somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তগদ্য

২১ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ১২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





রুপকথা হয়ে ফিরে আসে লিথি




*

কবির ভাবনার বেলকুনিতে প্রতিধ্বনিত হয় লিথির কন্ঠস্বর । একটা ম্যাগপাইয়ের সুরে সুর মিলিয়ে হেঁটে হেঁটে আসে তার মনোসরণী ধরে । এরপর মনের ঘরের শুন্য স্পেসে পরিব্যপ্ত হয় । মিশে যায় তার অস্থির ভেতরের মজ্জায় ।

*

একদা এলিসিয়ামে উড়ে বেড়াতো শ্যামঘুঘু । তার পাশেই বেদে কলোনীতে ছিল লিথির বসবাস । লিথির কপোলে একটা অনাহূত নদী ছাপ রেখে যেত । কবি শুনতো লিথির জলকন্ঠ । লিথির সাজে ছিল বেদেনীর বেশ । লিথির তখন নদীগন্ধী নীল চোখ লাল । অরুণলোচনে জলপ্রহারের ব্লুজ ।

*

কালের ফাঁক গলে বয়ে যাওয়া বিস্মৃতির সেই নদীটা গড়িয়ে পড়তো রুঢ় বর্তমানে । লিথি আর নদীর প্রতি অবস্থানে থেকে যেত শুধু দুঃখবোধ, শুন্যতার বিষাদ । বিস্মৃতির পাড়ে জমে থাকতো শুধুই ধোয়াটে বিকেল, শুভ্রকাশবন, বিস্মরনের হিম নদীজল আর রাতকন্ঠে বিষাদের ছল ।

*

মাঝে মাঝে লিথি ওর ঠোঁটে আঁকতো ছলনার ট্রাপেষ্ট্রি । লিথির খোঁপায় ছিল উর্নামেঘ । মেঘবিধুর আকাশ লিথিকে নিয়ে বুনতো নকটার্ন । লিথির চোখের প্লাবনে মুছে যেত গান । ফাগুন দুপুরে লিথির ঘুমচোখে থাকতো অনন্ত শুন্যতার বিষাদ ।

*

লিথির নীরব চোখের গভীরটা ছিল জোতস্নাস্নাত ফুল, নির্জন মাঠের সবুজ ঘাসের আলোয় দ্যুতিময় । শাদা বক আকাশের নীল হাওয়ার কোলে ভাসতো নির্ভয়, তেমনি লিথির কোমল পরশে ভরে যেত কবির হৃদয় ।

*

চিত্রকর যেভাবে জলভ্রমি মেঘের প্যালেট থেকে দৃশ্যের প্রচ্ছদে মিশিয়ে নেয় কল্পনার ময়ূর আর মাছরাঙাদের সেই প্রসন্নতা নিয়ে ইথারে ভেষে আসতো লিথির নিস্যন্দ নিস্বান । আকাশের ক্রিষ্টাল নীল কিংবা পান্নার হরিত আভায় ছড়ানো প্রতিশ্রুতির মত লিথির কন্ঠস্র কবির স্বপ্নঢেউয়ে নিয়ে আসতো অথৈ প্লাবনে । ড্যাফোডিলের হলুদ হৃদয়ের উচ্ছলতা ছড়িয়ে যেত কবির চোখেমুখে । মনের ক্যানভাসে ব্রীড়াময়ী তন্বীর গোলাপী শিহরণের মত একটা উজ্জলতা ছড়িয়ে যেত । সেখানে থাকতো নৃত্যরতা স্রোতস্বিনী, রাজকীয় পাহাড় আর লগবগে কিছু সুপারী গাছ । আর থাকতো বৃষ্টি, বাতাস আর পাতাদের ক্ষণজীবী কিছু রুপকথা ।

*

লিথি হল কবির ব্যক্তিগত স্ট্রবেরি । আর স্ট্রবেরির শরীরজুড়ে ছড়িয়ে থাকে চকলেটের মিষ্টি ঘ্রান । লিথির পেলব মখমল, রৌদ্ররঙ শরীরে নিষিদ্ধ ফলের অন্ধকার ঘ্রান । লিথি চিরকাল কবির স্বত্তারই আপনজন ।

*

মাঝে মাঝে কবি নবম মেঘের মাঝে খুঁজতো লিথিকে । সফেদনীল আকাশে আলেয়ার মত উড়তো মোলায়েম তুলা কিংবা রেশমের ফেঁসো । লিথি ছিল শীতের সকালের রোদের মত মচমচে, শরতের সুর্যগন্ধি শুভ্র আকাশের মত কিংবা বসন্তশেষের বৃষ্টির মত প্রহেলিকাময় । লিথির নরম হাত ছিল কার্পাস তুলোয় বোনা ।

*

একদা লিথি ছিল কবির প্রেমবিধুর গীতিকবিতার বিষাদজাদুতে । লিথি ছিল কবির কবিতার হিমবেহালায়, সন্ধী্প্রকাশ রাগের মুর্ছনায় । জ্যোতস্না ফুল ফোটা সাদা ওয়াইনের লেকে, পাহাড় টপকে জনপদে নেমে আসা বিপন্ন সন্ধায় । লিথি ছিল কবির চোখের নয়টি বর্ষায় আর নক্ষত্র সিমেট্রিতে জন্ম নেয়া আফিমফুলে । লিথি ছিল কবির ঠোঁটে পিচলে যাওয়া অদৃশ্য আঙুলে । তখন কবি ভাসতো লিথির কথাগানে, স্বপ্নসমুদ্রে ।

*

অনেক অনেক দিন পর পানশালায় বসে কবির কল্পনার নবম মেঘে ফিরে আসে লিথি । লিথি ফিরে আসে রুপকথার কোন গান হয়ে । ধোঁয়াধুসর পানশালায় নিস্প্রভ, বিমর্ষ রাতে । ক্যাবারে গায়িকার কন্ঠে তখন অপুর্ব সেরেনেড । ভীড়ের কোলাহলে নৈশব্দ্যের আলো হয়ে নেমে আসে লিথি, বাতাসে তখন রুপকথারা ফিসফিস করে উঠে ।




প্রেরণা: নিনৈ এর লিথিকে


====================





মৃত গোলাপের শহরে


নীলা


বোদলেয়ারের ‘ক্লেদজ কুসুম’ হাতে নিয়ে কবরের মত গভীর এক পালঙ্কে শুয়েছিল নীলা । চারপাশটা গোরস্তানের মত নিশ্চুপ, নির্জন । বাতাসে বাসি বাসি ধোঁয়ার নীরস গন্ধ যেন অজশ্র বছর শুষে নেয়া ধোঁয়া খসে পড়া পলেস্তরার দেয়াল থেকে আজ উদগরিত হচ্ছে । সেলফের টবে ফুঁটে থাকা নিস্পৃহ প্লাস্টিকের ফুলে পড়েছে কয়েক পরত ধুলির আস্তরন । ভুল ফুল গুলো যেন অস্তগামী, বিবর্ন গোলাপ যার পচনের সময় আসন্ন । একটা অস্বস্তির বোধ থেকে নীলা আশপাশের রংচটা আসবাবপত্র, কয়েকরাতের শুন্যতা বুকে ধরে থাকা কিছু সিগারেটের প্যাকেটের দিকে চেয়ে দেখে । কার্পেটে জট পাকিয়ে আছে ধুলিবালি আর ময়লা । দালানের চাঁদোয়ায় বর্ষার আঁচর, টুপটুপ করছে কয়েক ফোঁটা ।



দ্বীপ

শহরের রাস্তা, গলিপথ আর ফুটপাতগুলো ঠিক আগের মতই আছে । তবুও ইটপাথরের এই খাঁচায় সব শুন্য মনে হয় । এখানে অধিকাংশ মানুয়ের জীবন পুতুলের মত, অপরাপর চাহিদা আর প্রত্যশার ব্যাপারে তারা অনুভুতিহীন । ‘যে জীবন ফড়িঙের, দোয়েলের - মানুষের সাথে তার হয়নাকো দেখা’ ।

তুষ্টির দুর্মূল্যের বাজার । প্রাপনিকের অলস সওদাকাল যাপন অনর্থে । সুখসূত্র ভুলে গ্যাছে ভদ্রলোকেরা । কারন এই শহরে ব্রোথেল গুলোতে থাকা প্রমোদকাননগুলো হয়ে গ্যাছে ফুল ও ফলহীন, উষর । মৃতগোলাপের এই শহরে মাঝরাতের পানশালায় কিছু মানুষ খুঁজে ফিরে নিরানব্বই প্রুফ হুইস্কির ‘ব্যাড রোমাঞ্চ’ । পাবফেরত মানুষগুলো পাখি ও মৌমাছিদের পদ্যকথা ভাগাড়ে ফেলে তাদের ব্যক্তিগত ঈগলনীড়ে ফেরে পরাজিত সৈনিকের বিমর্ষতা মুখে নিয়ে । গল্পের নায়ক দীপ, নীলার হাজবেন্ড, মৃত গোলাপের এই শহরে একজন পাবফেরত ভদ্রলোক ।

*

মোমবাতি ও ধুপ

জানালার ভিতর থেকে জানালার বাহিরে দেখাটা যতটা অবারিত হয় জানালার বাহিরে থেকে জানালা দিয়ে ভিতরে দেখাটা ঠিক ততটা নয় । তবে নিত্যনৈমিত্তিক সুর্যের চেয়ে মোমবাতিই আমাদের কাছে বেশি আকর্ষনীয় হয়ে উঠে । তাই নীলা মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখে আর জ্বালায় ধুপ । ধুপের রিবন ভেষে যায় আলতো সুরে । তার বরফচোখে সম্মোহনের আলোছায়া । সেখানে নৃত্যরত গোলামরিচের বর্ণবিলাস আর কয়েকটা বোতলবন্দী জোনাকি । মৃদুগন্ধ ফিরিয়ে আনে নষ্টালজিয়া, ফিরে আসে শৈশরের স্বাধীন খেলার মাঠ আর কল্পনার মেঘ-কোকিলের শহর । সেখানে একটা রাতপাখির ছানার মাতৃনীড় থেকে প্রথম আকাশে উড়ে যাওয়া দেখে মনে পড়ে প্রথম সাঁতার শেখার কথা । হঠাত বাসী ধোঁয়া আর ধুপ মিলিয়ে বিবমিষা জাগায় । মোমবাতির আলো হয়ে উঠে অশ্লিল । জঠর থেকে উড়ে আসে এক ঝাঁক প্রজাপতি ।




অমানিশা-পুর্নিমা

অথচ এমন তো হবার কথা ছিল না । এমতো নীলা কখনো চায় নি । নীলা ও দ্বীপ, একসময়ের তথাকথিত তুখর প্রেমিকযুগল । অথচ দ্বীপ আজ যেন নলাকার ব্যারেলবন্দী, নিক্ষেপন্মুখ একলা আখরোট । আর নীলা গভীর সমুদ্রদ্বীপে নিঃসঙ্গ এক লাইট হাউস । জীবনের অমানিশা সব আর কিছু দুঃখক্লেশ গ্রাস করেছে তাদের দুজনের সব পুর্নিমার আলো, থেমে গ্যাছে নতুনের স্বপ্ন দেখা । তাদের রাতের দেয়ালে স্বপ্নের রঙ হয়ে গ্যাছে খয়েরি । সম্পর্কের শরীরে ভাজ পড়েছে, গোলাপ হয়ে পড়েছে নীরক্ত । নির্লিপ্ত, হলুদাভ সময়ে মুখসের আড়ালে তাদের অতৃপ্ত জীবন আজ নগ্ন হয়ে পড়েছে ।



গোলাপঝড়


দ্বীপের চুলে বিলি কেটে দেয়ার সময় নীলার প্রজাপতির ঝলমলে ডানার মত চোখের গভিরটা কেমন নির্লিপ্ত, নিষণ্ন লাগছিল । বিষন্নপুকুরে ডুব দেয় দ্বীপ । ম্লানালোকে মুখোমুখি দু’জন । ফুঁটে উঠে পাজরের হাঁড়ে নিমীলিত গোলাপ ।

সাধারনত নীলবর্ষায় গোলাপহৃদয় বৃষ্টিপ্রবণ । হঠাত অলকমেঘ উড়ে আসে কন্টকিত গহন বনে বুকের কার্নিশে, আর মনে । মন্দানিল অভিসারে মেঘের ফেরিওয়ালারা ক্রশম বাজপাখি হয়ে উঠে । ফুল আর পাখিরা বাতাসে ছড়িয়ে দেয় গোলাপঝড়ের সতর্কসংকেত । আদ্রবাতাসের নাওয়ে অজশ্র গোলাপ জলজবিহার মেতে উঠে । বাজপাখির ডানারা ভিজে আসে । গোলাপঝড়ের চোখে প্রণয়াকুল হয়ে উঠে মেঘডম্বর রাত, পাতাদের মন্দ্রস্বর । গোলাপের কলি, পাতা আর পাপড়ি গুলো মগ্ন হয় জলকেলীতে, ডুবজলে রচিত হয় জলতৃঞ্চার পদ্য ।

ঝড় শেষে গোলাপের বিভায় আলোকিত নীলা নবম মেঘে বসে জ্যোৎস্না দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ।



মেঘ-কোকিলের শহরতলী

সুর্যপ্রয়ানের কাছাকাছি সময়ে নীলা মেঘের দ্রুততায় সাঁতরে বেড়ায় স্মৃতির সিন্ধু । সুর্যের সর্বোশেষ রশ্মিটাকে নিশ্বাষে টেনে নিয়ে কঁচি ঘাসেদের ডানায় চেপে ছুটে যেতে চায় সবুজে অবারিত প্রজাপতিগ্রামে । সেখানে একটা কুহক বাতাস বয়ে যাবে কানের কাছে দমকা হাওয়ার মত, বসন্তচিত্রে বাতাসের পায়ে থাকবে শুকনো পাতার নুপুর ।

“তুমি দেখে নিও যখন বৃষ্টি থেমে যাবে তখন আমরা ঐ আকাশের কাছে বুঝে নিব নক্ষত্রদের বিস্তারিত গোপন”

মালতীরঙের সন্ধা পেরিয়ে ভানুমতির খেলা শেষ হয়ে এলে তারা সিড়ি ভেঙে উঠে আসবে মাঝরাতের ছাদে ।

নীলা অশুভ পুষ্পের উপাসক বোদলেয়ার থেকে আবৃতি করে-

And guarding their last embers till the end,
Our hearts shall be the torches of the shrine,
And their two leaping flames shall fade and blend
In the twin mirrors of your soul and mine.


