somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ আমেরিকা নয় ইরাক নয় পার্বত্য এলাকা

২৮ শে আগস্ট, ২০০৯ সকাল ১১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশ আমেরিকা নয় ইরাক নয় পার্বত্য এলাকা
তবে কেনো ‘সেনাপ্রত্যাহার’!

নোমান বিন আরমান

এক রকমের নিষেধই করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আমি যেনো আপাতত দেশজ বিষয় নিয়ে কথা না বলি। পরিস্থিতির কথা বুঝিয়ে আমার একান্ত শুভার্থী এই নিষেধমূলক পরামর্শ বা নির্দেশ আমাকে দিয়েছেন। আমার এই লেখার প্রথমপাঠক তিনি। মা চাচ্ছি তার পরামর্শ আর নির্দেশ রাখতে পারছি না বলে।

৩০ জুলাই সরকার সেনাবাহিনীসহ সকল প্রকার নিরাপত্তাবাহিনীকে পার্বত্য এলাকা থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ নিয়েছেন। ইতোমধ্যে এই নির্দেশের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দাখিল করা হয়েছে। হাইকোর্ট কী রায় দেন সেটা অবশ্যই জানা যাবে। (অথবা ইতোমধ্যে জানা হয়ে গেছে।) সে বিষয়ে আমার আপাতত কিছু বলার সুযোগ নেই। কিন্তু যে বিষয়টি বলতে পারি এবং জোর দিয়ে বলবো, পার্বত্য এলাকা থেকে সেনাবাহিনীসহ সকল প্রকার নিরাপত্তাবাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে কোনো। কেনো সে এলাকায় সেনাবাহিনী অবস্থান করতে পারবে না। সমস্যা কোথায়?

সরকার বলছেন, ওই অঞ্চলের ‘আদিবাসীদের’ সাথে করা ‘শান্তিচুক্তির’ পূর্ণবাস্তবায়নের জন্যই সেনাবাহিনীসহ আইনপ্রশাসনের সকল সদস্যদের প্রত্যাহার করা হচ্ছে। ৩০ জুলাই প্রত্যাহারের নির্দেশের পর থেকেই সেনাবাহিনীকে এই এলাকা থেকে সরিয়ে আনা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে এই সেপ্টেম্বরের মধ্যে গুনেগুনে সকল বাহিনীর সব সদস্যকে সরিয়ে আনা হবে বলে ‘আদিবাসিনেতাকে’ সরকার ওয়াদা দিয়েছেন!

সরকার মতায় বসার সাত মাসের মাথায়ই, কোনো এলাকা থেকে সেনাবাহিনীসহ সবরকমের নিরাপত্তাবাহিনীকে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত কেনো নিলো, তা আমাদের মত ভোটারে ‘নাগরিক’দের পে জানা সম্ভব নয়। সম্ভব ছিলো যদি ওই ‘পরমপ্রতাপশালী’ ‘আদিবাসি নেতা’ হওয়া যেত। যে মাস্তাননেতার চাপে হাজারটা কাজ ফেলে তার খায়েশকে পুরো করতে একটা দেশের সরকার নতজানু হতে বাধ্য হয়। মতায় বসার সাত মাসের মাথায়ই যখন সাংবিধানিক একটা সরকার এক ব্যক্তির নাপাক খায়েশ পূরণে এগিয়ে যায়, একে নতজানু না বলে আর কী সম্মান আপনি দেবেন।

