প্রিয় মিলি,
আমার আত্মমগ্ন জীবনে তুমি এক গোপন জগৎ! নিঃসঙ্গ মহাসমুদ্রের মধ্যে ছোট্ট সবুজ দ্বীপের মত। তোমাকে আমি ভালোবাসি অন্ধের মতোন, শিশুর মতোন, সাধকের মতোন। তোমার সাথে আলাপ করার জন্য বিষয় খুঁজতে হয় না, শব্দ নিয়ে ভাবতে হয় না। তোমার মধ্যে স্বার্থপরতা নেই, দাবীর দাপট নেই, আছে দিগন্তব্যাপী ঔদার্য। কেমন আছো তুমি?
এই প্রথমবার নিজেকে ভীষণ অপরিচিত লাগছে আমার। যতটুকু চিনি বলে দাবী করি, তার চেয়ে ঢেড় বেশি অচেনা! কখনো কেন সেটা বোধ করিনি? সব মানুষের মধ্যেই একটি এক চক্ষু হরিণ আছে। জীবনে মাঝে মধ্যেই এমন এক একটা অবস্থার সৃষ্টি হয় যখন সেদিকে কানা চোখটি ফিরিয়ে থাকতে ইচ্ছে হয়, অন্তত কিছুক্ষণের জন্য। আত্মগোপন করতে গিয়ে আত্মপরিচয়টাই ভুলে গেছি। কত বীজ থেকে তো বিষবৃক্ষও জন্মায়! পৃথিবীর সবথেকে কঠিন কাজ কী জানো? নিজেকে ক্ষমা করা। পারিনি। যদি ধরেও নিই তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছো, ঈশ্বরও দিয়েছেন, তবুও আমি পারিনি নিজেকে ক্ষমা করতে। যে না বলাটা অসম্মতি হওয়ার কথা ছিল, সেটা তোমাকে অসম্মানিত করেছিল। কিভাবে ক্ষমা করি নিজেকে?
তোমার প্রকৃত প্রয়োজনীয়তা অনুভব করার আগেই পৌঁছে গিয়েছিলাম এক অকাল সিদ্ধান্তে। অথবা ভাবনাহীন সিদ্ধান্তের মধ্যে পেতে চেয়েছি্লাম এক নিষিদ্ধ সুখ। মনে পড়ছে, পরিচিতি পর্বেই অনিয়মিত বিরতিতে ধীরে ধীরে কৃষ্ণগহবরে হারিয়ে যেতে থাকলাম। আমাদের আলাপে সবসময় নতুন কিছু যোগ করতে তুমি। আমি কোন কথাটা কেন বলছি সেটা ব্যাখ্যা কখনো আলাদা করে দিতে হতো না। তাই হয়তো প্রতিটি ছোটো বড় সংকটে কিংবা মানসিক দ্বন্দ্বে তোমাকেই ভীষণভাবে মিস করি। নিজের বাসাটাকে আমার কেবল ঠিকানা মনে হয়।
আমার জীবনটা পরিকল্পিত, নানা ঈর্ষনীয় সামাজিক ও পেশাগত জীবনে ভরা। তবু শান্তভাবে বুকের মধ্যে অস্বস্তি নিয়ে আছি। জীবনে যা কিছু পার্চেসএবল তা হয়তো চাহিদা মেটায়, স্বস্তি দেয় না। জীবনটা অংক ধরে নিলে ফলাফল আসবে। তবে সেটা ভুল না ঠিক নির্ভর করবে আপনি সর্বজন গ্রাহ্য সূত্রকে কতটা ইমাজিনারী বাইনারী অনুযায়ী এপল্যাই করেছেন। যেমন ধরুন সরল অংকের নিয়ম হলো থার্ড ব্রাকেট সেকেন্ড ব্রাকেট, ফার্স্ট ব্রাকেট ভাগ-গুন-বিয়োগ-যোগ। এর কোনো একটা আগে পড়ে হলেই উত্তরের মান পরিবর্তিত হয়ে যায়। সেটাকে ভুল বলা যাবে কি না সেটা তর্ক সাপেক্ষ। তবে গানেতিক ভাবে নির্ভুল জীবন হয় না।
কিছু নিরবতা মস্ত বড় ভুল। যত বেশি দেরি হয় ততবড় ভুল হয়। অল্প বয়সের ভুল গুলিতে দোষ থাকে না। বয়স সে দোষ নিজের কাধে তুলে নেয়। বয়স বাড়লে ভর্ৎসনার ভয়ে বয়স এমন লুকিয়ে চুরিয়ে থাকে যে দোষ চাপিয়ে দেয়ার জন্য তাকে আর খুঁজেও পাওয়া যায় না। বয়স বাড়লে সুখি হবার ভান করতে হয়। সুক্ষ্ণ রুচির পরিচয় দিতে হয়। বিনয়ী হয়ে নিজেকে উদার প্রমাণ করতে হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো, অন্যজন কী চায় সেটা বোঝা। আমি কখনো তোমাকে বোঝার চেষ্টা করিনি। তাই হয়তো তোমাকেই খুঁজি, তোমাতেই খুঁজি।
‘আমাদের প্রতিটি মানুষের বুকের ভেতর একটি করে ছাপাখানা আছে।
সেখানে সুখের শব্দ ছাপা হলে আমরা হাসি। আর দুঃখের শব্দ ছাপা হলে আমরা কাঁদি।
তা বলে এমন নয়
সেখানে অভিমান নেই, আক্ষেপ নেই
আছে। তবে যার জন্য এই শব্দ দুটি ছাপা হয়
সে ছাড়া অন্য কেউ এ শব্দ দুটির খবর জানে না’।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০২১ রাত ১০:৫১