somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথা ছিলো

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার খুব মনে আছে সেদিনের কথা। দাদু আমার ছোট্ট হাতটা ধরে আমাকে জিজ্ঞাসা করে, “কোলে উঠবি?”
আমি মাথা নেড়ে বলি, “দাদু পেট ভরা ব্যাদনা। কাল থেকে যাবো হা?”
দাদু আমার মাথার চুল টেনে বলে, “মাইয়া মানুষ হইছোস বইলা কি পড়াশোনা করন লাগবোনা? যা সালোয়ার পর‍্যা আয়। মাথায় সুন্দর করে উড়না দিবি। তোর দাদী তোর লাগি সক্কাল বেলা রুটিপিঠা বানাইছে। নারিকেলের দুধ আছে, ওইটা দিয়া খায়া দাদুর কোলে চড়ি মাদ্রাসায় যাবি”।

আমি মাথা নাড়ি। আমার মাদ্রাসার হুজুরাইনরে খুব ভয় লাগতো। উনি কেমন করে যেন তাকাতো। বুকে কাপন ধরে যায়। আমার ছোট ভাইটা এক বছর আগে থেকেই মাদ্রাসা যাওয়া শুরু করছে। দাদী আমাকে যতে দেয়নাই আগে। উনি খুব সন্দেহ করতেন, মেয়েদের আসলেও পড়াশোনার দরকার আছে কিনা।

নোটন আমার উড়না ধরে বলে, “বুবু আজকে কি তুমি আমার সাথে যাইবা?”
আমি মাথা নেড়ে বলি, “তুই আমারে আমপাড়া শিখাবি। আমি তাইলে আর মাদ্রাসায় যামুনা”।

নোটন আমার উড়না কামড়িয়ে ধরে বলে, “বু মাদ্রাসার হুজুর অনেক মারে। এই দেখো আমার পিঠের মইধ্যে। মারছে না?”

আমি নোটনের পিঠে হাত বুলিয়ে দেই। নোটন আমার হাত ধরে দাদুর সাথে মাদ্রাসায় যায়। ৮৯ সালের এক কাকাডাকা ভোরে আমি প্রথম শিক্ষা গ্রহণ করতে যাই। আমাদের রাধানগর থানায় তখন একটাই মহিলা মাদ্রাসা ছিলো। সেই মাদ্রাসার হুজুরাইন ছিলেন আমার ছোটভাই যে মাদ্রাসায় পড়তো সেই মাদ্রাসার মুদাসসেরের স্ত্রী। দুজনই খুব রাগী ছিলেন। আমি যখন ভর্তি হলাম মাদ্রাসায় আমাকে একটা সাদা কাগজে নাম লিখতে বলা হয়। আমি খুব শখ করে আমার ডাক নামটা লিখলাম নুপূর। সাথে সাথে হুজুরাইন আমাকে বিশাল একটা ঝাড়ি দিলো।আমাকে বললো, “ফাজিল মেয়েছেলে। আদব লেহাজ শিখোনাই। নাম কেউ এটা লেখে। ভালো নাম লিখো”।
আমি মন খারাপ করে বা ভয়ের ঠেলায় আমার পুরো নামটাই লিখলাম তখন, ফায়েজা শিকদার। ভয়ে নুপূর আর লিখলাম না।


প্রথম দিন আমি সুর করে আরবী অক্ষরগুলো পড়লাম আরো ১০-১১ জন মেয়ের সাথে। ওরা কেউ কেউ আমার থেকেও তিন চার বছর বড়। আরবী অক্ষরগুলো যখন হুজুরাইনের সাথে সাথে উচ্চারণ করছিলাম মনে খুব শান্তি লাগছিলো। ৬ বছরের আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে থাকলাম, “আলিফ বা তা ছা জিম হা খা...”

যাওয়ার আগে হুজুরাইন আমাকে ডাক দিয়ে একটা মিঠাই খেতে দিলো। হাতির মত দেখতে একটা মিঠাই। কটকট করে বললো, “কিসব আকার দিছে মন্ডা মিঠাইয়ের। কেন গোল্লা করা যায়না। খাইতেও মজা।আল্লাহ মাফ কইরো”।
আমি সাহস করে হুজুরাইনের হাত ধরে একটা চুমু খেয়ে হেসে দিলাম। হুজুরাইন চোখ বড় বড় করে আমাকে কোলে নিয়ে আমার দাদুকে বললো, “এইটা আমার মাইয়া এখন থিকে। যান আপনি বাড়িত যান”।
আমার দাদু ফোকলা দাত বের করে হেসে বলে, “আমার নাতনীর প্রতি তোলা ৮০ স্বর্ণমুদ্রা। দেবার ক্ষেমতা আছে?”
৮ বছর বয়সে আমি রাধানগর সরকারী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হই। সেসময় পাবনা জেলায় এই স্কুলটাই সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ছিলো। আমি সেখানে ভর্তি হলাম ক্লাস টুতে। আমাদের পাশে বালক শাখা। আমি আর নোটন এক সাথে স্কুলে যেতাম, আসতাম। স্কুলের থেকে বাসা প্রায় দু কিমি ছিলো। আমরা মোহন বাগচীর দোকান থেকে দুইটাকার মিষ্টি কিনে বাসায় যেতাম। এক টাকা আমার, এক টাকা নোটনের। প্রতিদিন খেতাম। মাঝে মাঝে করিম দাদুর ধানক্ষেতে লুকোচুরি খেলতাম। একদিন নোটনকে একটা ঢোড়া সাপ কমড়িয়ে ধরে। আমি চিৎকার করে ওখানেই ব্যথা ব্যথা বলে ফিট হয়ে যাই। যখন জ্ঞান ফেরে আমি তখন আমার বিছানায় দাদুর কোলে শুয়ে আছি। আমার ভাই আমার পাশে তার লাল রঙের বলটা নিয়ে খেলছিলো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে বলি, “ও নোটন ব্যাথা পাইছোস?”
নোটন ওর পায়ের তালু দেখায় বলে, “না বুবু। এইটা দিয়া গুড়ায় দিছি না”।

আমার তিনদিন জ্বর ছিলো। কয়েকবার বমিও করেছিলাম। দাদু আমার পাশে সারারাত জেগে থাকতো। আমার মাথায় পট্টি দিয়ে দিতো। আমি ঘুমাতে পারতামনা। কি যন্ত্রণা, কি যন্ত্রণা। হঠাৎ করে এক সকালে জ্বর ছেড়ে গেলো। আমি দাদুকে বললাম, “দাদু একটা কথা রাখবা?”

দাদু বলে, “না রাখন যাইবোনা। তুই উৎকট উৎকট কি যেন চাইয়া বসবি। আমি দিবার পারুম্না”।

আমি দাদুর কাছে হাত জোড় করে বলি, “দাদু আমার না খুব ডাক্তার হবার শখ। আমারে ডাক্তারি পড়াবা? আব্বা আম্মা যেমনে মারা গেছে, কাউরে এমনে মরতে দিমুনা”।

দাদু কান্দে। আমি অনেক ছোট্ট ছিলাম, কিন্তু আমার মনটা অনেক বড় হয়ে গিয়েছিলো।একদম গুড়িকালে যাদের বাবা মা মারা যায় তারা হঠাৎ করে এমনই বড় হয়ে যায়। দাদু আমার মাথায় হাত দিয়া বলে, “আমরা গরীব মানুষরে দাদু। কিন্তু কথা দিতাছি, তোরে আমি জমি বেইচ্যা হইলেও পড়ামু”।

আমি ঠিক এমন স্বপ্ন দেখতে দেখতেই বড় হই। আমার পড়াশোনা করতে ভালো লাগতোনা। আমার শুধু সিনেমা দেখতে মন চাইতো। আমার বন্ধু হয়েছিলো বেশ কয়েকটা। আমি এস.এস.সি পরীক্ষার ঠিক ৭ দিন আগেও ওদের নিয়ে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম হলে। দাদু তখন কোথায় যাই, কি করি কোন খেয়াল রাখতে পারতোনা।দাদী মারা গিয়েছিলেন, দাদুরও অনেক বয়স হয়ে গেছে, সব কিছু উনার বুঝেও আসতোনা। আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিলো সজল। ওর বাবা আমাদের থানার ইউপি মেম্বার। সবাই ওকে তাই বেশ খাতির করতো। ও শহরের জোনাকী সিনেমা হলের টিকেট এনে দিতো, আমরা ওকে নানান রকম তেল দিয়ে সিনেমা দেখতাম। আমরা পাচজন ছিলাম।আমি, সখিনা, সজল, রাসেল আর কামাল। কামাল আমাকে দুইবার বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলো, রাসেল একবার (ওর বান্ধবীর উপর রাগ করে)। আমি সবাইকে না না বলতাম। আমার ভালো লাগতো- না বলতে। নিজেকে সিনেমার নায়িকার মত মনে হতো। অবশ্য মাঝে মাঝে খুব বিরক্তও লাগতো। নাছোড়বান্দা কিছু বদ ছেলে পেলে আমাকে চিঠি লিখতো এই সেই ঢঙ্গের কথা লিখে।

