somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নূর মোহাম্মদ নূরু
নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

সদকাতুল ফিতরঃ পবিত্র মাহে রামাদানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত

২৪ শে মে, ২০২০ বিকাল ৩:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পবিত্র মাহে রামাদানে সদকাতুল ফিতর একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এই সদকার কেন্দ্র পবিত্র ঈদুল ফিতর। সহজ কথায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের সাথে সম্পৃক্ত বলেই এটাকে ‘সদকাতুল ফিতর’ বলা হয়। সুরা আ‘লার ১৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে ‘সেই-ই সফলতা লাভ করেছে, যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করেছে।’ হজরত কাতাদাহ (রহ.) এই আয়াতের ‘তাঝাক্কা’ তথা ‘পরিশুদ্ধ হওয়া’ শব্দ দ্বারা ‘সদকায়ে ফিতর’কে উদ্দেশ্য করা হয়েছে বলে মত ব্যক্ত করেছেন। কেননা হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘রাসুলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম সদকাতুল ফিতরকে ওয়াজিব করেছেন। যাতে করে রোজাদারদের রোজার যাবতীয় ভুলত্রুটি পরিশুদ্ধ করা যায় এবং গরিব লোকেরা আহারাদি পায়’ (মিশকাত ১৬০ পৃষ্ঠা)। ফিতরা বা সদকাতুল ফিতর হলো সেই নির্ধারিত সদকা, যা ঈদের নামাজের আগে প্রদান করতে হয়। একে জাকাতুল ফিতরও বলা হয়।আমাদের এ অঞ্চলে তা ‘ফিতরা’ নামে পরিচিত। সদকায়ে ফিতর এমন এক সদকা যা রমজানুল মোবারকের রোজা শেষ হবার পর ওয়াজিব হয়ে যায়। সদকাতুল ফিতর সর্ম্পকে হাদীসে এসেছে, আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেছেন, তোমরা দুইজন ব্যক্তির মাঝে এক সা’ গম কিংবা এক সা’ খেজুর অথবা এক সা’ যব আদায় করে দাও। এই বিধানটি প্রত্যেকটি গোলাম, স্বাধীন, ছোট ও বড় ব্যক্তির ওপর ফরয।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং : ২৩৬৬৩) হজরত রাসূলে কারিম (সাঃ) তা আদায়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন এবং এর নিয়ম-নীতি শিক্ষা দিয়েছেন। এ কারণেই হজরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর পবিত্র যুগ থেকে আজ পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহ ইসলামের অন্যান্য মৌলিক আমল ও ইবাদতের ন্যায় সদকাতুল ফিতরও নিয়মিত আদায় করে আসছে। ঈদের দিন সকালবেলায় যিনি নিসাব পরিমাণ সম্পদের (সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বাহান্ন ভরি রুপা বা সমমূল্যের ব্যবসাপণ্যের) মালিক থাকবেন, তাঁর নিজের ও পরিবারের ছোট–বড় সবার পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা তাঁর প্রতি ওয়াজিব। রুপার হিসাবে বর্তমান বাজারমূল্যে এটি ৫০ হাজার টাকা প্রায়। এ বছর ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশে ফিতরার হার জনপ্রতি সর্বনিম্ন ৭০ টাকা ও সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩১০ টাকা নির্ধারণ করেছে। গত বছর ফিতরার এ হার ছিল সর্বনিম্ন ৬৫ টাকা ও সর্বোচ্চ এক হাজার ৯৮০ টাকা। নিম্নে সদকাতুল ফিতরের ১০ টি মাসয়ালা উল্লেখ করা হলোঃ

১। সদকায়ে ফিতরের নিসাব যাকাতের নিসাবের সমপরিমাণ। অর্থাৎ কারো কাছে সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা তার সমমূল্যের নগদ অর্থ কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অতিরিক্ত সম্পদ ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় বিদ্যমান থাকলে তার ওপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে।যাকাতের মতো বর্ষ অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়। (ফাতহুল ক্বাদির ২/২৮১)

২। সদকায়ে ফিতর আদায় করার পদ্ধতি হলো, গম বা আটা দ্বারা আদায় করলে অর্ধেক সা’ অর্থাৎ পৌনে দুই সের দিতে হবে। আর খেজুর, যব কিংবা কিসমিস দ্বারা দিতে চাইলে পূর্ণ এক সা’ অর্থাৎ সাড়ে তিন সেরের চেয়ে কিছু বেশি দ্বারা আদায় করতে হবে অথবা এর মূল্য দিতে হবে। (রুদ্দুল মুহতার ৩/৩২২)

৩। দকায়ে ফিতর আদায় করার পর ঈদের দিন যদি মূল্যমান বেড়ে যায় তাহলে ঐ অতিরিক্ত মূল্যও আদায় করতে হবে। (ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ১৪/৩৯২ )

৪। ঈদুল ফিতরের দিন সকালে ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে সদকায়ে ফিতর বা ফেতরা আদায় করা উত্তম। তবে সেই সময়ের আগেও অর্থাৎ রমজানেও আদায় করা যেতে পারে। ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার আগে ফিতরা আদায় করা মুস্তাহাব। তবে পরে আদায় করলেও তা আদায় ‎হবে। (ফাতাওয়া মাহমুদিয়া: ১৪/৩৮৩ )

