একটি মেয়ে উঠল, কোন সিট নেই, মাথার উপর দু’হাত তুলে রড ধরে দাঁড়ানোর সুযোগ পেল বোনটি। ওর ভ্যানিটি ব্যাগের কোণা রেজাউলের মাথায় ঠুন খাচ্ছে। (রেজাউল আমার পুরনো বন্ধু, আজকের সহযাত্রী। আমি জানালার পাশে। রেজাউল ভেতরের দিকে, যেদিকটায় রড ধরে ঝুলতে থাকা যাত্রীদের গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে থাকার নিয়ম)
মেয়েটার চেখে মুখে কষ্টের চিহ্ন স্পষ্ট। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গাড়ির ঝাঁকুনি সওয়ার কষ্টই নয় শুধু, ঘাটে ঘাটে যাত্রী ওঠা-নামার সময় বহুবার বহুভাবে দেহপিষ্ট হওয়ার কষ্টও। মেয়েটিকে বসতে দিতে ইচ্ছা করছে। ভাবি, মেয়েটি কি সমঅধিকারে বিশ্বাসী? আবার ভাবি, হলে হোক, এটা তার ব্যাপার। কিন্তু এই গাদাগাদি গাড়িতে সিট পাওয়ার অধিকার পুরুষের চাইতে একজন নারীরই বেশি। নারীটি এখানে সমঅধিকারে খুশি থাকলে সে সরল বোকা। পুরুষ এখানে সমঅধিকারের কথা বললে সে নির্মম চালাক।
নিজের সিট ছেড়ে মেয়েটিকে বসতে দেব, সুযোগ নেই। কারণ আমি জানালার পাশে, রেজাউল ভেতরের পাশে। রেজাউলকে উঠিয়ে দিয়ে মেয়েটিকে আমার পাশে বসাব তাও ভাল হয় না। নিরুপায়, যেমন ছিলাম, তেমনই আছি। বসে বসে বিবেকের বকা খাচ্ছি।
পরের স্টেশন। একজন দাদি আর একজন মা উঠেছেন। দাদী ইঞ্জিনকভারে চাপাচাপির মধ্যে কষ্ট করে বসার সুযোগ পেয়েছেন। আর মা দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। ভ্যানিটি ওয়ালী বোনটির পাশেই দাঁড়ালেন মা। তাঁরা দু’জন আমাদের দু’জনের বরাবর দাঁড়ালেন।
রেজাউলকে বললাম, “ওনাদেরকে বসতে দেব নাকি?” দ্বিধা করলনা ও, উঠে পিছনের দিকে চলে গেল, আমি সামনের দিকে চলে এলাম। আমাদের সিট দু’টো খালি হলো। বোনটি আর মা, দু’জনে বসে পড়লেন।
বরইবুনিয়ার আর বেশি বাকি নেই। গেটের পাশের সিঙ্গেল সিটটি খালি হয়, বসে পড়ি। দাদীর কষ্ট এবার খুব কাছ থেকে দেখি। একটু চিন্তা করি, তারপর মোবাইল ধরা ডান হাতের মধ্যমা দিয়ে তাঁর ডান হাঁটুতে রাখা ডান হাতের পিঠে স্পর্শ করে বলি, “বসতে কষ্ট হচ্ছে নাকি?” কিছু বললেন না, শুধু মৃদু হাসলেন দাদী। বললাম, সামনেই নেমে যাব, আপনি এখানে এসে বসুন।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০১৯ দুপুর ২:০৭