আমি দেখতে ভালো ছিলাম না, স্পষ্ট করে বললে আমি ফর্সা ছিলাম না। কিন্তু কেউ কেউ বলতো আমার চোখে কবিতা লিখা আছে, কখনো শেষ হতে না চাওয়া কবিতা। তাই আমাকে কোন একদিন একজন কবি এমনভাবে আকড়ে রাখবে, যার থেকে চাইলেও আমি দূরে যেতে পারবোনা। কাউকে ভালোবাসতে পারবোনা।আমার রঙ্গিন চশমা পরা সেই দিনগুলোতে এমন একজনকে আসলেও ভাবতাম, কল্পনা করতাম। কিন্তু কি অদ্ভুত তাকে কখনোও দেখতে পেতাম না। একজনকে খুব ভালো লাগতো, ভালোবাসতাম কতটা তা বুঝতামনা। মাঝে মাঝে ওকে মনে হত যেন একজন কবি। নাম শিমুল, শিমুল ফুলের মত টকটকে গায়ের রঙ। তাকিয়ে থাকলে মনে হয় যেন এই একটু ছুয়ে দেই ওর চোখে। কি অদ্ভুত ও কখনও আমার দিকে তাকাতোনা। একবার খেয়ালও করতোনা।

আমার ইংরেজী ১ম পত্র পরীক্ষার পর যখন স্কুলের গেট দিয়ে বের হলাম তখন দেখলাম ও দাঁড়িয়ে আছে, ওর সাথে আমাদের ক্লাসেরই একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে। দুজনের হাতে সবুজ রঙের গোলা। আমি হা করে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। একবার মনে হলো যেয়ে একটা ঠাশ করে থাপ্পর লাগিয়ে আসি মেয়েটাকে। মেয়েটার নাম ছিলো বরুণা। আমার ওকে একদম ভালো লাগতোনা। কেমন ঢং করে কথা বলে, কিন্তু ওর বাবা পাশের গ্রামের ইউপি মেম্বার ছিলো। তাই অনেক টাকা। আমার মত ৩টা সবুজ জামা আর একটা সাদা জামা পড়ে বছর কাটিয়ে দিতে হতোনা। সেদিন বাসায় যেয়ে খুব কাদলাম। মনে হলো, আমার পৃথিবীটা ভেঙ্গে গেছে। শিমুলকে যদি একবার বলতে পারতাম, ওকে আমি কেমন করে কতটা করে ভালোবাসি। সিনেমাতে যেমন দেখায় তার থেকেও অনেক বেশি।

সেদিন রাতে আমি ঘোর লাগা চোখে সারাটারাত জানালার শিক ধরে বসে ছিলাম বিছানায়। আমার এস.এস.সি পরীক্ষা ভালো হলোনা। আমার মনটাও ভালো হলোনা। কিছু ভালো লাগতোনা, সিনেমা দেখতেও ভালো লাগতোনা। ওর কথা ভাবতে ভালো লাগতো। পরীক্ষা শেষে একদিন বিলের রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম। বিলের পারে দাঁড়িয়ে থাকতে অন্যরকম লাগতো। নরম সবুজ ঘাস এই সময়টা খুব ভেজা ভেজা থাকতো।আমি হাতে সেন্ডেল নিয়ে আনমনে হাটতাম, কত কত কথা ভাবতাম। নিজের ভাবনাগুলো সাজিয়ে রাখতাম একদিন তাদের নিয়ে কবিতা লিখবো ভেবে। বিলের থেকে একটু দূরে একটা অশ্মথ গাছ ছিলো, আমি বলতাম বুড়ো গাছ। আমার খুব মন খারাপ থাকলে গাছের সাথে কথা বলতাম। গাছটাকে আমার কেন যেন বাবার মত লাগতো। আমি বাবাকে যেয়ে বললাম, “বাবা মনে অনেক কষ্ট, একটু মাথায় হাত বুলায় দিবা?”
আমি খেয়াল করিনি আমার পিছনে কখন শিমুল এসে দাড়িয়েছে। আমার পাশে দাঁড়িয়ে বললো, “তুমি ২৩ দিন ধরে আমার বাসার পাশে এসে উকি দাওনা আমার রুমে। কেন?”
আমি ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। কিছু বললাম না।কিছু বলার মত ক্ষমতা ছিলোনা। কেমন করে বলবো। আমি ওর চোখের দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। ১৭ বছরের আমি, আমার সমস্ত সত্ত্বা ওকে দেখছে, সারাটা ধরণীর সব পেছনে ফেলে শুধু ওকেই দেখছে।

ও এসে বললো, “তুমি যখন আমার ঘরে দূর থেকে উকি দাও আমার তখন খুব হাসি পায়। কিন্তু আমি কিছু করিনা। লজ্জা পাইয়া ভাগবা তাই”।

আমি ওর পাশে দাঁড়িয়ে বললাম, “তুমি আমাকে চাও?”
ও কিছু বললোনা। আমাকে এমন করে জড়িয়ে ধরলো আমার মনে হলো সারা পৃথিবীটা ঠিক যেন আমার বুকের মধ্যে। কেউ কি জানে এই জগতে এখন আমি সবচেয়ে সুখী নারী। এমনটাও কি হয়? ছোট থেকে যা্কে ভাবতাম রাজার ছেলে, ভাবতাম কখনো ওর সাথে যদি পাশাপাশি থেকে রাজার ছেলের গন্ধ নিতে পারতাম সেই মানুষটা এখন আমার এত কাছে। ও অল্প অল্প করে হাসতে হাসতে বললো, “আমি তোমারে অনেক চাই। কিন্তু আব্বার ভয়ে বলতে পারিনা, আব্বা জানলে মারি ফেলবে। তুমি কাউরে কখনো বলোনা তোমার সাথে আমার ভালোবাসা হয়। ঠিক আছে?”

আমি মাথা নাড়ি, আমার চোখটা তখন ঝাপসা হয়ে আছে। আমার বুকের ভেতরে তখন একজন নারী জেগে উঠলো। পরম মমতায় ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম, “তুমি আমারে কখনো ছেড়ে যাইওনা। কখনো না”।
ও আমার মাথায় হাত রেখে বলবো, “এই জগত তার পরের জগত এবং আরো যত জগত আছে সবখানে শুধু তুমি আর আমি, আমি আর তুমি – ঠিক আছে? কিন্তু তুমি কাউরে কিছু বলবানা, ঠিক আছে?”

আমরা দুইজন দুইজনকে ভালোবাসতাম। ঠিক যতটা ভালোবাসলে মনে হয় মরে গেলেও এখন আর ক্ষতি নাই ঠিক ততটুকু। আমার প্রথম ভালোবাসা, আমার শেষ ভালোবাসা। আমি ওকে ঠিক ওইদিনও ভালোবাসতাম ঠিক যেদিন ও আত্নহত্যা করে। ওর জিভ বের হওয়া মুখটা দেখে আমার একটুও ভয় লাগেনি। আমি ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ওর চোখগুলো কি শান্ত হয়ে ছিলো। আমি জানি আমি জানি আমি জানি, ও তখনো ঠিক আমার কথা ভাবছিলো। এত প্রশান্তি কেমন করে নাহলে চোখে আসে?এই এক জীবনে একজন আরেকজনকে যতটা ভালোবাসছি, কাছ থেকে দেখছি এমন করে এই ধরায় কেউ কাউকে চাইতে পারেনা। আমি জানতাম আর একটু পর আমিও মারা যাবো। ওর সাথে দেখা করা দরকার। আমার ভেতরে যে আত্নাটা আছে, ওটার একটা বিশাল সীমাবদ্ধতা আছে। কেন যেন সেটা শরীর থেকে বের হয়ে ওর আত্নাকে জড়িয়ে ধরতে পারতোনা। যতবার আমরা কাছাকাছি ছিলাম, একজন আরেকজনের চোখ চেপে ধরে তাকিয়ে থাকতাম ততবার মনে হত ভেতর থেকে কি যেন বের হয়ে আসতে চায়। আমি তোমাকে ভালোবাসছি আমার অধিকারে যা ছিলো সব দিয়ে। আমি একটুও রাগ করিনি তুমি আমার আগে এভাবে চলে গেলে তাই। একটুওনা । তোমার উপর কি রাগ করা যায় বলো? তুমি আমার পড়ন্ত বিকেলের লালা টুকটুকে শিমুল রাঙ্গা ভালোবাসা। তোমার লালচে আগুনে আজ আমি আবার তোমাকে ভালোবাসলাম।