এমন একটা সময় সরকার পার্বত্য এলাকার মত নাজুক ও গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল থেকে সেনাবাহিনীসহ সবরকমের নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিলো যখন গোটা দেশ কার্যত অরতি। এখনো যেখানে পিলখানায় সাতান্ন জন মেধাবী ও চৌকস সেনাঅফিসারে হত্যার কোনো কূলকিনারা হয়নি। যার দখল এখনো কাটাতে পারেনি সেনাবাহিনীসহ দেশের সাড়ে চার হাজার সীমান্তের নিরাপত্তায় নিয়োজিত বিডিআর, তখন পার্বত্য এলাকা থেকে সেনাপ্রত্যাহারে সিদ্ধান্ত নিলো সরকার। দেশ যখন সরকারদলের সমর্থকদের সীমাহীন নৈরাজ্য আর সন্ত্রাসে মতিত। অন্যমতপথের অপরাধীরাও যেখানে সমানে তাণ্ডব চালাচ্ছে দেশ জুড়ে, স্বরাষ্ট্রপতিমন্ত্রীও যেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছেন ‘দেশের প্রতিটি নাগরিক এখন নিরাপত্তাহীনতায়’ তখন সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য, দুর্গম পার্বত্য এলাকাকে কেনো সেনাবাহিনীসহ সবরকমের নিরাপত্তাবাহিনীর হাত ছাড়া করা হচ্ছে। কার হাতে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে দেশের একদশমাংশ ভূমি পার্বত্য অঞ্চলকে। কার স্বার্থে করা হচ্ছে এসব। এ প্রশ্নগুলোই এখন উদ্বিগ্ন করছে দেশের শান্তিপ্রিয় সচেতন নাগরিক ও বোদ্ধামহলকে।

কথিত শান্তিচুক্তিটি হয়েছিলো ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর। তখন এই সরকারের প্রধানদল আওয়ামীলীগ মতায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শান্তিচুক্তিটি সম্পাদন করা হয় পার্বত্য এলাকার জম নামে খ্যাত সন্তু লারমার সাথে। পুরো নাম জ্যোতিন্দ্রিয় ব্যুধোপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা। সরকারের পে চুিক্ততে স্বার করেন আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ। তার পরবর্তী বিএনপি জোট সরকার এই চুক্তিটিকে আমলে নেয়নি। এমনকি দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী এই চুক্তিকে আমলে নেয়নি ‘সব কাজের কাজি’ সেনাসরকারের পোশাকী রূপ ফখরুদ্দীন সরকারও। তখন ৯৬-২০০১ ও এখনের ‘পরমপ্রতাপশালী’ ওই ‘আদিবাসি নেতা’টি নানা মহলে খুব কান্নাকাটি করেছেন। ঢাকায় ভাড়াটে ‘আদিবাসি’ এনে কথিত শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সম্মিলিত কান্নাকাটিও হয়েছে। কাজ হয়নি। কিন্তু আওয়ামীলীগ মতায় বসতে না বসতেই তার শক্তির যৌবন ফিরে এলো। সাতটি মাস যেতে না যেতেই ফুসরত নেই, সরকারকে কার্যকর ওয়াদা করতে হলো সেনাবাহিনী ফিরিয়ে নেয়ার। তার এই শক্তির জোরটা কোথায়! কে এই সন্তু লারমা?

