somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নস্টালজিয়ার নষ্টালজিক ডাইরি: স্মৃতির পাতায় রাজশাহী কলেজ এইচ এস সি '৯৭

১৫ ই জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমি লেখক নই,
লিখালিখির অভ্যাসও তেমন একটা নেই। গত মাসে রাজশাহী কলেজের এইচএসসি ব্যাচের ১৪০ বছর পূর্তি উৎসব অনুষ্ঠিত হল। সেই সময় আমাদের বন্ধুদের সাথে যে লিখাটি শেয়ার করেছিলাম, তা হুবহু তুলে দিলাম।

ধরেই নিয়েছিলাম ১৪০ বছরের এই মিলনমেলায় বুঝি আর যোগ দেয়া হলো না। কথায় আছে কাছের লোকই নাকি ট্রেন ফেল করে। রাজশাহী শহরে কর্মক্ষেত্র এবং বাসা হাওয়া সত্ত্বেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রেজিঃ করতে পারিনি। মূলত রেজিঃ এর শেষ ডেট টি যখন জানতে পেরেছি, ততক্ষণে রেজিঃ এর শেষ ডেটও শেষ হয়ে গেছে।

ভেবেছিলাম কপালে নেই। কিন্তু মানুষ তো জানে না তার কপালে কি আছে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে যা হয়, থার্ড ওয়েটিং লিস্ট থেকে ভর্তির সূযোগ সূযোগ পাওয়ার মতই রেজিস্ট্রেশন করার সুযোগ পেয়ে গেলাম। নিবেদিত প্রাণ কতিপয় তরুণ অর্গানাইজার এর বদণ্যতায়। রেজিস্টার বুক এর শেষ পাতায় আমার নাম পাওয়া যেতে পারে।

মোঃ জিয়াউর রহমান
এইচএসসি '৯৭, বিজ্ঞান বিভাগ, সেকসন-A (বিজোড়), রোল নং- ২৫১ কিংবা ২৫৩ {'৯৭ এর ঋতু অর্থাৎ অতোনু ভাই-এর ঋতু নিশ্চিত করতে পারবে}
কাটাখালী, রাজশাহী
একটা বহুজাতিক কোম্পানির মার্কেটিং এ কর্মরত।

রাজশাহী কলেজের এইচ এস সি "৯৫-৯৭" সময়টাকে ইতোমধ্যে দীর্ঘ ২২ বছর পেছনে ফেলে এসেছি আমরা। রেজিস্ট্রেশনের পর থেকেই মনের মধ্যে ক্ষণে ক্ষণে ভেসে উঠছে হারিয়ে যাওয়া অনেক মুখচ্ছবি, অনেকেরই নাম মনে নেই কিন্তু চেহারা মনে আছে, কারো আবার চেহারাটা ভুলে যেতে বসেছি কিন্তু নামটি মনে রয়ে গেছে। আমার মনছবি তে কেউ কেউ তো এখনও ১৮ বছরের দুরন্ত যুবক কেননা ২২ বছরে ধরে তার পরিবর্তন এর কোন আপডেট আমার স্মৃতি ভান্ডারে জমা পড়েনি। এই তো দিন ১৫ আগে বন্ধু রাজ্জাক কে পেয়েছিলাম। আলুপট্টির মোড়ে। বাজার হাতে যাচ্ছিল নিজ ফ্ল্যাটে। অযাচিতের মত হঠাৎই রাস্তা ঘিরে দাড়ালাম। ডান বাম করে বেরুনোর চেষ্টা করেও যখন ব্যর্থ হলো, তখন একটু থতমত খেয়ে নাক বরাবর দাঁড়িয়ে চেনার চেষ্টা করলো। আমি জানতাম, ও আমাকে চিনতে পারবে না। " মিলিমিটার জো আব সেন্টিমিটার নেহি, পাক্কা মিটার ব্যান গায়া হ্যে" তবুও একটু সময় নিলাম। বুদ্ধিমান মানুষরা যখন কিংকর্ত্যবিমূঢ় হয়, তখন তাদের তাৎক্ষণিক এক্সপ্রেশন টা হয় দেখার মত! আমি জানি সে একজন পুলিশ কর্মকর্তা, তাই আর দেরি না করে ঝটপট নিজের নাম টি বলে ফেললাম, "চিন্তে পার? আমি জিয়া!" তবুও কাজ হলো না। তখন আমার আসল পরিচয় টা দিলাম। দোস্ত আমি জিয়া মানে " কাটাখালী'র জিয়া, রাজশাহী কলেজ '৯৭ ব্যাচ"। মুহুর্তেই কপালের ভাঁজটা মিলিয়ে গেল। তার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। দুই দশক আগের রাজ্জাক কে ফিরে পেলাম। মুহূর্তেই একজন পুলিশ একজন মানুষ হয়ে গেল, বন্ধু হয়ে গেল। হায়! হায়! জিয়া, তোমার কত পরিবর্তন ! কথা বলে বুঝলাম, আমার জীবনের এই ২২ বছরের অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনার আপডেটই তার কাছে আছে, কেবল আমার চেহারার আপডেট টা নাই। এদিকে আমি ৭৩ থেকে ৯৩। মনে করে নিতে পারেন ২o কেজি ওজনের একটা আসতো খাসি '৯৭ ব্যাচের সেই আমার মাঝে ঢুকে গেছে। রাজ্জাকের সাথে কথা বলে মনটা ভাল হয়ে গেল।