ও মারা যাওয়ার আগের দিন আমার কাছে রাতে দেখা করতে এসেছিলো। আমার ঘরের ভেতর ওকে লুকিয়ে নিয়ে আসলে ও খুব কান্না করে। আমাকে বললো, “ওর বাবা নাকি সব জেনে গেছে আমাদের কথা। ওকে আজ রাতেই মেরে ফেলবে। ওর মাকেও মেরে বলবে”।
আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম, “কিছু হবেনা। তুমি এমন করে কাইদোনা সোনা। আমি আছি না? কিচ্ছু হবেনা। তোমার বাবাকে যেয়ে বলবা সব মিথ্যা। আমার যত কষ্টই হোক, আমি তোমার সাথে আর দেখা করবোনা। তুমি শুধু মাঝে মাঝে আমার বাসার পাশে আইসো। আমি একবার, মাসে মাত্র একবার তোমার ঘরে উকি দিয়ে তোমারে নয়ন ভরে দেখব। তাও তুমি কাইদোনা”।

শিমূল আমার হাত ধরে ফোপাতে ফোপাতে বলে, “আমার হারায় যাইতে ইচ্ছা করেনা। আমার তোমার থেকে হারায় যাইতে ইচ্ছা করেনা”।

আমি জানতাম ওর বাবা রইস পুলিশ খুব খারাপ মানুষ ছিলো। সে রাধানগর থানার ওসি ছিলো, অনেক রাগী। শিমূল উনার আপন সন্তান ছিলোনা তো, তাই ওকে খুব মারতো। শিমুল উনাকে যমের থেকেও বেশি ভয় পেতো। আমি মাঝে মাঝে হাসতাম, কিন্তু যখন চোখের মধ্যে ভয়টা দেখতাম তখন নিজেও ভয়টা অনুভব করতাম।কিন্তু আমি ভাবতে পারিনি এমন কিছু হতে পারে, তাহলে সে রাত এবং আরো হাজার রাতে আমি ওকে আমার কাছে লুকিয়ে রাখতাম।আমার ভালোবাসার মানুষটা এমন করে হারিয়ে যাবে এটা আমি ভাবিনি, আল্লাহ জানেন।

আমার দাদা আমাকে আমার প্রিয় অশ্মথ গাছের কাছ থেকে টেনে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো। আমার ভালোবাসার মানুষটাকে আমার বাবা তখন ছায়া দিয়ে রেখেছে। ওর চোখ ভরা ভালোবাসা যেন সারাটা গাছে ছড়িয়ে গেছে। তখন খুব ঝড় চলছে। আমার দাদা আমাকে চিৎকার করে বলছিলো, “দাদু কিচ্ছু হয়নাই। কিচ্ছু দেখোনাই। তুমি আমার লগি বাড়িত চলো আগি। তোমার ভাইয়ের খুব জ্বর। আর ইহানে আসিবানা। তোমার পায়ে লাগি দাদু আসো আমার সাথি”।
আমি চোখ বুজে মাটিতে পড়ে গেলাম। এরপর আমার কিচ্ছু খেয়াল নাই। আমি বিড়বিড় করে বললছিলাম, “আল্লাহ আমারে কবুল করো। আমারে নিয়ে যাও তোমার কাছে। নিয়ে যাও ওর কাছে”।

আমার জ্ঞান ফিরলো অনেক অনেক দিন পর। দিন সপ্তাহ মাস কেটে গিয়েছিলো। আমি জানতাম না আমি ঠিক কোথায় আছি। আমার সবসময় অনেক জ্বর থাকতো। আমার ভাইটা আমার পাশে সারাদিন বসে আমাকে বলতো, “আপু তুমি কি মারা যাইতেছো? আমারে একা রাখি কোথাও যাইওনা। দুইদিন পর দাদুও মইর‍্যা যাবে। তখন আমারে কে দেখবে?”

আমি ওর কথা শুনতাম, বুঝতাম। মাঝে মাঝে শিমূল আসতো, আমার হাত ধরে বলতো, “এখনো ভালোবাসি। আরো বেশি বেশি ভালোবাসি। এই দেখো আমার হাত ছুয়ে, তোমার স্পর্শের উষ্ণতা এখনো লেগে আছে। দেখো। তুমি কষ্ট পাইওনা আর। তোমারে আমার জন্য অনেক কিছু করতে হবে। আমারে আরো ভালোবাসতে হবে।পারবানা নুপূর?”

আমি তখন চিৎকার করতাম, পাগলের মত। শুধু বলতাম, “তুমি কই? তুমি কই?”

কেউ সাড়া দিতোনা। সমস্ত দুনিয়াটা তখন অন্ধকার হয়ে যেতো। সবাই বলতো, আমি পাগল হয়ে গেছি। আমাকে যেন পাগলা গারদে দিয়ে আসে।আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতাম। দাদুর হাত ধরে একদিন বললাম, “দাদু দাদীমণিকে মনে পড়েনা?”
দাদু হেসে বলে, “মনে পড়ে। এই জন্যইতো বাইচ্যা আছি। ডর লাগে, যদি মরি যায় তাইলে এমন করে বুকের ভিতর ভালোবাসাটা বাইন্ধা রাখবো কেডা ওর লাগি? তোরে আর তোর ভাইটারে যখন দেখি, তখন মনে হয় ওইযে ওর চোখটা তোরে দিয়া গেছে। ওইযে ওর নাকটা তোর ভাইয়ের কাছি। আমার তো আরো অনেক দুখ আছে বুজি। আমার আদরের একটামাত্র পোলা, সোনার টুকরা বউটা হারায় গেছি না। আমি বুকটার মধ্য পাত্থর ভরি রাখছি রে দাদু। সকলির ভালোবাসা লইইয়ি তোদের জন্য রাখি দিছি।তুই হারাই যাইসনারে বুজি। আর কাউরি হারাইতে দেখতি মন চায়না। পেরেশান হইয়ি গেছি।শেষ কটা দিন একটু আরাম করি তাকতে চাই, নিঃশ্বাস লয়ি মরতে চাই”।

আমি দাদুর হাত ধরে থাকি, আমার চোখের পানি সব শুকিয়ে গিয়েছিলো। এখন আর নয়ন ভরা জল খেলা করেনা, এখন আমার কষ্টগুলো আমি বুকের মধ্যে লালন করতে শিখে গিয়েছি। আমি আগে ভালোবাসতে জানতাম, এখন ভালোবাসাটাকে ভালোবাসতে জানি। আমার দ্বিতীয় জীবনটা ঠিক তখন শুরু হয়। আমি এস.এস.সিতে এ+ পেলাম কেমন করে জানি। সমগ্র দেশ থেকে সেবার গুণে গুণে ৭৬ জন মাত্র এ+ পেয়েছিলো। আমি পরীক্ষা ভালো দেইনি। তবুও কেমন করে এত ভালো হলো জানিনা।দাদু সেদিন বললো, “বুজি গ্রাম ছাড়ার সময় হইছি তোর। এখন তোরে ঢাকায় পড়ামু, আমার আদরের নাতি সবচেয়ে ভালো কলিজি পড়বো। তোমারে ডাক্তার বানামু।হেই বড় ডাক্তার”।

ঢাকা শহরে আমার এক দূরের ফুপু থাকতেন। জায়গাটার নাম পল্লবী, শুনলে মনে হয় অনেক গাছ গাছালীতে ঘেরা। আসলে তেমন কোন গাছ নেই, শুধু মানুষ আর মানুষের গড়া দালান। ফুপু আমাদের খুব কাছের কেউ ছিলেন তা না। আমার দাদুর সবচেয়ে বড়ভাইয়ের মেয়ে ছিলেন ফুপু। বছরে একবার রাধানগর আসতেন, আমাদের জন্য অনেক কিছু নিয়ে আসতেন। আমরা গরীব ছিলাম তো, তাই প্রতিবছর আমাদের ঈদের জামা উনি কিনে দিতেন। ফুপু আমাকে নুপু বলে ডাকতো।আমি ডাকতাম পুপু বলে।

ভরদুপুরে যখন ফুপুর বাসায় পৌছালাম তখন খুব তেষ্টা পেয়েছে। ফুপু আমাকে দেখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো, “মা এই অবস্থা কেন তোর?”
আমি ফুপুকে জড়িয়ে ধরে বললাম, “ভালো আছি অনেক ফুপু। তোমাকে কতদিন দেখিনা। তুমি ভালো আছো?”
ফুপু আমাকে তার পাশে বসিয়ে কতশত গল্প করলেন, নিজের কথা বললেন। আমিও অনেক কথা বললাম, নিজের কথা।দাদুর কথা। আমার আদরের ছোটভাইটার কথা।শুধু ভালোবাসার কথাটা বললাম না। ওটা শুধু নিজেকে বলার জন্য। কাউকে ওর কথা বলতে ভালো লাগেনা। মনে হয় ও হারিয়ে যাবে। আমি ওকে শুধু নিজের ভেতরে বন্দী করে রেখেছি। কে বলেছে ও হারিয়ে গেছে? ওকে আমি হৃদয়টা খুলে যখন ইচ্ছা দেখতে পারি। ও ঘুমিয়ে থাকে আমার মাঝে।আমি ওকে ভালোবাসার উষ্ণতা দেই।

