somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসুন, পরিচিতি হই একটি রাশিয়ান ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান দিন মাসলিনেচ্ছা এর সাথে ,সাথে নিজ হাতে তোলা কিছু ছবি

১৩ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা যেমন বসন্ত বরন পালন করি ঠিক তেমন রাশিয়ানরা পালন করে শীত বিদায় (আপনি একে বসন্ত বরন বলতে পারেন, যদিও এরা শীত বিদায় বলে পালন করে) অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানটিকে বলা হয় রাশিয়ান ভাষায় দিন মাসলেনিচ্ছা।এটি রাশিয়ার অন্যতম একটি জনপ্রিয় উৎসব। এ উদযাপনে পেন কেক, রাশিয়ান ভাষায় ব্লিনি খাওয়া হয় বলে একে পেন কেকের অনুষ্ঠানও বলা হয়।

মাসলেনিচ্ছা অনুষ্ঠানটি পালিত হয় এক সপ্তাহ ধরে। এ অনুষ্ঠানটি এসেছে রাশিয়ান পেগানবাদ থেকে যদিও অনেকে বলে থাকেন অর্থডক্স ধর্ম থেকে। আসলে এটি পেগানবাদ থেকে উৎপন্ন হয়ে পরে অর্থডক্সে যোগ হয়। তাই একে অর্ধ পেগানবাদ -অর্ধ অর্থডক্স ধর্মের অনুষ্ঠান বলা হয়।অনেকে এটিকে স্লাভিক উদাযাপনের একটি বলে থাকেন।
মাসলেনিচ্ছা প্রাচীন কাল থেকে রাশিয়ায় উদযাপন হয়ে আসছে। তবে প্রতি বছর এ অনুষ্ঠানটি উদযাপিত হয় লেন্টের আগের শেষ সপ্তাহে। তাই উদযাপনের নির্দিষ্ট কোন তারিখ নেই। যেমন এ বছর এটি পালিত হল ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৬ মার্চ। আর গতবার হয়ে ছিল ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি।

এ অনুষ্ঠানটির মূল উদ্দেশ্য হল বিগত বছরের সকল মন্দ শীতের সাথে বিদায় দিয়ে বসন্তকে বরন করা। মাসলেনিচ্ছা সপ্তাহে অর্থডক্সের অনুসারিগন নিরামিষভোজী হয়ে যান। পুরো সপ্তাহ ব্লিনি বা পেনকেক খাওয়া হয় মধুর সাথে। আয়োজন করা বিভিন্ন ধরনের ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা আর লোকজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।

আর শেষের দিন, সাধারণত রবিবার হয়ে থাকে, উন্মুক্ত মাঠে আয়োজন করা মূল অনুষ্ঠানের। এদিন আগুনে পোড়ানো শীতকে প্রতীকি অর্থে। তারা শীতের প্রতিকৃতি রুপে তৈরি করে ডামি যা কাপর অথবা খড়ের তৈরি হয়ে থাকে।পরে এটিকে আগুনে পোড়ানো হয়, এই বিশ্বাসে যে, শীতকে আগুনে পোরালে শীত কাল শেষ হয়ে বসন্ত কাল আসবে। আর সাধারন লোকজন ছোট ছোট ডামি কিনে শীতের বড় ডামির সাথে পোড়ায় সকল মন্দ দূর করার জন্য আর নিজের মনের বাসনা পূরনের জন্য। ডামি পোড়ানোর আগে সবাই দলবদ্দ হয়ে নাচে, গান গায়। এরপর সবাই মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় প্রিয়জনের কাছে ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে আর উত্তরে প্রিয়জন বলে থাকেন সষ্টিকর্তা ক্ষমা করবেন। এরপর সবার সামনে শীতের ডামিটি পোড়ানো।

