেম ছুঁলো তার সপ্তক
সাপাট-তানের মত আদরে আদরে
ট্রাফিক আইন ভেঙে দেব প্রেম করে
প্রতি চুম্বনে আমি হব রিজওয়ান
তুমিই প্রিয়াঙ্কা খুন হওয়া গান !
খুন হয়ে গেল গান আরো একবার
জানিয়ে দিলাম যেটা ছিল জানাবার
আমার সময় আর আমার শহরে
কারা চুমু খাবে পথ অবরোধ করে !
-
বেশীদিন আগের নয় ২০০৭ এর ঘটনা। কোলকাতায়। 'রিজওয়ান রহমান' আর 'প্রিয়াঙ্কা তদি' একজন অপরজনকে ভালবেসে বিয়ে করে। প্রিয়াঙ্কা একটা মাল্টিমিডিয়া সেন্টারে গ্রাফিক্সের স্টুডেন্ট, রিজওয়ান শিক্ষক। সেখান থেকেই পরিচয়। বুঝতেই পারছেন প্রিয়াঙ্কা ধর্মে হিন্দু আর রিজওয়ান মুসলমান। প্রিয়াঙ্কার পরিবার অঢেল সম্পদশালী, তার বাবার নাম ‘আশোক তদি’, শহরের অনেক লোকে এক নামে চেনে তাকে।
বিয়ে হয় ১৮ আগস্ট। লুকিয়ে। ৩১ আগস্ট রিজওয়ান প্রিয়াঙ্কাকে তার বাড়িতে এনে তুলে। আশোক তদির হুমকির কারণেই হোক আর যে কারণেই হোক, তার বিরুদ্ধে নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে তারা দুজনে পুলিশের কাছে একটা চিঠি পাঠায়।
রিজওয়ান একে তো মুসলিম, তার উপর দরিদ্র- প্রিয়াঙ্কার প্রতাপশালী বাবা সেটা মেনে নেন নি। তিনি অনেকবার রিজওয়ানকে তার মেয়ের জীবন থেকে সরে যেতে বললেন। প্রিয়াঙ্কা বা রিজওয়ান দুজনই সেটা প্রত্যাখ্যান করলো। তারপর থেকে শুধু প্রিয়াঙ্কার বাবা নয়, তার কেনা পুলিশেরাও তাদের উলটো হুমকি দিতে লাগলো অপহরণ মামলায় রিজওয়ানকে ফাঁসানোর কথা বলে।
৮ সেপ্টেম্বার রিজওয়ানকে ধরে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে আনা হল। তাকে একটি পেপারে সাইন করতে বাধ্য করা হল এই মর্মে যে প্রিয়াঙ্কা সাত দিনের জন্য তার ফ্যামেলির কাছে যাবে। ফিরে আসবে ১৫সেপ্টেম্বার। সেটাই হল। প্রিয়াঙ্কাকে তার ফ্যামেলি তার বাসায় নিয়ে গেলো। এর মাঝে রিজওয়ান অনেক চেষ্টা করলো প্রিয়াঙ্কার সাথে ফোনে কথা বলার, তবু তাদেরকে কথা বলতেও দেয়া হল না।
এরই মাঝে ১১ সেপ্টেম্বার রিজওয়ানকে তদি ফ্যামেলি থেকে আবার একই কথা বলা হল- প্রিয়াঙ্কার জীবন থেকে যেন সে সরে যায়। রিজওয়ান প্রয়োজনে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হতেও রাজী ছিল- কিন্তু প্রিয়াঙ্কার ফ্যামেলি তাতে রাজী ছিল না।
১৯ তারিখও যখন প্রিয়াঙ্কাকে আসতে দেয়া হল না, রিজওয়ান স্ত্রীকে ফেরত আনার জন্য একটা এনজিও’র সাথে যোগাযোগ করে। তার ডায়রী থেকে এবং বন্ধুদের সাথে পরবর্তীতে কথা বলে জানা যায় যে- তাদের বৈধ বিবাহে পুলিশি হয়রানি নিয়ে একটা ডকুমেন্টারিও তৈরি এবং অন্যান্য আইনি পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করছিল রিজওয়ান। সেটা আর হয়ে উঠেনি।
২১ সেপ্টেম্বার দুপুরে রেল লাইনের কাছে মাথায় গভীর ক্ষত-সহ রিজওয়ানের লাশ পাওয়া যায়।
সুমনের কন্ঠে এ ঘটনা ও গান - গানের ইউটিউব লিংক - উইকি - ফেবু লিংক
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:২৯