somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনের দু-একটি কথা

২১ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তখন জিলা স্কুলে পড়ি। অষ্টম শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণীতে উঠার সময় গণিতে মার্কস পেলাম ৩৪ (তখন পাশ মার্ক ছিল ৩৩)! স্বাভাবিক ভাবেই এসএসসি পরীক্ষার জন্য আমাকে সাইন্স দেয়া হলো না। জিলা স্কুলে কেও গণিতে ৫৫% এর নিচে নাম্বার পেলে তাকে বিজ্ঞান পড়তে দেয়া হত না। আমাকেও দেয়া হলো না। আমিও নাছরবান্দা। আব্বুকে স্কুলে পাঠালাম আমাদের গণিত স্যার, ফজল স্যারকে রিকোয়েস্ট করার জন্য, যেন আমাকে সাইন্স পড়তে দেয়া হয়। ফজল স্যার বললেন, আপনার ছেলে তো অঙ্কে ফেইল করেছে, বিজ্ঞান পড়বে কেমনে? বাসায় ফিরে আব্বু বলল, তোমার বিজ্ঞান পড়ার যোগ্যতা নেই, তুমি আর্টস পড়; দেখো একবারে এসএসসি পাশ করতে পর কিনা।

আমি কিছু বললাম না। তবে নবম শ্রেণী থেকে নিয়মিত সাইন্স ক্লাসে গিয়ে সাইন্সের ক্লাস করতে শুরু করলাম। কেউ বুঝতে পারল না। আমার আব্বু-আম্মাও কিছু টের পেল না। এসএসসি পরীক্ষার জন্য ফর্ম ফিল আপ করলাম সাইন্স এ - আমার ক্লাসের শিক্ষকরাও কিছু ধরতে পারল না! এসএসসি'র টেস্ট পরীক্ষায় যখন গড়ে সব সাবজেক্ট এ ৭৫% নাম্বার নিয়ে পাশ করলাম; তখন আব্বু-আম্মার কাছে ধরা পরে গেলাম। আম্মা তারাতারি করে গণিতের একজন গৃহশিক্ষক ঠিক করে দিল। এসএসসি পরীক্ষার আগে সময় আছে মাত্র তিন মাস। খেঁটেখুটে দ্রুত বেগে সাধারণ গণিত এবং ইলেক্টিভ ম্যাথস শেষ করে ফেললাম।

এসএসসি পরীক্ষার ঠিক এক মাস আগে প্রথমে হলো পক্স, তারপর হলো হাম। চোখে হাম উঠাতে এমন অবস্থা হলো যে চোখে কিছু দেখতে পারছিলাম না। ডাক্তার সম্পূর্ণ বেড-রেস্ট এ থাকতে বলল আর মাথা থেকে পরীক্ষার চিন্তা বাদ দিতে বলল। মায়ের মন আনপ্রিডেকটিবল! কোথা থেকে এক লোক ধরে বাসায় নিয়ে আসলো- সে নাকি দুই দিনেই হাম ভালো করে দিতে পারে! লোকটি আমাকে দিগম্বর করে সারা গা' জ্বিভ দিয়ে চেটে দিল। পরদিন থেকেই আমি সুস্থ্য!

পরীক্ষার আছে আর পাঁচ দিন। আমি বললাম আমি পরীক্ষা দিব! সবাই অবাক! প্রথম পরীক্ষা বাংলা। আব্বু সিক বেডে পরীক্ষার ব্যবস্থা করলো। তখনও আমি ভালো মত হাঁটতে পারি না। প্রথম পরীক্ষা দিলাম। পরীক্ষা শুরুর আধা ঘন্টা পর লিখতে শুরু করলাম। পরীক্ষা হলে আমি, আরেকটা অসুস্থ ছাত্র, একজন ডাক্তার আর একজন শিক্ষক! কোনো রকম বাংলা পরীক্ষা শেষ করলাম। বুঝলাম পাশ করব। আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেল। পরবর্তী পরীক্ষা গুলো আর সিক বেডে দিলাম না। সবার সাথে স্বাভাবিক ভাবে পরীক্ষা হলে গিয়ে একের পর এক সবগুলো পরীক্ষা দিয়ে ফেললাম। টেস্ট পরীক্ষার পর আম্মা কথা দিয়েছিল আমি যদি এসএসসি পরীক্ষায় ৮০০ নাম্বার নিয়ে পাশ করি তাহলে আমাকে একটি বাই সাইকেল কিনে দিবে। আম্মা রেজাল্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করেনি। আমি পরীক্ষা দিতে পেরেছি তাতেই আম্মা মহা খুশি। যেদিন সবগুলো পরীক্ষা শেষ হলো সেদিন বিকেলেই আমাকে একটি সোজা হ্যান্ডেলওয়ালা বাইসাইকেল কিনে দেয়া হলো।

কিছুদিন পর এসএসসি র রেজাল্ট বের হলো। আমি সাধারণ গণিত এবং ইলেক্টিভ ম্যাথস সহ চারটি সাবজেক্টএ লেটার মার্কস নিয়ে পাশ করলাম। গণিতে পেলাম ৯০% এর বেশি মার্কস। ভূগোলে লেটার পেলাম না! তবে সর্বমোট নামার পেলাম ৮০০! ঠিক কাটায় কাটায় ৮০০। এরপরে এইচএসসি'ও পাশ করলাম ভালো ভাবেই গণিত এবং পদার্থ বিজ্ঞানে লেটারসহ ষ্টার মার্কস নিয়ে পাশ করলাম; সেখানেও গণিতে পেলাম ৯০% এর উপরে নম্বর। তার পর থেকেই আমার এগিয়ে চলা। সব সময় জিলা স্কুলের ফজল স্যারের কথা মনে পরে। উনি যে বলে ছিলেন যে আমি অঙ্কে ফেইল তাই বিজ্ঞান পড়ার যোগ্যতা আমার নেই-- এ কথাটা মনে পরে। নিজের উপর বিশ্বাস থাকাটা খুবই জরুরি। ডিটারমিনেশন, কনফিডেন্স এবং সেল্ফ-বিলিফ থাকা খুবই জরুরি! অষ্টম শ্রেণীতে এগুলো আমার ছিল---- আজও আছে।

আজ আর অঙ্কে ফেইল করার ভয় নেই। বিজ্ঞানের পড়ালেখার জগতের সকল অধ্যায় পার করে ফেলেছি। তবুও এখনো অনেকটা পথ রয়ে গেছে বাকি। পেরুতে হবে নিজের জন্যই। নিজের কাছে অনেক কথা দিয়ে রেখেছি। স্বম্বল শুধু ওগুলোই: ডিটারমিনেশন, কনফিডেন্স এবং সেল্ফ-বিলিফ। কোয়ান্টাম পদার্থের অনিশ্চয়তার এই ক্ষুদ্র জীবনে আল্লাহর কাছে একটাই চাওয়া; শত সমস্যায়ও আমি যেন আমার 'স্বম্বল' গুলো হারিয়ে না ফেলি।

শেফিল্ড,
২১ অক্টোবর ২০১৫
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:০৬
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×