তারাদের পানে চেয়ে থাকে দ্বীপ-

“কোন তারার দিকে একনিবিষ্টে কিছুক্ষন চেয়ে থাকলে তারাটা তোমাকে আপন করে নিবে । এরপর যতই সময় অতিবাহিত হবে ততই ঐ তারা থেকে তোমার আত্মিক দুরত্ব কমে আসবে”

কপোতনিশিথের আকাশ গেয়ে যাবে ঘুমপাড়ানীর গান যতক্ষন তারারা জেগে থাকে তাদের সাথে ।

“এরপর ঐ আকাশের সুদুরে যদি আস্থাভাজন কিছুই খুঁজে না পাই, যদি মুছে যায় অতিকায় নক্ষত্ররা তবে আমরা হব কোন নবতর ধর্মের প্রবর্তক”



La Mort des Amants


পাংশু আলোর নিচে রতিবিলাসিনী এই নিশিথের শেষ দৃশ্য উপনিত হয় নীলা আর দ্বীপ । নক্ষত্ররা মুছে গ্যাছে। তাদের ঘুমন্ত করোটির ভেতরে নিরেট আঁধারে থৈ থৈ করে পঁচে যাওয়া গার্হস্থ্য জ্যোৎস্নার হেমলক, পড়ে থাকে নৃশংস ভাবে হত্যাকৃত একটা কবিতা আর ঝরে পড়ে ভুল গোলাপের সমস্ত পাপড়ি ।






===================

মুক্তগদ্যঃ অন্ধনীল গিটারমানব




১) সুর ভাঁজে অন্ধনীল গিটারমানব কঙ্কালসার ফ্রেটের প্রেতপুরীতে । নিমগ্ন দর্জির সেলাইকলের মত ঝড় তোলে সপ্রতীভ আঙুলে । আঙুলের প্রলয়নৃত্যের প্রতিটি মুদ্রা ছাপ রেখে যায় সোনালী ফ্রেমে । ফ্লেমেনকো থেকে উপচে পড়ে বিষাদ ও উচ্ছাসের মিলিত সুর ।

২)

এ অরণ্যাধিপতির বৃক্ষরাজীর প্রতি কোন নির্দেশনামা নয় । কি এক আশ্চর্য প্রণতিতে আলিঙ্গণ করে তার গিটার টাকে, যেন প্রেমিক উষ্ণ আশ্লেষে মাতোয়ারা তার কল্পনার প্রেয়সীকে নিয়ে ।

৩)
তন্তুসার আস্তিনের মত আঙুল ও ছয়টি তারে ক্ষয়ে যাওয়ার চিহ্ন । ব্যবহারজীর্ণ শার্টের মত ঠেস দিয়ে আছে দেয়ালে, একটা ছায়াস্পন্দিত জীবনের বিপরীতে ।

৪)

প্যাঁচার ডাকে, নদীজলের অস্পর্ষে বয়ে যাওয়া চাঁদ ক্রমেই নিভে আসে । বোবাপাখির ডানা আরো নীলাভ হয়ে উঠে প্যালেটনাইফের আঁচরে । সেলাইকলের একটানা শব্দোল্লাস ক্রমেই গর্জনের সুরে জন্ম দেয় সাইক্লোন-সময় । গোলচত্বর পেরুনো হাওয়ার সুরে গ্রাসের তান তোলে আঁধারের অসুর, সাইক্লোন চোখ । প্রজাপতি-ঘুড়ির উড়ালপথে একটা সরীসৃপ-ছায়া পিছলে যায় ঈশানের নক্তনীল সময়ের মেঘে । সাইক্লোনের তীব্রতা বেড়ে চলে ।


৫)

এসে ছিলো ধুলির ধুয়ো, গিটার রিফ্রেইন । উপেক্ষনের সর্বনাশে অন্ধনীল গীটার ফ্রেইট তখন ছিল ধুলিধুষর স্রংস উপত্যকা এক । গিটার কেইজের কাঠকফিনে তীব্রস্বরে চিতকারের অপেক্ষায় প্রহর গুনেছে নিঃসাড় কাঠ, ছয়টি তার আর একটা কবিতা । গোলচত্বর-বন্দী ভ্রমরসুরের খোঁজে নিস্তেজ তার রুপালী চুলে সস্নেহ হাতে বোলাতে এসেছিল হাওয়ার আঙুল । আগোচরে মাকড়শা এক কাটছিল চরকা রুপালী তারার বুননে ।

ছিন্ন তার অসুরের কায়া এক
সুরের প্রার্থনায় ঝুলে থাকে
জীবন ও মহাকাল


৬)

চন্দ্রবালিকার প্রতি অন্ধনীল কবি
আজও পাঠায় কবিতার চিঠি
শব্দে বাঁধে সেরেনেড
ঋজুকায় আঙুল যেন হায়, নমিত;
গিটারের কর্ড হয়ে অক্ষয়
ন্যুব্জ
বিস্মৃত প্রণয় ।




তৈল চিত্রঃ The Old Guitarist (1903)

চিত্রশিল্পীঃ পাবলো পিকাসো (অক্টোবর ২৬, ১৮৮১ - এপ্রিল ৮, ১৯৭৩)



==============







একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য সাইকেডেলিক প্রাতরাশ





ট্যাপের জলপতনের শব্দ প্রতিধ্বনীত হয় ফোঁটায় ফোঁটায় । বেড়ালের সতর্ক দৃষ্টিতে প্রতিটি ফোঁটার বিলিন হয়ে যাওয়ার উতসব । চোখের আইরিসে ঝিলিক দিয়ে যায় একটা বরফশীতল অর্চিরেখা । পড়ে থাকে পাইরোফিলিক দেশলাই কাঠিটার পোড়া শব ।

রৌদ্র স্যাঁকা ফুলুরী থেকে বেরিয়ে আসে একটা জাদুর ভিমরুল । কড়াইয়ের ফুটন্ত তেলে ছড়িয়ে পড়ে কল্পনার কুসুম । আমাদের ক্যাফেইন অনুভুতির মূরালে জন্ম নেয় অজশ্র দৃশ্যের সিম্ফোনি । শব্দগুলো দৃশ্যজ হয়ে উঠে, দৃশ্যগুলো স্পর্ষের । নিশ্বাসে টেনে নিই ইন্সেনিটির স্যাকারিন । মাসরুম ঢাকা আকাশের অম্লবাতাসে উড়ে রঙীন যন্ত্রদেবী । নীহারিকারা ঝরে পড়ে দোলনসমযয়ের ফাঁটল ধরে । আতাতায়ী জলে লিকুইড সোপের বুদবুদ ও কূহকধোঁয়া ।

দুধে ডোবা রুটি হয়ে থাকা ভীরুলোচনে খেলে চলে মায়া আর ছলনা । ফড়িয়ের ভ্রমডানায় চেপে প্রভাতারল্যের মাঝে কল্পভ্রমন শেষ হয়ে আসে । ভরপেট একটা ভেজিটারিয়ান প্রাতঃরাশ শেষে পিঁপড়ার ট্রেন দীপক দুপুরের পথে শস্যদানায় মুখগুজে শীতনীদ্রায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে । শেষ হয়ে আসে তেরো মিনিটের একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য সাইকেডেলিক প্রাতরাশ । তারালতার কোলে সূর্যের রৌদ্র-ঔরষে জন্ম নেয় প্রথম সকাল ।






পিঙ্ক ফ্লয়োডের একটা ইন্সট্রুমেন্টালঃ Alan's Psychedelic Breakfast




পার্ট ওয়ান

পার্ট টু


===========



গল্পকবিতাঃ বিপন্নতার আয়োজন

মেঠোপথের ঐ সুদুরে যেখানে পাস্তুরিত আকাশ আর নিয়নালো প্লাবিত এই পথের মধ্যবর্তি দূরত্ব একটা প্রশস্ত দিকবলয়, সেখানে বর্ষশেষের ধুলিময়তায় রৌদ্রে ঝিলমিল করে একটা গ্রীষ্মের সর্বোনাশ । আর দৃশ্যের ঐ দিগন্তে দুপুরের রোদ ঝরে প্রবালে শরীরে, আকাশ মিশে থাকে সমুদ্রনীলে । উড়ে বেড়ায় প্রশস্ত ডানায় একটা বিভ্রান্ত গাংচিল । অবেলার তটে প্রতিটা শঙ্খের বুকে লুকিয়ে থাকে একেকটা সমুদ্র-স্বপ্নমঞ্চ, ঢেউয়ের মাতমে প্রবাল কলোনীতে বাজে শঙ্খের জলকন্ঠ, সমুদ্র অপেরায় নাচে মারমেইড, অস্থির । তবুও ঈগলের ডাকে চলছে যেন বিপন্নতার আয়োজন । সেখানে সামুদ্রিক বাতাস আঁধারে ছড়ায় লোনা ছলনার উচ্ছাস ।


দুই প্রজন্মের পর এখানে রাস্তায় কোন মানুষের হাতে হয়তো কোন কাপড়ের ব্যাগ থাকবেনা । বাতাসে অপাপবিদ্ধ টোকাইয়ের মত নাচতে থাকবে পরিত্যক্ত কোন প্লাস্টিক ব্যাগ । শহরতলীর ফুটপাতে কোন গৃহহীন মহিলার বেশে শীতে কাঁপবে না ইশ্বর । একাকি স্টেশনটা ফিরে আসবে রুপকথা হয়ে । কংক্রিট ফুটপাতের দুপাশে ব্যাংক, ফার্মেসি, রেস্টুরেন্ট, ফাষ্টফুড স্টলগুলো নিজ নিজ জায়গা করে নিবে । বারগুলো মেতে উঠবে বারবনিতা আর জুয়াখেলা নিয়ে । সুলভে মিলবে প্লেবয় ম্যাগাজিন আর হুইস্কির পেগ । শহরের মুল চত্বরে যত দূরে চোখ যায় একটা চকচকে ফুটপাত অনিমেষ তাকিয়ে থাকে দিকবলয়ের দিকে । চার দশক আগের এক সর্বোনাশা গ্রীষ্মে শপথ আর প্রতিশ্রুতি বোঝাই একটা সি-ব্যাগ কাঁধে নিয়ে এই পথই চলে গ্যাছে একজন সৈনিক ।


এখানে শঙ্খচিলের উড়ালপথে আকাশ গলে গ্যাছে হিমাদ্রীর বুকে, সুর্যগন্ধী মেঘের নিচে নিশ্চল বাতাসে প্রতিধ্বনিত হয় সমুদ্র-কিংবদন্তি । ঐ দেখো আজ আবার, ভীষন একটা কালো আলোয় ছেয়ে গ্যাছে প্রবীন পাহাড় । আজ আবারো শপথ আর প্রতিশ্রুতি বোঝাই একটা সি-ব্যাগ কাঁধে নিয়ে একজন সৈনিক উঠে পড়েছে একটা জলপাইসবুজ বাসে । বাসটা এই পথই চলে যাবে দিকবলয়ের শেষে ঐ সমুদ্রপানে ।

==========





পাথরে থাকে না কারো অধীকার





পাথরে থাকে না কারো অধীকার, থাকেনা পাথরের নিজেরও, নয় সে কোন বাগানের স্থাবর । নিশ্চল সেই পাথরের দৃশ্যদিগন্তে রোদের ফোঁটা ক্রমশ সম্প্রসারিত হয়ে পুর্নদৈর্ঘ্য একটা আকাশ আঁকে...

আলোর কুয়াশায় ডুবে থাকে পাথর, তার আঁধারে ঘুমের আস্বাদে লালিত করোটি কোনদিন জাগবেনা আর...
সেই পাথরে করোটির পুর্ন অধীকার ঘোষনা করে সমাধীফলক...

গোধুলীর অস্পষ্ট আকাশের নিচে নিঝুম ঘুমের এই কুয়াশাপুরীতে আমি দাড়িয়ে আছি একাকি, পাথরের মত হিম চোখে নিশ্চল ও অপলক...

এখানে নেই কোন প্রার্থনার অনুরণন কিংবা বিলাপের কন্ঠস্বর, ক্ষয়ে গ্যাছে ক্রমশ স্থাবর দেয়াল । সমুদ্রের শত শত বছরের তরঙ্গরাশির অব্যক্ত উচ্ছাস নিয়ে টিকটিক শব্দে টহল দেয়া ঘড়িকাঁটাও যেন নীল নিঃসীম নিদ্রায় ডুবে গেছে...

এখানে পায়ের দাগে হয়েছে পথের শেষ, সকল পড়ন্ত রোদ অবসর গ্যাছে, বিমর্ষ খুলি হারিয়েছে দ্যুতি, শুকিয়ে গ্যাছে সবুজরক্ত আর জলপাই পাতা, শুষে নিয়ে রোদের ঘ্রান বাতাসে বাজছে হাড়ের ঐকতান ।

অস্ফুট সংকেতলিপির বন্ধাত্ব কাটে না । রক্তশুন্যতায় ভোগা মৃ্ত বৃক্ষ শাখায় আংটার নেকাবে বের হয়ে আসে একটা সন্দিগ্ধহাত, কেঁপে কেঁপে উঠে জলের অবয়বে...

কালো পালকে সজ্জিত একটা ঘোড়া স্লেজের চাকায় গতিশক্তি যোগান দিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল এখানে, জিরিয়ে নিয়েছিল কিছুক্ষন...

