somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নূর আলম হিরণ
ভাগ্যক্রমে আমি এই সুন্দর গ্রহের এক বাসিন্দা! তবে মাঝেমধ্যে নিজেকে এলিয়েন মনে হয়। তবে বুদ্ধিমান এলিয়েন না, কোন আজব গ্রহের বোকা এলিয়েন! [email protected]

স্মৃতি থেকে যেসব আজো ভাবায় আমায় (৫)

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১.আমার বয়স তখন কত হবে? সাত কি সাড়ে সাত। আমাদের বাড়িতে অর্থনৈতিকভাবে আমার বাবা মোটামুটি স্বচ্ছল ছিল। এখন অবশ্য দিন বদলেছে সবারই অবস্থা উন্নতির দিকে। ঘটনাটি আমাদের বাড়ির একটি ছেলের তার নাম শাহআলম। শাহালমের বয়স তখন ষোল কি সতরো হবে। চার বোন এক ভাই, ভাইটি সবার বড় ছিল। শাহালমের বাবা বাজারে পান দোকান দিত এবং ছাতা মেরামতের কাজ করতো। খুবই সামান্য আয়, যা রোজগার হতো পাঁচ ভাইবোনের সংসারে সেটা যথেষ্ট ছিল না।
ঘটনাটি সে সময়ের বৃহস্পতিবার দুপুর বেলার। আমি স্কুল থেকে এসে ভাত খেয়ে আমাদের ঘরের সামনের রুমে শুয়ে ছিলাম। আম্মা তখন ঘরে ছিল না, রান্না ঘরে ছিল। আব্বা পিছনের রুমে ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ দেখি শাহালম আমার বিছানার পাশে বসে আছে আমি কিছু বললাম না। সে বসে বসে আমার সাথে আস্তে আস্তে কথা বলছে। কি সব কথা বলছে আমার এখন ঠিক মনে নেই তবে এখন বুঝতে পারছি সে তখন আস্তে কথা কেন বলছিল। শাহালাম দেখতে চেয়েছিল তার কথা আমার বাবা শুনতে পাচ্ছে কিনা বা বাবা গভীর ঘুমে আছে কিনা। কিছুক্ষণ পর শাহআলম আমাকে বলল তোরে একটা জাদু দেখামু? আমি বললাম দেখান। সে বিছানায় থাকা আমাদের একটা হাতপাখা নিয়ে আমার ছোখের উপর রেখে বলল চোখ বন্ধ কর। আমি চোখ বন্ধ করলাম, চোখ খোলার পর সে তার হাতে একটা আপেল দেখিয়ে বলে দেখ জাদু দিয়ে একটা আপেল আনলাম। আমি বললাম এটা জাদু না এটা আপনার কাছে আগেই ছিল। সে বলল, না আমার কাছে দেখ আর কোন আপেল নেই। আমি আবার হাত পাখাটা তোর চোখের উপর রাখছি, তুই চোখ বন্ধ কর আমি এবার পাঁচটা আপেল নিয়ে আসবো। আমি আগ্রহ নিয়ে আবার চোখের উপর হাতপাখাটি রেখে চোখ বন্ধ করে রাখলাম। সে বলল এবার একটু বেশিক্ষণ রাখতে হবে, কারণ পাঁচটা আপেল আনতে বেশি সময় লাগবে। আমি অনেকক্ষণ ধরে চোখ বন্ধ করে রাখলাম। চোখের উপর হাতপাখাটি তখনও ছিল কিন্তু তার আওয়াজ না শুনে আমি বেশ কিছুক্ষণ পর হাতপাখাটে সরিয়ে চোখ খুললাম কিন্তু তাকে দেখতে পেলাম না। একটু পর আমি ঘুমিয়ে গেলাম। বিকেল বেলা আব্বার চেঁচামেচি শুনে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল, দেখলাম আব্বা অনেক জোরে জোরে কথা বলছে। আম্মাকে বকাঝকা করছে, বুঝতে পারলাম আব্বার পকেট থেকে টাকা চুরি হয়েছে, ৪৪০টাকার মত। পকেটে এক প্যাকেট নেভি সিগারেট ছিল সেটাও চুরি হয়েছে। কিছুক্ষণ পর