অঙ্গহানি করে ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য করা প্রতিটি শিশুর ভাড়া মাসে মাত্র এক হাজার টাকা। এ টাকা আদায় করতেন কামরাঙ্গীরচরের সুলতানগঞ্জ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক ও তাঁর সহযোগী নাজমা আক্তার। গ্রেপ্তারের পর র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে এ কথা স্বীকার করেন ওমর ফারুক।
র্যাব জানায়, শিশু নিয়ামুলের অঙ্গহানির অভিযোগে গত ১৪ জানুয়ারি ওমর ফারুককে কেরানীগঞ্জের খোলামুড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে প্রথমে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কামরাঙ্গীরচর থানার পুলিশ। গতকাল থেকে র্যাব জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। এর আগে গত ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা এলাকা থেকে ওমর ফারুকের অন্যতম সহযোগী শরীফুল ইসলাম ওরফে কোরবানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ওমর ফারুককে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারের পর ওমর ফারুক জানান, বাচ্চাদের ভিক্ষাবৃত্তিতে লাগানোর পাশাপাশি গরিব ও অসহায় মেয়েদের ধরে তিনি যৌনকর্মে বাধ্য করতেন। এ কাজেও নাজমা তাঁকে সহযোগিতা করতেন। তিনি জানান, ২০০৭ সালে তিনি কামরাঙ্গীরচরে একটি রিকশার গ্যারেজ গড়ে তোলেন। এর পাশাপাশি জমির দালালি শুরু করেন। এসব করতে গিয়ে কেরানীগঞ্জের চন্দ্রিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা আক্তারের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। নাজমার পরামর্শমতো তিনি বাচ্চাদের দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি ও মেয়েদের ধরে এনে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করতেন। তিনি জানান, তাঁর বাড়ির পেছনের একটি বাড়িতে এসব কাজ হতো। সেখান থেকে তিনি প্রতি মাসে ২০-৩০ হাজার টাকা আয় করতেন। এ ছাড়া তাঁর নেতৃত্বে এলাকায় একটি ছিনতাইকারী চক্র আছে। এরা রাতের বেলায় জিনিসপত্র ছিনতাই করে নাজমার কাছে জমা রাখত।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে ওমর ফারুক জানান, ২০০৮ সালে তাঁর সহযোগী সালাউদ্দিন ও কাওসার আট-নয় বছরের একটি ছেলের খোঁজ পান। এ ছেলেটিকে তাঁর বাড়িতে আনা হয়। এরপর তাঁর সহযোগী সাদ্দাম, সাইফুল, নাহিদ ও কোরবান আরেকটি বাচ্চা রাস্তা থেকে ধরে আনে। এদের দুজনকেই দুই মাস পাতিলের ভেতরে রেখে পঙ্গু বানানো হয়। এরপর তাদের ভিক্ষার জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। তিনি স্বীকার করেন, নাজমার নিয়ন্ত্রণে পাঁচ-ছয়টি বাচ্চা আছে। এদের ভিক্ষায় ভাড়া দেওয়া হয়। সোহেল নামে সোয়ারীঘাট এলাকার এক যুবক এ কাজটি দেখাশোনা করেন। তিনি এও বলেন, নাজমার নিয়ন্ত্রণে পাঁচ-ছয়টি মেয়ে আছে। এদের জোর করে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হয়েছে।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, নাজমাকে ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু হয়েছে। কিন্তু ওমর ফারুক গ্রেপ্তারের পর থেকেই তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন।
র্যাবের আইন ও জনসংযোগ শাখার পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল জানান, শিশু নিয়ামুল নির্যাতনের মামলার তদন্ত শুরু করেছে র্যাব। তাঁরা ওমর ফারুককে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন। এ ছাড়া ওমর ফারুকের সহযোগী খোকন, ইউসুফ, জাহাঙ্গীর, সোহেল, কোরবান, সাদ্দাম ও রাসেলকে ধরতে অভিযান শুরু হয়েছে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