মুছে গেছে পুরাতন পৃথিবীর সেই সব স্পন্দন । পাথরবদ্ধ চারদেয়ালের হিমশয্যা যেন পাথুরে গ্রন্থাগার এক যেখানে প্রতিধ্বনিত হয় নৈশব্দ্য, আর সে নৈশব্দ্যের দেয়াল বেয়ে বেদীতটে নেমে আসে অবনতমুখী ফার্ন ।



====================






গোলাপীবরন গোধুলীর সীমানায় আধাঁর জেগে উঠে । ড্যান্ডিলায়ন ঘড়িটা সময় ভুলে গ্যালে রাত্রি নেমে আসে । পাখিদের কূজন থেমে আসে সাঝের বেলায়, পাখি সব ফিরে যায় আপন নীড়ে । আর আমাদের এই শহর হয়ে পড়ে সঙ্গীতহীন ।

মহুয়া গাছের বর্ষীয়ান প্যাঁচা দুটো হেঁড়ে গলায় এই শহর গ্রাসকারী ইটের কীটেদের প্রতি ছুড়ে দেয় প্রবল বিদ্রুপ । অঘ্রানের এই রাতগুলোতে লোডসেডিংয়ের সান্ধ আইন জারী হয় নিয়মমাফিক । আমাদের চোখে ঘুমেরা আরো নির্ঘুম হয়ে উঠে । শুনে যাই প্যাঁচাদুটোর সেই বিদ্রুপ সমাচার ।

এই পাথরের জঙ্গলে বন্দী কিছু ঝিঁঝি পোকা আজ হঠাত বিদ্রোহ ঘোষনা করেছে । দিনের আলোতে হলুদ পাতার নীড়ে চুপিসারে অর্কেষ্ট্রার স্কোর রচনা করেছিল আর রাতের অডিটোরিয়ামে সেই স্কোরের সাথে গানের ধুয়া তুলে কোরিওগ্রাফিতে অংশ নেয় । আধাঁরে জ্যোতস্নার যোগান দিয়ে ডুবে যায় শশী । রাতের সুনশান নিরবতায় রাতবিলাসী ঝিঁঝিরা বাজায় অপুর্ব সেরেনেড ।

ঝিঁঝি পোকারা ডাকে, থামে, আবার ডাকে । ঝিঁঝি পোকাদের সমবেত ঐকতান, শব্দমূর্ছণা ছড়িয়ে পড়ে গাঢ় হয়, জমাট বাধে অবিরাম । রাত্রি বেড়ে চলে নৈঃশব্দ্যে । গাছের কচি ডগায় শিশির সম্পৃক্ত হয় । ঝিঁঝি পোকাদের ব্যস্ততা বেড়ে গেলে নিস্তব্ধ রাত্রির নিঃসঙ্গতা প্রলম্বিত হয় ।

ক্রমেই অপসৃয়মান হয় রাতের এই কার্নিভাল । টহলদার ঝিঁঝি্রা সারা রাত নিদ্রাহীন কালক্ষয় করে ভোরের আলো ফুটে ওঠার আগেই আবার লুকিয়ে পড়ে পাতাদের আড়ালে । সাদা ডেইজির ঔরষে জন্ম হয় পাস্তুরিত সকাল ।


ঝিঝির ডাক (ইউটিউব)




============





আবার দেখা হয়ে যাবে আমাদের





রৌদ্রবিধুর সারসের ডানায় আঁধার লেপটে গ্যালে সন্ধানামে পশ্চিমাকাশে গোধুলীর লালের রক্তহীন আভায়, সন্ধী্প্রকাশ রাগের মুর্ছনায় । রাত্রি পেয়ালায় দ্বাদশী চন্দ্রমা ঢালে রুপালী জ্যোৎস্নার মদ । অন্ধকারের কারফিউ ভেঙে কাকজ্যোৎস্না-রাত গভীর হয় । সাঝঁবেলার আধাঁর সাদা আগুনে ভিজে হয়ে উঠে লালাসাগ্রস্থ, থকথকে ।


সাঝেঁর মায়ায় খোলা আকাশের নিচে কবি যখন মাউথ অর্গানের ঠোটে খুঁজে ফিরছে অ্যালুমিনিয়ামের মত চকচকে কোন রুপকথা, কবিতার পৃষ্ঠাসজ্জায় পাখির ঠোঁটে ফুটিয়ে তুলছে আফিমফুল, তখনই কবির সাথে চন্দ্রমার প্রথম দেখা । কবির প্রেমবিধুর গীতিকবিতার বিষাদজাদুতে চন্দ্রমা আচ্ছন্ন হয় যেন সন্ধাপবন নাইট্যাংগেলের সুরে বেদুইনের শ্রান্তি মুছে দিচ্ছে । বেতফল চোখে চন্দ্রমা শুনে যায় সেই পদাবলীর হিমবেহালা বাজছে ।

অবেলার তটে ঝিনুকের খোলে লুকিয়ে থাকে ডানাহীন সমুদ্র । সাগরবেলার নিশ্চল বাতাসে উড়ে নিসংঙ্গ গাঙচিল । এভাবেই প্রতিদিন শরতের আকাশ মিশে সন্ধার সাগরে । প্রতি সন্ধায় কবি বাজাত অপুর্ব সেরেনেড । চন্দ্রমা অধীর আগ্রহে শুনতো সেই প্রেমগাথা । আর সেই সাথে চন্দ্রমার অকৃপন রূপোর থালা থেকে উপচে পড়তো বাধভাঙা, প্রলেতারিয়েত জোৎস্নার প্রসাদ । কবির মাথার করোটিতে, চোখের ভিতরের শুন্যতায় ক্রমশ ছড়িয়ে যায় গার্হস্থ্য জোছনার বিষ অশরীরি অসমসিসে ।


বসন্ত আসে ভালোবাসার অভিযোজনে । কবি যখন মাঝ রাতের মেঘঢাকা আকাশের ঝিনুকখোলে খুঁজে চলে মুক্তাচাঁদ, রুপালী নখের রাত্রিদেবী তখন জ্যোছনার রঙে আকেঁ জ্যোৎস্নাফুল । জোছনার আভায় চন্দ্রমা আলিঙ্গন করে রাখে কবিকে ।

এরপর আসে কৃঞ্চপক্ষ । যেভাবে কবি আসে, কবি ফিরে যায় । আকাশের বুকে একা হয়ে পড়ে চন্দ্রমা যেন বালি উপত্যকায় পড়ে থাকা নিঃসঙ্গ উপল । আধাঁর সম্পৃক্ত বাতাসের শরীরে একে একে ঢুকে পড়া চন্দ্রালোর বিশ্বস্ত রিবনগুলো খুজে ফিরে তার কিউপিডকে । চন্দ্রমা ভুলে যায় নি তার কিউপিডকে । সাঝেঁর মায়ায় খোলা আকাশের নিচে চন্দ্রমা গড়ে তোলে স্মৃতির বেদী । জ্যোৎস্নাফুল ফোঁটা স্বপ্নীল পৃথিবী হয়ে উঠে একটা শাদা ওয়াইনের লেক।







গ্রীষ্মের কোন এক জোনাক জ্বলা সন্ধ্যায় খোলা আকাশের নিচে গ্লাস ভর্তি অন্ধকার হাতে নিয়ে বসে ছিলাম আমরা । আমাদের আলোচনাতে ছিল অন্ধকারে ঘাপটি মেরে বসে থাকা সপ্তর্শির কিছু নির্বাক প্রশ্ন । আমাদের মাঝরাতের সেই পানশালায় মদের গ্লাসে ছিল শুন্যতা আর কন্ঠ নিষাদে ছিল কিছু মনোটোনাস মনোলগ । এক পেগ মদের গ্লাসে ভিড় করে পৃথিবী সমস্ত জ্ঞান, সাইকোলজি আর অ্যাস্ট্রোনমি । পৃথিবীর সমস্ত নির্যাস সমভাবে সঞ্চয় করে অদৃশ্য বশ্মিগুলো নৃত্যরত হয় সর্পিল গতিপথে ।


জ্যোৎস্নাফুলে সাজানো ওয়াইন লেকের পাড়ে
রাত্রি পেয়ালায় দিয়েছি চুমুক
আমি আর আমার ছায়াশরীর এবং চাঁদ
আমরা পরিযায়ী তিনজন

বরফকুচির ব্যকরন মেনে আঁধারের পেয়ালায়
ডুবেছে গোলাকার স্নোবল

টকটকে গোলাপী চোখে ফুটেছে আফিমফুল
আমি বিহবল, ছায়া টলমল আর
চাঁদ যেন সাদাহাঁড় চিজবল
চিয়ার্স ।

পরিযায়ী পাখিরা ঘরে ফিরে গেলে,
তারার আলোর দুধালো বৃত্তপথে
আবার দেখা হয়ে যাবে আমাদের ।






=============


মেঘ দেখা




০০

মেঘ যেন রুপকথার কোন চরিত্র, প্রয়োজনে নিজের আকার বদলে ফেলে । মাঝে মাঝে মেঘগুলোকে মনে হয় আকাশের বিশাল শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কনফেশনারীতে সাজানো স্পঞ্জী মিঠাই । সাদা পোষাকে সাজান বরফগুলো কখনোবা পরীদের ছায়াশরীর, থোকায় থোকায় ভাষমান উড়ন্ত ছেড়াপালক । আকাশ হয়ে উঠে পরীদের পালকে সাজানো ফ্রোজেন ডেজার্ট, আইসক্রিমের সাম্রাজ্য ।

০১

ডেনিম ব্লু আকাশের শেষ বিকেলে মেঘ জমতে থাকে যেন পয়স্বীনি গাভীরা নীড়ে ফিরে আসে পানিপানের নিমিত্তে । কামরাঙা লাল মেঘ সাঁতরে অন্ধকারের নীড়ে ফেরে সাদা বক আর মাছরাঙ্গা । জলপূর্ণা মেঘেরা উষর মাটির বুকে ফিরিয়ে আনে যৌবনের উদ্দিপনা । ফুল, ফল আর ফসলে পৃথিবীতে আসে পুর্নতা ।

০২

কিছু মেঘ ফিরিয়ে আনে নবম মেঘে কাটিয়ে দেয়া শৈশবের চকচকে স্মৃতিগুলো । বাতাসের চিলেকোঠায় উড়ে মেঘেদের পপকর্ন । মেঘেদের স্কুলে ফিরে পাই নষ্টালজিক এক খেলার মাঠ । স্মৃতির নদী্র ওপাড়ে আশ্রয় নেয় শুভ্রমেঘ, অতপর ভোরের আকাশের কার্টিলজে ফুটে থাকে সাদা কাঁশফুল ।

০৩

কখনো স্ট্রাটোস্ফিয়ারের ব্যালকুনিতে ঝুলে আছে সাদা বিকিনি, কখনো বা কিউপিডের হৃদস্পন্দন হয়ে আয়নোস্ফিয়ারে আনে আলোড়ন । স্নানঘরে মেঘরাণীর সাদাচুল যেন ডুবে আছে বাথটাবের সাবানফেনায়, ড্রেসিং রুমের পাউডার পাফের আলতো পরশে সজ্জিত হয়ে গ্রীনরুমে ঢুকে পড়ে কালোচুলে । পরের দৃশ্যে আকাশের সাব ওয়েতে উড়তে থাকে মারিলিন মনোরোর উত্তাল স্কার্ট ।

০৪

আবার মাঝে মাঝে মেঘে মাথা গুজে স্তব্ধ দাড়িয়ে থাকা নির্জন বৃক্ষ মনে হয় নিজেকে । আকাশের অসুখগুলো ধারন করে তখন মেঘগুলো দুর্বোধ্য, অন্ধতমস । মনখারাপের মেঘের খামে বন্দী হয় চাঁদ । গম্বুজের মত ভাবগম্ভীর কিছু ভয়ঙ্কর মেঘ আকাশ কালো করে দেয় ঝড়সংকেত । এরপর আকাশ কাঁদে অভিমানী মেয়ের মত ।

০৫

কিছু স্তরীভুত মেঘ আকাশের নীল রঙের রঙিন ডাইনিং স্পেসে পড়ে থাকে, উচ্ছিষ্ট খাবারের মত । তখন মনে হয় নোংরা নীল টেবিল ক্লথের একপাশে পড়ে থাকা সুর্যটাই যেন আমার খাবার শুন্য প্লেট ।


০৬


রাতের আঁধারে তারাদের ফিসফিস বরফের গিরিখাদের চোরাবালিতে আটকে পড়ে আলো হয়ে । জাদুকরের জলপূর্ণা পাথরের ঘর্ষনে একটা আগুনরঙা রিবন মুহুর্তেই আকাশব্যাপি ছড়িয়ে পড়ে, অদৃশ্য হয় আধাঁরে আড়াআড়ি । কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মার্চপাস্টে ব্যস্ত হলে উঠে মেঘসেনারা । বাজছে ডমরু, কান পেতে শুনি উন্মক্ত রণসঙ্গীত । তীক্ষ্ণ দাঁতের আচঁরে বাতাসের বুকে লিখে চলে ক্রোধের গ্রাফিটিগুলো, লিখে রাখে তার মনখারাপের রোজনামচা । রাত্রিদৃশ্যে ছড়িয়ে পড়ে নৈশব্দ্যের ধ্বংসাত্বক অনুনাদ ।

০৭


কৃষ্ণমেঘ কেটে গেলে পাস্তুরিত সাদা মেঘপুঞ্জ দেখে মনে শব্দহীন আকাশ সাদা ম্যাগনোলিয়ার বিভায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠছে । মেঘের আড়ালে হাস্যজ্জল সুর্য আর মেঘ গুলো হয়ে উঠে সানবাথে ব্যস্ত জলনকুল । এরপর ক্রমেই ফিরোজা রঙ ধারন করা আকাশের প্যানোরামায় পরিচলনশীল মেঘ গুলো হারিয়ে যায় ঐ আকাশেরই অসীমে ।