যে চুক্তির দোহাই দিয়ে এখন দেশসুদ্ধ মানুষের বিরোধিতার মুখেও ‘সেনাপ্রত্যাহার’ হচ্ছে, সেই চুক্তিতেই উল্লেখ রয়েছে, পার্বত্য এলাকার সকল সন্ত্রাসীর আত্মসর্ম্পণ ও অস্ত্র জমা দেয়ার পর ওই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে এলে ধীরে ধীরে সেনাদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। প্রশ্ন হলো, এখন যে সমানে সেনাপ্রত্যাহার হচ্ছে, তবে কি সেনা ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়ার শর্ত পূরণ হয়েছে? হয়নি। শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে? ফিরেনি। চুক্তি সম্পাদনের ৪৫দিনের মধ্যে সব সন্ত্রাসীদের আত্মসর্ম্পণ করে সরকারের হাতে অস্ত্র জমা দেয়ার কথা। সেটিও হয়নি। এখনো পাহাড়ে শতশত সন্ত্রাসী আস্তানা গেড়ে আছে। তাদের হাতে নিরিহ বাঙালীদের খুন, অপহরণ সমানে চলছে। গত মাসে সেনা প্রত্যাহারে দিন থেকে মাত্র পনেরো দিনের মধ্যেই অন্তত ৫ বাঙালীকে পাহাড়ী উপজাতি সন্ত্রাসীরা অপহরণ করেছে। এ পর্যন্ত অস্ত্র জমা দেয়ার নামে তারা মাত্র চারশ’র মত একে-৪৭ শুধু জমা দিয়েছে। অথচ এই চুক্তির আগে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা মেশিনগানসহ অত্যাধুনিক অস্ত্রগুলোর একটিও তারা জমা দেয়নি। আর সন্তু লারমার ২০ হাজারেরও অধিক (বারো বছর আগের হিসাব) সসস্ত্র প্রশিতি সন্ত্রাসীদের মধ্যে এ পর্যন্ত আত্মসর্ম্পণ করেছে মাত্র ১ হাজার ৯ শ ৪৭ সন্ত্রাসী। বাকিদের খবর কী। কোথায় আছে এরা। কী করছে এখন। আর যারা অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসম্পর্ণ করেছিলো তাদের ৭৮জন পুলিশে চাকুরী নিয়ে ৬৬ জনই কিছু দিন পর ছেড়ে দিয়েছে। এরা এখন কোথায় আছে, কী করছে। কেনো ছেড়ে দিলো সরকারি চাকুরি। কীসে তাদের প্রলুব্ধ করেছে নিশ্চিত অর্থপ্রাপ্তির খাজানা থেকে দূরে যেতে। কেউ জানে না।

সেনাপ্রত্যাহারের জিগির যারা তোলেছেন, তারা বলছেন কোনো বেসামরিক এলাকায় সেনা অবস্থান নীতিবিরুদ্ধ, অমানবিক। তারা বলছেন, এতে উপজাতি তাদের ভাষায় আদিবাসীদের প্রতি রাষ্ট্রীয় বৈষম্য আর নির্যাতন চলছে। সন্তু লারমা প্রকাশ্যে দাবী করেছেন, সেনাবাহিনী পার্বত্য এলাকায় সীমাহীন নির্যাতন করছে, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। সন্দেহ নেই একশ্রেণীর বিক্রিত-বিকৃত বুদ্ধিজীবী আর কলাম লেখকদের পাহাড়ে সেনা অবস্থানের বিরোধিতাই তাকে সেনাদের ভাবমর্যাদা আর আন্তর্জাতিকমানকে কলঙ্কিত করার মত এহেন মন্তব্য করার সাহস জুগিয়েছে। সন্তু লারমা আমাদের সেই গর্বিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুললেন যারা আন্তর্জাতিকমান নিয়ে তাদের পেশাদারিত্ব আঞ্জাম দিচ্ছে। যাদের প্রায় ৭৮ হাজার সদস্য জাতিসঙ্ঘের আন্তর্জাতিক শান্তিমিশনের বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিয়ে বিশ্বব্যাপী সুনাম ও মর্যাদা অর্জন করেছে। তাদের বিরুদ্ধে যদি নিজ দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠে তাও প্রকাশ্যে, আর সরকার এরপরও নিরব থাকে তাহলে বোঝবার আর কিছুই বাকি থাকে না।