এবার আমার সাথে দেখুন, এ বছর কীভাবে মাসলেনিচ্ছা পালন করা হল। আমরা যারা বিদেশী, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তাদেরকে এই মাসলিনেচ্ছা অনুষ্ঠানের সাথে পরিচয় করানোর জন্য আমাদের ফ্যাকাল্টির ইন্টার ক্লাব দুই পর্বে আয়োজন করে মাসলেনিচ্ছা উৎসবের।

প্রথম দিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রাথমিক ভাবে পরিচয় করানো হয় এ উৎসবের সাথে। এ দিন আমাদেরকে প্রচুর ব্লিনি অথবা পেনকেক দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। এর পর ঐতিহ্যবাহী রাশিয়ান নাচ গানের সাথে পুরাতন কতগুলো খেলা সবাই মিলে খেলি।

১ম পর্ব

প্রথমেই কয়েকজনকে লোটারির মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী টুপি পোরানো হয়।



এরপর আমাদের আপ্যায়ান করানো হয় ব্লিনি বা পেন কেক দিয়ে





এবার দেখুন রাশিয়ান ব্লিনি বা পেন কেক







এরপর মেতে উঠি কিছু রাশিয়ান পুরোনো ঐতিহ্যবাহী খেলায়













২য় পর্ব

এরপর ২য় পর্ব শুরু হয় রবিবার দুপুরে। এদিন আমরা বাসযোগে আমাদের শহর সেইন্ট পিটার্সবুর্গ থেকে ৬৫ কি.মি. দূরে সমূদ্র সৈকত (শহর ঝেলেনাগরকস) এ যাই মূল অনুষ্ঠান দেখতে। আসুন ছবির সাথে দেখা যাক।
এভাবে আমরা রওয়া হই বাসে



যারা এ ট্যুরের আয়োজন করেছিলেন





যাওয়ার পথে , রাশিয়ান প্রকৃতি







রাশিয়ান কটেজ



আমরা মূল অনুষ্ঠানে



শুরুতেই চোখে পড়ল ছোট ছোট সুন্দর হাতের তৈরি ডামিগুলো












এরপর দেখলাম একজন নিয়ে আসছে হাতে তৈরি কিছু ধর্মের প্রতীক বিক্রি করতে। যদিও এগুলোর অর্থ ঠিক মত বুঝিনি





এভাবে কিছুক্ষন ঘুরাঘুরির পর যাই ফিনিশ উপসাগর দেখতে, যা এখন পুরোটাই জমে বরফ হয়ে আছে। উপসাগরের উপর দাঁড়িয়ে বন্ধুদের ছবি তুললাম এভাবে



(জানিয়ে রাখি, এখান থকে খুব কাছেই ফিনল্যান্ডের সীমানা অবস্থিত। ১৯৩৮ সালের শীত যুদ্ধের আগে এ অঞ্চলটি ফিনল্যান্ডের অন্তর্ভুক্ত ছিল)

এরপর আবার ফিরে আসলাম মূল অনুষ্ঠানে



দেখলাম মনোমুগ্ধকর অনষ্ঠান











এরপর শুরু হয় বিভিন্ন রকমের প্রাচীন খেলাধুলা





বাচ্চারা একটি খেলায় অংশগ্রহন করছে।



এরপর শুরু হয় আগুন নিয়ে চমৎকার খেলা, যা দেখে সবাই মুগ্ধ হই







তারপর সবাই মিলে দলবদ্ধ হয়ে নাচে আর গান গায়



দুজন তরুনী একটি বাচ্চাকে শেখাচ্ছে কিভাবে এ উদযাপন করতে হয় এ উৎসব



দেখি আমার বন্ধুরা সবাই ছোট ছোট ডামি কিনছে



এরপর আশে শেষ মূহুর্ত, মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় ক্ষমা চাওয়ার পর পোড়ানো হয় শীতের ডামিকে।









এভাবেই পালিত হল এ বছর দিন মাসলিনেচ্ছা।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:১৯
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×