মিথ্যা গল্পে সত্য কওনের জইন্য কয়েকটা টোটকা আছে, চাইলে ফলো করতে পারেন...
পঞ্চ-ইন্দ্রিয়ের কারসাজি
আপনার চরিত্ররা, গল্পটা কিংবা গল্পের দুনিয়াটা কাল্পনিক হইলেও সেখানে বর্ণনা করা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অনুভূতিগুলারে বাস্তব, সত্যর উপর ভিত্তি কইরা বসাইতে পারেন। ধরেন আপনি একটা কাহিনী লিখলেন, সেইখানে আপনার গল্পের এক চরিত্র রাতের অন্ধকারে বৃষ্টির পানি জমা রাস্তায় হাঁটতে গিয়া ম্যানহোলের মুখ খোলা গর্তে ঢুইকা গেলো। কিন্তু, সেইখান দিয়া সে পৌঁছাইয়া গেলো ঢাকা শহরের নীচে অবস্থিত এক কাল্পনিক শহরে। অন্ধকার নাকি আলো সেইখানে? সেইখানে মাটি, ময়লা, পোকা-মাকরের মিলিত গন্ধ কিরকম? সেইখানে পানির শব্দ আছে? বাতাস? উপর থেইকা আসা শব্দ কি কানে আসে? ভেজা-শুকনা-পাথুরে কিরকম পথ দিয়া সে হাইটা যাইতাসে?- এগুলার বর্ণনা আপনার পাঠকরে এমনকি সেই কল্প দুনিয়ার সাথেও নিজেরে খাপ খাওয়াইয়া নিতে সাহাজ্য করবো।
মনের অনুভূতি
কোনো নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে কিরকম অনুভূতি ভর করে আপনার চরিত্রের মধ্যে সেইটা ভাবেন। তার বয়স কত, বড়ো হইসে কিভাবে, এখনের পরিস্থিতিতে তার অবস্থা কি দাঁড়াইবো। ধরেন উপরের কল্পদুনিয়ায় একটা ভয়ঙ্কর প্রাণী আছে। সেইটা আপনার চরিত্ররে ধাওয়া দিল। অচেনা একটা জায়গা, পিছনে এরকম ভয়ানক প্রাণী, কি করবো, কই যাইবো কিছুই সে জানে না। তার ভিতর তখন ভীষণ ভয়, অসহায়ত্ব - সেই অনুভূতিগুলারে লেখার কালিতে ধরেন। পাঠকরে ভয় পাইতে, অসহায় বোধ করতে বাধ্য করেন।
কল্পনার সাথে বাস্তবের মিশেল
কল্পনার সেই দুনিয়ায় বাস্তবের কিছু উপাদান নিয়া আসেন। এমন কিছু, যেইটার সাথে পাঠক নিজেরে রিলেট করতে পারবো। যেইটা পইড়া সেই দুনিয়ার মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করতে পারবো। ধরেন ঐ চরিত্রর আগেও, আরও মানুষ ঐখানে পৌঁছাইছে একই উপায়ে। তারা একটা গ্রাম বানাইসে, একটা সমাজব্যবস্থা গইড়া তুলসে। ঐ ভয়ঙ্কর প্রাণীটার সাথে লড়াই কইরা টিক্যা আছে তারা, উপরে ফিরা যাওনের পথ খুঁজতাসে। তাদের গ্রামের, ঘরের বর্ণনা দেন, সেইটা আসল পৃথিবীর সাথে মিল রাইখা করেন। তাদের কাপড়, তাদের খাবার সেগুলাতে দুনিয়ার সাথে মিল রাখেন। তাদের লড়াই, লড়াইয়ের অস্ত্রর ক্ষেত্রে বাস্তব কোন যুদ্ধের সাথে মিল রাইখা বর্ণনা সাজান। একটা কল্পদুনিয়া বানানোর জন্য জরুরী এগুলা।
প্রো-কৌশলী