কলেজের সেই দুই বছর, ১০ বছরের স্কুল আর ৮ বছরের বিশ্ববিদ্যালয় এর মাঝে যেন এক মেল বন্ধন হয়ে আজো স্মৃতিতে অম্লান। এ দেশের গড় আয়ু বিবেচনায় দুই তৃতীয়াংশ সময় ইতোমধ্যে পার করে ফেলেছি। এখন কিছু স্মৃতি অমাবস্যার ঘোর অন্ধকারে হারিয়ে যেতে বসেছে, কিছু স্মৃতি ধুলো-বালির আস্তরণে ঢাকা পড়ে যেতে বসেছে। আর কিছু স্মৃতি পূবাকাশের রক্তিম সূর্যের আলোয় এখনও উদ্ভাসিত, চকচকে, উজ্জ্বল। ইদানিং অনেক কিছুই ভুলে যাওয়া শুরু করেছি। ভুলে যাওয়ার সময় শুরু হয়ে গেছে। প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে। অন্ধকার হাতড়ে, ধুলো বালি ঝেড়ে ফেলে কলেজের সেই সব বন্ধু দের কথা, সেইসব আগুনঝরা দিনের কথা, ভালোলাগা মুহূর্তগুলি, বিগত ২২ বছরেও যে কথাগুলো কাউকে বলা হয়নি, সেই লুকিয়ে রাখা অনুভূতিগুলি স্মৃতির পাতায় ঘুরপাক খাচ্ছে বিগত কয়েক দিন থেকে.

প্রতিটা মানুষের স্মৃতির পাতা যদি কাগজে লিখে বিক্রি করা যেত, তাহলে তার প্রত্যেকটিই হতো একেকটি বেস্ট সেলার নভেল। আলাদা আলাদা ধরনের প্রতিটি নভেলই যেন কারো না কারো মন ছুঁয়ে যেত। একদিকে ট্রাফিকে ফুল বিক্রি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে রোড ডিভাইডারেই সটান ঘুমিয়ে থাকা মেয়েটির আর অন্যদিকে চার চাকার মোটরযানে চড়ে যাওয়া, স্যুট- টাই পরা আর চোখের সামনে ডেইলি স্টার ধরে রাখা ভদ্রলোকের; স্মৃতির ভাণ্ডার, কারোরটাই কারো থেকে কম বৈচিত্র্যপূর্ণ নয়। হয়তো আপাতঃদৃষ্টিতে তা ধরা পড়বে না। কিন্তু যদি প্রতিটি ব্যাক্তি স্বত্ত্বার স্মৃতির ভাঁড়ার কাগজে লেখা সম্ভব হতো, তাহলে আমরা দেখতাম বিধাতা কত বড় সাহিত্যিক!