বাকি বেসামরিক এলাকায় সেনা অবস্থানের নৈতিক দিকটি অবশ্যই বিবেচ্য। কিন্তু গহীন আর দুর্গম অরণ্যঘেরা পার্বত্য এালাকাকে যদি আর দশটি সাধারণ স্থানের মত বিবেচনা করা হয় তাহলে নির্ঘাত ভুল করা হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। একটি ব্যাপার এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, শান্তিচুক্তি হয়েছিলো কেনো। এই কেনর উত্তরটি সেনাপ্রত্যাহারের জিগিরকারীরা দিচ্ছেন না। ৯৭ সালে চুক্তিই তো হয়েছিলো পার্বত্য এলাকায় সন্ত্রাস হবে না মর্মে। কিন্তু শান্তি চুক্তি সম্পাদনের এক যুগেও সেখান থেকে সন্ত্রাস দূও হয়নি। এখনো সেখানে পাহাড়ি, উপজাতি সন্ত্রাসীদের নিয়মিত চাঁদা দিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে বাঙালীদের। কোনো বাঙালী তরুণীদেও পছন্দ হলে জোর করে উঠিয়ে নিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। বাধা দিলে খুন করা হচ্ছে মা-বাবাকে। চাঁদা দিতে অপরাগ হলেও তাদের নির্যাতন, খুন করছে উপজাতিরা। বড় অঙ্কের টাকার জন্য ক’দিন পরপরই বাঙালীদের তার অপহরণ করছে। এই সেনা প্রত্যাহার শুরুর পনেরো দিনের মধ্যেই অন্তত ৫ বাঙালীকে উপজাতি সন্ত্রাসীরা অপহরণ করেছে। এরা এতোই বেপরোয়া যে পুলিশ এদের সাথে কুলিয়ে উঠতে পারে না। গহীন জঙ্গলে সন্ত্রাসীদের দাওয়া করতে সেনাবাহিনী ছাড়া পুলিশ অভিযানে নামতে সাহস করে না। পাহাড়ি এক নেতা সেদিন মন্তব্য করেছেন, সন্ত্রাসীদের দাওয়া করে পুলিশ যখন গহীন পাহাড়ে ঢোকে তখন একটু যেয়েই তাদেও আধা ঘণ্টা ভাবতে হয় কোন পথে সামনে যাবে। তাদের এই ভাবনা শেষ হওয়ার আগেই সন্ত্রাসীরা অরণ্যে হারিয়ে যায়। পুলিশ তাদের ছায়াটুকুরও খোঁজ আর পায় না। এছাড়া পার্বত্য এলাকার পাহাড় ঘেরা গহীন অরণ্যে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী আর মায়ানমারের সন্ত্রাসীদের আশ্রয় রয়েছে বলে ধারণা করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। এমন অবস্থায় সেখানে যদি সেনাবাহিনী না থাকে তাহলে পরিস্থিতি কোথায় যেতে পারে তা বাংলাদেশ দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারবে না।

সংবাদপত্র যারা পড়েন বা খবর শুনেন তারা এতো দিনে নিশ্চিয় একটি বাক্যে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন, আরেমরিকান সৈন্য বা সেনাপ্রত্যাহার। কোথা থেকে? ইরাক, আফগান বা জবরদখলকৃত কোনে দেশ থেকে। কিন্তু নিজের দেশ থেকে সেনা প্রত্যাহার এমন বিস্ময়কর কিছু বুঝি দুঃস্বপ্নেও কেউ কল্পনা করেননি। অথচ দুঃস্বপ্নেরও কঠিন আর অকল্পনীয় কিছুই এখন গঠছে পার্বত্য এলাকায়। সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার হচ্ছে এ মাসেই। তবে কি বাংলাদেশ আমেরিকার মতই আগ্রাসী আর খুনী কোনো রাষ্ট্র। তবে কি পার্বত্য এলাকা হানাদার কবলিত ইরাক বা আফগান!

এতো দিন যারা উপজাতি ছিলো তারা এখন আদিবাসি। কী চমৎকার বিষয়! কোনো বাছবিচার ছাড়াই তাদের আদিবাসী বলা হচ্ছে। এই সন্তু লারমারাই যদি এদেশের আদিবাসী হয় তাহলে চৌদ্দ কোটি বাঙালী কি উপজাতি?! কী বলবেন আমাদের বাঙালী জাতিসত্তার ধ্বজাধারীরা। অথচ এরাই এখন সেনাপ্রত্যাহারের হাজারটা যুক্তি দিচ্ছেন। দেশবিদেশে প্রবন্ধ লিখছেন। উপজাতি নিধন ও নির্যাতনের কল্পিত পরিসংখ্যান তৈরি করছেন। আগ বেড়ে তাদের আদিবাসী বলছেন। আন্তর্জাতিক ফোরামে তাদের জন্য কান্নাকাটি করছেন। কত্ত দরদ আমাদের এই অতি চালাকদের।

