somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টাখনুর নিচে কাপড় পরা হারাম, কবিরা গুনাহ!

২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


টাখনুর নিচে কাপড় পড়া জায়েজ নয়। নবী করিম (সাঃ) নিষেধ করেছেন টাখনুর নিচে কাপড় যেন কেউ না পড়ে। হাদিসের মধ্যে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, টাখনুর নিচে যেটা পরবে সেটা হারাম। সুতরাং, রাসুল (সাঃ)-এর পক্ষ থেকে এটি একটি কঠিন নির্দেশনা। তাই সতর্ক থাকতে হবে। এটা পুরুষের জন্য হারাম, কোনো সন্দেহ নেই।তবে এটা সবার জন্য নয়। এ নির্দেশনা শুধু পুরুষদের জন্য দেওয়া হয়েছে। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ইজারের (লুঙ্গি) বা পরিধেয় বস্ত্রের যে অংশ পায়ের গোড়ালির নিচে থাকবে, সেই অংশ জাহান্নামে যাবে। (বুখারি, হাদিস : ৫৭৮৭) রাসুল (সাঃ) শুধু জাহান্নামের কথা বলেছেন তা নয় বা তিনি নিষেধ করেছেন তা ওয়াইদ এসেছে। ওয়াইদ হচ্ছে, তিন দল লোকের দিকে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাকাবেন না এবং তাদের পবিত্র করবেন না। তাদের মধ্যে একদল হচ্ছে ওই ব্যক্তিরা যারা তাদের কাপড়কে টাখনুর নিচে ছেড়ে দেয়। হজরত জাবের ইবনে সুলাইম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পড়ার ব্যাপারে সাবধান হও। কারণ, তা অহংকারের অন্তর্ভুক্ত। আর আল্লাহ অহংকার করাকে পছন্দ করেন না। হযরত ইবনু উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অহংকারবশত যে ব্যক্তি তার বস্ত্র বা কাপড় পায়ের গিঁটের নিচে (টাখনুর নিচে) ঝুলিয়ে চলবে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা কিয়ামতের দিন তার দিকে ফিরেও তাকবেন না। আবু দাউদ ।হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেন, অথবা আবুল কাসেম বলেছেন, এক ব্যক্তি আকর্ষণীয় জোড়া কাপড় পরিধান করে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে পথ চলছিল। হঠাৎ আল্লাহ তাকে মাটির নিচে ধসিয়ে দেন। কিয়ামত পর্যন্ত সে এভাবে ধসে যেতে থাকবে। (বুখারি, হাদিস : ৫৭৮৯)


আমরা অনেক সময় দেখি নামাজের জামাত শুরু হওয়ার আগে মুসল্লিদের কেউ কেউ নিজেদের পায়জামা, প্যান্ট, লুঙ্গি ইত্যাদি টাখনু গিরার ওপর তুলে নিচ্ছেন । এতে মনে হয় শুধু নামাজের সময়ই কাপড় টাখনুর ওপর তুলতে হবে; অথচ বিষয়টি শুধু নামাজের সাথে সম্পৃক্ত নয়। পুরুষের জন্য নামাজের ভেতরে-বাইরে সর্বাবস্থায় কাপড় টাখনুর নিচে পরিধান করা কবিরা গুনাহ। এ বিষয়ে হাদীসে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে। হজরত আবু যর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'য়ালা তিন ব্যক্তির সঙ্গে কথা তো বলবেনই না বরং তাদের দিকে তাকিয়েও দেখবেন না। এমনকি তিনি তাদেরকে গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন না বরং তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তারা কারা? তবে এরা তো ধ্বংশ, তাদের বাঁচার কোনো রাস্তা নেই। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথা তিনবার বলেছেন। তারা হলো (ক.) যে ব্যক্তি টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পরে। (খ.) যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম খেয়ে ব্যাবসার পণ্য বিক্রি করে। (গ.) যে ব্যক্তি কারো উপকার করে আবার খোটা দেয়। (মুসলিম শরীফ, তিরমিজী, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ)। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্যের পাশাপাশি টাখনুর ওপরে পোশাক পরিধানে বহুবিধ উপকারিতা রয়েছে। যেমনঃ


