somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতি থেকে যা আজও ভাবায় আমায়(৬)★★

৩০ শে অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৯:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঘটনাটি করোনার মহামারীর শেষ সময়ের দিকের। করোনার জন্য ঢাকায় অনেকদিন আটকা পড়েছিলাম। তারপর যখন বাড়িতে গেলাম তখনকার ঘটনা এটি। আমাদের বাড়ি থেকে সামান্য দূরে আমাদের মসজিদ, হেঁটে যেতে হয়। সেই ছোটবেলা থেকেই এই মসজিদে নামাজ পড়ে আসছি। মোটামুটি একজন ইমাম ছিলেন যিনি আমাদের ছোটবেলা থেকে একেবারে করোনার এক বছর আগ পর্যন্ত ইমামতি করেছেন। উনি মারা যাওয়ার পরে বেশ কয়েকজন ইমাম আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিল। কেউই স্থায়ী হয়না, মূলত সমস্যা হয় বেতন নিয়ে। আগের ইমাম কোনো বেতন নিতেন না যার জন্য উনি দীর্ঘদিন স্থায়ী ছিলেন।
যাইহোক করোনার সময় বাড়িতে গিয়ে যখন নামাজ পড়তে যাই তখন দেখি একজন নতুন ইমাম, বয়স ৫০ কি ৫২ বছর হবে। ভালো নামাজ পড়ান, কন্ঠ চমৎকার ছিল। উনি নামাজ যখন পড়ান খেয়াল করেছি উনি খুবই ছোট ছোট সূরা দিয়ে নামাজ পড়াচ্ছেন। রুকুতে গেলে বেশি সময় থাকে, সেজদার সময় খুবই অল্প সময়ে নেয়! কয়েকদিন নামাজ পড়ার পর একদিন নামাজ শেষে উনার সাথে কথা বললাম। উনাকে জিজ্ঞেস করলাম কোমরে ব্যথা কতদিন থেকে? ওষুধ খাচ্ছেন কিনা, এক্সরে করিয়েছেন কিনা? উনি কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন আপনার সাথে তো আবার কখনো কথা হয়নি কিভাবে জানলেন আমার অসুস্থতার কথা! আমি বললাম আমি আপনাকে চিনিনা, আপনি আমাদের মসজিদের নতুন ইমাম, নামাজ পড়ার সময় খেয়াল করেছি আপনি বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারেননা, রুকুতে গেলে দীর্ঘ সময় থাকেন, ওই সময় আপনার একটু ভালো লাগে আবার সেজদার সময় বেশি ব্যথা করে তাই ভাবলাম আপনার কোমর ব্যথার সমস্যা আছে। উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, হ্যাঁ বাবা দীর্ঘদিন থেকে এই সমস্যা। দোকান থেকে অনেক ওষুধ কিনে খাচ্ছি কাজ হচ্ছেনা, এক্সরে করিয়েছি ডাক্তার কিছু ওষুধ দিয়েছে আর এমআরআই করতে বলেছে, অত টাকা নাই যে এমআরআই করবো। এরপর ওনার সাংসারিক কিছু কথাবার্তা ও মসজিদের বেতন নিয়ে কিছু আপসুসের কথা বলেছেন। আমি তারপর বললাম ঠিক আছে ভালো থাকুন, আমি বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় আপনার সাথে দেখা করে যাবো, দেখি কিছু করা যায় কিনা।

আমি যখন ক্লাস থ্রি কিংবা ফোরে পড়ি তখনকার সময়ের এই মজার ঘটনাটি। একদিন সকালবেলা দেখলাম আমার আম্মা কিছুক্ষণ পর পরেই হাসছেন, বিনা কারণে হেসে যাচ্ছেন। জিজ্ঞেস করলে কিছুই বলছে না। খাওয়া দাওয়া করে স্কুলে গেলাম, স্কুল থেকে বিকালের দিকে বাড়িতে আসার পরেও দেখছি আম্মার মুখে এখনো একটু পর পর হাসি। আমাদের ভাই-বোনদের মাঝে কৌতূহল আম্মা কি জন্য হাসছে! কয়েকবার জিজ্ঞেস করার পর আম্মা ধমক দিয়ে বলছেন কথা বেশি কইসনা মাইর খাবি। যাক আমরা চুপ করে গেলাম।
সন্ধ্যার সময় আমাদের বাড়ির সবাই আমাদের ঘরের দরজার সামনে এসে বসে গল্প করতো, আমরা টেবিলে পড়তে বসতাম আর কান পেতে তাদের গল্প শুনতাম। তো এবার আম্মা উনার হাসার কারণ আমার এক জেঠিকে বলছেন, ভাবি শুনেন কালকে রাত্রে কি হয়েছে। মাঝরাতে আমি বাথরুমের জন্য বাহির হয়েছি আপনার ভাই ঘুমিয়ে ছিল। বাথরুম সেরে আমি যখন রুমে ঢুকলাম আপনার ভাই একটি কাঁথা নিয়ে আমাকে জোরে জড়িয়ে ধরে চোর চোর করে চিল্লাতে শুরু করেছে। এমন জোরে ধরেছে আমি বলতেও পারছি না আমি চোর না। আর যদি কয়েক মিনিট ধরে রাখতো আমার দম বন্ধ হয়ে যেত। তো আপনার ভাই যখন দেখলো নড়াচড়া নাই, ভাবলো কি ব্যাপার চোর নড়াচড়া করছে না কেনো, কাঁথা খুলে যখন দেখলো আমাকে তখন আমার অবস্থা খারাপ! কোনো মতে মাথায় পানি দিয়ে ঠিক হয়েছি।

