আরেক পশলা বৃষ্টির পর দুপুরের রোদ মিইয়ে যায়। সন্ধ্যের মত নির্জনতা নেমে আসে। আমাদের মন খারাপ হতে থাকে। আসরের আজান কখন দিবে। আব্বু-আম্মু ঘুমিয়ে গেলে বিড়ালের মত পা ফেলে বেড়িয়ে আসি। বার্মিজ জুতো কাঁদার ভেতর ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে ওঠে। নোয়াদের বাড়ির পেছন দিয়ে চুপি চুপি এগিয়ে যাই। মইদুল হালকা খুক খুক করে উঠলে দাঁত-মুখ খিচিয়ে তাকাই। নোয়ার বাবা রাগী মানুষ। একবার দেখলে শেষ। হই হই করে সারা বাড়ি মাথায় তোলবে। সামনে জঙ্গলের বড় গাছটার আড়ালে গিয়ে দম ছাড়ি। নারকোল গাছগুলো পিছলে হয়ে আছে। আজকে আর ডাব খাওয়া হবেনা। হাতাশ হয়ে একে অপরের দিকে তাকাই, কি করা যায়! ঝুপ ঝুপ শব্দ পেয়ে তাকাই কে আসছে দেখার জন্য। দেখি নোয়ার বাপ আসতেছে। স্যাতস্যাতে মাটির উপর দিয়ে দৌড়ালে দেখে ফেলবে।আব্বুকে বলে দিলে শেষ।দুপুরের পরে বের হওয়া নিষেধ।যদি জানতে পারে হাড্ডি আস্ত রাখবেনা। পরশু দিন রাম ধোলাই খেয়ে পরশ আজকে আর আসেনি। আমি,মইদুল আর হিরণ। নোয়া অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। এলাকার ভেতর বেশ সুন্দরী। ওর বয়েসী ছেলেরা সারাদিন ঘুরঘুর করে ওর পেছনে। ও মজা পায় অনেক।আমরা দেখতে পারিনা ওকে। অবশ্য সেটা ওর বাবার জন্যই। আমাদের দেখলেই ওনার চক্ষু চড়ক গাছে উঠবে। গম্ভীর রূঢ় কন্ঠে আমাদের বকবেন। তারপরে ঘাড় ধরে নিয়ে হাজির করবেন মা-বাবার সামনে।
ছবিঃ সংগ্রহীত।
আমরা বড় কড়াই গাছের পাদদেশে ঘাপটি মেরে রইলাম। নোয়ার বাবা সন্তপর্ণে এগুতে লাগলেন। জঙ্গলটা নোয়াদের। আসার সময় কেউ দেখেওনি যে আমাদের কথা জানবে। আল্লাহ আল্লাহ করতে লাগলাম। ”এবার যদি ধরা না খাই তাহলে আর বেঁচে থাকতে এই জঙ্গলে আসবো না।” এই বলে কসম কাটতে লাগলাম।যদিও এর আগেও এই কসম আল্লাহ কবুল করেন নি।সপ্তাহে এই কসম হাজার বার কাটি,তাও আল্লাহ শুনেনি।তবুও বিড়ালের মত চোখ বুজে কসম কাটতে লাগলাম। বুকের ঢিব ঢিব শব্দ ছাড়া আর কিছু শুনতে পাচ্ছিনা। মাইদুল কনুইয়ের গুতো দিয়ে দেখতে ইশারা করল। দেখলাম নোয়ার বাবা পুকুর পাড়ের গাছের শিকরের নীচ থেকে কি যেন বের করে লুঙ্গির কোচরে পুরলেন। মাইদুল বলে উঠল কনডম।আমি আর হিরন মুখে আঙ্গুল দিয়ে হিস হিস করতে লাগলাম,চোখ পাকিয়ে হাত দিয়ে চড় দেখাতে লাগলাম।