টাখনুর ওপরে পোশাক পরিধানের উপকারিতাঃ
১। পুরুষের পায়ের টাখনুতে থাকে টেস্টোস্টেরন নামক যৌন হরমোন, যা সঠিকভাবে কাজ করার জন্য প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের প্রয়োজন। টাখনুকে ঢেকে রাখলে টেস্টোস্টেরন হরমোন শুকিয়ে যায়। যার প্রভাবে শরীরে অনেক রকম সমস্যা দেখা দেয়। শুক্রাণু কমে যায়। ফলে সহজে বাচ্চা হয় না। তা ছাড়া টেস্টোস্টেরনের অভাব মস্তিষ্ক ‘ঘোলাটে’ করে দেয়। এতে মনোযোগ নষ্ট হয়। স্মৃতিশক্তিও কমে আসে ধীরে ধীরে। হয়তো এ কারণেই নবীজি (সাঃ) টাখনুর নিচে কাপড় পরতে নিষেধ করেছেন।
২। টাখনুর ওপরে পোশাক পরিধান আদর্শ ব্যক্তিত্বের পরিচয় বহন করে। তা ছাড়া এটি ব্যক্তির বিনয় ও ধর্মপ্রবণতা প্রকাশ করে।
৩। টাখনুর ওপরে পোশাক পরিধান করা তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জনের মাধ্যম।
৪। টাখনুর ওপরে পোশাক পরিধান করলে পোশাক পরিচ্ছন্ন থাকে। অপবিত্রতা থেকে বাঁচা যায়। কারণ টাখনুর নিচে পোশাক পরিধান করলে পোশাকে ময়লা লাগতে পারে। অনেক সময় এর মাধ্যমে পোশাকে নাপাকি লেগে যায়।
৫। টাখনুর ওপরে পোশাক পরিধান করার কারণে কাপড় টেকসই (লং লাস্টিং) হয়।


দুনিয়ার এই মোহে পড়ে মানুষ ধর্মীয় নিয়ম-নীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। হয়ে উঠছেন ফ্যাশনপ্রেমী ও অহংকারী। নিজের সুবিধা মতো চলাফেরা করতে গিয়ে কোরআন-হাদিসের অনেক বিষয়কে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছেন। এর মধ্যে এমনই একটি বিষয় টাখনুর নিচে কাপড় পরা। যা শরীয়তে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো বেশিরভাগ মানুষই এই কঠিন গোনাহে লিপ্ত। যার ফলে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। তাছাড়া টাখনুর নিচে পোশাক পরিধান করলে নামাজ কবুল হয় না। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ টাখনুর নিচে পোশাক পরিধানকারীর নামাজ কবুল করেন না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪০৮৬)
শবেবরাতেও টাখনুর নিচে পোশাক পরিধানকারী আল্লাহর অবারিত ক্ষমা থেকে বঞ্চিত থাকে। মহানবী (সাঃ) ইরশাদ করেন, ‘এক রাতে জিবরাইল (আঃ) আমার কাছে এসে বলেন, ‘এটি মধ্য শাবানের রাত বা শবেবরাত। এই রাতে আল্লাহ বনু কালব গোত্রের বকরির পশমের চেয়েও বেশিসংখ্যক মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুিক্ত দেন; কিন্তু এই রাতেও তিনি কয়েক ধরনের লোকদের ক্ষমা করেন না। তাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকান না। তারা হলো—মুশরিক, দুমুখী, আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্নকারী, টাখনুর নিচে পোশাক পরিধানকারী, পিতা-মাতার অবাধ্য ও মদ্যপ।’ (শুআবুল ঈমান : ৩৬২/৫)


উপরোক্ত আলোচনায় টাখনুর ওপর কাপড় পরিধানের ক্ষেত্রে সাধারণ বিধান বর্ণিত হয়েছে। এখানে বলা হয়নি যে শুধু নামাজের সময় টাখনুর নিচের কাপড় ওঠাতে হবে বা টেনে পড়তে হবে। তাই পরিধেয় পোশাক যেমন পায়জামা, প্যান্ট, লুঙ্গি ইত্যাদি সর্বাবস্থায় টাখনুর ওপরে পরিধান করা আবশ্যক। টাখনুর ওপর কাপড় পরিধান করার বিষয়টিকে সুন্নাত ভেবে হালকাভাবে নেয়ার কোনো উপায় নেই। কারণ ইসলাম এ পর্যন্ত যত আদেশ নিষেধ রয়েছে তা মানব জাতির কল্যাণের জন্যই রয়েছে যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর এরকম কোনো আদেশ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তাই টাখনুর ওপর কাপড় পরিধান করার বিষয়টিকে সুন্নাত ভেবে হালকাভাবে নেয়ার কোনো উপায় নেই। বিষয়টি নিজে অনুধাবন করে আমল করুন এবং অন্যকে এর কঠিক শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক করুন। আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক মুসলিম উম্মাহকে কুরআন ও সুন্নাহর আমল করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের সবার সহায় হোন। আমিন

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:১১
১৮টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×