সেই স্মৃতির পাতা হাতড়ে কাগজে না হোক, ভার্চুয়াল খাতায় লিখে রাখার এক ছোট্ট ইচ্ছের বাস্তবায়নই মূলত নস্টালজিয়ার এই নস্টালজিক ডায়েরি। ভুলে যাওয়ার আগেই সেটাকে নথিবদ্ধ করা। "৯৭ ব্যাচের ঘনিষ্ট, আধা-ঘনিষ্ট এবং অ-ঘনিষ্ট বন্ধুদের কথা তুলে রাখতে চাই এই ডায়েরী তে। প্রথম অনুভব, প্রথম অনুভুতি, প্রথম ভাললাগা আর ইউনিক কিছু ঘটনার সন্নিবেশ। "৯৫-৯৭" কে ঘিরে পূর্বের ও পরের কিছু মূহুর্তের স্মৃতিচারণ।

এতক্ষণ পর্যন্ত পড়ে যারা এই পর্যন্ত এসেছেন তাদের জানাই কৃতজ্ঞতা। চলুন যাওয়া যাক, ঘটনা পর্বে। টাইম মেশিনে আমরা ফিরে যাবো দুই দশক আগের সেই খোলামেলা, শান্ত, ছায়ায় ঢাকা, মায়ায় ভরা; ভিন্ন ভিন্ন রঙের, ভিন্ন ভিন্ন গঠনের, ভিন্ন ভিন্ন দিকে মুখ ফিরিয়ে ছড়িয়ে থাকা রাজশাহী কলেজের লাল বিল্ডিং এর ভাঁজে ভাঁজে....

নিজের নামে রাবার স্ট্যাম্পের সিল:
১৯৯৫। সবেমাত্র এসএসসি পরীক্ষা শেষ করেছি। কাটাখালীর একটি স্কুল থেকে। আমার মেজ ভাই তখন একাদশ শ্রেণীর ছাত্র। তিনি রাজশাহী কলেজের এক বড় ভাই এর তৈরী কিছু বাংলার নোট সংগ্রহ করেছেন। হাতে লিখা নোট। যিনি তৈরী করেছেন তার নাম সহ সিল মারা আছে নোটের বিভিন্ন জায়গায়।
নিলোৎপল রায় অপু
একাদশ শ্রেণী, বিজ্ঞান বিভাগ
রাজশাহী কলেজ
(রাজশাহী বোর্ডে ১ম বা দ্বিতীয় স্ট্যান্ড করেছিলেন, এখন সম্ভবত মিশিগান ইউনিভার্সিটি তে আছেন)

আমার ধারণা ছিল, শুধু বিসিএস ক্যাডাররা কেবল নিজেদের নামে সিল তৈরী করতে পারে। কিন্তু রাজশাহী কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে চান্স পাওয়া কতটা গৌরবের সেইটা বোঝার জন্য এই সিলটি যথেষ্ট ছিল। আমারও একটা সিল চাই। এই ব্যাপারটা আমাকে পেয়ে বসেছিল। তখন কলেজ ভর্তি কোচিং এর রমরমা ব্যবসা। "রাডার" কলেজ ভর্তি কোচিং তে ভর্তি হয়ে গেলাম। লোকনাথ স্কুল এ বিকেলে ক্লাস হতো। কোচিং থেকে ফিরতে ফিরতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যাও শেষ। মানে আমার সেই দিনটি মাটি। নিজের সাথে যুদ্ধ করি প্রতিদিন। যে সময়টা খেলার মাঠে থাকার কথা, তখন কোচিং এর ঐ রুমটা ছিল অসহ্য। কিন্তু সিল তো আমাকে বানাতেই হবে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে কথা। তিন মাস কোচিং শেষে এস এস সি পরীক্ষার রেজাল্ট হলো এবং ভর্তি পরীক্ষার আগ মুহূর্তে সরকার ঘোষণা দিল, কলেজ ভর্তি হবে এসএসসি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে। আমার মোট নম্বর ছিল ৮২৮। ভর্তির মেধা তালিকা প্রকাশ করা হল। বিজ্ঞান বিভাগে ৮২৮ পর্যন্ত মেধা তালিকায় এসেছিল কিন্তু আমার রোল নাই। অবশেষে পেলাম। আমি প্রথম ওয়েটিং লিস্ট এ প্রথম হয়েছিলাম।