নোয়ার বাবা সতর্ক দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকালেন। কলিজার কাপুনি তবলার মত করতে লাগল। বিড়ালের মত চোখ বুঝে আল্লাহ আল্লাহ করতে লাগলাম।কিছুক্ষণ চারিদিকে নজরদারি করে বিড়ি ধরিয়ে ক্ষেতের দিকে গেলেন। হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।মাইদুলকে ইচ্ছামত গালিগালাজ করলাম।ও বিপদের মুহুর্তে হুটহাট বোকামি করবেই।মাইদুল বল্ল আজকে ক্ষেতে পাহারা দিবে । বল্লাম কন্ডম দিয়ে কি করবে? মাইদুল খ্যাক করে উঠল “হাদারাম বুঝোনা মোয়া খাও,আজকে সিরাজের মায়রে লাগাবে।” বল্লাম চল রাতে দেখি। মাইদুল চোক পাকিয়ে উঠল, “শুনিতে কামড়ায়? দেখলে কি হইবো বুঝছ? হিরণ খ্যাক করে উঠল, ”কচু হবে আমার, আজকে যাবো,দেখি কি হয়।আজকে কান্দাইয়া ছাড়ুম হালারে।” মাইদুল বল্ল, “মনে আছে, নোয়ারে ওইরহম দেইখা ওর মা সারাদিন জায়নামাজে বইয়া কানছিল। যেরহম বাপটা,মাইয়াডাও হেইরহম হইছে।বেশ্যা একটা।” হিরন বল্ল ”চল অহন।এশারের সময় বাইরাইতে অইবে।”
আমরা আবার নোয়াদের বাড়ির পেছন দিয়ে বাড়ির পথ ধরলাম।
মাইদুল সুপারির খোলের বেড়ার ফাঁক দিয়ে নোয়াদের ঘরে উকি দিয়ে ফিস ফিস করে আমাদের ডাকল।উকি দিয়ে দেখি নোয়ার স্যার নোয়াকে পড়াচ্ছে। ওর মা রান্ন ঘরে রাতের ভাত বসাইছে চুলোয়। মাঝে মাঝে স্যারের দিকে নোয়া কেমন করে যেন তাকাচ্ছে। নোয়া রাগ দেখাচ্ছে, সাপের মত মুড়িয়ে আসা হাতটা সরিয়ে দিচ্ছে বারবার।মাষ্টার মশাই গলা খাকরি দিয়ে জোরে বল্ল ”নোয়ার মা,মাইয়াতো পড়াশোনায় ভাল,লক্ষী মাইয়া পাইছো।” নোয়ার মা রান্না ঘর থেকে জবাব দেয় ”সবই আমহেগো দোয়ায় মাষ্টার।” এই বলে চা আর চালভাজা নিয়ে উঠে দাড়ায়। নোয়া ওর ফর্সা উরু পাজামা দিয়ে ঢেকে দিয়ে ফিতে বাঁধে। মাষ্টার মশাই হাত গুটিয়ে নিয়ে পড়ানোয় মনোযোগী হয়ে ওঠেন। চা আর চাল ভাজা দিয়ে ভাত দেখতে রান্না ঘরে যায় নোয়ার মা।
মাইদুল ফিস ফিস করে বলে,”চল আজান দিবে,মাগির কের্তন দেইখা লাভ নাই।” আমরা মসজিদ বাড়ির ঘাটলায় এসে ওজু করি।মুয়াজ্জিন একামত দিচ্ছে হাইয়া আলাস সালাহ,হাইয়া আলাস সালাহ। নামাজ শেষে এশার সময়া বের হবার কথা দিয়ে যার যার ঘরে ফিরি।
মনের ভেতর তখন নোয়ার ফর্সা উরু ভেসে ওঠে। রাগ উঠে, ওই বুইড়া ব্যাটার সাথে নোয়া ওরকম করে ক্যান? চিৎকার দিয়ে ওর মাকে ডাকেনা ক্যান? আবার পরক্ষনেই বলি, ঠিকই তো আছে, ওর মা সারাদিন জায়ানামাজে বসে কাঁদবে,ওর বাপ ওরে বারান্দার ঘরে আটকে রাখবে।মনের জ্বালা কমেনা, বইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নোয়ার কথা ভাবি।এশার আজান হয়। এক অক্ষরও পড়া হয়না।মন আরো বিষন্ন হয়ে ওঠে।বুকের ভেতর কেমন জানি মোচরে উঠে।আকাশে মেঘ আবারো গর্জন করে ওঠে, ঘর থেকে বের হইনা, বৃষ্টির ফোটা টিনের চালে নেমে আসে।নোয়ার ফর্সা উরু আমার বইয়ের পাতাকে আরো ঝাঁপসা করে দেয়।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:২৬