somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা গানের কিংবদন্তী পশ্চিম বাংলার প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী শ্যামল মিত্রের ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের বাংলা গানের কিংবদন্তী, পশ্চিম বাংলার প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী শ্যামল মিত্র। বাবা সাধন কুমার মিত্র চেয়েছিলেন ছেলে হোক তাঁর মতো এক আদর্শ স্বনামধন্য চিকিৎসক | বাবার চাওয়ার আগেই সুরের সরগম ছুঁয়েছিল তার মন। তাই আর মানা হয়নি পিতৃ আদেশ। পিতা-পুত্রের সম্পর্কে পড়েছিল অসম ভাঁজ। তবুও গানেই ভুবন ভরিয়েছিল সে। সিনেমার মতো্ই অতীতের ছোট ছেলেটি একদিন হয়ে উঠেছিলেন বাংলা আধুনিক সঙ্গীতের অন্যতম সুরকার গায়ক শ্যামল মিত্র। আধুনিক আর সিনেমার গান বাদেও অতুলপ্রসাদী, রবীন্দ্রসঙ্গীত এবং নজরুল গীতিতেও শ্যামল মিত্রের কীর্তি স্মরণীয়। তবে ঠিক সিনেমার মতো জীবন নয় শ্যামল মিত্রের। তার সাফল্য নিয়ে কোন সংশয় না থাকলেও সংসয় রয়েছে শিল্পী হিসেবে তার মূল্যায়ন নিয়ে। তার জন্মদিন, মৃত্যুদিন এখনও সেভাবে পালন হয় না বঙ্গসংস্কৃতিমহলে। পশ্চিম বাংলার প্রখ্যাত এই সঙ্গীত শিল্পী ১৯৮৭ সালের আজকের দিনে মৃত্যুবরণ করেন। আজ তার ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলা গানেরকিংবদন্তী বাঙালি শ্রোতাদের কাছে আদৃত এই গায়কের মৃত্যুদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।


১৯২৯ সালের ১৪ জানুয়ারি অধুনা ভারতের কলিকাতার কাছাকাছি উত্তর ২৪ পরগনার শহর নৈহাটিতে জন্ম গ্রহণ করেন শ্যামল মিত্র । তাঁর পিতা, ডঃ সাধন কুমার মিত্র ছিলেন সেখানকার নামকরা ডাক্তার। পিতা চেয়েছিলেন তার পাদাঙ্ক অনুসরণ করে শ্যামল একজন ডাক্তার হবে কিন্তু পুত্র ছিল সঙ্গীত সম্পর্কে ক্ষুরধার এবং তার মা এবং স্থানীয় গায়ক মৃণাল কান্তি ঘোষ সঙ্গীতের ব্যাপারে তাকে অনুপ্রাণিত করতো ফলশ্রুতিতে গান তাকে বেধে রাখে আষ্টেপৃষ্ঠে। ভারতের I.P.T.A. আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত লোকেদের মাধ্যমে শ্যামল মিত্র সলিল চৌধুরীর সংস্পর্শে আসার সুযোগ পান। সে সময় তরুন শ্যামল মিত্র এবং তার কনিষ্ঠ বোন রেবার কণ্ঠে গাওয়া হে আলোর পথের যাত্রী IPTA আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্তদের উৎসাহ যোগাতো। রবীন্দ্র সংগীত দিয়ে প্রথমে গানের জগতে প্রবেশ শ্যামল মিত্রের । তিনি বিভিন্ন স্টেজে ছায়াছবির গান গেয়ে খ্যাতি কুড়ান। স্নাতক পরীক্ষার সময় হুগলির মহসিন কলেজে শ্যামল মিত্রের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল শিল্পী সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের। তাঁর অনুপ্রেরণায় এলেন কলকাতা। সেখানে বিখ্যাত আধুনিক গানের শিল্পী সুধীরলাল চক্রবর্তীর সান্নিধ্যে ঘুরে গেল ভাগ্যের চাকা। সুধীর লাল চক্রবর্তী তাকে আকাশ বাণী কলকাতায় গান গাওয়ার ব্যাপারে সুযোগ করে দিয়েছিলেন। ১৯৪৮ সালে এইচএমভিতে-বন্ধুগো জানি-এই গানটি প্রথম রেকর্ড করেন। জয় মা কালী বোর্ডিং ছবিতে শ্যামল মিত্র প্রথম সংগীত পরিচালনা করেন। ১৯৪৯ সালে সুপ্রীতি ঘোষের কথায় 'সুনন্দের বিয়ে' সিনেমায় প্রথম প্লে ব্যাক করলেন শ্যামল মিত্র। সুধীরলাল চক্রবর্তীর ব্যবস্থাপনায় এটাই এইচ এম ভি থেকে রেকর্ড করা শ্যামল মিত্রের প্রথম আধুনিক গান।ক্রমে বাংলা গানের আধুনিক মানচিত্রে হেমন্ত মান্নার পাশে উঠে এল আর একটা নাম, শ্যামল মিত্র। ১৯৫৬ সাল থেকে অধিকাংশ বাংলা ছবির গান সুরে মৌলিকত্ব হারিয়ে ফেলে এবং পাশ্চত্য সংগীতের প্রভাব পড়তে শুরু করে। শ্যামল মিত্র কিন্তু সে পথ অনুসরণ করেননি। বরং তার গাওয়া প্রতিটি রেকর্ডকৃত আধুনিক গানে সুরের বৈচিত্র এবং পূর্ব ঐতিহ্য অক্ষুন্ন থাকে ।