ব্লগার সরলতার পোষ্টে কমেন্ট কৃত ও পরিমার্জিত ।

===


গতকাল রাতের স্ক্রিবল



০১


চোখের পাঁপড়িতে একরোখা রোদের ছায়ায়
ক্ষুধিত একপাল চিলের সক্রিয় ভীড়, ফসলের
ঘুমোৎসবে ইদুরের কঁচি দাঁত হয়ে উঠে আরো
ধারালো, অথচ মরফিয়াস ছিল উৎকন্ঠাহীন ।
আটপৌরে ডানায় ভাসমান ঝুলের মত আকাশ
অন্ধকার সমতলে ঝুলে আছে নিস্তরঙ্গ রাত ।

টকটকে আফিম ফুলের মতো গোলাপী চোখ, তার
জ্যোতির্বলয়ে ছিল ভ্রাম্যমান কালো রোদের উৎসব ।
অরফিয়াসের মৃত্যুতে হাসনাহেনার ঝোপে নিঃশ্বাস ফেলে
সরীসৃপ, আধাঁরে কুশন পেতে দেখি রাতের দেয়ালে
গোলামরিচের বর্ণবিলাস । উইপোকাগুলো বীরদর্পে
চামড়ার দেয়াল পেরিয়ে গোগ্রাসে গিলেছে মজ্জাস্থি ।
দুধে ভেজা রুটি হয়ে থাকা দুর্বলচিত্তের অরুণলোচনে
খেলেছে ছলনা আর প্রবঞ্চনা । পাতামোড়ানো পোকা
সবুজ খেয়ে ফেললে পাতা গুলোকে দেখে মনে হয়
শরীরে এইমাত্র ধ্বংসলীলা চালিয়েছে বিনাশি দাবানল ।
চোখের নদীর শুকনো মোহনায় কাতরাতে কাতরাতে
নিস্পৃহ সময়ক্ষেপনে কামনা করেছি সাগরের গর্জন ।


০২

স্রোতের প্রতিকুলে পানির সারফেসে জলপোকারা অদৃশ্য
পদ সঞ্চালনে ক্রমাগত স্ট্রাগল করে জীবনের প্রয়োজনে,
চোখে ঐপাড়ের হাতছানি; মাছরাঙার উৎসুক চোখে ফাকি
ঈষৎ ডুবে গিয়ে আবার ভেসে উঠলে জল টলমল করে
ক্ষুদ্র শরীর, অন্তত শ্যাওলা বা কচুরীপানার উদ্দেশ্যহীনতা
কিংবা আধশুকনো পাতার নৌকার মত বিচ্ছিন্নতা বোধে
তারা আক্রান্ত নয় ।

০৩

লালরং কলমের আঘাতে কবিতার রাফ খাতা মদ্যপের
নাকের ডগার মত ফুলে লালচে মোটাসোটা হয়ে উঠে;
স্ক্রিবলে ভরা নোটবুকের আয়তন বেড়ে চলে, ক্রমেই
ভেঙ্গে চুরমার প্রাগৈতিহাসিক পাহাড়ের মেগালিথ, বুকের
দর্পণে সুরক্ষিত স্বপ্ন গুলো রক্তাধিক্য হয়ে প্রতিফলিত হয়
ব্যাকব্রাস করা একজন মায়াকভস্কির চোখের আরশিতে

পূর্বপুরুষের আত্মা লুসিফারের সুদৃষ্টিতে ক্যাটারপিলার থেকে
হয়ে যায় প্রজাপতি, সংবিধান বাতিল ঘোষনায় প্রজাপতির
দুই পাখায় বসিয়ে দিই দুইটি ত্রিভুজ । চেতনার সিটিস্কেপে
ছেড়ে দেই একদল হিংশ্র বুনো বাইসন । করোভা মিল্কবারে
বসে পান করি মিল্কশেক । স্বচ্ছন্দে ঘুর্নয়মান কমলার
নৈসর্গ্যিক রূপ অবলোকনকালে সাবার করি পুরো পপকর্ন
প্যাকেট । মনের ঘরে তখন পরিস্রুত জোৎস্নার বিষের
অশরীরী অসমোসিস । চোখের গরল বোধ অনুভুতির দৃশ্যজুড়ে,
অ্যাড্রিনাল গ্লান্ডের হরমোন রক্তের বিপিএম বাড়িয়ে
দ্রোহী মনের ঝিনুক ভরা নির্জন বালিয়াড়িতে আছড়ে ফেলে
বেলোর্মির উৎরোল, নিস্তব্ধ জলরাশির স্বরলিপিতে লাটিমের মতো
ঘুরতে থাকে সুনামির ভয়াতুর চোখ ।

ইদানিং, কালো গোলাপের প্রতিটি ফোটা ফুল
আমাকে প্রবল কেওটিক ব্লিসে আপ্লুত করে ।








(৩/৪/১১)


=====








স্ক্রিবল-২






লাল আলোর শহরে বাতাসে মিশে থাকা হলুদ সিম্ফোনি রাতের উৎসব ভেঙ্গে ক্লান্ত শিশিরের সাথে বিলীয়মান হয় । জাহাজহীন বন্দরে ঊষাদেবীর রথ পৃথিবীতে নেমে এলে সোনালীশিখা নোঙর ফেলে তটরেখায় । নীল জলের অতলান্ত জলছবিতে কিশোরীর আকাশী ফ্রক আর লাল সুর্যের বল মিশে একাকার, ভাঙ্গে টলোমলো ঢেউজল, গড়েও আবার । ঢেউ আর বালির লুকোচুরি খেলা রেখে যায় রেখাচিত্রছাপ ।

বাত্যা বিক্ষুব্ধ সাগরে উতরোল করে বেলোর্মি ভীষণ, তরঙ্গেফেনা ফানেল উপচে আছড়ে পড়ে তীরে, নেশার লাটিমে ধরে ঝিম । যেন মৃত্যু আসে কুঞ্জকুটিরের অবকাশে, ক্ষুদার্থ বাজপাখির পিঞ্জর চিরে জলন্ত আলোকাগুন নিয়ে, উজ্জ্বল মেরুন দুপুররোদের নীরব বিভ্রমে, কিংবা আকাশের ঘননীলপ্রপাত থেকে নেমে আসে আধাঁরের প্রসবণ ভীষণ নি:শব্দে । যেন প্রবল ঝড়ে কালো মেঘে মাথা গুজে স্তব্ধ দাড়িয়ে আছে নির্জন বৃক্ষ । যেন কুণ্ডলী পাকিয়ে, পৃষ্ঠদেশে ভর দিয়ে, পুর্ন বিকশিত হুল উচিয়ে, মৃত পড়ে আছে মধুকর । বিমর্ষ বিড়াল শুঁকে মৃত্যুগন্ধ ।

একটা কাঠ ঠোকরা অবিরাম পোরসেলিন ঠোঁট ঠুকে মাথার খুলিতে গর্ত খুঁড়ে চলেছে, চোখের কোঠরে প্রতিস্থাপিত অর্বাচীন মাকড়শার বরফচোখ যেন প্রবাহহীন নিরুত্তাপ মেঘক্রিষ্টাল । সেই চোখের কোঠরে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে যায় করোটির গাঢ় আঁধার । পায়ের নিচের মেঝের আবর্তনে ক্যাফেইন গ্রস্থ অনুভুতি গুলো উড়াল পথে মিশে যায় দালানের চাঁদোয়ায় । ছায়াছায়া ঘুলঘুলিতে গোলমরিচের বর্ণবলয় । যেন বর্ণবলয়ের ষড়ভুজ কক্ষের মৌচাকে নাচছে মৌমাছি ।

শুন্যের নদীতে নীল বাতাসের প্রবাহ ছড়িয়ে দেয় পরিজাতের বিষাদী মৌতাত, হাতের তালুতে পানির বেগে বয়ে যাওয়া সময়ের ঘুর্ণি-জল রেখে যায় মৃগতৃষ্ণা । জলের হৃদয়ে দেখি ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদ আর আমার অস্থির প্রতিবিম্ব । ধমনীর জ্বলানী পুড়িয়ে হিম বরফের জমাট আধাঁরে মৃত সবুজ ফুসফুস । আর আঁধারের অপর পাশে রাতের জোৎস্নাফুলে সাজানো পৃথিবী্র বাগানে উৎসবে মেতেছে ছয়শত ছেষট্টিটি জোনাকির আলো-লুসিফারিন ।

সুদৃশ্য ডাইনিং টেবিলে অযতনে পড়ে থাকা একটা আপেলের অবয়ব পচে গলে যায় । অবসাদে মিশে যাচ্ছে, ঘনঘোর কুয়াশার দেহ ফুড়ে ধুঁয়াধারে মিশে থাকা অবসাদগুলোর মত রাতের কাছে আত্মসমর্পন করে । আসন্ন গোলাপ ঝড়ের সতর্ক সংকেত নামিয়ে ফেলে শুকিয়ে যাওয়া গোলাপের মত কুঁকড়ে আসে অনুভুতিগুলো । জঠর থেকে উড়ে যায় এক ঝাঁক প্রজাপতি, পাখি ও মৌমাছিদের পদ্যকথা ভাগাড়ে পড়ে থাকে, মাথার ভিতর ঘুম মানিপ্লান্ট হয়ে করোটির দেয়াল বেয়ে আকর্শির মত পাড়ি দেয় আঁধার পথ ।




========

স্ক্রিবল-৩







পাখির ঠোঁটের সত্তর ডিগ্রি হেলানে কবিতার খাতায় লিখে রাখছি অবচেতন সমুদ্রসাতার আর ফ্রয়ডিয়ান আবহাওয়াবিদ্যা সংক্রান্ত কিছু পরিসংখ্যান ।


আয়নার অবতলে প্রতিফলিত রৌদ্রত্তাপের বিচ্ছুরন স্বেদ জমতে থাকে কবিতার ক্ষেত্রফলে । শব্দগুলো যদিও ডানা ভাঙ্গা কবুতরের মত, ঝর্নাকলম রক্তশুন্যতায় ভুগছে, ধারহীন শুষ্ক যেন গ্লাডিওলাসের পাপড়ি । তিনশত ষাট ডিগ্রি পেরিয়ে স্পর্ষক বরাবর ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে পড়ে সাইক্লোন চোখে ।


কমলালেবুর মত রোদ ফুলের সৌরভ ছড়ায় আলোর ফাল্গুনে । সুর্য অবয়বে মেলানিন বেড়ে গ্যালে হিমরোদের ভেতর বৈঠা চালিয়ে ক্রমশ জলের ভেতর ঢুকে পড়ে একটা জলপাই সবুজ কাছিম । জলের গভীরে আরো জলে যেখানে কলমিলতার বেয়ে যাওয়া ছন্দনাচে জুড়ে বসে আছে নুয়ে পড়ার বিষাদ সেখানে সুর্য ডুবে যায় পানকৌড়ির কুশলতায় । তরমুজ মদের পেয়ালায় ঘুমিয়ে পড়ে সুর্য ।


মানবিক গ্রিনরুমে বসে হাঙরের চোখের আলোয় মেপে চলেছি সবুজ আধাঁরের পুরুত্ব । নীল সমুদ্রের রুপালী বালুকাবেলায় খুঁজছি ঝিনুকসুপ্ত নির্জ্ঞান । প্রবাল কলোনীতে শুনি বাজছে শঙ্খ, সমুদ্র নিঃশ্বাষে বিষাদপাখির সুর ।


পোরসেলিন পুতুল আয়নাঘরের নিয়ন-জ্যোৎস্নায় খুঁজে নেয় উষ্ণতার সংকেত । সেখানে ফ্লোরোসেন্ট আলোর তেইশ ওয়াট উষ্ণতায় হাওয়াকলের ঘূর্ণাবর্তে উড়ে রমনীয় ওরনা । সেখানে মাছিদের ডাইনিং স্পেসে টেবিলের পরিধী বরাবর ক্রমঘুর্নয়মান পৃথিবীর বিষন্নতম সরীসৃপ । সেখানে আপেলের ভুগোলে লেপটে থাকে জলতৃষ্ণার পদ্য ।


পুড়ে যায় যৌবনবতী চাঁদ মেঘপাখির নকটার্নে, কামনার মরুভুমে নামে বৃষ্টি । মসলিন বাতাসের শুন্যতার শরীর বেয়ে ঝরে পড়া বৃষ্টির ফোঁটাগুলো ঘুমন্ত শহরে নেয় দালান ভাঙার ইজারা ।


এক নক্ষত্রের সমস্ত আলোর বিনিময়ে কিনেছি একহাজার মিলিগ্রাম ঘুম । অথচ আমার নখের ভিতরে ঘুমন্ত কাচঁপোকারা আজ আধাঁরের গন্ধ শুঁকে জেগে উঠেছে । অজশ্র লাল সবুজ কাচঁপোকা উড়ছে নখের উত্তল আকাশের অসীম শুন্যতায় ।


রাতের তারাদের পালাবদলে চোখের দৃশ্যে কালের দীর্ঘায়ন । কর্নিয়ার অমাবশ্যায় ডুবে যায়, যাচ্ছে বুড়িঁচাঁদ ।




=================




=======




মুনলাইট সোনাটা








সুর্যদয় দেখবে বলে নির্ঘুম চাঁদ বরফকুচির মত গলে যায় পিয়ানোর রীডে, ফোটে জ্যোৎস্নাফুল । মনের ঘরে অদ্ভুত সেই ঘ্রানসুর ছড়িয়ে যায় অশরীরি অসমোসিসে । রুপালী জ্যোৎস্না জলগতিতে বয়ে যায় চাঁদের ভেলায় ।



পিয়ানোর রীডে ভীড় করে গুটিকয় ঘরছাড়া মেঘদল, মেঘের বরফঘর যেন বিষাদের অর্কেষ্ট্রা, পুষ্পভুক শবেদের ঘুমঘর । পলাতক বাতাসের প্রতিটি কোষের শুন্যতাকে গ্রাস করে বিষাদ সিম্ফোনি । বিষাদসওয়ারী পাখি নীড়ে ফিরে, সন্ধ্যার গহবরে । গোধুলী মেঘে ক্ষত খুঁড়ে চলে আঙুল ।