আব্বা চলে গেল আম্মা এসে আমাকে জিজ্ঞেস করে তুই কি তোর আব্বার পকেট থেকে টাকা নিয়েছিস? যদিও আমার আম্মা বা আব্বা ভালো করে জানে আমি কখনোই এই কাজ করার মত না। তারপরও আম্মা আমাকে বারবার জিজ্ঞেস করছিলেন। আমি বললাম বুঝলাম আমি টাকা নিয়েছি কিন্তু সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে আমি কি করবো? এরপর আর আম্মা আমাকে আর কিছুই জিজ্ঞেস করেনি। রাতে আব্বা আসার পরে আম্মাকে জিজ্ঞেস করলো টাকা পাওয়া গেছে? আম্মা বললেন “না” টাকা অন্য কেউ চুরি করে নিয়ে গেছে, তোমার ছেলে কখনোই এমন কাজ করবে না। যাক এটা নিয়ে আর কোনো ধরনের কথা হয়নি।
আমি বুঝতে পারলাম সেদিন সেই চুরিটা শাহালমই করেছে কিন্তু আমার কেনো জানি তার কথা বলতে ইচ্ছে হয়নি। শাহালমদের অভাব আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি, তাদের জন্য আমার খুব মায়া লাগতো। হয়তো এই জন্য আব্বাকে সেদিন ঘটনাটি বলিনি, বললে আব্বা শাহআলম ও তার বাবাকে প্রচন্ড বকাঝকা করতো।

২.ঘটনাটি বেশ মজার এবং সবার জীবনে এই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকার কথা। আমার ভাগিনা সায়মন বয়স ৬ বছর। খুবই দুষ্টু প্রকৃতির। এমন এমন কথা বলবে মনে হবে তার বয়স ১৪-১৫ বছর! অনেক সময় তার বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব আমি নিজেই দিতে পারি না অথবা সে এমন জবাব দেবে আমার প্রশ্নের যা শুনে আমি নিজেই অবাক হয়ে যাই। অতিরিক্ত দুষ্টামির কারণে মাঝেমাঝে বিরক্ত হই তবে তাকে ঘায়েল করার একটা অস্ত্র আমার জানা আছে। সে যখন অতিরিক্ত দুষ্টামি শুরু করে তখন তাকে আমি বলি “বিছানায় প্রস্রাব করে কে জানি" আস্তে সকল দুষ্টামি বন্ধ করে চুপ হয়ে যায়। লজ্জায় আমার রুম থেকে দৌড়ে চলে যায়।
একদিন ভাগিনা আমার কাছে এসে বলে আচ্ছা মামা মানুষ বিছানায় প্রস্রাব করে কেনো? তো আমি বলি মানুষ বিছানায় প্রস্তাব করে কেনো সেটা তো আমি জানি না তবে তুই কেন করিস সেটা জানি। সে অবাক হয়ে বলে কেন করি দেখি বলেন দেখি! যদি না বলতে পারেন তাহলে আমাকে নিচে নিয়ে এখনই আইসক্রিম কিনে দিতে হবে। আমি বলি ঠিক আছে দেবো, আর যদি বলতে পারি তাহলে আমার সকল কথা শুনতে হবে, দুষ্টামি করা যাবেনা আমার রুমে এসে। সে বললো ঠিক আছে।
আমি বললাম রাত্রে তুই যখন ঘুমাস তখন তুই স্বপ্নে দেখস তোর আম্মা তোকে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে বলে সাইমন প্রস্রাব কর, জলদি প্রস্রাব কর! তখনই তুই প্রস্রাব করে দিস কিন্তু জেগে উঠে দেখিস তুই বিছানায় প্রস্রাব করে দিয়েছিস। আমার কথা শুনে সে চোখ কপালে তুলে মাথায় হাত দিয়ে নিচে বসে যায়। বলে এটা আপনি কিভাবে জানলেন মামা! আমি বললাম জানি জানি। এখন আমার চুল টেনে দে। ৫-৬ বার চুল টেনে সে বলে আমি ছোট মানুষ আমার হাত ব্যাথা করে, আমি যাই।

