somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দু'দিনের ভিসা

০৭ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[চাচার সাথে পরিচয়টা হয়েছে অফিশিয়াল কারনেই। উনি আমাদের অফিসের একটি কাজ করে দিয়েছিলেন গত জুলাইয়ে। কাজটা গোছানোর দায়িত্ব আবার দেয়া হয়েছিল আমার মত একেবারেই আনাড়ি পুচকাকে-তখনো কেবল এক মাস হলো আমার জয়েনিংয়ের। আমি তো প্রথমে উনার পরিচয় পেয়েই ভয়ে অস্থির।
যাক, পরে সব ঠিকঠাক মতো হল, আর বোনাস হিসেবে এমন চমৎকার একজন মানুষের সাথে ব্যক্তিগত পরিচয়টাও হয়ে গেল। উনি অবশ্য চাচা হয়ে উঠেছেন আরো পরে, যোগাযোগটা অব্যাহত ছিল বলেই।
ওনার ব্লগের এই পোস্টটা পড়ে ভীষন অবাক হয়েছিলাম, আমার নিজের শহরে এমন নৃশংস ঘটনা নিত্যদিন ঘটে যাচ্ছে জেনে। তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম অনুবাদ করে আমার ব্লগে দিব। অনুমতিও মিলল চাইতেই। তবে ম্যালাদিন হয়ে গেল, লিখব লিখছি করে লিখা হয়ে উঠেনি।
আজ বহুদিন পর ভাবলাম, এখনই সময়। চুম্বক অংশটা মেইলে ছিল, ঐটাই অনুবাদ করেছি। বাকিটা পড়ে নেয়ার দায়িত্ব পাঠকের হাতে তুলে দিলাম।

.......
ওদের গানের সুর ভেসে আসে। হৃদয়ছোঁয়া সুরে সহজ-সরল জীবনের গান। সুরেলা গান আর নৃত্যের ছন্দময়তার সাথে পা ফেলে ওরা এগিয়ে যায়, গমনপথে মিথ্যে সৌন্দর্য্যের পদচ্ছ্বাপ ফেলে।বুঝতে দিতে চায়না কাধেঁর ওপর বয়ে চলা ধাতব পাতের ভর পৃথিবীসম।

ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বর্জ্য ধাতুর ওপর কাদার কারুকাজ। তার ওপর খালি পা ফেলে ফেলে যাওয়া; “বিপজ্জনক” শব্দের এর চেয়ে ভাল উদাহরণ কমই হয়। তার ওপর যদি হয় বৃষ্টি, তবে তো কথাই নেই। একটু পিছলে পড়া মানে যে কত বড় ক্ষতির আশংকা, ভাবতেই গা শিউরে ওঠে!

তবুও, সাবধানি পা ফেলে তাদের পথচলা থেমে নেই। থেমে নেই গান গাওয়াও- এ যেন মৃত্যুর গান, অবিরাম মৃত্যুর পথে হেঁটে চলার সংগ্রামের গান।

সে রাতে ম্যানেজার চলে গেলে, সুযোগ মিলল ইয়ার্ডে গিয়ে ওদের সাথে ঘুমানোর। আমরা ছিলাম অতিথি। তাই ভাগ্যে আমাদের একটা গোটা চাদরই জ়ুটেছিল-ধাতব চাদর; বিছানা হিসেবে আর কি চাই! ওরা গান শোনালো আমাদের। এই এফএম রেডিও, আর ক্লোজ-আপ ওয়ান অথবা সেরাকন্ঠ তারকার যুগে প্রায়শঃই শুনে থাকা ঐ সব মেটাল আর রক গান কিংবা আভিজাত্যের প্রতীক রবীন্দ্র সংগীত নয়। ওদের কন্ঠে শুধু বিরহ আর বিচ্ছেদের ভীতিকর সব গান।

একটি ছিল ভিসা নিয়েঃ

"দুই দিনের ভিসা নিয়া এ মিছা দুনিয়ায়
কেন পাঠাইল আল্লায়
কেন পাঠাইল রে
দিয়ারে ও সুখ জ্বালা
পাঠাইলো একেলা
এ কেমন খেলা আল্লায়
খেলাইল রে?"
......
সংবাদটা নূরজাহানের জন্য অসহনীয় পর্যায়ের ছিল। বড় ছেলেটা দুর্ঘটনায় মারা গেছে এক বছর হয়েছে মাত্র। দু’মাস আগে স্বামীও চলে গেলেন ওপারে। তার দু সপ্তাহ পর জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই আলমগীর অন্য একটা ইয়ার্ডে কাজ করতে গিয়ে আহত হয়েছিল। সেইবার ইয়ার্ডের মালিক চিকিৎসার খরচ দিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু সে আবার কবে কাজে ফেরত যেতে পারবে, আর কতোদিনই বা ওরা চিকিৎসাব্যয় বহন করবে, তা কে জানে?

জাহাঙ্গীরই ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এর বাইরে পড়শীদের একটু আধটু দাক্ষিণ্যর ওপরও নির্ভর যে করতে হতোনা তা নয়। জাহাঙ্গীরের আহত হওয়ার সংবাদটা তাই পুরো পরিবারকেই অকূলে ভাসিয়ে দিতে যথেষ্ঠ ছিল। “এই গরীব হওনের কারনেই আমার পোলাগো এই জীবনে পা দিতে হৈসে। আমার জাহাঙ্গীর যদি বাইচা ফিরে আসে ওরে আমি আর ঐ ইয়ার্ডে পাঠাইতেসিনা”।
......

জাহাঙ্গীর আর "বাইচা" ফিরে আসেনি। একটু অস্ফুটে কথা বলেছিল একদিন, মনে হয়েছিল ফিরে আসবে। কিন্তু সেই-ই শেষ। পরের দিন সকালেই জাহাঙ্গীর নিষ্ঠুর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে চলে গেল। এই দুর্মূল্যের বাজারে চিকিৎসাদির একগাদা বিল বাঁচাতে হয়তো এইটাই দরকার ছিল।

অন্ততঃ একটা বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেল। জাহাংগীরের দু’দিনের ভিসা এখানেই শেষ।
........

চট্টগ্রামের শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে একটি জাহাজ ভাঙতে গিয়ে আরো এক শ্রমিকের মৃত্যু হল।
এখানে বসে আমরাই জানতে পারিনা, আর অনেক দূরে-নিশীথ সূর্যের দেশ নরওয়েতে বসে সেই জাহাজের মালিকেরা কখনো জানবে কী, জাহাঙ্গীর নামের কেউ কখনো জন্মেছিল?


বিঃদ্রঃ অনুবাদে বিশেষ সহযোগিতার জন্য টক্সকে ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০০৮ সকাল ১০:১৩
৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×