ফিরোজ মান্না ॥ সৌদি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আলোচনা সফল হয়েছে। সৌদিতে অচিরেই লোক নিয়োগ শুরু হতে পারে। সৌদি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের লোক পাঠানোর ধরন পাল্টানোর জন্য তাঁরা খুশি। কারণ জনশক্তি রফতানিকারদের মাধ্যমে একজন কর্মীকে সৌদি যেতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। কিন্তু সরকারের নতুন নিয়মে এই খরচ অর্ধেকে কমিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ড. সুলতান বিন মুহাম্মদ আল হাজ্জার নেতৃত্বে ৮ সদস্যের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে সন্তোষ প্রকাশ করে রবিবার ৭ এপ্রিল নিজ দেশে ফিরে গেছেন। সাত দিনের এই সফরে বাংলাদেশ লাভবান হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। প্রতিনিধি দল দেশে ফিরে বাংলাদেশ সফরে অর্জনগুলো জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রতিবেদন আকারে তুলে ধরবেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন জনশক্তি রফতানি-কারকদের সংগঠন মিথ্যা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাঁরা জনগণকে মিথ্যা কথা বলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তাঁদের কথায় বিভ্রান্ত হওয়ার কোন কারণ নেই।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. জাফর আহমেদ খান জনকণ্ঠকে বলেন, সৌদি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ইতিবাচক বৈঠকে হয়েছে। তবে তাঁরা বাংলাদেশ থেকে কত সংখ্যক লোক নিয়োগ করবে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে নানা কারণে এই বাজারটি বন্ধ ছিল। সৌদি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরের মাধ্যমে বাজারটি বিষয়ে একটি ‘পজিটিভ’ মনোভাব তৈরি হয়েছে। বাজারটি বন্ধের পেছনে নানা বিষয় কাজ করেছে। বাজারটি খুলে গেলে দেশের বিপুলসংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান হবে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে সৌদি প্রতিনিধি দল দেশে এসেছেন। বর্তমান সময়ে সৌদি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করার মধ্যে একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে। তাদের দেশে কর্মসংস্থানের জন্য লোক নিতে হলে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে নিতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের শ্রমবাজারটি তাদের জন্য বেশি সস্তা। বিশ্বের ১৫ দেশ জনশক্তি বিক্রি করে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শ্রম সস্তা বাংলাদেশেই। এ ছাড়া আর কোন দেশে এত শ্রম সস্তা নেই।
সূত্র জানিয়েছে, সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ড. সুলতান বিন মুহাম্মদ আল হাজ্জার নেতৃত্বে রবিবার বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লমেন্ট এ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসেল) এমডি, বাংলাদেশ ম্যান পাওয়ার ব্যুরোর ডিজিসহ জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে তাঁরা আলাদা আলাদা বৈঠক করেছেন। বোয়েসেলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশে নতুন নিয়মে লোক পাঠানো হচ্ছে। এই নিয়ম মেনেই আমরা সৌদিতে লোক পাঠাতে পারব। এতে একজন কর্মী অনেক টাকা কম লাগবে। মালয়েশিয়ায় সরকারী পর্যায়ে লোক পাঠানো হচ্ছে। হংকংয়ে ২০ হাজার নারী কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সৌদিতেও লোক পাঠানোর বেলায় একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। যাতে অভিবাসন ব্যয় কমে যায়।
সৌদি প্রতিনিধি দল তাঁদের দেশের কথা উল্লেখ করে বলেন, সৌদি বেকার যুবকদের বেকারত্ব দূর করতে সে দেশের সরকার ৬ বছর মেয়াদে বিদেশী শ্রমিক নেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে আগ্রহী। কিন্তু এ বিষয়টি বাদশার অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। বর্তমানে সৌদিতে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ বা ৫ লাখ বেকার জনসংখ্যা রয়েছে। এই বেকারদের চাকরির ব্যবস্থা করতেই সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয় এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। তবে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে সৌদি বাদশার অনুমোদনের পর। যদি এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয় তাহলে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ফিলিপাইনের ৫০ লাখের ওপর শ্রমিককে দেশে ফেরত যেতে হবে। সৌদি আরবে এই মুহূর্তে এসব দেশের এক কোটির বেশি শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। ৩ বছরের আকামা বা অনুমতিপত্র নিয়ে অনেক শ্রমিক ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে সেখানে বসবাস করছেন। শ্রমিকরা নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গেও যুক্ত হচ্ছে। এ কারণেই সৌদি সরকার ৬ বছরের আকামা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সৌদি প্রতিনিধি দল এখন পর্যন্ত অফিসিয়ালি বাংলাদেশ সরকারকে লোক নিয়োগের বিষয়টি জানায়নি। তবে সেখানকার পত্রপত্রিকায় বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি হয়েছে। ৬ বছরের আকামা দিয়ে যদি তাঁরা লোক নিয়োগ করে তাহলে দেশের জন্য ভাল হবে। কারণ যারা ৩ বছরের আকামা নিয়ে সেখানে ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে অবৈধভাবে বসবাস করছে তারা নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছে। এই শ্রমিকগুলো দেশে ফিরে এলে অন্য শ্রমিকদের যাওয়ার সুযোগ হবে। তবে একটা জিনিস নিশ্চিত করতে হবে যত কম খরচে শ্রমিক পাঠানো যায়। এক লাখ টাকার মধ্যে যদি শ্রমিক পাঠানো যায় তাহলে একজন শ্রমিক ৬ বছর পরে ভাল অঙ্কের টাকা নিয়ে দেশে ফিরতে পারবেন। আমরা সৌদি সরকারের এমন সিদ্ধান্ত ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছি।
বায়রা জনশক্তি রফতানি-সংক্রান্ত সব ধরনের সেবা প্রদান বন্ধ করে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের এই ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার তাদের বাদ দিয়ে-সরকার টু সরকার (জি টু জি) পদ্ধতিতে বিভিন্ন দেশে লোক নিয়োগের বিরুদ্ধে তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জি টু জি পদ্ধতিতে লোক নিয়োগ করলে তাদের ১২শ’ সদস্য ব্যবসাহীন হয়ে পড়বে। তাদের সেক্টরটি ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে গিয়ে ঠেকবে। এখান থেকে মুক্তি পেতে হলে তাদেরই সরকারের পাশাপাশি ব্যবসা করার সুযোগ দিতে হবে। জনশক্তি রফতানি খাতের সব সদস্যের সংগঠন বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা) রবিবার রাজধানীতে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন বায়রার সভাপতি শাহজালাল মজুমদার।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