৫। সদকায়ে ফিতর আদায় করার সময় স্থানের ভিন্নতার কারণে মূল্য পার্থক্য ধর্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।বরঞ্চ যেই জায়গায় সদকায়ে ফিতর আদায় করবে সেখানকার মূল্য ধর্তব্য হবে। (ফাতাওয়া মাহমুদিয়া: ১৪/৩৭৪)

৬। সদকায়ে ফিতর নিজের পক্ষ থেকে আদায় করা এবং পিতা হলে তার নিজ নাবালক সন্তানের পক্ষ থেকে আদায় করে দেওয়া ওয়াজিব।সাবালক সন্তান, স্ত্রী, চাকর-চাকরাণী, মাতা-পিতার পক্ষ থেকে দেওয়া ওয়াজিব নয়। হ্যাঁ, সাবালক সন্তান পাগল হলে তার পক্ষ থেকে আদায় করা ওয়াজিব। (ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ১৪/৩৯৭)

৭। নিছফে সা’ এর পরিমাণ : সদকায়ে ফিতর যদি গম দ্বারা আদায় করা হয় তাহলে জন প্রতি ‘নিছফে সা’ গম দিতে হয়। আর নিছফে সা’ এর পরিমাণ- এক সের ৬০ তোলা, যা ইংরেজি মাপ অনুযায়ী ১ কেজি ৬৬৩ গ্রাম। অর্থাৎ প্রায় পৌনে দুই কেজি। (ফাতাওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ ৬/৩০৪)

৮। বিবাহিতা ছোট মেয়ে নিজে সম্পদশালী হলে সদকায়ে ফিতর তার সম্পদ থেকে আদায় করবে। আর যদি সম্পদশালী না হয় তাহলে ছেলে পক্ষ উঠিয়ে না নিলে নিজ পিতার ওপর ওয়াজিব হবে। আর উঠিয়ে নিলে কারও ওপর ওয়াজিব হবে না। (ফাতাওয়া আলমগিরি, ১/১৮২)

৯। রমজানের শেষ দিনেও যে নবজাতক দুনিয়ায় এসেছে কিংবা কোনো ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেছে, তার পক্ষ থেকেও সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে। (ফাতাওয়া আলমগিরি, ১/১৯২)

১০। কেউ ফেতরা আদায় না করে মৃত্যুবরণ করলে তার পক্ষ থেকে তার উত্তরাধিকারী ফেতরা দিলেও আদায় হয়ে যাবে। (রুদ্দুল মুহতার , ২/১০৬)

ইসলামের প্রতিটি বিধানের পেছনে মহান উদ্দেশ্য রয়েছে। তেমনিভাবে সদকাতুল ফিতর আদায়ের মধ্যেও ইহজাগতিক ও পারলৌকিক উভয় কল্যাণ নিহিত। এটি অনেকটা আধুনিক যুগের রিফাইনিং মেশিনের মত। যেটির মাধ্যমে পণ্যকে পরিশুদ্ধ করা হয়। অলিদের সর্দার হিসেবে খ্যাত হজরত আবদুল কাদের জিলানি রহ. রচিত বিশ্ববিখ্যাত কিতাব ‘গুনিয়াতুত ত্বালেবিন’র মধ্যে উলেখ রয়েছে, ‘রমজানের রোজার জন্য সদকাতুল ফিতর হচ্ছে নামাজের সাহু সিজদার ন্যায়। সাহু সিজদার মাধ্যমে যেমন নামাজের ত্রুটি সংশোধন করা হয় তেমনি রোজার যাবতীয় ত্রুটিকে সংশোধন করার মাধ্যম হচ্ছে সদকাতুল ফিতর’।


শুধু তাই নয়, সদকাতুল ফিতরের মাধ্যমে হতদরিদ্রের মাঝে হাসির রেখা ফুটে ওঠে। সম্বলহীনরা পায় একটু সহানুভুতি। কিছুটা হলেও কেটে উঠে অভাবগ্রস্তদের অভাব। খুশির ঈদে ধনী-গরিব সবার মাঝে খুশি ছড়িয়ে পড়ে। নবীজির হাদিসেও সদকাতুল ফিতরের উদ্দেশ্য হিসেবে ইরশাদ হয়েছে, ‘গরিব লোকেরা যেন আহারাদি পায়’ (মিশকাত)। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা (নিয়ামতের) কৃতজ্ঞতা স্বীকার করো, তোমাদেরকে আরো বৃদ্ধি করে দেয়া হবে৷ আর যদি অস্বীকার করো, নিশ্চয় আমার আজাব অত্যন্ত কঠিন’ (সুরা ইবরাহীম, আয়াত-৭)। ইসলাম চিরসুন্দর। ইসলামের এ সৌন্দর্য চির আধুনিক। সদকাতুল ফিতর এ সৌন্দর্যের একটি অংশ। যেটি একাধারে ঘটে যাওয়া ভুলের সংশোধন ও অভাবগ্রস্ত হতদরিদ্রের মাঝে মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। চলুন, যথাযথভাবে ইসলামী অনুশাসন মেনে সদকাতুল ফিতর আদায় করি। তা আদায়ে কোনো প্রকার কার্পণ্য যেন আমাদের স্পর্শ না-করে। আল্লাহই উত্তম প্রতিদানদাতা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০২০ বিকাল ৩:০৭
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×