somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সোনার হরিণ...

৩০ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তখন এমবিবিএস পাসের পর সবে ইন্টার্র্নি শুরু। খেয়ালের বশেই ৩৩তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলাম। ভাগ্যগুণে প্রিলিমিনারীতে টিকে গেলাম। সদ্য ডাক্তার হওয়া গায়ে সরকারী চাকরীর লেবাস পড়িয়ে স্বপ্ন দেখার শুরু। সেই স্বপ্ন ডালপালা ছড়াল পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব ছাড়িয়ে দূর-দূরান্তে। আলসেমি সব ঝেড়ে ফেলে লিখিত পরীক্ষার জন্যে পড়াশোনা করলাম। গুরু মানলাম এই পরীক্ষাকে মেডিকেল জীবনের তিনটি পেশাগত পরীক্ষার পরও। উপরওয়ালার দয়ায় এবারও উতরে গেলাম। দেখতে দেখতে ইন্টার্র্নি সমাপ্ত হল। দুরু দুরু বুকে মুখোমুখি হলাম জীবনের প্রথম কোন চাকরীর জন্যে সাক্ষাতকারের। কয়েকমাস পর নিজেকে আবিষ্কার করলাম একজন বিসিএস ক্যাডার হিসেবে। এবার বুঝি সরকারী চাকরী নামের সোনার হরিণ ধরা দিল! অবসান হল বুঝি দীর্ঘ দেড় বছরের যুদ্ধের! স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পুলিশ ভেরিফিকেশনের অপেক্ষায় থাকাকালীন এমন একটা সময়ে শুনলাম ১৩০ জনের ফলাফল সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে পিএসসি। কারণ হিসেবে কেউ কেউ বলল কাগজ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে এমনটা হতে পারে। আমার রোল নাম্বার আছে কিনা দেখতে বলল। প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী আমি কথাটা আমলেই নিলাম না। এত সতর্কতার পর এতবার চেক করে জমা দেয়া কাগজে কোন ভুল-ত্রুটি থাকতেই পারেনা! দুইদিন পর কি ভেবে ডকুমেন্টটি ডাউনলোড করে প্রথম দিকেই নিজের নাম্বার দেখে আঁতকে উঠলাম। হতাশার শুরু বুঝিবা তখনই! নানান জনের নানান কথা, নানান বিশ্লেষণ শুনতে শুনতে চিঠি পেলাম পিএসসি থেকে। চিঠিতে “তথ্য বিভ্রাট” জনিত কারণ দর্শিয়ে সাময়িকভাবে স্থগিত ক্যাডার হিসেবে আমাকে বিএমডিসি কর্তৃক নিবন্ধিত স্থায়ী চিকিৎসা সনদসহ পিএসসি কর্তৃক গঠিত বোর্ডের সম্মুখীন হতে বলা হয়েছে। উল্লেখিত তারিখে উল্লেখিত স্থানে গিয়ে দেখলাম আমার মত আরও ১০০ জন একই কারণে উপস্থিত হয়েছেন। আমার মত তারাও কেউ জানেন না যথাযথভাবে কাগজপত্র জমা দেয়ার পরও কেন আমাদের ফলাফল স্থগিত হল এবং আজ ডেকে পাঠানো হল। যাইহোক তাদের চাহিদামত সবকিছু জমা দিলাম। আবার অপেক্ষার শুরু! এর মধ্যে নিয়মিত ক্যাডারদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পুলিশ ভেরিফিকেশন শুরু হয়ে গিয়েছে। শুধু দেখে যাই আর দীর্ঘায়িত হয় প্রতিটি নিঃশ্বাস। অপেক্ষায় যখন ক্লান্ত তখন স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হল। এই বুঝি গেজেট দিয়ে দিল! আমরা বুঝি বাদ পড়ে গেলাম! এই আতঙ্কের মধ্যে যথাসময়েই আমাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হল। আবারও আশায় বুম বাঁধলাম। চারপাশে জোর গুজব, ঈদুল ফিতরের আগেই গেজেট প্রকাশ করবে এবং ঈদের পরই নিয়োগ দেবে সরকার। কিন্তু অভাগা যেদিকে তাকায় সেদিকে সাগর শুকিয়ে যায়! কথাগুলো যুগে যুগে এমনি এমনি চলে আসেনি। বহুল প্রত্যাশিত গেজেট প্রকাশিত হল এবং আমদের ১৩০ জনকে বাদ দিয়েই। ঈদের খুশির সেখানেই সমাধি! ৭ই আগস্ট স্মরণকালের সর্বোচ্চ সংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগ দিল বাংলাদেশ সরকার আর তার দুই সপ্তাহের মধ্যেই তাদের কর্মস্থল জানিয়ে দেয়া হল।
