somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জুমআর দিনঃ গরিবের হজের দিন শুক্রবারে চমকপ্রদ পুরস্কারের ঘোষণা

২৭ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আলহামদুলিল্লাহ ...। আজ শুক্রবার, শুক্রবারকে বলা হয় ইয়াওমুল জুমাআ বা জুমার দিন। সপ্তাহের সকল দিনের শ্রেষ্ঠ দিন জুম্মাবার। আরবি শব্দ জুমুআ-এর অর্থ একত্র হওয়া। আল্লাহতায়ালা এই দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এই দিনে মুসলিম উম্মাহ সাপ্তাহিক ঈদ ও ইবাদত উপলক্ষে মসজিদে একত্র হয় বলে দিনটাকে ইয়াওমুল জুমাআ বা জুমার দিন বলা হয়। আল্লাহতায়ালা এই দিনের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর ইবাদতের জন্য দ্রুত যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বোঝ।’ সূরা জুমুআ :০৯ ।


ইয়াওমুল জুমআকে গরিবের হজের দিন কিংবা মুমিন মুসলমানের ঈদের দিন বলা হয়। দিন ঈমানদারতের ঈমান বৃদ্ধি পায়। আনন্দ-উৎসবের সঙ্গেই ছোট থেকে বড় সবাই জুমআর নামাজ আদায়ে মসজিদে সমবেত হয়। পরিবারের বড়দের হাত ধরে ছোট সদস্যরাও মসজিদে নামাজ পড়তে আসে। এ এক অন্যরকম দৃশ্য। যে দৃশ্য মহান আল্লাহর কাছে সংরক্ষিত থাকে। কেননা এ দৃশ্যের অবতারণা করতে যে আল্লাহ নিজেই আহ্বানকারী। তিনি বলেনঃ জুমআর দিন আল্লাহর এ নির্দেশ পালনে নামাজ আদায়ে মুমিনের জন্য রয়েছে অনেক চমকপ্রদ পুরস্কারের ঘোষণা। তাহলোঃ


সর্বোত্তম দিনঃ
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহ আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সূর্য উদয় হয়েছে এমন দিনগুলোর মধ্যে সর্বোত্ত দিন জুমআ`র দিন। এদিন হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এদিন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়। এদিন তাকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়। এদিনই কেয়ামাত সংঘটিত হবে।’ (মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ)


মুসলমানদের মিলন মেলাঃ
জুমআর নামাজ মুমিন মুসলমানের জন্য ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিধান। সমগ্র মুসলিম মিল্লাতের মিলন মেলার দিন এটি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো কারণ ছাড়া জুমআর নামাজ ছেড়ে দেবে, আল্লাহ তাআলা তার অন্তরে মোহর মেরে দেবেন।’ (মুসলিম)


দোয়া কবুল হওয়ার দিনঃ
জুমআর দিনে একটি মুহূর্ত রয়েছে যে মুহূর্তে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা দোয়া কবুল করেন। তবে মুহূর্তটিকে অজ্ঞাত করে রাখা হয়েছে। যাতে মানুষ পুরো জুমআর দিনটিকে গুরুত্বসহকারে অনুসন্ধান করতে থাকে। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমআর দিন এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কোনো বান্দাহ ঐ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে নামাজরত অবস্থায় আল্লাহর কাছে কোনো কিছু প্রার্থনা করে তবে আল্লাহ তাআলা তা অবশ্যই দেবেন। (বুখারি ও মুসলিম)


এ সময়টি কখন-
জুমআর দিনের এ বিশেষ সময়ের ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। তবে হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য দুটি মত রয়েছে। যথাঃ
> ইমাম মিম্বারে বসা থেকে নিয়ে নামাজ শেষ করা পর্যন্ত সময়। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ইমাম মিম্বারে বসা থেকে নিয়ে সালাত শেষ করা পর্যন্ত।’ (মুসলিম, ইবনু খুজাইমা, বয়হাকি)
>যাদুল মাআ`দ-এ বর্ণিত আছে- মুহূর্তটি হচ্ছে জুমআর দিন আসরের নামাজ আদায়ের পর।


সাদকা করার উত্তম দিনঃ
সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনা জুমআর দিন সাদকা করা ঐ রকম উত্তম, যেমন সারা বছর সাদকা করার চেয়ে রমজান মাসে সাদকা করা উত্তম। হজরত কা`ব ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘জুমআর দিনই সাদকা করা অন্যান্য দিন সাদকা করার তুলনায় অধিক সাওয়াব ও গুরুত্বপূর্ণ।’ (মুসলিম)


আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের দিন
জুমআর দিন জান্নাতিদের সঙ্গে আল্লাহ তাআলা সাক্ষাৎ করবেন। তাফসিরে এসেছে- আল্লাহ তাআলা প্রতি জুমআ`র দিন জান্নাতিদের সাক্ষাতের জন্য প্রকাশ্যে আসেন।


মুসলমানের সাপ্তাহিক ঈদের দিনঃ
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘এটি ঈদের দিন। আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের জন্য নির্ধারণ করেছেন। যে ব্যক্তি জুমআর নামাজে উপস্থিত হয়, সে যেন অজু করে উপস্থিত হয়।’ (ইবনু মাজাহ)


ক্ষমা লাভের দিনঃ
এদিন আল্লাহ বান্দার গোনাহ ক্ষমা করে দেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমআর দিন গোলস করল, যথাযথ পবিত্রতা অর্জন করল, তেল লাগাল এবং ঘর থেকে আতর খুশবু লাগিয়ে বের হল, দুই ব্যক্তির মাঝে ফাঁক করে সামনে গেল না। অতপর তার তকদিরে যত নামাজ পড়া নির্ধারিত ছিল তা পড়ল, ইমামরে খুতবার সময় চুপ থাকল, তাহলে তার এ জুমআ থেকে পরবর্তী জুমআ পর্যন্ত সংঘটিত গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’ (বুখারি)


বছরজুড়ে নফল রোজা ও তাহাজ্জুদের সাওয়াব লাভের দিনঃ
জুমআর দিনের প্রতিটি পদক্ষেপে রয়েছে সাওয়াবের ভাণ্ডার। যারা যথাযথ আদব রক্ষা করে জুমআর নামাজ আদায় করে তাদের প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে তাদের জন্য পুরো এক বছরের রোজা পালন এবং রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়ার সাওয়াব লেখা হয়। হাদিসে এসেছে-
হজরত ইবনে আউস আস সাকাফী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমাআর দিন যে ব্যাক্তি গোসল করায় (অর্থাৎ সহবাস করে, ফলে স্ত্রী ফরজ গোসল করে এবং) নিজেও ফরজ গোসল করে, আগে আগে মসজিদে যায় এবং নিজেও প্রথম ভাগে মসজিদে গমন করে, পায়ে হেঁটে মসজিদে যায় (অর্থাৎ কোন কিছুতে আরোহণ করে নয়), ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসে, মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনে, কোনো কিছু নিয়ে খেল তামাশা করে না; সে ব্যাক্তির প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য রয়েছে বছরব্যাপী রোজা পালন ও সারা বছর রাত জেগে ইবাদত করার সমতুল্য সাওয়াব।’ (মুসনাদে আহমাদ)


জাহান্নামের আগুন বন্ধ রাখার দিনঃ
যাদুল মাআদে এসেছে- সপ্তাহের প্রতিদিন জাহান্নামকে উত্তপ্ত করা হয়। জুমআর দিনের সম্মানে এদিনটিতে জাহান্নামের আগুনকে প্রজ্জলিত বা উত্তপ্ত করা হয় না।


জুমআর দিন বা রাতে মৃত্যুবরণ কল্যাণেরঃ
জুমআর দিন বা রাতে মৃত্যুবরণ করা উত্তম পরিণতির লক্ষণ। কারণ এ দিন বা রাত যে ব্যক্তি মারা যায় সে ব্যক্তি কবরের আজাব বা মুনকার নকিরের প্রশ্ন থেকে বেঁচে যায়। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে কোনো মুসলিম জুমআর দিন বা জুমআর রাতে মারা গেল; আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাকে কবরের আজাব থেকে রেহাই দেবেন।’ (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি)


মুমিন মুসলমানের উচিত, জুমআর দিন ও রাতের সময়গুলোকে কাজে লাগানো। কোনো সমস্যা না থাকলে যথাযথভাবে জুমআর নামাজ আদায় করা। হাদিসে ঘোষিত জুমআর ফজিলত ও মর্যাদাগুলো নিজেদের করে নেয়া। জুমা'আর এই দিনে আসুন আমরা সবাই আল্লাহ্ তা'আলার কাছে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও "জান্নাতুল ফিরদাউস" লাভের জন্য দোয়া করি। সবাইকে জুম্মা মোবারক।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৩৪
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×