এ দেশে ‘দাতাদেশ’গুলোর কতটি ভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির এনজিও কতভাবে কাজ করছে তার সঠিক চিত্র কারও কাছে নেই। তবে বিদেশী এনজিওগুলোর প্রায় সব কঠিই পার্বত্য অঞ্চলকেন্দ্রি। দেশের আর কোথাও এদের কার্যক্রম থাক বা না থাক পার্বত্য এলাকায় এদের কর্মযজ্ঞ আছেই। এতে কোনো বিরাম নেই। বিরোধ নেই! সবগুলো এনজিও ‘মিলেমিশে’ পার্বত্য অঞ্চলকে গড়ার কাজ করছে। এই এলাকাকে ঘিরে তাদের তৎপরাতা দেখে যে কারও ভ্রম হতে বাধ্য যে, এরাই বুঝি এ এখানকার সরকার। এই এলাকার বাসিন্দাদের (অবশ্যই শুধু উপজাতি, কোনো বাঙালী মুসলমান নয়) উন্নয়নের জন্য এরা ৭১-এর আগপর থেকেই তৎপর রয়েছে। কিন্তু সাধের কোনো উন্নয়ন এখনো সেখানে হয়নি। যা হয়েছে এনজিওগুলোর এদেশীয় কর্তাদের পকেট স্ফীত আর কিছু উপজাতির নিজস্ব সংস্কৃতি ও ধর্মকে বলি দিয়ে খিস্ট ধর্মগ্রহণই। এর বেশি কিছু সেখানে হয়নি। হওয়ার কথাও নয়। আর দাতাদের কাছ থেকে কোটি কোটি ডলার সহায়তা নিয়ে এখনে এই পকেট স্ফীতি আর ধর্মান্তরিতের ব্যবসাটাই চলছে। এনিয়ে কেউ কাজের কোনো কথা বলে না। না সরকার, না ‘দরদী’ উপজাতি নেতা, না অন্য কেউ। অর্থের সুইয়ে সবারই মুখগাঁথা।

এ দেশে যারা ভারতবিরোধি তারা শত্র“ বলতে ভারতকেই বুঝেন। তারা ভাবেন, বাংলাদেশকে গিলে যদি খায় সে ভারতই। অন্য রাষ্ট্র-শক্তিকে তারা ততটা চিন্তায় রাখেন না। আমি মনে করি এটা সর্বদিক বিবেচনার চিন্তা নয়। শত্র“ আরো অনেকই থাকতে পারে। পাকিস্তানকেও সন্দেহের তালিকা থেকে দূরে রাখবো কেনো। ভারতের গিলে খাওয়ার ইচ্ছে আছে আর পাস্তিানের যে অন্তর্জালা আর পরাজয়ের ােভটুকুও নেইÑ এতোই পবিত্র পাকিস্তান, আমি বিশ্বাস করি না। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি সবার সাথে বন্ধুত্ব। ভালো কথা। তাই বলে সবাই যে আমাদেরও বন্ধু ভাববেÑ এতোটা বোকা তো হাদারামও হয় না। এই সহজ বিষয়টিই আমাদের এখানে স্থিতিশীল নয়। আওয়ামীলীগ মনে করে পাকিস্তান আমাদের আজন্ম শত্র“। ভারত তার বন্ধু। তাই ভারতের বিষয়ে সে একপায়ে খাড়া। পাকিস্তানের ভালোটাকেও সে ভাবে ষড়যন্ত্র, দুশমনি। আর ভারতের মাথায় আঘাতকে ভাবে মাথায় হাত। আর অনেকের ভারতের কোনো কিছুকেই ভালো চোখে দেখেন না। না দেখার কারণ অবশ্য ভারতের চিরায়ত ভণ্ডামীই। সাংঘাতিক তির আমাদের এই জাতীয় মানসিকতা। কবে যে এর থেকে মুক্তি মিলবে তা বলা মুশকিল।