বি: দ্রঃ এই ঘটনার এক সপ্তাহ আগে আমাদের ঘরে সিদ কেটে চুরি হয়েছিল। আব্বা হয়তো ভেবেছিল ঘরে আবার চোর ঢুকেছে।

কলেজের শেষ সময়ে আমার এক বন্ধুর সাথে কুমিল্লার একটি গ্রামে তাদের বাড়িতে আমরা কয়েকজন বেড়াতে গিয়েছি। খুবই খাতির যত্ন করা হয়েছিল আমাদের। বন্ধুর বাবা ছিল ওই গ্রামের মেম্বার, বয়স্ক মানুষ কিন্তু খুবই মজার মজার কথা বলতেন। বন্ধুদের বাড়ির পাশেই বাজার, বাজার বলতে ১৫-২০টি দোকান হবে। তো বিকেলবেলা বন্ধু আমাদের সে বাজারে নিয়ে গেছে চা খাওয়াতে। বাজারের একেবারে শেষ মাথায় একটি ভাঙ্গাচোরা দোকানে আমরা বসে বসে চা খাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে বাজারে শোরগোল পড়ে গেল। বাজারের মধ্যে কারা কারা জানি তুমুল ঝগড়া লাগলো, ঝগড়ার একপর্যায়ে মারামারি শুরু হল। আমরা দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলাম। এর মাঝে বন্ধুর বাবা অর্থাৎ সেই এলাকার মেম্বার দৌড়ে বাজারে আসলেন। উনি হাঁপাতে হাঁপাতে সবাইকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন। দীর্ঘক্ষন চেষ্টার পরে মোটামুটি পরিবেশ ঠান্ডা হলো। মেম্বার সাহেব তখনও খালি গায়ে, শুধুমাত্র একটা পায়জামা পড়া। বুঝা যাচ্ছে উনি যে অবস্থায় ছিলেন সেই অবস্থায়ই চলে এসেছেন। তবে কাঁদে একটা সাদা কাপড় উনার পায়জামার সাথে পাঞ্জাবি হবে আমি ভাবছিলাম। এরপর পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে উনি উনার কাঁদ থেকে সে পাঞ্জাবিটি নিয়ে মাথায় ঢুকালেন, আর অমনিই শুরু হল হাসাহাসি। বেচারা তাড়াহুড়াতে পাঞ্জাবির বদলে উনার স্ত্রীর পেটিকোট কাঁধে করে দৌড় দিয়েছেন।
মাথা থেকে পেটিকোট বাহির করতে করতে বেচারা তার বউকে এক বিশ্রী গালি দিল। এরপর আরও হাসাহাসি শুরু হল। আমি পিছনে তাকিয়ে আমার বন্ধুকে খুঁজতে লাগলাম, বন্ধু সরে গেছে, মনে হয় লজ্জা পাচ্ছিল। বন্ধুর বাড়ি থেকে আসার সময় বন্ধু এবং বন্ধুর বাবাকে বললাম আপনি আসলে খুবই ভালো মানুষ। এরকম মারামারি ভিতর তাৎক্ষণিকভাবে জনপ্রতিনিধিরা আসতে চায়না, আপনি যেভাবে পরিস্থিতি ঠান্ডা করেছেন সত্যি সেটা প্রশংসা করার মত।
স্মৃতি থেকে যা আজও ভাবায় আমায়(৫)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৩ দুপুর ২:০৪
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×