somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অযত্নের খেরোখাতা

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

- হ্যালো!
এই যে!
-হুমম।
বলুন!
- কী ব্যাপার! আজকে এতো দেরি যে!
- এই তো, ব্যস্ত ছিলাম।
- জানানো যেতো!
- প্রয়োজন ছিলো কী!
- থাকতেও তো পারে কেউ অপেক্ষায়!
- তাই নাকি! এতো গুরুত্বপূর্ণ কেউ হয়ে গেছি , বুঝতে পারিনি।
- এখন কেউ কারো অর্ধেকটা পৃথিবী এলোমেলো করে "বুঝতে পারিনি!" বললে তো কিছু করার থাকে না!
৮৯৭৫ তম মেসেজটা লোডেড হতে অনেকটা সময় নেয়। গত প্রায় দেড় ঘন্টা যাবত ল্যাপটপের সামনে বসে মেয়েটার চোখ খচখচ করতে থাকে। এই নিয়ে ঠিক কতোবার যে এই একই কনভার্সেশন হিস্ট্রি রিভিশন দেয়া হলো , ও নিজেও সেটা জানে না। এমনিতে মেয়েটার স্মৃতিশক্তি এতোটা ভালো না। কিন্তু , প্রথম পরিচয়ের দিনটা থেকে গত ছ 'মাস অবধি তিন বছরের সব খুঁটিনাটি ঘটনা ওর খুব ভালো মনে আছে! প্রথম একসাথে ঘোরা , রিক্সা ভ্রমণ ,বৃষ্টি দেখা ,হাত ধরা ,ঝগড়া করে মুখ ঘুরিয়ে রাখা ..... সব!
তবে কী না ,সব ঘটমান বর্তমানও একটা সময় অতীত হয়ে যায়। সুখস্মৃতি তে বেঁচে থাকা মুহূর্ত গুলো মোশন - ব্লারড হয়ে ভাসতে থাকে চোখের কোণে। অন্তর্দ্বন্দের আশে পাশে ভালোবাসার অন্তর্ঘাত টুকু দেখতে পাওয়া যায় না।
বারান্দার নয়নতারা গাছে আজ অনেকগুলো ফুল , হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিতে দিতে শক্ত মেয়েটার কেন জানি কান্না পায়। আজকের দিনটা অন্যরকম হলেও পারতো! তীব্রতম অভিমান আর তীব্রতম অপেক্ষার সহাবস্থান শূন্য অনুভূতিতে অবাস্তব সত্য মনে হতে থাকে!
অনেক দূরের নীল মফস্বলে কালো আকাশটার নিচে হাঁটতে থাকা ছেলেটা সে অভিমানের দেয়াল চেনে , শুধু অন্তরালের অপেক্ষাটুকুর খবর রাখে না!

সারাদিন হাউকাউ,চেঁচামেচি-ঝগড়াঝাটি করা মানুষটাও দিন শেষে মন খারাপ করে ঘুমুতে যেতে চায়না। ঘরের এক কোণে জড় পদার্থের মতো পড়ে থাকা মানুষটারও একদিন ইচ্ছে হয় জীবন্ত পৃথিবীটাকে কয়েনের মতো উল্টে এপিঠ-ওপিঠ দেখে নিতে!
বন্ধুদের আড্ডায় সবচেয়ে অবহেলিত ছেলেটাও চায় পাঁচটা মিনিট তাকে নিয়েই গল্প হোক।তথাকথিত সৌন্দর্যের মিটার স্কেলের নিম্নতম স্তর ও স্পর্শ না করা মেয়েটাও ভাবে,অগোছালো ছেলেটা তাকে দেখে একটু আনমনে হাসুক।
আমাদের সব আত্ম-প্রতিরোধ,আত্ম-সম্মানবোধ,আত্মরম্ভিতা কোথাও গিয়ে বোকা মানুষটার মতো আত্মসমর্পণ করতে ভালোবাসে;একটু মায়ার কাছে,একটু ভালো থাকার কাছে।ব্যাখ্যনীয় সব যুক্তি,বিচারবোধ,বিবেচনা ২৩ ঘন্টা ৫৯ মিনিট মাথায় নিয়ে ঘুরেও আমরা ব্যাখ্যাতীত আবেগের কৃতদাস বনে যাই ১ মিনিটের জন্য হলেও, অজ্ঞাতসারে।
প্রত্যাখ্যাত হই,প্রতারিত হই;কোনও এক নৈর্ব্যক্তিক সুখের মুহূর্তের খোঁজে নৈমিত্তিক ভেজা চোখটা চশমার আড়ালে রেখে নির্ভেজাল মিথ্যে বলি নিজের কাছে, "এই তো!ভালোই আছি!"
"হারিয়ে গিয়েছি বইয়ের ভেতরে,
পাতার প্রথম অক্ষর হয়ে!
আলমারি-তাকে আমায় খুঁজে পাবেনা!
খুঁজে পাওয়া যাবে না!!
ঊড়ে যাক,এ ঘুম আমার
এক দীর্ঘ স্তব্ধতায়!
ভেসে যাক, এ রাত, এ সময়
দারুণ অবাধ্যতায়!!"

বেঁচে থাকার সাথে নিয়তি এবং নিয়মের মতো অপরিহার্য কিছু ব্যাপার-স্যাপার জড়িয়ে থাকে। খুব অপরিচিত কিছু মানুষের মতো খুব অপরিচিত কিছু অনুভূতি ঘর-বাড়ির মতো আপন হতে শুরু করে। অধিকাংশ সময় এই আপন আপন ব্যাপারগুলো দ্রুতই পড়শি হয়ে যায়;কিছু স্বেচ্ছায়-কিছু অনিচ্ছায়। তারপর আমরা 'কিছুই হয়নি' ভঙ্গিতে দিব্যি হাত-পা ঝেড়ে হেঁটে চলে যাবার চেষ্টা করি,ভাব দেখাই, বিশ্ব সংসারের কোথাও সামান্যতমও কিছু বদলে যায়নি।
আসলে বদলে যায়, শেষ হয়ে যাওয়া গল্পের শেষ না হওয়া অপূর্ণতা জগতের সব অপেক্ষা নিয়ে বসে থাকে। মাকড়সার জালের চেয়েও সূক্ষ্ম সুতোয় আমরা অজান্তেই বাঁধা পড়ে যাই,বৃত্ত এঁকে দিয়ে কেউ কেন্দ্রবিন্দুকে ব্রাত্য করে দিলেই পরিধিটা অস্তিত্ব হারায় না।
তাই,হাতের মুঠোয় যে হাত থাকবার কথা,তা আর স্লিপিং পিল খুঁজে রাত না কাটাক,যত্নে রাখা মানুষ গুলোও একটাবেলা যত্নে থাকুক! এত্তোবড় নীল চাঁদের অলৌকিক জোছনারা তো আর রোজ রোজ স্বার্থপর হবে না!

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ২:৪৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×