প্রথম বার ফাস্ট হলেও খুশি হ্ব্যার কোন কারণ ছিল না। আমার বাবা পিডিবি তে চাকুরী করতেন, রাজশাহী কলেজের সামনে দিয়ে যাবার সময় একদিন বলেছিলেন, আমি এই কলেজের ছাত্র ছিলাম, এসএসসি পরবর্তী তোমাকেও এইখানে চান্স পেতে হবে। তখন থেকেই রাজশাহী কলেজের ব্রিটিশ কালারের ওই প্রশাসন বিল্ডিংটার প্রতি একটা বিশেষ টান ছিল। বাবা ভর্তির তালিকা প্রকাশের পরদিন, সেই কলেজের এক শিক্ষকের কাছে নিয়ে গেলেন, আমাদের বাসায় একসময় লজিং থেকে পড়ালিখা করতেন। তো সেই ভদ্রলোক আমাকে অনেক পরমার্শ দিলেন, আর বললেন, প্রতিদিন এসে খোজ নিতে, রাজশাহী কলেজ তো... বলা যায় না, সকলেই ভর্তি হয়ে যেতে পারে.... মনে মনে কইলাম হ আপনারে কইসে.......

পুনশ্চ : সিল বানানোর যখন সময় হয়েছিল অর্থাৎ ভর্তির পর আর ইচ্ছেটা ছিল না। আমার নোট কেউ সংগ্রহ করবে এমন ভাল ছাত্রও ছিলাম না। বিসিএস এর সবগুলো ধাপ (প্রিলি থেকে মেডিক্যাল টেস্ট) নিজ যোগ্যতায় পার হলেও বিসিএস ক্যাডার হতে পারলাম না, তাই ইচ্ছেটা অধরাই রয়ে গেলো।

প্রথম ভাললাগা:
ভর্তির পর প্রথমেই যেই বিষয়টি খুব ভালো লেগেছিলো, সেটি হলো গ্যালারি রুমে ক্লাস করা। ফিজিক্স এর গ্যালারি রুমে মুজিবর স্যারের একঘেয়ে আপেক্ষিক তত্ত্ব আর পেছনে বসে মাহবুব, জিয়া, সামু, রাজ্জাক (ল্যাব এর) সহ দুষ্ট ছেলের দলের কুত্তা বিড়ালের ডাক... আর ১৭ নম্বর গ্যালারি রুমে রোকেয়া কিংবা শামীমা ম্যাডামের স্নিগ্ধতা ছড়ানো Mother in Manville কিংবা রাবনের লংকা..... দারুন ব্যাপার। সকল সংশয় সংকোচ কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সাদা কাঠির মাথায় আগুন দিয়ে ধোয়ার কুন্ডুলি পাকানোর স্বাধীনতা...ঘণ্টা ঘরের সিড়িতে বসে বসে সুখ টান আর হিমুর অপেক্ষা....
একটা ক্লাস শেষ করেই দৌড়.. দৌড়... অন্য কোন বিল্ডিং এর অন্য কোন ক্লাস রুমে.... পথিমধ্যেই পরিকল্পনা হতো আজকে মেয়ে বন্ধুদের কোন পাশে বসানো হবে.... জায়গা দখল পদ্ধতি আর কি…
এর পর শুরু হলো একে একে বন্ধুদের প্রেমের স্রোতে ঝাঁপ দেয়া....মফস্বলের ছেলে তার উপর আবার নিম্ন মধ্যবিত্তের সন্তান তাই, কাউকে প্রপোজ করার সাহস ছিল না.... একজন কে ভীষণ ভালো লাগতো কিন্তু কাছে ঘেঁষার ই সাহস হয় নাই। বন্ধুরা তাকে একটি বদখত নামে ডাকতো, মনে মনে ভীষণ রাগ হতো.. কিন্তু কিছু বলা মানেই, "বাঁশ তুই ঝাড়ে ক্যা, ঘাড়ে আয়!" বছর কয়েক আগে সে আমার ফেইসবুক ফ্রেন্ড হয়েছে, তার ফেসবুক প্রোফাইল ঘেঁটে দেখলাম, তার জামাই আমার কোম্পানিতেই কর্মরত... মনে মনে বললাম ইস যদি সাহস করে বলেই ফেলতাম তাইলে সাগরের মত আমার পাশেও ....
সে এখন সপরিবারে প্রবাসী। তার হাসি এখনও আগের মতই সুন্দর.....দোয়া করি তাদের হাসিখুশি মাখা জীবন অমলিন থাক।

