করোনার কারণে আমাদের দেশে মৃত্যুর হার আক্রান্ত ও মোট জনসংখ্যার অনুপাতে অনেক কম। সুস্থ হওয়ার সংখ্যাও ইদানিং বেশি দেখাচ্ছে। মৃত্যুর যে হার সেটা হয়তো আরেকটু বেশি হতে পারে। সরকারি হিসাবে এমনিতেই সবসময় গরমিল থাকে। তারপরেও যে পরিমাণ রোগী ইতালি, আমেরিকায় স্পেনে একদিনে মারা যাচ্ছে সে তুলনায় আমাদের মোট মৃত্যুও সেই পরিমাণ হয়নি। সম্ভবত আমাদের এখানে গ্রীষ্ম ঋতু চলার কারণে রোগীদের নিউমোনিয়া হওয়ার পরিমাণ অনেক কম। নিউমোনিয়া হলে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়, আর করোনা হওয়া রোগী শ্বাসকষ্টেই শেষমেশ মারা যায়।
আমাদের যে অর্থনীতির আকার ও বিতরণ ব্যবস্থা তাতে আমাদের বেশি দিন এমন সাধারণ ছুটি কাটানো সম্ভব না। এরপরেও বাংলাদেশের মানুষ অনেক সহনশীল, তারা চেষ্টা করেছে যতটুক সম্ভব নিজেকে কাজ থেকে দূরে রাখতে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হলে সেটার প্রভাব আমাদের উপরেও পড়বে। তারপরেও ইউরোপ-আমেরিকার মতো অবস্থা মনে হয় সৃষ্টি হবে না। বাঙ্গালী সকালবেলা পোলাও, কোরমা দিয়ে খাওয়ার পরে রাতের বেলা আলু ভর্তা, ডাল দিয়ে খেতে পারে। এতে তাদের কোন আফসোস থাকে না। ইউরোপ-আমেরিকার মানুষের যা হয়, সেটা হচ্ছে এরা এদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক মানের চেয়ে একটু নিচে নেমে গেলে দিগ্বিদিক হারিয়ে ফেলে। সেটা তারা কখনোই মেনে নিতে পারে না। আরেকটা কারনও আছে, ধরুন আমাদের ব্লগার নুরু ভাই যদি আর্থিক সমস্যায় পড়েন উনি বলবেন আল্লাহ উনাকে অর্থকষ্ট দিয়ে পরীক্ষা করছেন। উনি সরকারকে দোষারোপ করবেন না। উনার মত লক্ষ লক্ষ লোক আছে যারা এটাকে পরীক্ষা মনে করবে। এইজন্যই অর্থনৈতিক মন্দা আসলে আমরা এর সঠিক কারণ বুঝতে পারিনা। আল্লাহর উপর দোষ দিয়ে সরকারের অদক্ষ লোকজনকে আমরা বাঁচিয়ে দেয়।
কভিড-১৯ রোগের কোনো কার্যকর ঔষুধ এখনো পাওয়া যায়নি। রেমিডিসিভ নামের যে ঔষুধ বানাচ্ছে বাংলাদেশের ঔষুধ কোম্পানি গুলো, ডাকাতরা সেটার ফ্রি প্যাটেন্ড পেয়েও বলছে এইটার একেকটা ডোজ নাকি পাঁচ হাজার টাকা করে। একজন রোগীর সর্বোচ্চ বারোটা ডোজ লাগতে পারে। সে হিসেবে করোনা হলে অনেককে জমিজমা ও বউয়ের গহনা বিক্রি করতে হবে। সরকার ফ্রি দিলেও সেটা সময়মতো পাওয়া যাবে কিনা বলা মুশকিল। আর সরকার ফ্রি দিতে গিয়ে প্রচুর পরিমান অর্থ সরকারের কোষাগার থেকে এসব মাফিয়াদের কাছে অনর্থক চলে যাবে। তার উপর এই ঔষধটি যে একেবারে কার্যকরী তাও কিন্তু নয়।
একটা অঞ্চলের ৭০ ভাগ লোক যদি কোনো মহামারী আক্রান্ত হয়ে ভালো হয়ে উঠে তাহলে সে এলাকায় হের্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়। আমাদের সরকার সেই দিকেই যাচ্ছে এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গুলো নিচ্ছে মনে হয়। অবশ্য এছাড়া আর কোন ভালো বিকল্প সরকারের হাতে নেই। এদিকে সরকার খুলতে বললেও বেশ কিছু মার্কেট মালিক সমিতি মার্কেট খুলছে না। তবে আজকে আমি গুলিস্তান থেকে সদরঘাট যেতে আধাঘন্টার মত জ্যামে ছিলাম। সবাই মাস্ক পড়ে বের হয়েছে এবং অনেককে দেখলাম নাকের নিচে মাস্ক পড়ে শুধু মুখ ডেকে দিব্যি কাজ কর্ম ও হাঁটা চলা করছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ৭:৫৭