শ্যামল মিত্র ছিলেন পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের বাঙ্গালী সঙ্গীত শিল্পের সুবর্ণ যুগের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রযোজক, সুরকার এবং গায়ক। এক সময় হেমন্তের মতো শ্যামল মিত্র ছাড়া বাংলা ছবির গান ভাবাই যেতোনা। তাঁর শ্রুতিমধুর কন্ঠস্বরের আবেগ প্রতিফলিত হয় তাঁর গাওয়া প্রতিটি গানে। জনপ্রিয় অনেক মৌলিক বাংলা গান বিপুল সংখ্যা রেকর্ড ছাড়াও, তিনি নেপথ্য গায়ক হিসাবে শতধিক বাংলা গান ও অর্ধাশতাধিক বাংলা ছায়াছবির সঙ্গীত পরিচালনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন। ১৯৬৩ সালে তার প্রযোজিত ছবিটি ছিল তার ক্যারিয়ার আরেকটি মাইলফলক। এই সময়কালে তিনি অনেক বাংলা ছায়াছবি নেপথ্য গায়ক হিসাবে কাজ করেন। ১৯৬৬ সালে শ্যামল মিত্রের প্রযোজিত ও সুরারোপিত ছবি 'দেওয়া নেওয়া'-য় 'গানে ভুবন ভরিয়ে দেব' সঙ্গীত জগতের অনন্য উপহার। এ ছাড়াও তাঁর সুর করা আরো দু'টি জনপ্রিয় চলচ্চিত্র হল অমানুষ এবং আনন্দ আশ্রম। অভিনেতা হিসেবে, শ্যামল মিত্র বাংলা সিনেমা সাড়ে চুয়াত্তর এবং সাপ মোচন ছবিতে কাজ করেন। তিনি বাংলা ভাষা ছাড়াও ভারতীয় হিন্দি, তামিল, তেলেগু, পাঞ্চাবী, মারাঠি, ওড়িয়া এবং অসমিয়া ভাষায় গান গেয়েছ্নে। আধুনিক বাংলা গান এবং ফিল্ম গান ছাড়াও, শ্যামল মিত্র অন্যান্য অনেক বাঙ্গালী সঙ্গীত চর্চায় রবীন্দ্র, নজরুল গীতি, ছোটদের গান, এবং অতুল প্রসাদীসহ বিভিন্ন গান গেয়েছেন। শ্যামল মিত্র ভারতীয় রেডিওর সঙ্গে দীর্ঘ দিন কাজ করেছেন। সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে, শ্যামল মিত্র হেমন্ত কুমার মুখোপাধ্যায, তরুন বন্দ্যোপাধ্যায়, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য্য, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, ইলা বসু, সুপ্রীতি ঘোষ, গায়ত্রী বসু, তালাদ মাহমুদসহ প্রায় সকল প্রখ্যাত ও প্রধান শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করেছেন।


বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি ঢাকায় এসে দুটি ছবিতে কণ্ঠ দেন। আলমগীর কবির পরিচালিত-সূর্যকন্যা ছবিতে-১। চেনা চেনা লাগে তবু অচেনা.. ২। ভালোবাসো যদি কাছে এসোনা-গান দুখানি গেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। এ গান সংগীত প্রেমিকদের অন্তরে এখনো ঝংকার তোলে। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের সবচেয়ে জনপ্রিয় গায়কদের অন্যতম শ্যমল মিত্রের গাওয়াঃ
১। আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা থাকে, ২। ওই আঁকা বাঁকা যে পথ, ৩। কেন তুমি ফিরে এলে, ৪। দূর নয় বেশী দূর ওই, ৫। ধরো কোন এক শ্বেত পাথরের প্রাসাদে, ৫। নাম রেখেছি বনলতা ইত্যাদি গান যুগ যুগ ধরে বাংলা গান বোদ্ধাদের বাংলা গানের স্বর্ণযুগকে স্মরণ করিয়ে দেয়। সুপার ডুপার হিট এই শিল্পীর কণ্ঠে গীত গানগুলো্ শুনতে চাইলে এখানে ক্লিক করতে পারেন
Best collection of Shyamal Mitra


বাংলা গানের কিংবদন্তি শ্যামল মিত্র ১৯৮৭ সালের ১৫ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যকালে তিনি তাঁর স্ত্রী প্রতিমা মিত্র, পুত্র শৈবাল মিত্র এবং সৈকত মিত্র, কন্যা মনোবিনা এবং কোটি কোটি ভক্ত রেখে যান। ৩২ বছর আগে শ্যামল মিত্রের শারীরিক মৃত্যুহলেও জীবন খাতার প্রতি পাতায় অমরত্বের অনন্ত আলোয় তিনি চির আলোকিত, চির উজ্জ্বল।বাংলা গানের কিংবদন্তী বাঙালি শ্রোতাদের কাছে আদৃত এই গায়কের ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। কিংবদন্তি গায়ক শ্যামল মি্ত্রের মৃত্যুদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:০৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×