আমার রাজশাহী কলেজের বন্ধু সাগর। ভালো নাম ইকবাল হোসেন। বছর খানেক আগের কথা। আমি হঠাৎ বেশ অসুস্থ। ইউরিন ইনফেকশন, সাথে জর। আমার অতি দায়িত্বপরায়ণ বউ, ঢাকায় থাকেন। আর আমি থাকি রাজশাহীতে। আমার বড় ভাইরা ভাইকে পাঠিয়েছেন আমাকে যেন ধরে পাকড়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। উনি আমাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেলেন ডক্টর সাগর স্যারের কাছে। উনার বিশেষ পরিচিত তাই বেশি ওয়েট করতে হলো না। স্যারের চেম্বারে ঢুকে গেলাম। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, উস্কো খুস্কো আমি ডক্টর সাহেবের সামনে বসা। আমার ভাই পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন, ওর নাম জিয়া, আমার ছোট ভাই, অমুক জায়গায় হেড অফ মার্কেটিং। দেখুন তো কি হইসে। আমি চুপচাপ নিষ্পলক তাকিয়ে আছি ডাক্তারের দিকে। ডাক্তার সাহেব আমার চোখে চোখ রেখে কিছুক্ষন সময় নিলেন, আপনি মানে আপনার কি হোয়েছে? জি একটু জর জর ফিল করছি। আপনি মানে আপনার বাড়ি কাটাখালী, জিয়া, কাটাখালীর জিয়া না? হুমম ঠিকই ধরেছ দোস্ত! এর পর আর এক দিন গেলাম তার চেমবারে। সাগর আমাকে পাশের একটি বিল্ডিং এ ডেকে নিয়ে গেলো। দেখ তো দোস্ত ওরে চিন্তে পার নাকি!!! আরে দারুন, সেই রাজশাহী কলেজ এর নিরাভরণ ক্যাম্পাসের পরিনয় এখন পরিপক্কতা লাভ করেছে। এর পর থেকে গত এক বছর চেষ্টা করেও কিছুতেই নাম মনে করতে পারছিলাম না... কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ওর নাম বোধ হয় শাম্মী.... সাগরকে জিজ্ঞেস করতে হবে !!

মোমিন তুমি কোথায় ?

আমি অঙ্কে খুবই কাঁচা ছিলাম। সব চেয়ে কম নম্বর পেয়েছিলাম যথারীতি অঙ্কে। জিরু স্যারের অনেক নম্বর পাওয়ার সুখ্যাতি আমার কোনো কাজে আসেনি। বন্ধু মোমিন আমাকে ফাইনাল পরীক্ষায় অঙ্কে অনেক সাহায্য করেছিল। ও থাকতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর হলে, সেই যে শেষ পরীক্ষার দিন টেম্পো থেকে বিনোদপুর নেমে গেলো আজও খুঁজে পাইনি। যাবার সময় খুব মায়া ভরা দুটি সবুজ চোখে আমার পানে চেয়ে ছিল। মোমিন তুমি কোথায় দোস্ত ? খুব মিস করি তোমাকে ??

ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপ:
রাজশাহী কলেজে ভর্তি হবার পর নিজেকে একেবারেই একা আবিস্কার করলাম । ল্যাব এর দুইটা গ্রুপ , কলেজিয়েট এর গ্রুপ ছিল Strong... কাটাখালী থেকে আমিই একমাত্র রাজশাহী কলেজে বিশেষ করে বিজ্ঞান শাখায়৷ ল্যাব এর একটা গ্রুপ ছিল যারা নিজেদের ব্রাম্মণ সম্প্রদায়ের সদস্য ভবতো, ছাত্র ভাল তার উপর হোয়াইট কলার, তাই পিএন এর মেজরিটি সেই নৌকার যাত্রী ছিল| ল্যাব এর মাহবুব, জিয়া, সামু, রাজ্জাক, রনি ছিল আমার বন্ধু সম্প্রদায়! জীবনে প্রথম বারের মত ভিক্ষা করেছিলাম তাদের সাথে, দলগত ভিক্ষা। নতুন নতুন জুটি দের কাছে গিয়ে, মাথার ক্যাপ হাতে নিয়ে, দলগত কোরাস.."আমার আল্লাহ্ রাসুলের নাম"...সে দিনের ক্যালকশন যা ই হোক... স্মৃতি টুকু আজও অমূল্য! লাইফ টাইম exp...

