somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"বিনু"

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সোফায় আধশোয়া অবস্থায় বই পড়ছি। তুমি এসে বিড়ালের মত শরীর ঘেঁষে আমার শরীর আর বই এর মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে দিলে। আমি বিরক্তির ছাপ মুখে ধরে ধমকের সুরে বলি,
-বিনু মারবো এক থাপ্পড়। পড়ছি, ডিস্টার্ব কর না।
আমার কথা শুনে মুখ ফুলীয়ে অভিমান করে বিড়াল ছানার মত আরও বেশী মিশে যেতে লাগলে শরীরের সাথে। তোমার সেই পরিচিত অভিমান ভাঙ্গানোর চেষ্টায় তোমার ঠোঁটে আলতো করে একটা চুমু বসিয়ে আবার বইয়ের পাতায় মন দিলাম। তোমার পূর্ণাঙ্গ অভিমানের অর্ধাংশ বিসর্জন দিলে ঠিকই, কিন্তু অতৃপ্তির বলিরেখা কপালে চেপে অলিখিত ভাষায় সাংবিধানিক ধারা জারী করে দিলে,
-এই যে আমার বিদ্বান, একটা চুমুতে আমার চলে না। প্রতি পাঁচ মিনিটে একটা করে চুমু দিতে হবে আমায়। তা না হলে বইটা ছুঁড়ে ফেলে আমার নিজস্ব সম্পত্তি দখল নিবো, মানে তোমার ঐ শরীর, তোমার ঐ বুক, পুরো তুমিটাই আমার মালিকানাধীন সম্পদ। তাই আমার ইচ্ছা অনুসারে প্রতি ৫ মিনিটে আমার ঠোঁটে চুমু না পড়লে তোমাকে দখল করে গিলে ফেলবো। যেমনি করে চন্দ্রগ্রহণ হয় তেমনি করে আস্ত গিলে নিবো তোমায়।
তোমার এই ছেলেমানুষি আর একরোখা জেদ তোমাকে আরও বেশী ভালবাসতে বাধ্য করে আমায়। প্রতিদিন নূতন ভাবে ভালোবাসা আবিষ্কার করি তোমার মাঝে। ভালোবাসার সব রঙে নিজেকে রাঙিয়ে তুলি তোমার আর আমার পৃথিবী।
বাধ্য হয়ে প্রতি ৫ মিনিট পর পর তোমায় চুমু দিয়ে পাগলী বসে রাখার চেষ্টায় অতি ব্যস্ত আমি। কিচ্ছুক্ষণ পর ঐ আধশোয়া অবস্থায় আমার বুকে মাথা রেখে বেঘোরে ঘুমিয়ে পড়লে তুমি। তোমার দেয়া শর্ত অনুযায়ী প্রতি ৫ মিনিট পর পর কিস করে চলছি। হঠাৎ বই থেকে চোখ সরিয়ে তোমার ঐ নিষ্পাপ কোমল মুখের দিকে চেয়ে আছি। তুমি হয়তো জানো না বিনু, ঘুমিয়ে পড়া তুমিকে কতটা মায়াবী আর আকর্ষণীয় লাগে।

বইটা বন্ধ করে তোমার মুখের দিকে চেয়ে আছি অপলক দৃষ্টিতে। তিন ঘণ্টা ধরে ঘুমচ্ছ তুমি। ঘরে ডাকাত পড়লে জেগে থাকা গৃহস্থ যেমনি ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে রাখে পিন পড়া নীরবতায়। তেমনি নিজেকে মেলে ধরেছি তোমার জন্য। আমার কষ্ট হচ্ছে, আরও হক, তারপরও তোমার ঘুম ভাঙ্গিয়ে এই মায়াবী চেহারা দেখা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতে চাই না।
তোমার গাঁড় নিশ্বাস এসে ঠেকছে আমার মুখের উপরে। গত তিন ঘণ্টা ধরে তোমার কার্বনডাই অক্সাইড আমার অক্সিজেন হিসাবে নিচ্ছি। মনে মনে ভাবছি, বিনু তোমার নিশ্বাস কেন তোমার পুরো তুমিটাই আমার নিজেরই একটা অংশ। যদিও তোমার মত মুখ ফুটে বলতে পারি না ভালোবাসি। কিন্তু তুমি জানো কিনা জানি না, তুমি শুধু আমার ভালোবাসা নয় তোমার ছোট ছোট রাগ, অভিমান, তোমার খারাপ আচরণ, তোমার ভালো লাগা সব কিছুই আমি আমার নিজের মনে করি। এই ভাবে তিন ঘণ্টা কেন চাইলে তিন দিনও তোমাকে বুকের উপরে ঘুম পাড়িয়ে আমি জেগে থাকতে পারি।
যত নষ্টের মুল ঐ ল্যান্ডলাইনটা। ফোন আসার আর সময় পেল না। চার বার রিং হয়ে গেল। কার পাকা ধানে মই দিয়েছিলাম কে জানে, আমার আর বিনুর এই মুহূর্তটা নষ্ট না করলে কি তার পেটের ভাত হজম হত না?
আরও রিং হতে থাকলে বিনু জেগে যাবে, তাই বিনুকে আস্তে আস্তে সরিয়ে সোফায় শুইয়ে দিলাম। বিনু ঘুমানোর সময় হাত পা চার দিকে মেলে ঘুমায়, এদিক ওদিক ফিরতে গিয়ে সোফা থেকে পড়ে যাবে হয়তো। নাহ, তাকে সোফায় একা রেখে কোথাও যাব না। ফোন বাজছে আরও বাজুক। আচ্ছা বিনুকে বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দিলে কেমন হয়?