ধুসর মেঘমালা পিছনে ফেলে ধুলিমাখা পথ বারে বারে হেঁটে হেঁটে চলে আসে দুই পাহাডের শেষপ্রান্তে, শহরতলীতে ।

এইখানে নষ্টালজিয়ার সিলিন্ডারে জ্বালানী যোগায় ফুটপাতের ধোঁয়া ধুসর চায়ের দোকান । এইখানে ফোরস্ট্রোক মাজদার চাকার প্যারিফেরি ধরে ঘুর্নয়মান আমাদের কেন্দ্রবিমুখী অনুভুতিগুলোর আর্তনাদ ক্যাকোফনি হয়ে মিইয়ে যায় গাড়ির হর্নের শব্দসমুদ্রে । মৃত জোনাকীর এই নিয়োলিথিক্যাল শহরে নিয়ন আলোর কাঁচের ক্যাপসুল গুলোর বুকের হাঁপরে অন্ধকারের সাজে সাজে আমাদের মৃতপ্রায় প্রবৃত্তিগুলোর গ্রিনরুম ।



শববাহক স্কুলব্যাগে বয়ে আনে বেয়াড়া অন্ধকার, বৃষ্টিস্নাত সমাধীতে । খরগোস কলোনীতে বাজছে আইরিশ মেলোডি । কফিনের পেরেকগুলোতে মরিচা পড়েছে, পচে যাওয়া মাংস শাদা কাফন ভেদ করে উড়ে গিয়েছে কসমিক ডাষ্ট হয়ে । মুখ ফুড়ে বেরিয়ে এসেছে করোটির চেসিস । আঁধারঘরের প্রতিপৃথিবীতে অনস্তিত্বের শংকায় আঁতকে উঠে বিষন্ন বিড়াল । মেফিস্টোফেলিসের ছলনায় যেন হার মেনেছে ফাউষ্টের আত্মা ।



সুঘ্রান শাদা বিন্দুকনায় বাবুইঠোঁট বুনে কুয়াশা, বিষন্ন দরজির সেলাইকলে উঠে তুষারঝড় । ঝড় থেকে গেলে উইন্ডচাইমের টুংটাংয়ে ত্রস্ত হরিন শাবক খুঁজে নেয় বিপদসংকেত । সমুদ্রের স্ফিত পেটে সাইন কার্ভের উন্মাদনা বেড়ে যায় জ্যামিতিক হারে । অশ্বত্থের চুড়ায় রৌদ্রনিনাদে অস্থির শকুনের নখর ।



অতপরঃ একটা সুখী তিতিরের চোখের ভিতর কেঁদে উঠে একটা নদী । অপার ভালোবাসায় বৃষ্টির ছোট্ট ছোট্ট জলকণাদের আলিঙ্গন করে নেয় সেই নদীজল । ঝিনুকের মত নিরব হয়ে আসে নিষন্ন পৃথিবী ।








----


সোনাটা অর্থ একক বাদ্যযন্ত্রের জন্য ধ্রুপদী কম্পোজিশন । বিটোফেন পিয়ানোয় 'পিয়ানো সোনাটা নং ফোরটিন ইন সি সার্প মাইনর' নামে একটি কম্পোজিশন করেছিলেন । যা কোয়াসি ইনা ফানটাসিয়া নামে পরিচিত। এটিই মুনলাইট সোনাটা নামে পরিচিত। মুনলাইট সোনাটা জার্মান সুরকার ও পিয়ানোবাদক বেইটোভেনের সবচেয়ে জনপ্রিয় পিয়ানো সোনাটাঃ

ইউটিউব ডাউনলোড




অদ্ভুত সুন্দর কিছু পিয়ান ওয়ার্কঃ

শ্যাঁপার 'নকটার্ন' ইউটিউব ডাউনলোড

শ্যাঁপার 'প্রিলুড' ইউটিউব ডাউনলোড

মাইকেল নিইম্যানের 'হার্ট অ্যাস্ক প্লেজার ফার্ষ্ট' ইউটিউব ডাউনলোড

ইয়ান টিয়ারসেনের 'অ্যাই স ড্যাডি টুডে' ইউটিউব ডাউনলোড




=========


দেখে যাচ্ছি এইসব, নক্ষত্রবিথীতলে



একশ, দুইশো, তিনশো করে আসে আলোকিত রাতপাখি । ব‍সন্তের শেষে কামরাঙা গাছের নিচে, কামিনীফুলের-ঝাড়ের নিকশ কালো আঁধার অজুত জোনাক পোকায় ডুবে যায় । থোকা থোকা নীলাভসবুজ আলোর ঢেউয়ের নাচনে ঝিলমিল করে উঠে রাতের কার্নিভাল । ছোট ছোট আলোর লাইটেনিং বাগ যেন রাতের আঁধারের ক্যানভাসে ঝিকিমিকি করা অগুনতি তারা । অন্ধকার আলো হারায় জোনাকীরা ঘুমিয়ে পড়লে । লুব্ধকের আলোয় পথ চিনে নিয়ে চাঁদের ভেলা পৌছে যায় নক্ষত্রবিথীতলে, খেলায় মাতে শ্বেতভালুক সাতটি তারার সাথে ।

ঘাসফড়িঙের প্রার্থনায় কেটে যায় পৃথিবীর হিমঘুম, ঘাসের ফালিতে ঘাসপাখিরা সাজায় সুদৃশ্য সংসার । কোন এক বর্ষীয়ান মায়েস্ত্রোর অদৃশ্য সুতার টানে ক্রিয়াশীল হয় চৌকষ দৃষ্টিতীরের প্রজাপতি । আলোর সুতো বেয়ে সৌরচিত্রে ক্রমশ প্রবেশ করে একটা গিরগিটি, গোলাপী আভার সুঁচে বিদ্ধ হয়ে সৌরপল্লি । হিলিয়াম শৈত্যের মাঝে সৃষ্টি হয় কলঙ্ক ।

মহাসমুদ্রের শত বছরের কল্লোল কিংবা অনুচ্চার তরঙ্গনিশান মেঘের ডানায় ছড়িয়ে পড়ে দুধালো বৃত্তপথে, আহতদৃশ্যে আইসিসের চোখে নীল নদের প্লাবন, জলের বুকে ফ্লাশ লাইট কেঁপে কেঁপে উঠে, নীলতিমির তলপেট শত শত আউন্স জলের ভর মেপে চলে, নিঃসঙ্গ পেলিক্যানের ঠোঁট রক্তকালীতে বালুকাবেলায় এইসব লিখে রাখে ।

লালকাঁকড়ার ঝোপে সূর্য ডুবে গেলে নীল জলের বসন্ত ফুরিয়ে যায় । নিম্ফোমেনিয়াক ইগলের নখরের আঁচরে মরে গ্যাছে পেলিক্যান । চেতনার ল্যান্ড স্কেপে ছেড়ে দেয়া একদল বুনো বাইসন ক্ষিপ্র হয়ে উঠে । পৃথিবীর পোরসেলিন পেয়ালায় গলে যায় মানব জাতি, ফায়ারপ্লেসে জলে না কোন চন্দনকাঠ । আহত রাত্রির বাতাস নিভিয়ে দেয় অশ্লীলভাবে জ্বলতে থাকা মোমের আলো, জীবনজ্বালানী ফুরিয়ে আলোহীন নক্ষত্রের মৃতদেহ । শামাপোকারাও বেচে নেই । পথিক তাই আজ পথ হারা ।

পরিত্যক্ত মেইলবক্সে খুঁজছি প্রজাপতির ফসিল আর বোতল বন্দী জোনাকি । দেখে যাচ্ছি এইসব, নক্ষত্রবিথীতলে ।



=============



বৃষ্টি





মেঘমেদুর আকাশ বিষাদভারাতুর, থমথমে । সুর্যাস্তে পেঁজা পেঁজা মেঘগুলো দুর্বোধ্য, অন্ধতমস । হঠাৎ মনে হয় উন্মক্ত মেঘগুলো যেন ডাকিনির যাদুপাত্রে ফুটন্ত ম্যাগমা, এখুনি ডাকীনি তার তরল গোলা বিস্ফোরন ঘটাবে । খানিকপরে রুপ বদলে কিছুটা ছাইরঙা, ধোঁয়েটে আর অনুজ্জল । গাঢ়রং মুছে গেলেও প্রলম্বিত হয় নির্লিপ্ত বৃষ্টিসময় ।

মেঘ ভেঙ্গে বৃষ্টি পড়ে, ফোঁটা ফোঁটা মুক্তদানায় । আছড়ে পড়ে পৃথিবীর বুকে, রাস্তায় । যেন প্যারাট্রুপাররা অবতরন করছে প্যারাসুটে ভেষে ভেষে, অতপর তরলসেনারা রাস্তারবুকে মার্চপাষ্ট করছে। তারপর, উল্লাসে ফেঁটে পড়ে, গলে যাচ্ছে সাবলীল । নিজেকে বিলিয়ে ধ্বংস হওয়ার মাঝে বোধহয় একপ্রকার প্রবল কেওটিক ব্লিস কাজ করে ।

জানালার কাঁচে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়ে, অশ্রুফোঁটার মত । কাঁচের ওপর জলের গতি রেখে যায় রেখাচিত্রছাপ । কাঁচের দেয়ালে বৃষ্টিরেখার গ্রাফিটিগুলো যেন জেগে উঠা ছোট ছোট নদী । ক্রমেই ব্লার হয়ে আসে বাহিরের জগতটা । জানালার শার্সিতে নিয়ন সাইনগুলো অপার্থিব হয়ে ধরা দেয়, যেন ঘোলাটে কাঁচে জমতে থাকে স্বপ্নচূর্ণ হয়ে । খোলা শার্সিতে জমে থাকে আকাশ থেকে নেমে আসা ইশ্বরের অশ্রু, একসময় গড়িয়ে পড়ে দেয়ালে বেয়ে, যেন সর্পিলপথে লেখাপথে লিখে চলে তার অন্তহীন বিষাদের স্ক্রিবল ।

বৃষ্টির রিনিঝিনি শব্দ আমাকে প্রচন্ড আলোড়িত করে ঠিক গাছের পাতার আড়ালে আশ্রয় নেয়া পাখিটার মত; পালক নাড়ছে পরম আনন্দে, নিরাপত্তা বোধে; গাছের পাতা তাই পাখিদের জন্য হয়ে উঠে আর্শিবাদপুষ্ট এক বৈঠকখানা বা আশ্রয়স্থান উঠে । কিংবা আকাশ থেকে যেন ভুমিতে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে ছোট্ ছোট মিসাইল, তাদের থেকে রক্ষা পেতে শুকনো, নিরাপদ স্থানের খোঁজে পাঁই পাঁই করে ছোটা ছোট্ট কাঠবিড়ালীটার মত ।

বৃষ্টি পড়ে অবিচ্ছিন্ন, আকাশের কান্নায় । বৃষ্টি পড়ে বিরামহীন, অঝোর ধারায় । বৃষ্টি পড়ে অবিরত, স্মৃতির জানালায় । বৃষ্টি পড়ে নিয়মমেনে ফোঁটায় ফোঁটায়, বিষণ্ন সন্ধ্যায় ।

বৃষ্টি শেষে গাছের পাতায় ধ্যানমগ্ন হয় বৃষ্টির ফোঁটারা । আর আমি বৃষ্টিনাট্যমঞ্চে দেখছি পৃথিবীর কত রং ।




==============

চন্দ্রবালিকাকে শেষ চিঠি





চন্দ্রবালিকা, আঁধারে চোখ মেলে দেখো । চেয়েছিলাম জলপাই পাতার মুকুট । অথচ রোদে পুড়ে যাওয়া চেতনার জগতে আজ নিয়ত সংকোচন, করোটির ভেতরে থইথই করে পঁচে যাওয়া জ্যোৎস্নার হেমলক । অথচ, রজনীগন্ধা রাতে আকাশের কপোল চন্দ্রাতপে রুপালি করে চেয়েছিলাম মেঘগুলো নির্বাসিত হোক ।

আজ আমার শিরার ভিতর রক্ত জমাটবাধা, শীতল বরফের মতো চুপচাপ । শ্রবণ জুড়ে বাজেনা বীণা, ভোরের পাখিরা ভাঙ্গায় না তন্দ্রা, দেওয়ালঘড়ি থেমে গেছে অন্তিম নিয়তিতে । জলের স্বেচ্ছাচারী কল্লোলের সন্ত্রাসে বেঁচে নেই শামুকগুলো সমুদ্র অতলে, ধূসর কোন বেবিলনের হৃদয়ে গাঁথা শঙ্খমালা আজ ঘাসেদের চাদর পেরিয়ে নির্জন আকাশের সমসত্ত্ব অন্ধকারে নির্বাসিত । মৃত নগরীতে আজ মায়াহীন সোডিয়ামের আস্ফালন । অশ্বথের তলায় পড়ে আছে নৃশংস ভাবে হত্যাকৃত কবিতা । মৃত গোলাপের শহরে দৃশ্যের পট জুড়ে আছে চির বৈশ্বিক আঁধার ।

ধুসর মেঘের চাদর জড়িয়ে বিশাল আকাশটা আজ অস্পৃশ্য । আজ কোন অধিকার নেই, আর কোন দাবী নেই । বৃষ্টি যেন সাদা কাফনের বিবর্ন ক্যানভাসের জলরঙ । ভেঙ্গে গেছে ক্লান্ত বিকেলের কাঁচের ঘর । অশ্বত্থের প্রাচীন বিবর্ণ বুকের পিঞ্জিরে রজনীগন্ধারা রাতের নির্লিপ্ততায় হানা দেয়, গোলাপের অভিমানে অজানা শিহরণের কাপঁন । পিঞ্জর ছেড়ে পশ্চিমের মেঘে উড়ে গেছে পাখি সন্ধ্যার গহবরে। ঝরে পড়েছে গোলাপের পাপড়ি গুলো বিক্ষুদ্ধ সমীরণে ।