পাবনার একটা গ্রুপ ছিল। মনি, আব্দুল হাই, আরিফ, পরিমল, বাবু, রতন, হালিমসহ আরো বেশ কয়েক জন। সবাইকে হারিয়ে ফেলেছি। খুবই বন্ধুভাবাপন্ন একটা গ্রুপ।

বন্ধু যখন সেলিব্রিটি:

রাজশাহী কলেজ এর বিশাল সবুজ মাঠ আর এলোমেলো বিছানো ভবনগুলোকে মাড়িয়ে দুঃস্বপ্নের সিড়ি বেয়ে এইচএসসি '97 পরীক্ষা শেষ করলাম। এর পর গভঃ নিউ ডিগ্রি কলেজের হায়দার আলী হলে র একটি রুমে আমার যাতায়াত বেড়ে গিয়েছিল। আমার স্কুল সময়ের বন্ধু গোলাম ফারুক এর রুমে। তার রুমমেট ছিল তুষার, আব্দুল বারি তুষার। বাড়ি নাটোরের সিংড়া বাজারে । তুষারের চোঁখ দুটিতে মায়া মাখানো ছিল। হাসলে সে হাসি যতোটা না ঠোঁটের ভাঁজে ধরা পড়ত তার চেয়ে বেশি ধরা পড়ত তার মিট মিট করা চোঁখে… সহজে মানুষকে আপন করে নেঁয়ার মন্ত্রটা ভালভাবেই আয়ত্ত্ব করেছিল সে। ফারুক আর আমি তাকে একটি বিশেষ নামে ডাকতাম "কাঠির ব্যাটা"। রাজশাহী কলেজ থেকে কমার্স নিয়ে পরীক্ষা দেয়া আর একটি ছেলেরও অবাধ যাতায়াত ছিল সেখানে। তার বাড়িও সিংরা বাজার,তুষারের সবচেয়ে কাছের স্কুল ফ্রেন্ড। বড় বড় চুল। গিটার বাজিয়ে গান করতো। নাম জুনায়েদ আহমেদ পলক! পুরাই অস্থির। পলকও অল্প দিনেই হয়ে উঠলো আরেকটা "কাঠির ব্যাটা"! এরপর একসাথে কাটিয়েছি সারাটি রাত, AB এর কষ্ট শুনে চিতকার করেছি একসাথে | তুষার নাম লিখালো বুয়েট, এইদিকে আমি আর ফারুক প্রকল্প হাতে নিলাম পলক কে রাবি'র আইন বিভাগে ভর্তি করার.. ভর্তি পরীক্ষায়.. আমি পলক আর ফারুক পাশাপাশি বসলাম ঠিকই কিন্তু বেরসিক এক শিক্ষক আমাদের তিনজন কে এক ধাককায় তিন দিকে সরিয়ে দিলেন| আমি আর ফারুক মেধা তালিকায় নাম লিখালেও আমাদের আদরের এবং ভালবাসার বন্ধুটিকে সেদিন হারিয়ে ফেলেছি, ফারুক এখন সাব-জজ থেকে অতিঃ জেলা জজ | আর বন্ধু পলক এখন রাজনীতি করে সেলিব্রিটি... তখন তাকে দেখে বুঝিনি, সে ১০০ মিটারের স্প্রিন্ট নয়, ম্যারাথনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার সংগ্রামে নেমেছিল! এর পর দূর থেকে শুধু তার বেড়ে ওঠার গল্প দেখেছি আর বলেছি "কাঠির ব্যাটা" চালায় যাও... বড় হও, দীর্ঘ হও, বেড়ে ওঠো, শুধু বেড়ে.......

২০১৫ সালে চ্যানেল আই এর স্টুডিও তে তৃতীয় মাত্রার সেটে ঢোকার প্রাক্কালে একবার মুখোমুখি হয়েছিলাম খুবই আকষ্মিক ভাবে, আলো-অন্ধোকারের ভেতর পরিচ্ছন্ন সাদা পাঞ্জাবিতে, যত্নে পাট করা চুল, চোখে বুদ্ধিজীবি ফ্রেমের চশমা, হঠাৎ-ই পথ আটকে বলেছিলাম, স্যার আমি আপনার একজন "গুণমুগ্ধ"! বাড়ী রাজশাহীতে! উনি সেক্সেটারিকে বলেলন, উনাকে একটা কার্ড দেন, শো শুরু হয়ে গেছে, ফোন দিয়েন কথা হবে। আমি মনে মনে বল্লাম,
YES! The Show Must Go On.......

#NostalZia
Rajshahi
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:১০
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×