গল্প লেখার সময় আপনারে প্রো-কৌশলী হইতে হইবো। কৌশলী হইতে গিয়া যাতে ভুল কইরা না ফেলেন সেইটা দেখতে হইবো। আপনি যদি পৃথিবীর একটা বাস্তব শহরে, বাস্তব ঘটনারে কেন্দ্র কইরা গল্প লেখেন তাইলে সেই বাস্তবটারে আঁকড়াইয়া ধরতে হইবো আপনের। বাস্তব দুনিয়ায় বৃষ্টি হইয়া রাস্তায় হাঁটু পানি জমে। রাতের বেলা কারেন্ট চইলা যায়, মোবাইলের চার্জ শেষ হইয়া যায়। আগের দিন ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি কইরা নিয়া যায় গাঁঞ্জাখোরেরা। কাজেই সেই গর্তে ডুইবা যাওয়াটা খুবই পসিবল। আবার কল্পনার দুনিয়া মানে কিন্তু এই না যে গরু আকাশে উড়বো, উড়তেই পারে তবে সেক্ষেত্রে তার কইলাম পাখা থাকতে হইবো। উপরে বলা ভয়ঙ্কর প্রাণীটা কেমন হইবো? ধরেন অল্প বাতাসে টিক্যা থাকে, লোম ছাড়া খসখসে চামড়া, মাটির নীচে ক্ষীণতম শব্দ বা কম্পন টের পায়, কানের ক্ষমতাও সেরকম পরিবর্তিত, অন্ধকারে দেখার মতন চোখ। সবশেষে মাটি খোঁড়ার মতন লম্বা-ধারালো-বাঁকানো নখ। এইরকম কিছু বা আপনার কল্পনার পরিধি আরও বাড়াইয়া নিয়া যুক্তি ও কৌশলের সমন্বয়ে ঠিক যেমনটা চান। তবে হ্যাঁ, ভুল এড়াইতে হইবো। কোথাও যাতে যুক্তিতে, হিসাবে গড়মিল না থাকে। তখন গিয়া আপনে কৌশলী থেইকা প্রো-কৌশলী হইয়া উঠবেন।
প্রশ্নটা তো সহজ আর উত্তরটাও জানা
আপনারে লক্ষ্য রাখতে হইবো, গল্পের একটা বিষয় নিয়াও যাতে প্রশ্ন না তুলতে পারে পাঠক। তারে আপনি নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখতে বাধ্য করবেন পুরা ব্যাপারটা। কোথাও প্রশ্ন উঠার অবকাশ থাকলে, আপনের গল্পের মধ্যে সেইটার উত্তরটাও দিয়া রাখতে হইবো। ঐ ভয়ঙ্কর প্রাণীটারে আপনের নায়ক মারবো কিভাবে? দূর্বলতাটা কই? জানতে, জানাইতে হইবো আপনারেই। ঐখানে কারা যাইতাছে, কেন যাইতাছে, ফিরার পথ কি? উত্তর দেয়ার দায় আপনের। এইরকম ম্যানহোল কেন আরেক দুনিয়ায় নিয়া যাইবো একজনরে, বুড়িগঙ্গায় লাশ ভাইসা না উইঠা - তার উত্তরটাও আপনে পাঠকরে জানাইতে বাধ্য। বাস্তব কিংবা কল্পনার মইধ্যে খুঁত থাকতে পারে, সেইটা ধরাইয়া দেয়ার দায় আপনার আর চরিত্রের মুখে তার কারণ বর্ণনাও আপনে করবেন। ধরেন ঐ যে রাস্তায় পানি জমা, বৃষ্টি হইছে; দেখা গেলো সারা ঢাকায় আর কোথাও বৃষ্টি হয় নাই। ঐ এলাকাতেই শুধু হইছে। কেন? হয়তো ঐ একজনরে সেই দুনিয়ায় নিয়া যাওয়ার জন্য। কেন? হয়তো একমাত্র সেই ফিরা আসার পথ খুঁইজা বাইর করতে পারবো। এই সব সুতা ছড়াইয়া একসাথে গুটাইয়া আনতে হইবো লেখকের।
তো, এইটা হইলো বেসিক নিয়মকানুন আর কি।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ২:৫২