গল্পটা শুধু আমার হতে পারত কিন্তু ভোগান্তির দিক দিয়ে আমরা ১৩০ জন মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছি। আমাদের এখন প্রতিদিন “পোস্টিং কোথায় হয়েছে?” এই জাতীয় নিরুত্তর প্রশ্নে জর্জরিত হয়ে দিনাতিপাত করতে হয়। প্রশ্নের তোড়ে বিয়ের অনুষ্ঠান, আত্মীয়-স্বজনের বাসা, বন্ধু-বান্ধবের ফোন সবকিছু অসহ্য লাগে! দোষ দেইনা তাদের কাউকে। সরকারী চাকরী নামের সোনার হরিণ সবাইকে ধরা দেয়না। আমরা ক’জন তার নাগাল পেলেও ধরা পাইনি এখনও। এই কষ্টের ব্যাখ্যা সবাইকে দেয়া যায়না, বোঝানো যায়না। কিছুদিন আগে সময় টিভিতে এক টক শোতে মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। আমাদের মধ্যে থেকে একজন ডাক্তার ফোনে খুব সুন্দরভাবে আমাদের বক্তব্য উপস্থাপন করলেন। মন্ত্রী মহোদয় ব্যাপারটা দেখবেন বলে কথা দিলেন এবং সবার পক্ষ থেকে একটা আবেদনপত্র আহবান করলেন। বললেন এই মাসের মধ্যেই নতুন গেজেট চলে আসবে। তাঁর বলতে যতটা না তার চেয়েও দ্রুততায় আবেদনপত্র জমা পড়ল। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বলল আমাদের সবার এনএসআই রিপোর্ট এখনও তাদের হাতে পৌঁছায় নাই। নিজ নিজ এলাকায় খজ নিতে বলা হল। যোগাযোগ করতে এক কর্মকর্তা বললেন আমার রিপোর্ট অনেক আগেই হেডকোয়ার্টারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা আটকে রেখে তার কি লাভ। ভুল করেছে পিএসসি, কাগজ হারিয়েছে পিএসসি আর এখন সব দোষ এনএসআইর। উদোর চণ্ডী বুঁদোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা! বিনা বাক্যে তার সব কথা মেনে নিয়ে ফোন রেখে দিলাম। এনএসআই হেডকোয়ার্টার থেকে রিপোর্টগুলো সাইন করে জনপ্রশাসনে পাঠিয়ে দিলেই আমাদের কাজ হয়ে যায়। কেউ কেউ বলছে মন্ত্রী এনএসআই-তে একটা ফোন করে বললেই দুদ্দাড় সব কাজ হয়ে যায়। কিন্তু আমরা মানুষগুলো ছোটখাটো তাই আমাদের হটাগুলোও ছোট। সেই ছোট হাতের নাগালে পাইনা মন্ত্রী মহোদয় বা এনএসআই কর্মকর্তার টিকির হদিস। শুধু অপেক্ষা করে যাই। ঘুম ভেঙ্গে শুরু হয় কর্মহীন, অনিশ্চয়তায় ভরা এক দিন। যে সরকারী চাকরী ডাক্তারজীবনের শুরুতে এগিয়ে যাওয়ার আশা যুগিয়েছিল আজ সেই সরকারী চাকরীই পিছিয়ে পড়ার হতাশা আর আতঙ্কের কারণ! মেনে নিতাম সবকিছুই যদি নিজের ভুলে কোন কাগজপত্রে তথ্যগত ত্রুটির কারণে বা স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কোন শারীরিক ত্রুটির কারণে বা পুলিশ ও গোয়েন্দা তদন্তে কোন সামাজিক ও রাজনৈতিক কার্যকলাপের কারণে বাদ পরে যেতাম! মেনে নিতে পারিনা কারণ ভুলটা আমার বা আমাদের ১৩০ জনের কারও না। সব সম্ভবের দেশে তাই আমাদের জন্যে হতাশা ছাড়া কিছুই থাকেনা দিনের শেষে। সরকার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে। বিপুল পরিমাণ চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছে। বহু লোকের কর্মসংস্থান তথা ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করেছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসকের ঘাটতি পূরণ করেছে। ১৩০ জন চিকিৎসক পিছিয়ে পড়লে ক্ষতিটা সরকারের না, সাধারণ জনগণের না কিন্তু সেইসব হতাশ ও সম্ভাবনাময় মেধার, সেইসব পরিবারের যারা সরকারী চাকরী নামের সোনার হরিণের স্বপ্নের পথিক।
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×