বাংলা গদ্য সাহিত্যের কালজয়ী লেখক ও বিশিষ্ট মনীষী মীর মশাররফ হোসেন। মীর মশাররফ হোসেন ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলার লাহিনীপাড়া গ্রামের সম্ভান্ত ও ধনাঢ্য মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কুষ্টিয়ায় জন্ম হলেও মীর মশাররফ হোসেনের শৈশব, কৈশোর, যৌবন সবই কেটেছে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদীতে। জীবনের শেষ দিনগুলোও পদমদীতেই অতিবাহিত করেন তিনি। তার সহধর্মিণী বিবি কুলসুমও এখানে মারা যান। তার পিতা মীর মোয়াজ্জেম হোসেনসহ পরিবারের অন্য সদস্যদেরও পদমদীর নবাব বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। তিনি তাঁর বহুমুখী প্রতিভার মাধ্যমে উপন্যাস, নাটক, প্রহসন, কাব্য ও প্রবন্ধ রচনা করে আধুনিক যুগে মুসলিম রচিত বাংলা সাহিত্যে সমৃদ্ধ ধারার প্রবর্তন করেন। কাঙ্গাল হরিনাথ ছিলেন তাঁর সাহিত্য গুরু। সাহিত্যরস সমৃদ্ধ গ্রন্থ রচনায় তিনি বিশেষ কৃতিত্ব দেখান। কারবালার বিষাদময় ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস "বিষাদসিন্ধু" তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনা। তাঁর সৃষ্টিকর্ম বাংলার মুসলমান সমাজে আধুনিক সাহিত্য ধারার সূচনা করেন। তিনি ১৯১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর পদমদীতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। গল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা, আত্মজীবনী, প্রবন্ধ ও ধর্মবিষয়ক ৩৭টি বই লিখেছেন তিনি।মীর মশাররফ হোসেনের রচনাসমগ্রর মধ্যে রত্নাবতী, গৌরি সেতু, বসন্ত কুমারী, জমিদার দর্পণ, সংগীত লহরী, উদাসীন পথিকের মনের কথা, মদিনার গৌরব, বিষাদ সিন্ধু, গো-জীবন, বেহুলা গীতাভিনয়, গাজী মিয়ার বোস্তানী ও বৃহৎ হীরক খনি উল্লেখযোগ্য। নীল বিদ্রোহের উপরে ‘জমিদার দর্পণ’ সহ প্রায় ২৫টি গদ্য গ্রন্থ রচনা করে মীর মশাররফ হোসেন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রথম আধুনিক মুসলিম গদ্য শিল্পীর মর্যাদা লাভ করেন। তার সম্পাদিত ‘হিতকরী’ (১৮৯০) পত্রিকায় বাউল শিরোমনি লালন ফকিরের উপরে প্রথম লালন জীবন দর্শন মহাত্মা লালন ফকির প্রকাশিত হয়। সাহিত্য রচনার পাশাপাশি কিছুদিন সাংবাদিকতাও করেন তিনি।
মীর মশাররফ হোসেনের শিক্ষা জীবন শুরু হয় স্বগৃহে মুন্সির কাছে। মুন্সির কাছে তিনি আরবী-ফারসি এবং পাঠশালায় পণ্ডিতের কাছে বাংলা। তাঁর লেখাপড়ার জীবন কাটে প্রথমে কুষ্টিয়ায়, পরে ফরিদপুরের পদমদীতে ও শেষে কৃষ্ণনগরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে। কৃষ্ণনগরের কলেজিয়েট স্কুলে তিনি পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত লেখা-পড়া করেন। এর পরে তিনি তাঁর পিতৃবন্ধু আলীপুর আদালতের আমীন নাদির হোসেনের আশ্রয়ে কলকাতায় কালীঘাট স্কুলে ভর্তি হন, কিন্তু লেখাপড়ায় বেশীদূর অগ্রসর হতে পারিননি। তিনি তাই লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে নাহিনীপাড়ায় এসে পিতৃসম্পত্তি দেখাশুনা করতে থাকেন। ১৯১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর পদমদীতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।মুসলিম রচিত আধুনিক বাংলা সাহিত্যের সমন্বয়ধর্মী ধারার প্রবর্তক বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিশিষ্ট লেখক মীর মশাররফ হোসেনের আজ ১৭২তম জন্মবার্ষিকী। বহুমুখী প্রতিভাধর মনীষী, বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিশিষ্ট লেখক মীর মশাররফ হোসেনের জন্ম দিনে ফুলেল শুভেচ্ছা
নূর মোহাম্মদ নূরু
গ/ণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৩৮