বিস্ময়! অনন্ত বিস্ময়!!!
মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যু নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই। অন্তহীন কথা চলছে প্রতিদিন মিডিয়ায়। প্রশ্ন করা হচ্ছে তিনি মারা গেছেন না তাকে হত্যা করা হয়েছে। অথচ মাদকে মাদকে ‘পপসম্রাট’ যে পর্যায়ে তার শরীরকে নিয়ে গেছেন এরপরও কীভাবে এতোদিন তিনি বেঁচে ছিলেন, তা কেউ বলছে না। তার পরিবার, ভক্তানুরাগীরা অভিযোগ করছেন, ‘পপসম্রাট’কে হত্যা করা হয়েছে। বিষয়টি সিরিয়াসলিই নিয়েছে তার দেশের সরকার। তদন্ত চলছে। খোঁজা হচ্ছে হত্যাকারীদের।
বিষয়টি খুব ভাববার। কারণ এই জ্যাকসনের মৃত্যু নিয়েই শুধু প্রশ্ন উঠল এমন নয়। দেখা গেছে, তারকা’ পর্যায়ের বা বড়মাপের কেউ যখন মারা যাচ্ছেন, তখনই প্রশ্ন উঠেছে সেটা মৃত্যু না হত্যা। আমাদের দেশেও এমনটি হয়। এই যেমন, ২০০৮ এ যখন নায়ক মান্না হাসপাতালে মারা গেলেন, সাথে সাথেই বলা হলোÑ ডাক্তাররা তাকে হত্যা করেছেন।
মৃত্যু বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক। যদিও অনেকে আর দশটি আরোগ্য সম্ভব রোগের মত ভাবেন মৃত্যুকে। বলেন যে মৃত্যু রোগ থেকেও আরোগ্য সম্ভব। তার মানে পৃথিবীতে মানুষ চিরকাল বেঁচে থাকতে পারবে। কখনো মরবে না। তারা দাবী করছেন, মৃত্যুরোগ থেকে চিরমুক্তির মহৌষধ তৈরির অব্যাহত গবেষণা একদিন অবশ্যই সফল হবে! তবে কুরআন আমাদের জানাচ্ছে, ‘কুল্লু নাফসিন যা-ইকাতুল মাউত’। আরো স্পষ্ট করে বলে দেয়া হচ্ছে, না, মৃত্যু থেকে এক লমহার জন্যও কেউ মুহলত পাবে না। ভীষণ কঠিন ‘নিরাপদ’ আশ্রয়ও মৃত্যুর হাত থেকে কাউকে রেহাই দিতে পারবে না। জীবমৃত্যু অবধারিত। একে উপোর কোনো সুযোগ নেই। এটাই সত্য। এটাই বাস্তবতা।
কিন্তু তারপরও কোনো মৃত্যুই মানুষ সহজভাবে নিতে পারেনা। নেয় না। সম্ভবও নয়। এটাই মানব মনের প্রকৃতি। সে তাই প্রশ্ন করে। এই প্রশ্নটা সাধারণের েেত্র না উঠে তারকা-বড়দের েেত্র উঠার কারণও খুব স্বাভাবিক। তাদের শত্র“ বেশি। ঘাতকরা তাদের হত্যার সুয়োগে ওঁৎ পেতে থাকে। তাই এই পর্যায়ের কেউ যখন একান্ত প্রিয়জনের হাতেও মারা যান, তখনও প্রশ্ন উঠে। প্রশ্ন উঠে ঘাতকের ভয়েই। কিন্তু।
এই ‘কিন্তু’ বিষয়টি বলার জন্যই আপনাকে এতো দূর হাঁটিয়েছি। কথা শুনিয়েছি। আমাদের বড় বড় আলেমরা যখন ইন্তেকাল করেন। তখন কিন্তু এই প্রশ্নটি হয় না। ইন্তিকাল না কিতাল সে বিষয়ে খোঁজ করি না। কেনো করি না। মৃত্যু অবধারিত বলেই কি? কুরআনের সতর্কতার কারণে কি? আমার মনে হয়Ñ না। মৃত্যু অবধারিত বা কুরআনের সতর্কতার কারণে নয়। আমরা তাদের ইন্তিকাল নিয়ে প্রশ্ন করি নাÑ অজ্ঞতার কারণে। প্রশ্ন করতে জানি না বলে।
