সাধারণ মানুষকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য তাদেরকে একটা ঘোরের মধ্যে রাখা দরকার, এটা রাজনীতিবিদরা বেশ ভাল করেই জানে। আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা খুব সুচারুভাবে সেটি করতে পারে।
এই যেমন দেশে এখন আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই ভাগ করে মানুষকে একটা ঘোরের মধ্যে রাখা হয়েছে। মাঠপর্যায়ে কত রেশারেশি, কত মারামারি, কিন্তু যারা এসবের ডাক দেয় তারা ক্যামেরার সামনে হম্বিতম্বি করে এসি রুমে বসে মজা দেখে। আওয়ামী লীগ আসার পরে ভুলেও বিএনপির কোন দুর্নীতিবাজ নেতার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগে নি। যা মামলা, সব ফখরুদ্দিন আমলে রেখে যাওয়া। বিএনপি আগের টার্মে আওয়ামী লীগের কারো পিছে লাগে নি, তেমনি ভবিষ্যতে কখনো ক্ষমতায় গেলে উঠেপড়ে লাগবে না। চুপচাপ দুইদলই লুটেপুটে খাবে। এখন আবার ধর্মের ঘোরে রাখার জন্য আওয়ামী লীগ- বিএনপি উভয়ই রীতিমত ধর্ম রক্ষার নামে প্রচার চালাচ্ছে। মানুষ এখন এই নিয়েও মাতবে।
তবে ইদানিংকালে দেখা যাচ্ছে, দেশের রাজনৈতিকমন্ডল ব্লগ/ব্লগার নিয়ে বেশ দুশ্চিতায় আছে। এর আগে অনলাইনের লেখালেখি নিয়ন্ত্রন নিয়ে আইনের কথা শোনা গেছে। এবার বেশ উঠেপড়ে লেগেছে। কেন?
কারণ একটাই, মানুষকে সচেতন করার জন্য ব্লগ ও অনলাইন মিডিয়া দারুনভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। পত্রপত্রিকায় সেভাবে নষ্ট রাজনীতিকে ধোয়া হয় না। অনেক কিছু লেখা হয় না। অনেক খবর আসেও না। কিন্তু ব্লগ/ফেসবুকে রীতিমত তুলোধুনো করা হয়। ব্লগের লেখা ফেসবুকে ছড়ায় আবার ফেসবুকের স্ট্যাটাস ব্লগপোস্ট হয়ে যায়। যারা জীবনে কোথাও লেখালেখি করেন নি, তারা বিভিন্ন আলোচনায় অংশ নিয়ে টুকটাক লিখে ফেলছেন। তর্কে বিতর্কে অনেক কিছু জানতে পারছেন। সাধারণ জনতা নিজের অধিকার নিয়ে সচেতন হচ্ছেন। দৈনন্দিন বাস্তব জীবনে ব্যাস্ততা বা নিরাপত্তার কারণে এসব আলোচনা সেভাবে সম্ভব হয় না। কিন্তু ভার্চুয়াল জগতে এমন কোন সমস্যাই নেই। নষ্ট রাজনীতির জন্য এ এক অশনী সংকেত। অনলাইনে গুজব/প্রোপাগান্ডাও কম রটে না। এটি মূলত জামাতশিবির ছাগুদের মূদ্রাদোষ। তবে যা রটায় তা আবার ধরা খায়। মানুষ তাদের কুৎসিত রূপ আরো ভাল করে চিনে। এটা একটা পজেটিভ দিক।
ব্লগ অনেক এগিয়ে গেলেও দেশের একটা বড় অংশ এখনও অনলাইন সম্পর্কে কিছু জানে না। তাদের এই অজ্ঞানতার দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে এখন রাজনৈতিক দলগুলো। কদিন ধরে দেখা যাচ্ছে, নাস্তিক ব্লগার নিয়ে হইচই করে মানুষজনকে বিভিন্নভাবে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এখন মনে হচ্ছে ব্লগার মানেই বুঝি নাস্তিক টাইপের কিছু। অথচ ব্লগে আস্তিক নাস্তিক টাইপের লেখা থেকে ইতিহাস, রাজনীতি, বিজ্ঞান, সাহিত্য, চিত্র, সিনেমা ইত্যাদি নিয়ে লেখা অনেক অনেক বেশি। কিন্তু সেসব তুলে না ধরে আস্তিক নাস্তিক বিভাজন ফলাও করে প্রচার করে ব্লগ বিতর্কিত ও নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা চলছে। যাদের ব্লগ নিয়ে তেমন আইডিয়া নেই তাদেরকে ব্লগের সংজ্ঞা জিজ্ঞেস করলেই বুঝতে পারবেন। তবে অনলাইনে কোন কিছু রুখে দেয়া যায় না। সত্য তার আপন গতিতে চলবে। যারা ব্লগের পিছনে উঠেপড়ে লেগেছেন তারা যত দ্রুত এটি বুঝতে পেরে নিজেদের শোধরাবেন ততই মঙ্গল।