আমার একটা নতুন জীবন শুরু হয় মসজিদের শহরে। আমি হলিক্রস কলেজে ভর্তি হই।ফুপুর বাসা কলেজ থেকে খুব কাছেই ছিলো। আমাকে প্রায়ই ফুপু নিয়ে যাওয়া আসা করতো। আমার জীবনে কোন আনন্দ ছিলোনা, শুধু মাঝে মাঝে যখন ফুপু আমাকে নতুন বই কিনে দিতো আমার খুব ভালো লাগতো। আমি অনেক বই পড়তাম। আমার প্রিয় বই ছিলো সাতকাহন। নিজেকে মাঝে মাঝে মনে হতো একজন দীপাবলী।

প্রায় দুইবছর পড়ে আমি একদিন কম্যুনিটি মেডিসিনের ক্লাসে বসে আছি রুমানার পাশে। রুমানা আমাকে বললো, “এই সাবজেক্টটা মেডিকেলে কেন পড়ানো হয় আমাকে কেউ ব্যাখ্যা করবে একটু প্লিজ? আমি কালকে আইটেম দিবোনা। দ্যাটস ফুল এন্ড ডাবল ফাইনাল”।
আমি মাথা নেড়ে বলি, “ভালো কথা। আমি রাজী।চল আজকে লালবাগ যাই”।
রুমানা আমাকে ভেংচি কেটে বললো, “আমার বয়ফ্রেন্ড আছে। ওকে নিয়ে আজকে মনের শখে নীরব হোটেলে খিচুড়ি খাবো। তারপর হলে এসে তোকে খিচুড়ির রূপ গন্ধ বর্ণনা করবো”।
আমি মাথা নেড়ে বলি, “আমি একাই তাহলে যাবো। ওখানে মামার চটপটি খাবো, সাথে পার্সেল করে নিয়ে আসবো। তোকে দেখায় দেখায় খাবো”।

ক্লাস থেকে বের হয়ে আমি হলের পথে রওনা দেই। আজকে রোদটা খুব তীক্ষ্ণ, চারপাশ কেমন যেন ঘোলা ঘোলা লাগে। কালকে স্কলারশীপের টাকা পেয়েছি, কিন্তু খরচ করার উপায় নাই। আমি একটু করে টাকা জমিয়ে নোটনকে একটা মোবাইল কিনে দিবো বলে ঠিক করেছি। আমার ভাইটার সাথে ইচ্ছা করলেই কথা বলতে পারিনা। তাই খুব কষ্ট হয়। দাদুটাও কেমন যেন আজকাল খুব অসুস্থ থাকে। অস্থির লাগে অনেক। গ্রামটা খুব টানে, কিন্তু যেতে পারিনা।
হাটতে হাটতে হঠাৎ করে খেয়াল করলাম শিমূল আমার থেকে একটু দূরে দাড়িয়ে আছে। আমি হা করে তাকিয়ে থাকলাম। আমি হাটতে হাটতে ওর একদম সামনে যেয়ে দাড়ালাম। ছেলেটা মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে আমাদের ক্লাসের একজনের সাথে গল্প করছে। নাহ শিমূল এমন করে কথা বলেনা, কিন্তু পাশ থেকে পুরো ওর মত লাগলো। আমি তবুও ভয়ে ভয়ে সামনে এগিয়ে ছেলেটার দিকে তাকালাম। ছেলেটা আমাকে খেয়াল করে সামনে এগিয়ে এসে বললো, “ভালো আছেন?”
আমি বুঝতে পারছিলাম না কি বলবো। একবার মনে হলো কিছু না বলে দ্রুত হাটা দেই, আবার মনে হলো একবার জিজ্ঞেস করি ওর নামটা।দেখতে কত মিল আমার ভালোবাসার মানুষটার সাথে।আমি সাহস করে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনার নাম কি?”
ছেলেটা মুচকি হেসে বললো, “নাম পরে বলি। আপনি অনেকক্ষণ ধরে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। আমি কি কোনভাবে আপনাকে চিনি?”
আমি মাথা নাড়লাম, কিছু বললাম না। আমার আর কথা বলতে ইচ্ছা হচ্ছিলোনা। আমি যাই বলে চলে যাচ্ছিলাম। ছেলেটা বললো, “আমি কিন্তু আপনাকে চিনি। আপনি খুব সুন্দর কবিতা আবৃত্তি করেন। আমি বাংলা একাডেমীতে গত ১৪ তারিখ আপনাকে কবিতা আবৃত্তি করতে শুনেছি। আপনি রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর যে কবিতাটা আবৃত্তি করেছিলেন, সেটা আমার সবচেয়ে প্রিয় কবিতা। কবিতার শেষের আগের লাইনটা ছিলো,
চলে গেলে মনে হয় তুমি এসেছিলে
আপনি ভুল করে ‘গিয়েছিলে’ বলেছিলেন। বাকী সব ঠিক আছে”।

আমি ভ্রু কুচকিয়ে বলেছিলাম, “আমি ভুল বলেছি মনে পড়ছেনা”।

অর্ক লজ্জা পাওয়া হাসি দিয়ে বললো, “To err is human. উলটো ঘুড়ি কবিতাটা কিন্তু আরো ঝলমলে তাই না। আচ্ছা বাদ দিন। আপনি মনে হয় বিরক্ত হচ্ছেন। আমি আমার বন্ধুদের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম। ভালো থাকবেন। আমার নাম অর্ক, অর্ক মানে সূর্য।কিন্তু আমি চাঁদ হতে ভালোবাসি”।

আমি ভালো থাকুন বলে যখন বিদায় নিচ্ছিলাম, তখন দেখলাম ছেলেটা চোখের পলকে কোথায় যেন নাই হয়ে গেলো।

এরপর অনেকদিন অর্কর সাথে আমার দেখা হয়নি। প্রায় দুমাস পর আমি যখন লাইব্রেরীতে বসে আছি তখন অর্ক হঠাৎ করে আমার পাশে দাড়িয়ে বললো, কাল ‘কথা ছিলো সুবিনয়’- মুখস্থ করেছি। ঝকঝকে মুখস্থ। আপনাকে আবৃত্তি করে শুনাবো বলে রাত থেকে অপেক্ষা করছি। শোনালে বিরক্ত হবেন?”
আমি বললাম, “শোনান। আমার ভালো লাগে কবিতাটা”।
অর্ক হাসিমুখে বললো, “আজ না থাক। আরেকদিন। খুব ক্ষিদা লেগেছে। আমার বন্ধুর সাথে দেখা করতে এসেছিলাম। সে একটু আগে এক্সিডেন্ট করেছে ঠেলাগাড়ির তলায় পড়ে। ওকে হলে ওর বিছানায় শুইয়ে দিয়ে এলাম।আপনি দুপুরে খেয়েছেন?”

আমি হাসিমুখে বললাম, “না আমি দুপুরে খাইনা”।

অর্ক অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো, “আপনি তো কাঠির মত। না খেয়ে বাচেন কি করে?”
আমি মাথা নেড়ে কেমন করে যেন বলে ফেললাম, “বাচতে চাই কে বললো?”

অর্ক হাত নাড়িয়ে বললো, “একদম বাজে কথা। সবাই বাচতে চায়। কেউ কিছু পেতে, আর কেউ ভালোবাসতে।কেউ কেউ হয়তো জানেনা কেন বেচে আছে। আপনি হয়তো এই দলে আছেন, তাই না?”