বিনুকে পাঁজাকোলে নিয়ে আমি আস্তে আস্তে হেঁটে যাচ্ছি আমাদের বেড রুমের দিকে। বিনু এখনো ঘুমাচ্ছে। তাকে বিছানায় রেখে গায়ের কাঁথাটা টেনে দিয়ে মাথার চুলে হাত দিয়ে বিলি কেটে কপালে একটা চুমু আঁকলাম । ইচ্ছে করছে তার উপরে ঘুমিয়ে পড়ি। না ঐ মরার ফোন এখনো বেজেই চলছে?

তহুরা মেয়েটা বড্ড ফাঁকিবাজ হয়েছে। একটা মিনিট খরচ করে ফোনটা ধরলে হিন্দি সিরিয়ালের দিদিরা নিশ্চয় আধাকেজি মেকআপ পরে গলায় দড়ি দিত না। ফাজিল! চেঁচিয়ে যে তাকে ডাকবো তারও উপায় নেই। বিনুর এত সুন্দর ঘুমটা নষ্ট করার কোন মানে হয় না। অবশেষে তহুরার ঝাঁজাল কণ্ঠ শুনলাম, যাক বাবা আমার বিনু তাহলে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে।

-মামা, আরে ঐ মামা আফনার ফোন। আর কতক্ষণ ঘুমাইয়া থাকবেন?

কাজের মেয়ের ডাকে ঘুমটা ছুটেই গেল। অভ্যাসমত বাম হাতটা দিয়ে বিনুকে বিছানায় আবিষ্কার করতে লাগলাম আমি। বিনু! বিনু!

আমার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের ঘনঘটা। চোখের উপর আলো পড়তেই বুঝতে পারলাম স্বপ্ন দেখছিলাম। কপালের ঘামের ফোঁটার সাথে ডান চোখের কয়েকটি ফোঁটা যোগ হল। বিনু তো নেই। চারটি বছর বিনুহীন আছি আমি। অথচ এখনো বিনু আমার ভীতরে আগের মতই বেঁচে আছে। কাজের মেয়েটা আবারো চেঁচিয়ে বলে,
-মামা, আফনার আম্মা রেডি হয়ে বসে আছে মাইয়া দেখতে যাবেন নাহ?
তহুরাকে চলে যেতে বলে বিছানায় ও ভাবে ঠায় হয়ে বসে রইলাম। মায়ের চাপাচাপিতে আজকে আবার মেয়ে দেখতে যেতে হবে, এই নিয়ে সাতাশটা। অজান্তেই বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে পড়ল। খাটের পাশে ফ্রেমে বন্ধী বিনুর গায়ে হাত বোলাতে লাগলাম আমি। আচ্ছা বিনু, মানুষের ক্ষুদ্র এই জীবনটা সচল রাখার জন্য বিয়েথা কি খুব বেশী জরুরী? প্রতিবেশীরা প্রতি রোজ মায়ের নাক কাটে কারণ আমি বিপত্নীক বলে। অফিসের ইভা আর বীথিদের বক্র চোখের চাউনি আমাকে বলি দেয়, কারণ আমি বিপত্নীক। জানো বিনু, তারা সবাই বিয়েটাকে সামাজিক ব্যাধিতে পরিণীত করেছে। কারো গলায় বিয়ে নামক বেড়ী ঝুলিয়ে দিতে পারলেই তাদের গায়ের আর চোখের জ্বালা মিটে সারা হয়। তারা কেউ বুঝতে চায় না বউ মানে বাচ্চা বিয়ানোর মেশিন নয়, জৈবিক চাহিদা পূরণের মিনিট দশেকের শরীর শিথিল করার খেলা নয়। বিয়ে এবং বউয়ের সাথে মন আর ভালোবাসারও যে সন্ধি থাকে তারা তা মানতে চায় না। গত চার বছরে চার মিনিটের জন্যও তোমাকে নিজের থেকে আলাদা করতে পারিনি আমি। এখন মা আর সমাজের কথাতে অন্য নারী বিছানায় স্বীকার করতে পারি ঠিকই কিন্তু আমার ভিতরের তোমাকে অস্বীকার করবো কি ভাবে?


সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৪৯
১৫টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×