সন্তু লারমাসহ পার্বত্য এলাকার সন্ত্রাসীদের রাষ্ট্রীয় ‘গডফাদার’ যে ভারত এটা সর্বজনবিদিত। এখানের সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষকতা, অস্ত্র সরবরাহ, সন্ত্রাসী প্রশিণ, অর্থসহায়তা সবই ভারত থেকে আসে। বাংলাদেশকে চাপে রাখতে ভারত এদের নগ্নভাবেই সমর্থসহযোগিতা ও উস্কানি দিয়ে আসছে। এদের সন্ত্রাসীকার্যক্রমের ঠুটি চেপে ধরতে আর স্থানীয়দের জানমালের নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী যখন হার্ড লাইনে তখন ভারতের চাপেই তড়িঘড়ি করে চুক্তির নাটক করা হয়। শান্তিচুক্তি নামে পরিচিত ওই চুক্তি যত না শান্তির জন্য তার চেয়ে বেশি জরুরি ছিলো সন্ত্রাসীদের নিরাপত্তার জন্য। এ কারণে অস্ত্র আর বিদেশী সহায়তার পরও সন্তু লারমা চুক্তিতে সই করতে উৎসাহী হন। এদের সমর্থনসহযোগিতা দিয়ে ভারত যেমন আমাদেরকে চাপে রাখতে চায়, তেমনি পাকিস্তানও কোনো প্রতিশোধ ও অন্তর্জ্বালা এদের দিয়ে মেটাতে চায় কি না, সেসবও তীèতায় খোঁজ রাখা দরকার। কারণ সন্ত্রাসীদের লোভ সাঙ্ঘাতিক রকমের। এরা যেকারো থেকে ফায়দা নিতে হিসাব করে না। শত্র“কে ঘায়েল করতে সবাই শত্র“র বন্ধু, সহযোগী। শত্র“ কেবল শত্র“ই। তাই যে ভাবে পারো, যেমন পারো তাকে ধ্বংস করো। এটাই এখন আন্তর্জাতিক পলিসি। বিষয়টি আমাদের উপলব্ধি করতে হবে। প্রতিহিংসা বা অন্ধ পূজায় নয় পথচলতে হবে নিবিড় সতর্কতায়।

ভারত ছাড়া ‘দাতারাষ্ট্র’গুলোর পার্বত্য এলাকা নিয়ে যে ভিন্ন চিন্তা কাজ করছে দিনদিন তা সত্য হয়েই প্রতিষ্ঠি হচ্ছে। বিশেষত খ্রিস্টান মিশনারি এনজিওগুলোর এ অঞ্চল নিয়ে নির্লজ্জ খেলা এখন চোখে পড়ার মত। ‘সেবার’ নাম নিয়ে ঢোকা এ এনজিওগুলো ওখানের বাসিন্দাদের একে তো নিজস্ব সংস্কৃতি-ঐহিত্য থেকে দেউলিয়া করছে, সেবার প্রলোভনে তাদের ধর্মান্তরিতও করছে। খ্রিস্টান বানাচ্ছে তাদের। এখন শোনা যাচ্ছে এই খ্রিস্টানদের নিয়ে ওই এলাকায় পৃথক একটি রাষ্ট্রগঠনের স্বপ্ন দেখছে তারা। এক্কেবারে ফোড় হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বের হওয়া আর কি।

বিস্ময়ের নানা কারণ থাকে। তবে তা যে সীমাবদ্ধ নয় বা একটি দুটিও নয় তা আবারও জানা গেলো। হঠাৎ করেই সরব উঠেছে, আদিবাসী অধিকারের। এতো এতো দিন যারা উপজাতি ছিলো, চীন আরাকান থেকে নির্যাতিত হয়ে স্বেচ্ছা নির্বাসন বা পালিয়ে এসে যারা এ অঞ্চলে মানবিক ঠাঁই পেয়েছিলো তারা এখন দিব্যি আদিবাসী। এ অঞ্চলের মূলবাসিন্দা। বিস্ময়। একেই কি তবে দিন বদল বলে।