সন্ধার পর্দা নেমেছে গোধুলির লালিমার মরুপথে ক্যাকটাসের কান্না শুনে । জোনাকি হারিয়েছে আবাস নিশুতির আধারে । ছায়াছায়া, ভেজাভেজা জ্যোৎস্নাতে দুঃখগুলো পদ্মপাতা বেয়ে ফোটায় ফোটায় নেমে আসে, মীনের সন্তরনে মাঝে মাঝে অস্থিরতায় কেপে ঊঠে পদ্মপাতা, ঝরে পড়ে শেষ বিন্দু শিশির । নির্ঝরনীর বুকে বন্দী টলোমলো অলীক উচ্ছাসমাখা দ্বাদশীর সুধাকর। নিশাকরের গ্রাসে অস্থিরতা আরো বাড়ে জ্যামিতিক হারে ।

‘কার্তিকের জ্যোৎস্নার প্রান্তরে’ ‘পঞ্চমীর চাঁদ’ ডুবে গেলে ‘মহীনের ঘোড়াগুলো ঘাস খেতে’ ব্যস্ত হয়, জ্যোৎস্নার আড়ালের তিমিরে নিঃসঙ্গ চিঠির বাক্সে নিঃসীম আকাশের অসীম শুন্যতার অনুরণন সোনালি ঘুঙুরের মতো বাজে । হলুদ পাতাদের ক্রন্দনে বুক পাজরে সময়ের স্রোতে অজশ্র দীর্ঘশ্বাষ জমে পোয়াতি রাত্রি তুষার ঘুমে আচ্ছন্ন হয় ।

মল্লিকা বনের ফোটা প্রথম কলি, শূন্য নীলাম্বরের রোদন ভরা এ গ্রীষ্মের দাবদাহে চেয়েছিলাম তোমাকে, তুমিই ছিলে শেষ বিকেলের চকিতলোচন কৃষ্ণসার হরিন । ছয়টি একনিষ্ঠ লাল লালগোলাপের আবেগোচ্ছ্বাস বুক পাজরে ধারন করে আজও আঁধারে সূর্যমুখীর রেণু পান করে খুঁজে ফিরি নির্বাণ । আজ আমি অনেক অনেক দূরে নির্জন নক্ষত্রের অব্যক্ততায় যদিও ফিনিক্সের পালকের মনমর্মর হয়ে চাইছি ফিরে নক্ষত্রের রুপালি রোদ ।


===================



সুর্যঘড়ির রোজনামচা






নভো অববাহিকায় কমলালেবুর খোসা ছড়িয়ে নির্বান লাভে ব্যস্ত হয় আইসিসের গর্ভজাত অদগ্ধ আগুন গোলক, আধারভেদী প্রদীপ শিখায় রাগ ভৈরবীর সুরে রক্তচন্দন আভার কম্পাঙ্ক বাড়ে, ঊষাদেবীর বিবমীষায় ভীরু অবগুণ্ঠন খুলে সোনালীশিখা নোঙর ফেলে তটরেখায়, কালোরোদ মাখা প্রহেলিকার বাতাবরণে; ফ্যাকাশে, নিষ্প্রভ শ্যাম্পেন জ্যোতির্ময়তায় উদ্ভাসিত হয়, গ্যাস ছেড়ে বোতল বন্দী শ্যাম্পেনে আসে বুদ্বুদ; নিকশ কালো আঁধারের বদন উদ্ভাসিত হয় ব্রীড়াময়ী তন্বীর গোলাপী শিহরণে ।

খাঁজ কাটা পানসে ধরাভূমির আনতি বেয়ে আদিত্যদেব অগ্রসর হয় নেপোলিয়নের বেশে, তৃণে তৃণে ছড়ায় দীপ্ত প্রভা সেই উচ্চ বিভব ঔজ্জ্বল্য, তপ্ত গরম গোলাপী-পিংক ঝাঁজর । পূর্ব দিগন্তের সোনালী স্ক্রিনে বীথিকুঞ্জগুলো যেন ছায়াতরুদের সিলুয়েট । অতপরঃ অকর্ষিত মৃত্তিকা ফুড়ে রাজকন্যার দেহের ভস্ম থেকে উকি দেয় পারিজাতিকার নবীন বিটপ, ঘাসপাখিরা ঘাসের ফালিতে সাজায় সুদৃশ্য সংসার; পলাশ গন্ধমাখা আশ্বিনের হিমেল বাতাস গোলাপী আভার সুঁচে বিদ্ধ হয়, ব্রীড়া বৈভব কাটিয়ে সদ্য রমণীত্ব অর্জন করে বালিকা ।

নীলের আকাশ গোলাপী হলে কিছুটা তির্যক রক্তিমাভা সমৃদ্ধি লগণ পাড়ি দিয়ে রেখে যায় কিছু অতিসুখাবিষ্টতা, রেখে যায় স্মৃতির বুদ্বুদ দৃশ্যদিগন্তের বায়ুকোষে, অলক্তরাগ যথাসম্ভব প্রসারিত হয় আনাচে কানাচে টইটম্বুর কমলসুরভি মাখা অলকানন্দার জলে, ঢেউগুলো সশব্দে ভেঙে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে, রমণীর কপালে থেতলে যায় লাল টিপ, সন্ধ্যাদৃষ্টির প্রতিচ্ছায়া রজনীমুখে অগ্রসর হয়, দীর্ঘ হয় । সন্ধিকালে ঘুর্ণয়মান চাকার পরিধি ধরে পিছু হটে আসে বিজয়ী বীর, ক্রমশ বিলীন হয় মুখচোরা পাহাড়ের আড়ালে । পারিজাতের ছায়াবীথি তলে বেড়ে উঠে নিশীথ নিকেতন ।

সাঁঝের মায়ায় দুঃখ বৃক্ষের লালচে-কমলা বৃন্ত-শীর্ষে ফুঁটে থাকে শেফালী, গোলাপী আলো তৎক্ষনে সন্ধ্যাতারার রুপোচ্ছটায় মুখ লুকিয়েছে; পানকৌড়ির ডানার রৌদ্রোত্তাপে জলের হৃদয়ে জমে কালোর ক্যানভাস, গোলাপের কম্পাঙ্ক হ্রাসে আফ্রোদিতির ভগ্নহৃদয় যেন শুশুকের কংকাল । কিংবা, ঝিঁঝিডাকা রাতের ছায়া অবসাদের ছাইরঙা মেঘ বৃষ্টি নামায় মনের ক্যানভাসে, শ্রান্ত ডুবুরী রাত্রি সাগরে খুজে ফি্রে গার্হস্থ্য জোৎস্নার মনি মুক্তা জহরত । নাগরদোলা গড়িয়ে যায় নিষ্ঠুর কুমোরের চাকার মত, সূর্র-স্পর্শে পারিজাতিকারা আবারও ঝরে পড়ে অশ্রুবিন্দুর মত, যতিপ্রান্তহীন কালচক্রে দুঃখানুভুতি গুলোকে বুকে ধারন করে শুভ্র দেহের গৈরিক বসনে শিউলি পড়ে থাকে ছায়াবীথি তলে ।





=======


সাইনোসয়ডাল অনুভূতিতে একজন কবির স্বেচ্ছামৃত্যুর খসড়া







সিদ্ধিসভায় চলছে গত জন্মের পাপের বিনির্মান, রক্তের গহীনে দূর্বিনীত স্রোত বিপ্রতীপ অন্ধকারে, স্খলনের উচ্চতায় মিশেছে অর্বাচীন, অমৃতাক্ষর ঘৃণা, ভূলক্রমে পয়ারছন্দ এসে হানা দিয়ে যায় সুররিয়াল স্বপ্নদর্শন ।



বিস্ময়কর ভাবলেশহীনতা বিস্ফোরিত কবির আর্তনাদের নৈশব্দতায়, খুঁজে ফিরতে চায় সে উদার আকাশ বা মাটির সোদা গন্ধ, অথবা সমুদ্রসৈক্তে খুঁজতে চায় নুড়ি সে আঁধারগ্রস্ত নটরাজ, মাঝে মাঝে দোদুল্যমান অনুভূতিতে হানা দিয়ে যায় মোজার্টের নবম সিম্ফোনি ।

জলোচ্ছাস প্লাবতি আত্মার জানালায় আঠালো নোনা গন্ধ, কালো প্রজাপতির জংধরা অনুভূতি যেন রহস্যের ইন্দ্রজাল, মেঘের স্বপ্নপূরীতে পথভ্রষ্ট কবি হৃদয়ের ক্রুসেডে, শূন্যতার মরুভূমি বিবেকের নির্জীব পদচারণা ।

ল্যাম্পপোস্টরে কৃত্রিম আলোতে নিশাচর স্বপ্নের নির্লীপ্ততা, অসূয়া প্রবাহের ব্যতিহার বিগ্রহ, কচুপাতায় জমা পানি খুঁজে পেয়েছে ছিদ্র, কঠোর গদ্যে হারিয়ে যায় শ্লোক বলা কাজলাদিদি ।

ভবঘুরে স্বপ্নের সায়াহ্ন আঁধারে কালের অদৃষ্ট চক্র, ইস্রাফীলরে শিঙ্গায় ধ্বনিত হবে প্রলয়ের আহবান, ইট কাঠের খাঁচায় বন্দি কবি শেষ বারের মত খুঁজে ফেরে-চাঁদের আলোয় মিটিমিটি করা জোনাকী অথবা ঝিঝি পোকার একটানা ডাক ।

কালের মিউজিয়ামের বিস্ময়কর চারদয়োলে গুর্মোট অব্যর্থ ভাষা, প্যাপিরাসের পাতায় গড়ে উঠছে সেই বিষাদের মিউজিয়াম, চায়ের কাপে মিশেছে আমিষলোভি পিপড়ার ফরমিক বিষ, ইজিচেয়ারে বসা দোপয়ে কবি খুঁজে ফেরে সপ্তর্ষির নির্বাক প্রশ্নোত্তর ।

শেষ কবে সফল স্বপ্ন দেখেছে কবি মনে নেই, এই জন্মে তো নয়ই, হয়ত গত জন্মরে আগরে জন্মে, হয়ত হাজার বছর আগে সিলিং আটকে পড়ে থাকা রশির বৃত্তে ঝুলে পড়ার আগেই সে স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটেছিল ।

গত জন্মের ফিনিক্সের ডিম বন্দি ছিল প্যান্ডোরার বাক্সে, এই জন্ম তাই পুড়ছে প্রমিথিউসের আগুনে, সময়রে সাথে ঘটেছে অভিশাপের এক্সপোনেনশিয়াল বিস্ফোরন, কবির বিশ্বাস মঙ্গলে বেচে নাই আর কোন অনুজীব ।

পৃথিবীর টানে তেজকটাল ভাসিয়ে নিয়ে গেছে চাওয়া পাওয়া, অরুণ কিরণ ঢাকা পড়েছে উড়ন্ত উদার আকাশে, পৃথিবীর জেলখানায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী আমি সেই কবি, ছড়িয়ে পড়েছে দেহে হেমলকের বিষ, ইউফ্রেটিস তীরে প্রতিস্থাপিত হচ্ছে ফারাওয়ের প্রস্তর সমাধি ।

হয়ত আবার ফিরে আসব নিদিষ্ট সময় পর, যেভাবে ফিরে আসে আমাবর্স্যা বা পূর্নিমা, আর হতে চাই না ফিনিক্স, ছাইগুলো ফিরে পাবে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধক ক্ষমতা, হিটলারের মত পবিত্র ফুসফুস নিয়ে আসব ফিরে যে কি না ছুঁয়ে দেখেনি সিগারেট ।

কতটা হেমলক আমাকে পৌছে দিতে পারে আকাশের সর্বোচ্চ নীলমায়?








===================


বড় পর্দার স্বপ্ন



*

দেবদূত বড় পর্দায় স্বপ্ন দেখে, আমাকে দেখে সে আঁতকে উঠে, ঠিক যেন খ্যাপাটে বেয়াড়ার হাস্যকর দ্বিতীয় সত্তার খাপছাড়া দোসর ।

আসলে তা ছিল ভার্চুয়াল প্রতিরূপের অপচ্ছায়া । আমাকে অপরাধী বলিয়া রায় দেওয়া হয়েছিল । কারন পৃথিবীর নিগুঢ সত্য আমি জেনে ফেলেছিলাম । আমি কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই । তবুও রাকঢাক রেখে বলি, সিদ্ধান্তগ্রহণমূলক ভ্রমাত্মক বিচারে এটাকে আমি অনুমোদিত স্বতঃসিদ্ধ সত্য বলে স্বীকার করে নিচ্ছি ।


*

হঠাৎ নিজের ছবি দেখে আমি বিস্ময়াবিষ্ট হয়ে উঠি। খুবই বেঁটে বিকলাঙ্গ, কুৎসিত চেহারার বামনভূত, দুরারোগ্য ব্যাধির মত মোটা ফাঁদের চালুনি, কামগন্ধে আর যৌন বিপর্যয়ে পরিবেষ্টিত । ততক্ষনাৎ, কোন লুসিফারের সুদৃষ্টিতে, আমি হয়ে গেলাম খাঁজহীন নলযুক্ত বন্দুকের মত মসৃণ, আমি হয়ে গেলাম আফ্রোদিতি আর পার্সিফনির প্রিয়পাত্র সুচতুর করোটির আডনিশ ।