আমি কিছু ভাবতে পারছিলাম না। এই কথাগুলোর এখন প্রয়োজন ছিলোনা। ভালো লাগছিলোনা শুনতে। আমি কথা ঘোরানোর জন্য বললাম, “আপনি খেতে যাবেন না? আমাদের ক্যান্টিনের খাবার ভালো না। বাহিরে থেকে খেলে ভালো করবেন”।

অর্ক মাথা নেড়ে বললো, “আপনার কঠিন কঠিন কথা শুনে পেট ভরে গেছে। আজ আর দুপুরে কিছু খাবোনা। যাই তাহলে?”
আমি মাথা নেড়ে বায়োকেমিষ্ট্রির আইটেমের জন্য পড়া শুরু করলাম আবার। অর্ক নামে এই ছেলেটার সাথে শিমুলের কোন মিল আছে বলে আর মনে হচ্ছেনা। আমার হঠাৎ মনে হলো সেদিন ছেলেটা একটা লাল রঙের ফতুয়া পরে ছিলো। মাঝখানে সাদা সুতার কাজ করা। শিমুলের ঠিক এমন একটা ফতুয়া ছিলো। এই কারণেই হয়তো সেদিন আমার অবচেতন মন অর্ককে দেখে শিমুলের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলো।আচ্ছা আমি কি আজকাল প্রায়ই ওকে খুজি সবখানে। আমার মনে হচ্ছে আমি দিনদিন আরো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।

এসব ভাবতে ভাবতে কখন যেন অর্ক ছেলেটা আবার এসে হাজির হলো। হাতে গরম সিংগারা আর এক বোতল গরম চা। আমি অবাক হয়ে বললাম, “আপনি না চলে গেলেন?”
অর্ক মাথা নেড়ে বললো, “সিংগারা খেতে ইচ্ছা করলো। তারপর ভাবলাম আপনিও না খেয়ে আছেন, তাই দুজনের জন্যই নিয়ে আসলাম। আপনি কি অনুগ্রহ পূর্বক আপনার ডায়েটিং প্রোগাম আজকে এই সুন্দর রোদেলা দুপুরে বাতিল করতে পারেন?”
আমি মাথা নেড়ে বললাম, “না পারিনা। আমি এখন কিছু খেলে বমি করে দিবো।দুঃখিত”।
অর্ক মাথা নেড়ে বললো, “কোন সমস্যা না। কিছু মনে না করলে আমি কি আপনাকে দেখিয়ে দেখিয়ে মচমচে সিংগারা খেতে পারি আর সাথে গরম গরম চা মেড উইথ খাটি গরুর দুধ?”

আমি হেসে বললাম, “একটা কাপ লাগবে চায়ের জন্য। আমি বোতলে চা খেতে পারিনা”।

অর্ক আমার কথা শুনে পড়িমড়ি করে দৌড় দিলো। কোত্থেকে যেন একটা ভাঙ্গাচোরা কাপ নিয়ে এসে বললো, “কাপ পাইছি। চাওয়ালা বেটার থেকে ১২ টাকা দিয়ে কিনছি। ব্যাটা অবশ্য তার প্রিয় চায়ের কাপ আমাকে হস্তান্তর করার আগে কাপে একটা চুমু খেয়েছিলো”।
আমি অ্যাক করে অর্ককে বললাম, “আমি এই কাপে খাবোনা। আপনি খান”।
অর্ক হাসিমুখে বললো, “আমি ফিল্টার পানি দিয়ে ধুয়ে এনেছি। এখন তাড়াতাড়ি গরম চা খাওয়া শুরু করেন। ঠান্ডা চা খাওয়া গুরু পাপ জানেন?”

আমাকে হলে ছেলেটা নামিয়ে দিয়ে যাওয়ার সময় বললো, “আমি আপনার পিছ পিছ ঘুরছি খেয়াল করেছেন?”
আমি কিছু না বলে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। বুঝতে চেষ্টা করলাম ও কি বলতে চাচ্ছে। আমি খুব ভালো করে জানি আমি এমন কোন সুন্দরী না যাকে দেখে কোন ছেলে ছাগলের মত আমার পিছনে ঘুরবে।
অর্ক একটু গভীর শ্বাস নিয়ে বললো, “আমার খুব শখ আপনি একদিন আমার প্রিয় কবি পুর্ণেন্দু পত্রীর একটা কবিতা আমাকে আবৃত্তি করে শোনাবেন। সেদিন যেমন শুনিয়েছিলেন বাংলা একাডেমীতে ঠিক তেমন করে। সুর করে। আপনার মত এতো ভালোবাসা নিয়ে কাউকে কখনো কবিতা আবৃত্তি করতে শুনিনি। আমাকে শোনাবেন?”

আমার প্রথম প্রফের পর একদিন কোন এক সাঝ হতে যাওয়া বিষণ্ন সময়ে আমি অর্ককে বললাম, “তুমি কবিতা শুনতে চেয়েছিলে মনে আছে?আমার কথোপকথনের প্রথম কবিতাটা খুব ভালো লাগে। ছোট্ট একটা কবিতা অথচ কি প্রগাঢ় অনুভূতি খেয়াল করেছো?”
অর্ক বললো, “আমারও খুব ভালো লাগে। শোনাও, এক বছর ধরে অপেক্ষা করছি। আজ শোনাতে হবে”।
আমি চোখ বুজে ওকে কবিতাটা শোনালাম। শেষের পংক্তিটা বলতে গিয়ে গলা কেপে এলো, আমি তবুও দুবার বললাম –

শবযাত্রা? কার মৃত্যু হলো?

অর্ক এই প্রথমবার আমার হাত ধরলো যা আমি কখনও ভাবতে পারিনি। আমার হাত ধরে বললো,

আমার মৃত্যু হয়েছে
তোমাকে ভালোবেসে, চোখের পলকে
আমার মৃত্যু হয়েছে আজন্ম তোমাকে দেখবো বলে

আমায় কবর দাও, দাহ করো
অথবা অযতনে পথের পাশে রেখে যাও
তবু জেনো আমার মৃত্যু হয়েছে তোমাকে ভালোবাসবো বলে

আমি ওকে বললাম, “হাতটা ছাড়ো। হাত ধরলে কেন?”
অর্ক আমার দিকে তাকিয়ে থাকে, হাত ছাড়েনা। আমার হঠাৎ করে খুব কান্না পায়। আমি ওকে তো শুধু বন্ধু ভেবেছি। আমার ভালোবাসার মানুষটা এখন যদি দেখে ফেলে অন্য কেউ আমার হাত ধরে আছে, ও অনেক কষ্ট পাবে না? আমি কেদে দিলাম। ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে কাদতে কাদতে বললাম, “আমার হাতটা ছাড়ো। ও খুব কষ্ট পায়, আমাকে কেউ দেখলে একটুও ছুয়ে দিলে ও খুব কষ্ট পায়। আমার হাত ধরবে না”।

অর্ক চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দৌড় দিলো একটা। আমি অনেক কষ্ট করে ওঠার শক্তি পেলাম। আস্তে আস্তে হেটে হলে যেয়ে দরজা আটকিয়ে খুব কাদলাম। অনেকদিন পর আমার আজ আবার খুব কষ্ট হচ্ছে ওর জন্য। শিমুল কি জানে আমি ওর জন্য বেচে আছি এখনো। আমি খুব বিশ্বাস করি ওর সাথে আবার আমার দেখা হবে। আবার আমরা হাত ধরে হাটবো দূর দূর, বহুদূর।কেউ ওর আর আমার মাঝে আসবেনা। আমি ওকে বলতে চাই, আমি একটুও বদলাইনি। ঠিক আগের মত আছি। ও ছাড়া কেউ আমার মাঝে জায়গা পাবেনা, কখনোও না।

পরেরদিন ভোরবেলা আমি যখন ক্লাসে যাচ্ছিলাম, তখন অর্ককে আবার দেখতে পেলাম। কলেজের ২ নাম্বার গেটের পাশে একা একা দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে হাসতে হাসতে এগিয়ে এসে বললো, “কাল তুমি এমনভাবে কাদলে, আমি গণপিটুনির ভয়ে দৌড় দিলাম। এখন ভালো আছো? আমি তোমার জন্য প্রাণ ফয়েল প্যাক জুস কিনে নিয়ে আসছি। ক্লাস বাং দিছি তোমার জন্য। তুমি মন খারাপ করে আছো এটা ভেবে খুব খারাপ লাগলো নিজেরো।যাই হোক জুস খাও, ক্লাসে যাও। আমিও যাই?”
আমি জুসের প্যাকেট হাতে নিয়ে বললাম, “এই রকম আর করবেনা তো?”
অর্ক কানে ধরে বললো, “নাহ আর কিছু বলবোনা”।
অর্ক হাসছে অদ্ভুত করে, বাতাসে ওর চুল উড়ছে। আমি আস্তে আস্তে হাটতে থাকি। আমার ক্লাস করতে আজ কেন যেন আর ইচ্ছা করছেনা। আজ একটা গল্প বলার দিন। আমার গল্পে বাস করে শুধু আমি আর আমার ভালোবাসার মানুষটা। ও যদি এখন বেচে থাকতো, আমার হাত ধরে গল্প শুনতো, কেমন হতো? আমি যখন ভাবি ও আমার হাত ধরে আছে তখন মনে হয় কেউ যেন সত্যি আমার হাতটা ধরে আছে। আজ যখন ভাবছিলাম তখন হঠাৎ খেয়াল করলাম সত্যি কেউ আমার হাত ধরে আছে। আমি তাকিয়ে দেখি অর্ক। ও পিছন থেকে কখন আমার হাত ধরেছে আমি জানতাম না।অর্কর চোখ ভরা পানি। আমাকে কোনরকমে বললো, “যেদিন দেখা হয়না তোমার সাথে সেদিনও আমি ঠিক এখানেই দাঁড়িয়ে থাকি। ইচ্ছা করে তোমাকে দেখা দেইনা। তুমি আস্তে আস্তে একা একা হেটে যাও, আমি তোমার পিছন পিছন হেটে যাই। আমি জানি তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো, তারপরো আমি প্রতিদিন আশা নিয়ে থাকি যে একদিন তোমাকে ভালো লাগার কথা বলবো। সেই প্রথম যেদিন তোমাকে দেখি সেদিন থেকে অনেক ভালো লাগে। আমি জানি আজকের পর আর কখনো দেখা হবেনা। আমি তোমার সাথে আর দেখা করবোনা”।