আপনাকে এই আমাদের দেশের দু’টো মৃত্যুর কথা বলি। ২০০৬ সালের রামযানে বায়তুল মুকাররমের খতিব মাওলানা উবায়দুল হক রাহ. মারা গেলেন। তিনি সুস্থ ছিলেন। বাংলাদেস্থ ইরানী দূতাবাসে ইফতারেও গেছেন সুস্থ শরীরে। ইফাতারের পরই তিনি অসুস্থবোধ করেন। বাসায় ফিরেন। বাসা থেকে হাসপাতাল। রাত ১১ টায় তিনি মারা গেলেন! এ নিয়ে কোনো মহল থেকে প্রশ্ন হয়েছে বলে শুনিনি।
খতিব ছিলেন খুব প্রভাবশালী ও দেশের রাজনীতিতে অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। খতমে নবুওয়ত, দেওবন্দ নজরিয়া ও এ দেশীয় মুসলিমদের আকাক্সা, চেতনা আর আকিদার তিনি ছিলেন প্রতিনিধিত্বকারী। সর্বশেষ এই রামযানেই প্রথম আলোগোষ্ঠি বিতর্কিত কার্টুন বিষয়ে তার সাহসী ও জোরালো ভূমিকার কারণে জাতির কাছে করজোড় মা চেতে বাধ্য হয়েছে। এর ক’দিন পরই তিনি ইন্তিকাল করলেন। ‘মারা’ গেলেন সুস্থসবল সুঠাম দেহের খতিব মাওলানা উবায়দুল হক। কোনো প্রশ্ন ঊঠলো না তার এই হঠাৎ ‘মৃত্যু’ নিয়ে। বিস্ময়! বিস্ময়! অনন্ত বিস্ময়!!!
চলতি বছরে ঘটলো একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। ঘটলো খুব স্পর্শকাতর ও বেদনাদায়ক ঘটনা। হঠাৎ করেই খবর এলো ‘ইন্তিকাল’ করেছেন মাওলানা উবায়দুল হক পরবর্তী বায়তুল মুকাররমের ভারপ্রাপ্ত খতিব মুফতি নুরুদ্দিন। অথচ ইন্তিকালের আগের জুমায়ও তিনি নামাজ পড়েছেন। ভালো ছিলেন। সুস্থ ছিলেন মুফতি নুরুদ্দিন। তবে মানসিক কষ্ট হয়তো তার খুব ছিলো তখন। খুব স্বাভাবিক ও অসহ্য কষ্ট ছিলো তার। কারণ জাতির প্রাণকেন্দ্র বায়তুল মুকাররমে অশুদ্ধ তেলাওয়াতের এক বিতর্কিত লোককে ‘খতিব’ নিয়োগ করে গেছে মঈন পরিচালিত ফখরুদ্দিন সরকার। এর প্রতিবাদে তখন দফায় দফায় অন্দোলন চলছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। দু’তিন জুমআয় বিতর্কিত ‘খতিবের’ অনুসারীরা উশৃঙ্খল আচরণ করেছে। মারামারি করেছে মসজিদে। জুতোজুতিও! তার নিয়োগের বিরোধিতাকারীদের মসজিদ থেকে বের করে দিয়েছে। এ সবই মসজিদের মিম্বর থেকে নিজে দেখেছেন মুফতি নুরুদ্দিন। এ নিয়ে কষ্ট ছিলো তার। কষ্ট ছিলো পবিত্র মসজিদকে ঘৃণিত ও কদর্য করার ােভ ও যন্ত্রণার। দিনদিন বিতর্কিত খতিবের নিয়োগ বাতিল আর মাওলানা উবায়দুল হক রাহ. পর দেড় বছর থেকে ভারভাপ্ত খতিবের দায়িত্ব যিনি পালন করছেন তাকে খতিব নিয়োগ দেয়ার জন্য যখন জনমত ও চাপ বাড়ছে তখনই ইন্তিকাল মুফতি নুরুদ্দিন। প্রশ্ন ওঠলো না এ সময়ও। বিস্ময়! বিস্ময়! বিস্ময়!!!
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০০৯ দুপুর ১২:৫৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