৩.এই ঘটনাটি আমার বাবাকে নিয়ে। আজ থেকে প্রায় ১০-১২ বছর আগের কথা, আব্বা তখন প্রচুর পরিমাণ সিগারেট খেতো। দিনে দুই তিন প্যাকেট সিগারেট লাগতো উনার। খুবই বিরক্তিকর ব্যাপার ছিল এবং আমার এটা নিয়ে খুব টেনশন হতো। উনার এত পরিমান সিগারেট খাওয়া নিয়ে অনেকবার নিষেধ করা হলেও তিনি সিগারেট খাওয়া ছাড়তে পারেনি। যাক ওই সময় আব্বা হঠাৎ করে চোখে ঝাপসা দেখা শুরু করে। গ্রামে অনেকভাবে ট্রিটমেন্ট করার পরেও কিছুতেই ঠিক হচ্ছিল না। পরে আমি বললাম ঢাকায় আসেন, ঢাকায় এসে ভালো চোখের ডাক্তার দেখান। উনি এমনিতে ঢাকা আসতে চায়না তারপরও সমস্যা বেড়ে যাওয়াতে উনি ঢাকায় আসলাম। উনাকে আমি ডাক্তার দেখালাম। ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বললেন চোখের পিছনে রক্তক্ষরণ হচ্ছে যার জন্য উনার চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। এটার ট্রিটমেন্ট সময় সাপেক্ষ, আস্তে আস্তে করতে হবে। যাই হোক উনার ট্রিটমেন্ট চলতে থাকলো প্রায় এক বছর লেগেছিল এবং চিকিৎসা শেষে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেলেন। শেষ যেদিন উনি ডাক্তারের কাছে গেলেন এবং ডাক্তার বললেন “আপনাকে আশা করি আর আসতে হবে না।” উনি ডাক্তারের রুম থেকে বের হওয়ার পরে আমি উনাকে সামনে ওয়েটিং রুমে বসিয়ে ডাক্তারের রুমে গেলাম। ডাক্তারকে খুব রিকোয়েস্ট করে বললাম “ম্যাম আপনাকে একটা অনুরোধ করবো?” উনি বললেন “বলো।” আমি বললাম “আমার আব্বা প্রচুর পরিমাণ সিগারেট খায় আপনি প্লিজ ওনাকে আরেকবার ডেকে এনে রিপোর্টগুলো দেখে বলবেন, আপনার চোখের সমস্যা কিন্তু সিগারেট থেকেও হচ্ছে। সিগারেটের ধোঁয়ার কারনে আপনার চোখে ঝাপসা দেখার একটা কারণ। আশা করি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিবেন।” ডাক্তার ম্যাম একটু হাসি দিয়ে বলল “আচ্ছা ঠিক আছে নিয়ে আসো।” আমি আব্বাকে আবার ডাক্তারের রুমে নিয়ে আসলাম। ডাক্তার রিপোর্টগুলি কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে বললেন, “আপনি প্রচুর পরিমাণ সিগারেট খান, তাই না?” আব্বা অবাক হয়ে বললেন হ্যাঁ! ডাক্তার তখন বললেন “আপনার এই চোখের সমস্যা কিন্তু এই সিগারেট খাওয়া থেকে আরও বাড়তে পারে। সিগারেট না ছাড়তে পারলে কিন্তু শীঘ্রই আপনার সাথে আবার দেখা হবে এখানে।”
এরপর সেই যে আব্বা সিগারেট খাওয়া ছাড়লো আজ পর্যন্ত আর সিগারেট হাতে নেয়নি। ব্যাপারটি আজও আমার মনে পড়লে একটা দারুন অনুভূতি অনুভব হয় এবং সে ডাক্তার ম্যামকে মনেমনে ধন্যবাদ দিই।
স্মৃতি থেকে যেসব আজো ভাবায় আমায় (৪)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০৮
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×