পিছু হাঁটতেই চোখে পড়ে বীর্য এবং রক্তের সওদারত নিচুস্তরের বিশৃঙ্খল লোকজন । বাঁকা চাউনির চঞ্চল চপলার তীক্ষ্ণ চোখের চাবুক আর সাধ্যায়ত্তের ঠোঁটের বক্রতা । ঠোঁটগুলো ফাঁসটা মাঝে মাঝে ছোটোবড়ো হয় ঠিক যেন মাঝে মাঝে নৌকার পাল গুটিয়ে ভাঁজ ছোট করে নেওয়া হচ্ছে । পোকারের বোর্ডে খোঁচা দাড়ির মাঝ বয়সিকে দেখে মনে হচ্ছে পরকালের চিন্তায় মগ্ন । আসলে তা নিমগ্ন চিত্ত অভিনয় । স্মৃতিরোমন্থন করছে নিয়তির জ্যামিতি । কারন তার হাতেই আসে মোক্ষম অস্ত্র টেক্কার পেয়ার । সাতফুট লম্বা বেসবল প্লেয়ারগুলো যেন নিঃশব্দচারী বোমারু বিমান । মাংস পিন্ডের ঐচ্ছিক সঞ্চালন রোধ করে পাপীর বিকলিকরনে ব্যবহৃত হয় হাই ভোল্টেজ বৈদ্যুতিক শক ।

*


হাইডেফিনেশন কালার স্ক্রিনের সন্ধ্যাদৃষ্টিতে বাইপোলার ব্রেইনে সৃষ্টি হয় প্রদাহ । আমার একান্ত একশ বিলিয়ন নিউরন সেল আমাকে দেখান সম্ভাব্য ভবিষ্যত মেনে নিতে পারেনি । গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হল । পুলিশ সার্জেন্টের পোষমানা দেশী কুকুরটা ট্রেইনড কুশলী । কুকুর আমাকে ধাওয়া করে পাকড়াও করে ফেলে । লোহার শিকলের হাতকড়া আর পায়ের বেড়ি পড়ার নিয়তি সত্য হল । যে গাড়িতে আমায় নিয়ে আসা হল সে গাড়ির স্পার্ক প্লাগে ময়লা আর কার্বুরেটরে জ্যাম।


কারাগারে উজ্জ্বল গোলাপী রংয়ের কক্ষে আমাকে বন্দী করা হল । গোলাপী রংয়ের একটি সিগ্নিফিকেন্স হল অশান্ত বন্দিকে শান্ত করে । আমাকে খেতে দেওয়া হয় লাল পিপড়ার ফরমিক বিষ আর সাইক্লোমেট দিয়ে তৈরি টোস্ট বিস্কুট । কিছুক্ষন পরেই হলদে দাঁতের ভেতর থেকে পিত্তের দুর্গন্ধ পেলাম । তন্নতন্ন করে হরেক মালামালের সেলে পড়ে থাকা রড্ডিমালের থেকে খুজে আনা বড় থলি আর বস্তা হল মাথার বালিশ ।


হঠাৎ শারীরিক অবয়বে মূর্ত হয় কপট আচড়ের নিদারুণ দৈহিক যাতনা আর আকস্মিক স্নায়ুর যন্ত্রণা ও মনস্তাপের কষ্ট । আমার অর্ধেক মুখ দলিতমথিত, ক্ষতবিক্ষত । করোটির ভিতোরের মাথার সাদা খুলি কচ্ছপের খোলের মত দৃশ্যমান । মধ্যরাতের অভিষপ্ত রাস্তায় ক্রীতদাসদের তত্ত্বাবধায়ক আমাকে মালটানা জীর্ণ গাড়িতে নিয়ে অগ্রসর হল শহরের সবার জন্য তির্যক হুশিয়ারি সংকেত আর সতর্কতাসূচক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে ।


শ্মশান প্রেত-নগরীতে ভীতিকর কিছু আত্মচিৎকার শুনা যাচ্ছে । জড় পদার্থ গুলোও যেন চিৎকার করে প্রতিবাদ করছে । ভীতিকর আত্মচিৎকার আর জড় পদার্থ গুলোর চিৎকারের কম্পাঙ্ক মিলে যাচ্ছে বারবার । অনুরণন কম্পাঙ্কের মিলিত বিস্তারের সন্ত্রাস সৃষ্টির শিহরনে আমি আপ্লুত হই । অত্যন্ত বিপজ্জনক অবস্থায় বুঝতে পারি শুধু আমিই নই নীর থেকে ছেঁকে নেওয়া ক্ষীর । যুদ্ধজাহাজে আগুন লাগানর জন্য ব্যবহৃত তরল দাহ্য পদার্থ ঈশ্বরহীন পাপীদের শরীরে ঢেলে দিচ্ছিল স্মৃতিভ্রষ্ট পক্ষপাতগ্রস্থরা ।

*


সেই আতঙ্কগ্রস্থ দুঃস্বপ্নের অবস্থা থেকে আমি পরিত্রাণ পেয়েছিলাম । দায়মোচন ও পুনরুদ্ধার নিমিত্তে আমাকে বলা হল অপ্রকৃতিস্থ প্যারানয়ড়, স্মৃতিলুপ্ত সিজোফ্রেনিক । আমি বুঝতে পারলাম আমার মত মানুষদের আসলে কেউ কখনও বুঝতে পারে না ।

*

অতপর যখন ঘুম ভাঙলো তখন আমি সেই পৃথিবীতে ফিরে আসলাম যেখনে এসিড বৃষ্টিতে ঝলসে গেছে নৈতিক ও আধ্যতিক জগত । বস্তুকেন্দ্রীক সে জগতে মানুষ দিশেহারা । বাস্তব হচ্ছে ভার্চুয়াল । প্রতিফলিত আলোয় অনাগত ভবিষ্যত আলোকিকরন প্রচেষ্টা । সৃষ্টির কারন বাধা দিচ্ছে সৃষ্টিকে । তবে আমি এখনো বিশ্বাস করি বিশাল দিগন্ত, প্রশান্ত ভোরের আশ্চর্য রাবিশ আটপিয়া ।





==============



ইনসমনিয়া-একটি দৃশ্যকল্প




সমস্ত পৃথিবীকে অন্ধকারে ঢেকে রাত্রি গভীর হয়, নিস্পাপ জোছনায় । প্লাস্টিকের উপর বৃষ্টির পতন ধ্বনী শোনা যাচ্ছে অমোঘ মৃদু স্পর্শের মত ঠিক যেন গিনিপিগের হৃৎপিণ্ডের শব্দ । মাঝে মাঝে কম্পান্বিত কলেবর । অনুকম্পনের স্পন্দন জাগায় শিহরনের রোমাঞ্চকর অনুভূতি ।
নিস্তেজ ধ্বনী...
নির্মল ধ্বনী...
মসৃণ, সাবলীল ধ্বনী...
উচ্চনিনাদ...

তারপর শুধুই স্তব্ধতা ।
নৈঃশব্দ্য, নৈঃশব্দ্য, নৈঃশব্দ্য ।

পৌনঃপুনিক প্রথাসিদ্ধ আইন, শক্তিকেন্দ্র বিশ্রান্তিতে নিয়মমাফিক
আধারের কাছে ক্ষমতা-হস্তান্তর, শীতযাপনে ব্যস্ত বাস্তব-সংগতি আর রেশনালিটি ।






আরেকটি নির্ঘুম রাত । এখন সময় টু থার্টি এইট । সোমবার । আবার ভেঙ্গে গেছে ঘুম । এতক্ষন যে জগতে ছিলাম তাই হয়তো স্বপ্ন, স্বপ্নাতুর অবস্থা । বাস্তবতাকে কাছে থেকে উপলব্ধি করতে চাই, যেন আমি আমার স্বপ্ন জগতে জীবন্ত থাকি । চাই অবচেতন মনের ইচ্ছাপূরণ ।


নিথর আমি বসে আছি ফিকে বেদনার দৃষ্টিরেখায়
মেঘমেদুর শুকনো রঙের বাক্সের ছায়াচ্ছন্নতায়,
অন্ধকূপে চূর্ণীকৃত গোলামরিচের বর্ণবিলাস,
কৃষ্ণপক্ষের শেষ তিথির অনামিশা গ্রাস করেছে আমায় ।


আমি বিশ্বাস করি, বিশ্বাস করতে চাই- তারারাই নয় ভাগ্য বিধাতা । চোখের পলকেই কর্পুর পেয়ে যায় প্রয়োজনিয় তাপ । ভালবাসা যেন উর্ধ্বপাতিত হয় কর্পুরের মত । ভাগ্য হল পৌরাণিক আর পুরাণ হল রুপকথা । কিন্তু আমি জানি প্রকৃত বাস্তবতা যেখানে ঠান্ডা হাওয়া অবশ করে দেয় হাতের আঙ্গুল আর বন্ধ হয়ে আসে রক্ত সঞ্চলন । কেমন হতো যদি আমরা এই সব উন্মত্ততাকে হেসেই উড়িয়ে দিই আর ধরে নিই বাস্তবতা এক প্রকার স্বপ্ন ।

দিকভ্রান্ত বেদুইনের রাত কাটে কাটে ক্যাকটাসের কান্নায় । এক ট্রিলিয়ন গিগা হার্জের কপট্রন সুখ-দুঃখে । মরিচিকার পিছু ছুটছি । আধার ভরা ফুসফুস ফিসফিস করে বলে- স্মৃতি ছুড়ে ফেলে দাও কারন তারা আর প্রানবন্ত হবে না । তারাদের কটূত্তর, আর্টারী ব্লক হয়ে আসছে, আবার নীতি কথা বলে ।

দালানের চাঁদোয়ায় প্রতিচ্ছায়া, সে আমার অভিব্যক্তি অবয়ব
ক্ষীণদীপ্ত স্বপ্নবিহ্বলতার আবছা আভাস নিশ্চিহ্ন হয় তাকিয়ায়
ছোটো ছোটো লোমের শেয়াল-শিকারি কুকুর ডেকে উঠে জানালার চৌকাঠে
অনুভূতিশূন্য স্থিরদৃষ্টিতে অনুসন্ধান করি সুপ্ত অব্যক্ততা ।




মরুভূমির বুকে বেদুইন খুজে ফিরে একবিন্দু সুন্দরকে । নির্ঝরনীর বুকে টলোমলো চাঁদ বন্দী । চাঁদের বুক থেকে কুড়িয়ে আনবে মুঠো মুঠো নীল জ্যোৎস্না । বিজ্ঞানীরা আরশোলা আর টিকটিকির জীবনচক্রে ভ্যাকসিন, ক্যাপস্যুল তৈরির উপাদান খোঁজে দিনরাত, প্রেমিক প্রেম খোঁজে প্রেমিকার চোখে । কিন্তু ডাটাবেজের শূন্যতা অপুষ্টির চেয়েও ভয়ংকর, মন্দার চেয়েও মন্দ। আর আমার নিস্তেজ হয়ে পড়া দেহের শিরাগুলো ঝিমিয়ে পড়া ক্ষীয়মান রাতের অবিশ্রান্ত ঝুলন্ত অন্ধকারে সামন্ত নৃপতির মত আদায় করে যায় অতিরিক্ত মুনাফা আর খাজনা । বিস্মৃতি ঘুরপাক খায় একই বৃত্তের কেন্দ্রে । অন্ধকারে অস্থির শ্বাপদ পায়চারী করে নিঃস্তব্ধতার দ্বিধাদ্বন্দ্বতা আর বিস্মরণে । চোখের পাতার নীচে পুঞ্জিত অশ্রুর ক্লান্ত বিষাক্ত যন্ত্রনা, মাঝে মাঝে ছলছল করে বের হয়, অভিমানি অবিরাম ঢেউ । কষ্টহীন মানুষের কষ্টের তীব্রতা ভয়াবহ ।



নিশাচর দ্বিনেত্রদৃষ্টি যুদ্ধবিরতি দাবী করে, তবুও
তন্দ্রায় আচ্ছন্ন নির্ঘুম রাতে জাগরিত হয় বিনিদ্রতা,
বায়লজিক্যাল বিদ্রোহে মিশে যায় কালচক্রের আবর্তন
স্বপ্ন নয়, নয় কোন ঘুম, জেগে উঠা, যেন নাগরদোলায় ঘূর্ণমান চক্রায়ন ।


মিটমিট করে জ্বলে কমলা রঙের ল্যাম্পোষ্ট আলো । সশব্দে ঘূর্ণিত হয় ফোর ষ্ট্রোক মাজদার ষোল ইঞ্চি চাকার ক্যফেইনমুক্ত সহানুভূতি বোধ । মধ্য রাতের অভিশপ্ত ফাসিকাষ্ঠে ঝুলতে থাকা দেওয়ালঘড়ির উৎপাদনক্ষমতা অনুক্রম স্বগতোক্তিতেই সীমাবদ্ধ । সময়ের ছলনায় বিশ্বাসঘাতক ঘড়িনির্মাতা জন্ম দিয়েছিল অসীম অভীপ্সা । দেওয়ালঘড়ি থেমে যাবে তার অন্তিম নিয়তিতে ।



মাঝে মাঝে মনে হয় বৃষ্টির ফোটাগুলো ঘুমন্ত শহরে নিয়ছে দালান ভাঙ্গার ইজারা । শরীরের নীরস, নির্জীব চামড়ার নিচে বসত গড়ে ক্লান্তি । নিঃশেষিত, স্নায়ু-পীড়িত আমি অবসাদগ্রস্থ বর্ধনশীল অবক্ষয়ের ক্রমবিস্তারে আর প্রহসনের সূর্যোদয়ে । ইচ্ছাবিলাসে ডূবে আছি বিষে, ডুবে আছি পাপে আমার এক পা শুন্য, আর এক পা কার্নিশে । আমার জ্ঞানেন্দ্রিয় ক্রমাগত ক্ষয়ে নর্দমার মত বিক্ষিপ্ত, কলঙ্কিত হয় । চাঁদের যে বিন্দুটি পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরে তার নাম আপোজি । মনে হয় আমার সংবেদন ক্ষমতা, আবেগতাড়িত অপরাধবোধ অথবা শ্রেষ্ঠত্বের বা উত্কর্ষের মাত্রাগুলো আশ্রয় নিয়েছে আপোজিতে । ঝিমিয়ে পড়া দেহের শিরা গুলো চায় ঘোর নিদ্রার আস্বাদ । নেত্রপল্লব ক্লান্তিতে নুয়ে আসে । তিমিরাবগুণ্ঠিত আমি আধারে দ্রবীভুত । সেডিল, লেক্সিল, রেস্ট্রোল, নাইটাস এর মত সিডেটিভ আর হিপ্নোটিক ট্রাঙ্কুইলাজার গুলো এখন আর এফেক্ট করেনা । ক্রোধের স্রোতে ভেসে চলছি সম্পূর্ণ বিনিদ্রভাবে । আধার মরা ফুসফুসে আর হৃদপিন্ডের ভিতরটা স্বপ্নের সমাধীক্ষেত্র । চার দেয়ালের প্রকোষ্ঠে যন্ত্রণা বন্দিনিবাস থেকে চাই কারামুক্তি ।