অর্ক কাদতে থাকে ভ্যা ভ্যা করে রাস্তার মাঝে, এখনও আমার হাতটা ধরে আছে। আমার ওর জন্য হঠাৎ করে খুব মায়া হয়। আমি ওকে বলি, “শোন জীবনটা অনেক বড়। আমি কেউ না। কেউ না বিশ্বাস করো”।
অর্ক আমার হাতটা ছেড়ে দেয় খপ করে। আমাকে বলে, “ঠিক তুমি কেউ না। হয়তো কেউ না।আমি নিজেকে অনেক সামলাতে চেষ্টা করি। পারছিনা। এক মুহূর্তের জন্যও পারছিনা”।

ও আবার আমার হাত আবার শক্ত করে ধরে বললো, “আর দেখা হবেনা। ভালো থেকো। কিন্তু আমার না তোমার থেকে হারায় যেতে ইচ্ছা করেনা। একদম না”।

এই কথাটা আমাকে আরেকজন বলছিলো, অনেক বছর আগে। খুব ভালোবেসে। আজ আরেকজন বললো। আমি হতবিহবল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমি চুপ করে দেখলাম আস্তে আস্তে ও চলে যাচ্ছে। আমার মনে হলো যেন আর কখনো দেখা হবেনা।কাছে দাঁড়িয়ে কথা বলে হবেনা। কিন্তু আমাদের আবার দেখা হয়েছিলো।

আমার সাথে অর্কর দেখা হয় ঠিক সাত বছর পর। পাহাড়ের কোলে। ঠিক যেই অর্ককে আমি চিনি তেমন কেউ না।অন্য একজনকে, একদম অন্যরকম আরেকজনকে।
৩৩ তম বিসিএসে আমি যখন সহকারী সার্জন হিসেবে যোগদান করলাম, তখন জানতাম না আমার পোস্টিং কোথায়। আমি ফুপুর কাছে বারবার অস্থির হয়ে বলতাম, “ফুপু দোয়া করো যেন পাবনার আশেপাশে কোথাও পোস্টিং পড়ে। আমি রাধানগর খুব মিস করি। আমার গ্রামটা কত সুন্দর। কত আপন মানুষ চারপাশে”।

আমার পোস্টিং পড়লো বান্দরবান সদরে। আমি চোখের জল, নাকের জল এক করে সেখানে যোগদান করলাম। আমার ভাই নোটন তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিদ্যার ছাত্র। আমাকে বান্দরবান শহরে এসে সে প্রথম কথা বললো, “বুবু মনে আছে আমরা ছোটকালে বলতাম একটা পাহাড়ে উঠে মাকে দেখবো?”
আমাদের ছোটকাল থেকে দাদু বলতো, মা অনেক উপরে থাকেন। আমাদের উপর থেকে দেখতে পান।আমি দাদুকে বলতাম, “পুকুর পাড়ের ঐ গাছটা হতে মায়েরে দেখা যায়? আমি গাছের উপর উঠি দেখবুউউউ”।

দাদু কোলে করে বলতেম, “তোর মা থাকে আরো আরো উপরে”।
আমি আর নোটন সেকথা শুনে ভাবতাম, একদিন আমরা বিজয় পর্বতে যাবো। সবচেয়ে বড় পর্বত। মা নিশ্চয় সেখানে বসে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন।

এক মাস পর একদিন লুসাইদের গ্রামে গেলাম স্বাস্থ্য সেবা দিতে। ওরা খুব ভদ্র জাতি। সাদা এপ্রোন পরা কাউকে দেখলেই বাচ্চারে দৌড়িয়ে এসে বলে, “সিভিট আছে?”
আমি ভয় দেখিয়ে বলি, “ইঞ্জেকশন আছে”।
আমি ওদের গ্রামের ওয়েল ফেয়ার সেন্টারের ছন দিয়ে বানানো ঘরগুলো দেখছিলাম। তারপর সবুজ রঙ করা কাঠের বারান্দায় যেয়ে দাঁড়িয়ে খেয়াল করলাম, লিকলিকে রোগা একটা ছেলে ছবি তুলছে কয়েকটা ৮-১০ বছরের ছেলের। আমি হতভম্ব হয়ে দেখালাম ছেলেটা অর্ক। আমি আস্তে আস্তে হেটে ওর সামনে দাঁড়িয়ে বললাম, “তুমি এত রোগা হলে কিভাবে?”

অর্ক ক্যামেরা থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো, কিছু বললোনা। ও আপন মানুষের মত আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়ে বললো, “তোমার চুল তুমি এখনও আচড়াতে পারোনা। পাকা পেপে খাবে?”
আমি মাথা নাড়লাম। ও মুরং একটা ছেলেকে ওদের ভাষায় কি যেন বললো, ছেলেটা দৌড় দিয়ে ছোট্ট একটা পেপে আমাদের জন্য কেটে নিয়ে এলো।ছেলেগুলো ওর গেঞ্জি টেনে দুষ্টুমি করতে থাকলো। তিন বছরের একটা মেয়েকে ও কোলে নিয়ে হাটতে হাটতে বললো, “বৃষ্টির সময় এখানে আসাটা খুব ভয়ংকর। সাপখোপ থাকে। পাহাড়ি বিষাক্ত সাপ। আমাকে একবার একটা কামড়ে দিয়েছিলো। দুই সপ্তাহ জ্বরে ভুগেছিলাম।তারপর তোমার কি খবর? স্বামী কোথায়?”
আমি হাসতে হাসতে বললাম, “ও ঢাকাতে আছে আপাতত। আমি এখানে সরকারী কাজে আছি। দুদিন পর চলে যাবো।তারপর যেয়ে বেশ করে খুজবো। কই যে লুকিয়ে আছে?”
ও হেসে বললো, “আমি এখানে প্রায়ই আসি। এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াই। সাপ কেচোর কামড় খেয়ে হেনেতেন ছবি তুলে বেশ কেটে যাচ্ছে জীবন”।
আমি মাথা নেড়ে বললাম, “বিয়ে করোনি?”
অর্ক হাত নেড়ে বললো, “আমাকে দিয়ে ওসব আর হবেনা। এই যে ব্যাচেলর আছি, মাস্ত আছি। বাবা মাকে আমার বড় দুই ভাইয়ের কাধে ফেলে এখন যাযাবর। জটিল জীবন বুঝলে?”

অর্ককে বিদায় দিয়ে আমি আমার সরকারী দুই কামরার কোয়ার্টারে ফিরে আসলাম। আমার হোস্টেলে উঠতে একদম ভালো লাগতোনা। একা থাকতে ভালো লাগে। তাই এই ছোট্ট দুই রুমের কোয়ার্টারটা নিয়েছি। খরচ বেশি হলেও কষ্ট নেই। চারতলার দখিনমুখী কোয়ার্টার। ভাবছি দাদুকে এখানে নিয়ে আসবো। দাদুর বয়স এখন প্রায় ৭৭, এই বয়সেও তিনি মাঠে যেয়ে কাজ করেন। সোনালী ধান হাত নিয়ে আদর করে গন্ধ নেন। আমি মাঝে মাঝে দাদুর হাত ধরে হাটি ফসলের খেত ধরে, খুব শান্তি লাগে।দাদুকে বলি, দাদু মাটির গন্ধ খুব আপন লাগে তাই না?”
দাদু তার দাড়িতে হাত বুলিয়ে বলেন, “মাটি ভুলি যাইবানা তো দাদু?”
আমি জোরে জোরে মাথা নাড়ি।বলি, “দোয়া করো যেন তোমার মত মাটির মানুষ হয়ে বেচে থাকি”।

পরদিন আমি পাহাড় দেখতে বের হলাম। গতকাল অর্কর থেকে ওর ফোন নাম্বার নিয়েছিলাম। ওকে সকাল ৬টায় ফোন দিয়ে বললাম, “আমাকে পাহাড় দেখাবে?”
অর্ক কাশতে কাশতে বললো, “নুপূর ঠান্ডা লাগছে ভাই। ঠান্ডা মেঘ যদি এখন আমাকে ধরে, আমি সিরিয়াস মইরা যাবো”।
আমি বললাম, “একটা জীপ নিয়ে আসো। আমার খুব চিম্বুক পাহাড়টা দেখার শখ আছে। যাওয়া হয়নি। তারপর নীলগিরি।দেরী হয়ে গেলে কিন্তু আর মেঘ ধরতে পারবোনা”।