যাদের এখন আদিবাসি বলে প্রচারণা চালিয়ে পার্বত্য এলাকা থেকে বাঙালীদের বিতাড়নের অপচেষ্টা চলছে, যে চুক্তির জোরে এই শক্তিসাহস তারা পাচ্ছে ওই চুক্তিতে তো তাদের আদিবাসি বলে কোনো পরিচয় নেই। ওখানে তো তাদের পাহাড়ি উপজাতিই বলেই পরিচিত করা হয়েছে। আর এই পরিচয়েই তো সন্তু লারমা স্বার করেছেন। তবে এখন নিজেরদের ‘আদিবাসী’ বলে পরিচিত করার কারণ কী। দাবার গুটি কোন দিকে ঘোরানোর চেষ্টা হচ্ছে অন্দরে-বাহিরে। গুটি যে পৃথকতার দিকে যাচ্ছে সেটি এখন পরিস্কার। আর এ কারণেই কি বাঙালীদের সরিয়ে পাহাড়িদের একক ভূখণ্ড প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখা হচ্ছে। যদি তাই না হবে, তবে দাতারাষ্ট্রগুলো পার্বত্য এলাকা থেকে স্বেচ্ছায় সরে না এলে’ বাঙালীদের সহযোগিতা বন্ধের হুঙ্কার ছুঁড়বে কেনো। ইউরোপীয় কমিশন কেনো এ ব্যাপারে খোদ প্রধানমন্ত্রীকে ‘নির্দেশনা’ দেবে।


সেনাপ্রত্যাহারে পাশাপাশি পার্বত্য এলাকা থেকে বাঙালীদের প্রত্যাহারে দাবীটিও এখন জোরালো হয়েছে। অথচ চুক্তির কোনো ধারাতেই বাঙালীদের সরিয়ে নেয়ার কথা ছিলো না। নতুন করে এ দাবী উত্থাপনের কারণ কী? উপজাতি সন্ত্রাসীরা বলছে, ৯৭ সালে করা চুক্তিতে বিষটির উল্লেখ না থাকলেও মৌখিকভাবে আমাদের বলা হয়েছিলো, পার্বত্য এলাকা থেকে বাঙালীদেরও প্রত্যাহার করা হবে। কারণ কী। কারণ তারা এই অঞ্চলের ‘আদিবাসী’। ‘আদিবাসী’ বলেই কি ওই অঞ্চলের ভূমির মালিক তারা। কি উদ্ভূত যুক্তি। মৌখিকভাবে আসলেই কি তাদের এমন কিছু বলা হয়েছিলো, হলে কেনো, নাকি এসব স্রেফ সন্ত্রাসীদের মিথ্যাচারÑ এসব বিষয় সরকারকে স্পষ্ট করা দরকার।

জুমল্যান্ড নামটি শুনেননি এমন পাঠক পাব না জানি। কিন্তু এই নামে বিশ্বমাণচিত্রে কোনো ভূখণড নেই। মাণচিত্রে না থাকলে কি হবে দাতাদেশ বিশেষত ইউরোপিয় কমিশন আর ভারত কিন্তু এমন একটি ‘রাষ্ট্রই’ চায়। সেটি হবে জুম উপজাতিয়দের নিয়ে। জুমদের জন্য জুমল্যান্ড। র্আ এই জুমরাই হচ্ছে সন্তুলারমার সন্ত্রাসী বাহিনীসহ পার্বত্য এলাকার উপজাতি। সরকারও কি তবে তার পাশে আরেক প্রতিবেশীকে জন্ম দিতে চাচ্ছে। নয় তো সেনাপ্রত্যাহার কেনো।

Email : [email protected]

১৫-০৮-২০০৯

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০০৯ সকাল ১১:৫৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×