অগুনিত আঁকিবুকি আটকে থাকে মগজের গলিতে, কথার মাঝে লুকিয়ে বেদনার ফিসফিস দীর্ঘশ্বাস, মনপেয়ালায় ঝোড়ো হাওয়া ব্যাঘাত ঘটায় আঘাতে, আকাশের ব্ল্যাকবোর্ডে মেঘের শোকগাঁথা, অভিমানী মেঘ গলে গেলে মুছে যাবে মনের ব্যাথা, কলমের আঁকিবুকি দিয়ে যায় সেই আশ্বাস । ভোরের আলো ফুটে উঠছে । ঝিরঝির বৃষ্টি পড়ছে, চাপা ব্যথা গুলো শ্রাবন জলে ভিযে যাক । নিবিড় দুঃখের উৎস থেকে জন্ম হোক সবুজ । পাতারা জাগে উঠুক অদ্ভুত চেতনায় ।





==============

কবিতা তো খোঁপার বকুল ফুল, নয় কোন লিপস্টিক




কারখানায় লিপস্টিক তৈরি করে পুঁজিবাদ, বাজারে চকচকে অবতল আরশিতে দেখায় প্রত্যাশার বিস্তৃত দৃশ্য । ঠোঁটে ঐন্দ্রজালিক বিশেষন মুখের জ্যামিতির ভোক্তার সংখ্যা বাড়িয়ে দেয় – লিপস্টিক পুঁজিবাদী আগ্রাশনের মুলনীতিটা এমনই । লিপস্টিকে কি আছে ভিটামিন? মালভুমির মত সমতল ঠোটে কি তা সৃষ্টি করে বর্তুলাকার বৃষ্টিফোটার সতেজতা? লিপস্টিক হয়তো কোন টার্বোচার্জার যা আগ্রাশন নামক সিলিন্ডারে অতিরিক্ত অম্লজানের জোগান দেয় । পেয়াজের ঝাঁঝ আনে উর্বশীর ঊষর ভূচরে । পুঁজিবাদের রঙে সাজিয়ে গড়ে উঠে লিপস্টিক-ঠোঁট ।

■■

চোখে আইলাইনার মাসকারা । পিংক ব্লাশার, আইশ্যাডো, গোল্ডেন বা সিল্ভার হাইলাইট করা ঘাগড়া আর লেহেঙ্গা, জিন্সের সাথে পিংক টপস, শর্ট স্কার্ট, এসব হয়তো হিমোগ্লোবিনের লাল বর্নকেই পিংকে রুপান্তর করে মাস্কিউরেড পার্টির মিষ্টোরি আর গোথিসিজমকে ভিন্ন মাত্রা প্রদান করে । ইন্দ্রনীলমনির বুদ্ধিদীপ্ত শ্যামল চোখের ঈশারায় লালায়িত লাল লাভাস্রোত, লিপস্টিকের ফিকে লাল রংয়ে লাজরঞ্জিত ঠোঁটের ডগায় কামোদ্দীপনায় লুকোচুরি খেলে রক্তচোষার লালসা । আর অন্যদিকে পুঁজিবাদী ঈশ্বর থাকেন ভদ্র পল্লিতে । গনিকা পল্লির সুখ দুঃখ তার চোখে পড়ে না । ঈশ্বর শুধু মধুময় বানী আউড়িয়ে স্বপ্ন দেখায়, কলকাঠি নেড়ে যায় ।

■■■

নিউরনে কৃত্রিম মনস্তত্ব বিস্তৃত করে পুঁজিবাদ কবিকে করেছে মনোরঞ্জন সওদাগর । জমজমের সুবাসিত জীবন-লোবান সদৃশ নির্যাশ হাতে রাতের ঝুলন্ত অন্ধকারে তীর্থের কাকের মত কবি একদা নিয়ন আলোর হাইওয়েতে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে খুজে ফিরেছে জিম মরিসনের কবিস্বত্তা অথবা গায়কস্বত্তার স্বরুপ অনেক অবাক হবার চাওয়া নিয়ে । আজ হামানদিস্তার সুখ-বিলাসে গালিবের অমর গজল গুলো ভিজে যাওয়া শ্লোকাংসের মত মেঘ হয়ে কাঁদে । আলো-আধারীর শব্দ শহরে গোরস্তানে পাতালমুখী কবরের কঙ্কালের মাঝে কবি মাংসপিন্ডের অস্তিত্বও উপলব্ধি করে না ।

■■■■

পশ্চিমা অহংনির্ভর কলাকৈবল্যবাদের ভ্যানিশিং ক্রিম ইদানিং বঙ্গদেশে জন্ম দিয়েছে মুখের জ্যামিতিকে ফর্শাকারী আধুনিকতা । অপসংস্কৃতিতে কলাকৈবল্যবাদের জলরঙ মিশিয়ে বিলিয়ন ডলার ঢেলে বহুজাতিক নব্য ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানী গুলোর জয়যাত্রায় পুঁজিবাদ আরো উন্নততর পুঁজিবাদের পথে । তবে কলাকৈবল্যবাদের চেতনাবিহীন, বিমূর্ত অনুভূতি প্রকাশক শিল্প কখনো পূর্ণতা আর প্রাণ খুজে পায়না । প্রয়োজনের তাগিদের শিল্পচর্চার সৃজনকে আসলে চাহিদা মেটানর শিল্প পণ্য ছাড়া অন্য কোন নাম দেয়া যায় না ।

■■■■■

চেতনা দেহের কোন অঙ্গে অবস্থিত প্লাজমেটিক স্পিরিট বা অটোমেটিক ইমপালস নয় । চেতনা ধী, মেধ, প্রজ্ঞা ও বিচারশক্তি সম্বন্ধীয় মানষিক বৈশিষ্ট্যের সমষ্টি-উদ্দীপন, স্বকীয়তা, অনুভূতিশীলতা এবং নিজের সত্তা ও আশেপাশের পরিবেশের মধ্যকার সম্পর্ক অনুধাবনের ক্ষমতা । নেপথ্যের অনুপ্রেরণা, দৃশ্য, শ্রব্য, স্পর্শ অথবা আস্বাদ চেতনা সৃষ্টি করে নান্দনিকভাবে ও সার্থকতার সাথে ।

চেতন ও অবচেতনের অপরূপ গোধূলিলগ্নে, পারিপার্শ্বিক অনির্বচনীয় টানাপড়েন ও দোলাচলের মধ্য দিয়ে কবির হৃদয়ের রক্তক্ষরণের চিহ্ন কবিতার শরীরে মূর্ত হয়ে উঠুক । কবিতা তো খোপার বকুল ফুল, নয় কোন লিপস্টিক। মেকি অন্তর্বাস ছুড়ে ফেলে মনোরঞ্জন সওদাগর বেরিয়ে আসুক লেক্সাসের কাল কাচের আড়াল থেকে । সিপাহী বুলবুলির অবাধ উচ্ছাসে চন্দ্রভুক অমবস্যার শেষে, সজীব সূরের মুর্ছনাতে নবীন সবুজ বিটপপত্রে ফলুক জ্যোৎস্না ফসল ।



========================



নিয়ন আলোর কার্নিভালে বিষাদের এলিজি





এক থোকা জোনাকির সবুজ আলোর শরতের অপরাজিতা বিলাসে ক্ষয়ে যাওয়া মায়াবী চাঁদের আলোর খানিক লবনাক্ত জোছনা । তখনি সরিষা আর মৌরির গন্ধে ভরা সতেজ লবঙ্গের আবহে হেমন্তের শেষ সকাল গুলো কুয়াশা-জড়ানো শৈত্য নিয়ে আসে । রাত জাগা ল্যাম্পপোষ্টর নিয়ন আলোতে জোনাকির সারি অথবা তড়িতবাহী নমনীয় অন্তরিত তারের ফাঁসিকাঠে মৃতদেহের মত ঝুলে থাকে দন্ডপ্রাপ্ত আসামীর শহুরে পাপ । হৃদপিন্ডের রসায়নে রোড ডিভাইডার আর একটা কংক্রিট ফুটপাতে বাক্সবন্দী হয় নিস্যন্দিত নৈশব্দ্যের নীহার, কফিনবদ্ধ কৃষ্ণতম সন্ধাগুলো যেন আরও গভীর হয়ে আসে নেমে আসে ।

■■

তেলপোকা খেকো আদিবাসীদের মত ইঁদুরেরা জ্যামিতিক বংশবৃদ্ধি শেষে নেমে পড়ে সবুজ সিগনালের পিচ ঢালা রাজপথে আর বেটোফেনের নবম সিম্ফনির মর্মবেদনায় অস্পৃশ্য ক্রীতদাস, গির্জার ডিংডং শব্দে প্রবৃত্তি গুলো আর্তনাদে কাঁপে, বাষ্প জমাট বেঁধে রচিত হয় সাদা মেঘমালা । আলো নিভে গেলে আঁধারে নিয়ন বাতির ল্যাম্প পোষ্টের আলোয় স্বপ্ন বেঁচে কিছু মানুষ, বিষাদমুক্ত প্রোজ্বল সকালের আশায় । নিরবচ্ছিন্ন হৃদস্পন্দন, ট্রেনের হুইসিল, জাহাজের ভেঁপু আর কিছু ঝিঁঝি পোকা এবং ছাইরঙা টিকটিকিরা যেন মেতে উঠে কার্নিভালে ।

অলিগলির পাকস্থলীর ভাসমান মানুষগুলির কঙ্কালসার জীর্ণশীর্ণ শরীর, স্টেশনে ছিন্নমূল ওই খর্বদেহর নিঃসহায়দের দিনে শেষে রাতযাপন । অন্ধকার গলির বেকার ছেলেটার পকেটে খেলনা পিস্তল আর ছেঁড়া ব্লাউজে কিশোরী লজ্জার অপমান ঢাকে প্লাস্টিক হাসিতে ।

■■■

ইট-কাঠ-রড-নাট-বোল্ট, ইস্পাতের দালাল । স্কাইস্ক্রেপারপারের স্বর্গীয় সমাজের উষর ভুচরে বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের কীর্তনেও যদি পাত্তা না দেয় ঈশ্বর; আফ্রোদিতিত দেহের কোমল মাংস খুবলে খাওয়ার সাক্ষী নিশি-যামিনী পেঁচারা, টিস্টলের আড়ালের নিমের ডালে ডেকে উঠে!

■■■■

বিলবোর্ড হাসির ব্যস্ত নগরীতে নিয়ন আলোর প্রসারনের নক্ষত্রের রাতে
শত ফেরারী মানুষের ঘনত্ব হ্রাস পায় । বারবনিতা কিংবা চিরকষ্টের ম্যানিকিন অথবা ক্যাবারেটের গায়িকারা মুর্ত হয় দুর্গের ক্যাফেইন যুক্ত কর্পোরেট ধোয়ায় । বারটেন্ডার তিন পাইন্ট গ্লাসে সৃষ্টি করে শ্যাম্পেন বা হুইস্কি, কিংবা রক্তিম আভার পীচ-ফলের গোলাপি রংধারী ওয়াইনের সমসত্ব রসায়ন । সাথে ডায়েট কোক, অরেঞ্জ জুস আর লেমনেড । তারপর নীল রংগুলি গ্রাস করে অনুভূতিগুলো বিলীন হয় বিস্তীর্ন আকাশের বিশালতায় ।

■■■■■

সন্ধী্প্রকাশ রাগের মুর্ছনায় পশ্চিমাকাশে গোধুলীর লালের রক্তহীন আভায় সন্ধানামে, উচ্চমাত্রার লিগনিন কাঠের শাঁষে আনে কঠোরতা । চাঁদের আলোয় পেঁচার ডাকে অন্ধকারের কারফিউ ভেঙ্গে পথে নামা পারফিউম সুরভিত নিশি কন্যার মসলিন অনুভুতিগুলো হিমাবৃত হয়ে উঠে অবিক্রেয় মজুদের মত, হিংস্র তুফান সমনের রুপালী রাতে, শহরতলীর পান্থাবাসের ভীতিকর নরকে, তীক্ষ্ণচোখে খাদ্য খুঁজতে থাকা নেশাতুর নিমফোম্যানিয়াক ঈগলের চোখের স্খলনে।

নিঃসীম নিকষ আধারের বিলাসে নির্বাণোন্মুখ দীপশিখা গুলো যন্ত্রণায় দাঁত ঘষে পরিনত হয় অগ্নিতপ্ত জীবনের থ্যাতলানো মাংশে । অজানা কুমারীর জঠরে সুপ্ত হয় অলস পরজীবি শৈবাল, ভেনাসের পায়ের রক্তজাত শিশিরভেজা গোলাপ মাইক্রো-ওভেনে সেদ্ধ হয়ে জন্মদেয় মৌরি-নিষাদ।

■■■■■■

সারাদিনের রোদের পোড়া শহরের প্রতিটি রোমকুপের চাতক তিয়াশা মিটিয়ে বাসনার অন্তর্বাস খুলে পড়ে কার্নিভালের অবপতনে । তবুও, দীপ্ত রংধনুর মতো বর্ণোজ্জ্বল নৈশ বিজ্ঞপ্তির নিয়ন বাতি, কেঁপে কেঁপে ওঠে ঊষাদেবীর প্রাতঃকালীন নৈস্বর্গিক বিবমিষায় ।










সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:৪৪
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×