অর্ক দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোনটা রেখে দিলো। এক ঘন্টা পর আমাকে ফোন দিয়ে বললো, “আমি তোমার কোয়ার্টারের নিচে দাঁড়িয়ে আছি।এক বোতল পানি নিয়ে এসো”।

আমি জীপে উঠে দেখি ওর সারাটা চোখ লাল। আমি নিজের অজান্তেই ওর কপালে হাত দিয়ে দেখলাম, গা টা বেশ গরম। ১০১ জ্বর তো হবেই।নিজেকে খুব স্বার্থপর মনে হচ্ছিলো।কিন্তু আমার ওকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছিলো আজ।ছেলেটা এত রোগা হয়ে গেছে।

অর্ককে নিয়ে আমি যখন চিম্বুক পাহাড়ে উঠলাম তখন চারপাশে ঘোর কুয়াশা। আশে পাশে কিছু বনমোরগ ভয়ে ভয়ে আমাদের দেখছিলো। আমি নিচে পাহাড় দেখতে দেখতে ওকে বললাম, “কাল রাতে ঘুম হয়নি?”
অর্ক মাথা নেড়ে বললো, “নাহ। আজ সকাল আটটায় আমার চলে যাওয়ার কথা। পুর্বানীর টিকেট কেটে রেখেছি। ভালো লাগছিলো না। তোমার সাথে আবার কেন দেখা হলো আমি জানিনা। আমি একদম চাইনি”।

আমি মাথা নিচু করে ওকে বললাম, “আমরা অনেক ভালো বন্ধু ছিলাম এবং আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ ছিলাম। তোমার আমাকে ভালো লাগতো কেন বলবে?”

অর্ক আমার দিকে তাকিয়ে হেসে সামনে হেটে গেলো। আমি ঠিক শুনলাম ও বিড়বিড় করে বললো, “লাগতো। এখন না, এখন একদম না”।

আমি প্রায় দশ মিনিট চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঠান্ডা হাওয়াটা খুব তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছিলাম। কখন যেন অর্ক আমার পেছনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো।আমাকে আস্তে আস্তে বললো, “চলো নীলগিরি যাবো। ওখানের রিসোর্টগুলো আমার কেন যেন ভালো লাগেনা। মানায়না আসলে জানো।আজ খুব ভালো লাইটিং আছে। খুব কম শাটার স্পীডে ছবি তুলবো, আধো আলোতে জ্বলজ্বলে পাহাড়। ভালো হবে না?”

আমি কিছু না বলে জীপে উঠলাম। অর্ক আবার নিজে থেকেই বললো, “ভালো লাগার কথা বলছিলে না? আসলে কি জানো একসময় তোমাকে পাগলের মত চাইতাম। কি ভয়ানক কিছু দিন গিয়েছিলো আমার। আমি সারারাত বারান্দায় বসে বসে ভাবতাম, আমার সাথে এমন কেন হলো। বয়সটা এমন ছিলো যে আবেগটাই বড় ছিলো। আমি বুঝতে পারিনি জীবনে আরো কত কিছু ছিলো। আমি আমার ভেতরটা ঠিকমত দেখতে পাই হাসাপাতালে বসে। মাথা পা ভেঙ্গে সেবার একাকার হয়েছিলো”।

অর্ক এরপর চুপ করে কি যেন ভাবছিলো। আমি আস্তে আস্তে বললাম, “তারপর?”
অর্ক হেসে বললো, “আর তারপর। জীবনটাকে খুব কাছ থেকে দেখলাম। আমি তখন বরিশাল মেডিকেল কলেজের হাসপাতালে। বাসায় কাউকে বলেনি, কেউ জানতোনা আমি কুয়াকাটার সূর্যাস্ত দেখতে এসেছিলাম।আমার চোখের সামনে দেখলাম ছোট্ট তিন বছরের একটা বাচ্চা মারা যাওয়ার পর মা বাবা কিভাবে বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে ছিলো। বাচ্চাটার নাম ছিলো অন্তু। বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। বাবা রিকশাওয়ালা ছিলো। যাওয়ার আগে আমাকে যখন কাদতে কাদতে বললো, আমার বাচ্চাটার জন্য দোয়া কইরেন আমি তখন খুব বুঝলাম এই রহস্যময় জগতের ভালোবাসার কিছুই আমি দেখিনি বুঝিনি।আমি এরপর থেকে খুব কাছ থেকে মানুষকে দেখি, তাদের অনুভূতি দেখি। যাযাবরের মত এখানে সেখানে ছবি তুলে বেড়াই। আসলে কোন পিছুটান নেই নূপুর।মাঝে মাঝে মনে হয় আমার যাওয়ার কোন জায়গা নেই। তবে swear upon God, আমি প্রতিদিন তোমাকে ধন্যবাদ জানাই। তুমি আমাকে এভাবে অবজ্ঞা না করলে আমি ঘর ছাড়তে পারতাম না। আমরা ছোটকাল থেকে বিশ্বাস করি, দিনের শেষে আমাদের সবার আশ্রয় ইটপাথর কাঠখড় দিয়ে বানানো কয়েক হাজার স্কয়ার ফিটের একটা বাড়ি, আপন মানুষের ভালোবাসা। ব্যাপারটা তা নয়। এই পুরো জগতটা তোমার আমার। এই জগতের সকল জীবন আমাদের খুব কাছের। আমরা শুধু দেখতে পাইনা।বুঝেও বুঝতে চাইনা”।

আমি জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানি ছুয়ে দিচ্ছিলাম, কিন্তু খেয়াল করলাম বৃষ্টি আমার ছোট্ট হাত দুটোকে যতটুকু ভেজাতে পারলো আমার মনটা তার থেকে বেশি আদ্র হয়ে গেলো ওর কথাগুলো শুনে। আমি বলতে চেয়েও বললাম না, ঠিক এমন করেই ভাবি বলেই আমার আর ঘরে ফিরে যেতে ইচ্ছা করেনা। কাছের মানুষটাকে আমি দুচোখ দিয়ে দেখতে পাই সবখানে। আমি ওকে ছুয়ে দিতে পারি, কথা বলতে পারি। আমি এতেই খুশি, আর কি লাগবে জীবনে।

অর্কর নীলগিরিতে পৌছানোর পর দুবার বমি হলো।আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, “ফিরে যাবে?তোমার শরীর এত খারাপ আমি জানতাম না। আমি খুব দুঃখিত”।
অর্ক হাত নেড়ে বললো, “শালার শরীরটা নিয়ে খুব বিপদে আছি।আত্নাটা সারাক্ষণ টইটই করে ঘুরতে চায়। শরীরটা মানতে চায়না। এই দেখো এখনো গায়ে একগাদা জ্বর। রাত থেকে কিছুই তেমন খেতে পারিনি”।

আমি আমার ব্যাগে সবসময় কিছু প্রয়োজনীয় ওষুধ রাখি। এক পাতা বমির ওষুধও ছিলো। ওকে জোর করে খাইয়ে দিয়ে বললাম, “নিচে তাকিয়ে দেখো। ছোট্ট ছোট্ট কিছু ঘর দেখলে?”
ও মাথা নেড়ে বলে,” উপজাতীয়দের ঘরবাড়ি। এদের অনেকেই খুব সকালে বের হয়ে যায়। ঝোলা ভর্তি থাকে এই সেই ফলমূল। আমি এখানে আসলেই আতুই বাড়ৈ নামে এক উপজাতীয় দাদুর থেকে ফলমূল কিনে খাই। ও আগে টাকা নিতো, এখন নেয়না। আমাকে বলে যেদিন থেকে ও আর ঘর থেকে বের হতে পারবেনা, আমি যেন ওকে দেখাশোনা করি।জানো নূপুর এরা এত ভালো, এত সহজসরল। এদের সাথে মিশলে মনটা ভালো হয়ে যায়।ওদের খুব ভালোবাসি”।

আমি অর্কর দিকে তাকিয়ে থাকি। ওর চোখ ভরা ভালোবাসা সব কিছুর জন্য। এই আমার জন্যও। আমি অনেকদিন কাউকে এমন করে কাউকে চাইতে দেখিনি। আমি যদি পারতাম ওর হাত ধরে সারাদিন বসে ওর ভালোবাসার কথা শুনতাম। ও এমন পবিত্র মনে বলে, আমার মনে হয় আমি চোখ বুজে ওর কথা শুনি। ঠিক এমন করে আমার ভালোবাসার মানুষটার কথা শুনতে চাইতাম।

অর্কর পাশে দাঁড়িয়ে বলি, “তুমি দেখো সবুজে ঘেরা এত সুন্দর পাহাড়গুলো কত যত্ন করে করুণাময় বানিয়েছেন।এত এত সবুজ, মাঝে মাঝে মনে হয় আমি হারায় যাই এখানে”।
অর্ক বলে, এই এখুনি ঠান্ডা মেঘ এসে তোমাকে ছুয়ে দিয়ে যাবে। চোখ বুঝে দাঁড়িয়ে থাকো, মনে হবে আকাশে ভাসছো। একদম নিশ্চুপ থাকো।কোন কথা হবেনা”।
আমাকে যখন মেঘ ছুয়ে দিয়ে গেলো তখন খুব কান্না পেলো। আমার মনে হলো, “মা আমার গালে যেন চুমু খেয়ে গেলো। বাবাটা মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে গেলো। ওদের খুব বলতে ইচ্ছা করছে, মাগো এই দেখো তোমার মেয়ে কত বড় হয়ে গেছে।বাবা আমি একজন মানুষ হইছি”।
আমি একটু দূরে যেয়ে দুটো চিঠি লিখলাম।আমার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিলো আমি এমন উচূ পাহাড়ে উঠে বাবা মাকে মনের কথা জানিয়ে চিঠি লিখবো। ছোট্ট চিঠিতে তাদেরকে লিখলামঃ

“মা/বাবা, আমি এত্ত বড় হয়ে গেলেও খুব বিশ্বাস করি তোমরা এখানে লুকিয়ে আছো। আমি এই বিশ্বাস নিয়েই বাচতে চাই। তোমাদের খুব ভালোবাসি। আমি আর আমার ছোট্ট ভাইটা এতোটা বছর অনেক অনেক কাদছি তোমাদের জন্য। বারবার ভেবেছি যাদের বাবা মা আছে তারা কি বুঝতে পারে তারা কতটা ভাগ্যবান। আমি তোমাদের কত্ত ছোট্টকালে হারিয়েছি কিন্তু আমি এখনো মনে করতে পারি তোমাদের আদরগুলো। তোমরা আমার জন্য অনেক দোয়া করবা। আমি তোমাদের সেই ছোট্ট মেয়েটিই আছি, তেমন করেই ভালোবাসি বিশ্বাস করো”।

চোখ মুছতে মুছতে যখন দ্বিতীয় চিঠিটা লিখছিলাম খুব কাছের মানুষটাকে। অর্ক তখন আমার সামনে দিয়ে হেটে চলে গেলো একটু দূরে। ও ছবি তুলছে, আমি ওকে খুব ভালো করে খেয়াল করলাম। তারপর চিঠিটা লিখলামঃ
“প্রিয় অর্ক, তোমাকে বলিনি কিন্তু আমি বেশ জানি তুমি আমাকে অনেক অনেক বোঝো। আমি একজনকে ভালোবাসতাম খুব, ভালোবাসি খুব, ভালোবাসবো খুব। সেই মানুষটা ঠিক আমার আব্বু আম্মুর মত জীবন থেকে ছুটি নিয়ে আমাকে একা ফেলে যায়। তুমি কি বুঝতে পারো আমি এমন আঘাত পেয়ে একটাদিনও বেচে থাকতে চাইতাম না। কিন্তু ওইযে তুমি বললে, আমরা কেউ বুঝতে পারিনা ভালোবাসা ঠিক এমন না। এই পৃথিবীতে আরো অনেক আবেগ আছে, অনুভূতি আছে যা আমি অথবা তুমি দেখিনি, জানিনি বুঝিনি। আমার খুব ভালো লাগে দেখতে যে তুমি এই সীমাবদ্ধতাটা অনেকটা কাটিয়ে উঠেছো। তুমি মানুষকে ভালোবাসতে পারো। কিন্তু জানো, আমার হঠাৎ করে খুব ভয় লেগেছিলো আজকে যখন মনে হলো তুমিও হারিয়ে যাচ্ছো। এই ভয়টা যেদিন তুমি আমার প্রথম হাত ধরে ভালো লাগার কথা বলতে সেদিন পেয়েছিলাম।যেদিন তুমি আমাকে বিদায় জানিয়েছিলে সেদিনও পেয়েছিলাম। এই আমি খুব সামান্য একটা মেয়ে। কিন্তু আমার মাঝে অসামান্য একটা হাহাকার আছে। এই হাহাকারটা আমি কাউকে দেখাতে চাইনা। বোঝাতে চাইনা। জানিনা বলাটা কতোটা অন্যায় হবে, তবু তোমাকে একটা ছোট্ট অনুরোধ করতে পারি কি? আর কখনো হারিয়ে যেওনা। আমার আর কাছের মানুষদের হারাতে ইচ্ছা করেনা। যেইদিন তুমি প্রথম আমার হাত ধরে তোমার অদেখা পবিত্র মনটা দিয়ে বলেছিলে, আমাকে তোমার অনেক ভালো লাগে আমি ঠিক সেদিন থেকে তোমার অনেক কাছের মানুষ। কি অদ্ভূত তুমি কখনোই তা বোঝোনি, আমিও বুঝিনি।আমাকে জিজ্ঞাসা করোনা, আমি তোমাকে ভালোবাসি কিনা।আমি চাই, এই কথাটা তুমি নিজ থেকে বোঝো। কাউকে ভালোবাসি বলে ভালোবাসা যায়না। মন থেকে দেখতে হয় যে। আমি জানিনা তুমি আমাকে দেখতে পাও কিনা!”

আমরা যখন বিকেল চারটায় ফিরে আসছিলাম তখন অর্ক গাড়িতে হেলান দিয়ে বাচ্চাদের মত ঘুমিয়ে পড়লো। দুপুরে আমরা মুরংদের একটা গ্রামে গিয়েছিলাম। একগাদা ফলমূল খেয়েছিলাম।এক মুরং দাদু আমার গালে হাত দিয়ে আধো আধো বাংলায় বলল, “আমি বিয়ে করিনি বুঝলে। আমার জন্য বাঙ্গাল একটা মেয়ে দেখো। তোমার মত। বিয়ে করবো”।
আমি খুব বুঝতে পারি দাদুর চোখের দিকে তাকিয়ে কোন এক সময়, হয়তো আজ থেকে অর্ধশত বছর আগে তিনি খুব মন থেকে কাউকে চাইতেন ভালোবাসতেন। হয়তো এক বাঙ্গালী মেয়েকে আমার মত।আমি দাদুর হাত ধরে বললাম, “দাদু মনের মাঝে দেখো। মেয়েটা কোথাও হারিয়ে যায়নি”।
দাদু কতটা আমার বাংলা বুঝেছে জানিনা, কিন্তু উনি ছলছল চোখে বললেন “আবার এসো”।

অর্ক যখন বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছিলো আমি ওর হাতে ওকে লেখা চিঠিটা দিয়ে বললাম, “তুমি ঢাকায় চলে যাচ্ছো তো তাই না?আমি তোমাকে আজকে প্রথম একটা চিঠি লিখলাম। দিতে পারি?”
অর্ক হাসিমুখে চিঠিটা নিয়ে কিছু না বলে বিদায় নিলো। আমি খুব আশা করেছিলাম ও আমার চিঠিটা হাত থেকে নিয়ে পড়বে, তারপর আমার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে চুপে চুপে বলবে, নাহ হারাবোনা।এমনটা হলোনা সেজন্য বেশ মন খারাপ হলো। মাঝে মাঝে মনে হয় আমার মনটা এমন শান্ত নদীর মত কেন হলো। স্রোতগুলো আস্তে আস্তে আঘাত করে যায় ভেতরে। কিন্তু সয়ে যেতে হয়, কিচ্ছু বলার ক্ষমতা নেই।ছেলেগুলো এমন হয়না। ওরা ঠিক সমুদ্রের মত। ঝড়ের মত এসে সব তছনছ করে যায়, আবার ঠিক নিজেরাও হারিয়ে যায়। ধরে রাখা যায়না।

আমি রাতে ঘুমিয়ে আকাশের তারাগুলো দেখছিলাম আমার রুমের জানালা দিয়ে। আজ আকাশটা খুব স্পষ্ট। হঠাৎ নিচে তাকিয়ে দেখি অর্ক আমার কোয়ার্টারের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। একমনে হাটছে। আমি আস্তে আস্তে নিচে নেমে এলাম। রাত তখন দুটো। আমি ওর পাশে দাঁড়িয়ে বললাম, “আজ রাতে কোন থাকার জায়গা নেই?”
অর্ক মাথা নেড়ে বললো, “নাহ। তা না। খুব অস্থির হয়ে আছি। মাথা এবং মন দুটোই অগোছালো হয়ে আছে। তুমি আমাকে অনেক কিছু বলতে চাও তাই না?”

আমি মাথা নেড়ে বললাম, “আমার নাম নূপুর এবং আমার অনেক কথা কাউকে বলার ছিলো। সেই মানুষটা কি তুমি হবে?”
২৪টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×