somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জামাত শিবিরের অতি দেশপ্রমের নেপথ্যে....

২৩ শে মার্চ, ২০১০ বিকাল ৫:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইদানিং কোথাও ছাত্রলীগ পাদ দিলেও সেটা সামু ব্লগে চলে আসে। আসে খবরের লিঙ্ক হয়ে। সে খবর ছাপা হয় আমার দেশ, নয়া দিগন্ত, দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায়। এমনকি আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগের সমালোচনামূলক লেখা যদি প্রথম আলো, সমকাল কিংবা কালের কণ্ঠের মতো প্রগতিশীল পত্রিকায় ছাপা হয় সেটাও তারা তুলে দিতে ভুল করে না। এই যে আওয়ামী বিদ্বেষ এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলো নিয়ে তাদের মাথা ব্যথা এর পেছনে শুধু সেই একাত্তর থেকে চলে আসা প্রতিহিংসাই যে মূল কারণ তা কিন্তু নয়। মূল পরিকল্পনা আরো ভয়ানক।

এসব লেখা ইদানিং রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এইসব কপিপেস্ট ব্লগ, একাধিক নিকে লেখা ব্লগই লিঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলোতে। তাদের কথা, বাংলাদেশে মানবাধিকার চরমভাবে লংঘিত হচ্ছে। আর মূল ইস্যুটা অবশ্যই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। এনিয়ে সামুর পুরাতন ব্লগারদের একজন (এবং ছাগুবৃদ্ধিতে বিরক্ত হয়ে ব্লগ ছাড়া) আড্ডাবাজের একটা পোস্ট পড়ে রীতিমতো শিউরে উঠলাম। ওয়াশিংটন ডিসিতে রীতিমতো সংবাদ সম্মেলন করেছে জামাত শিবিরের ভাড়াটে লবিইস্টরা। আড্ডাবাজ লিখেছেন :

....মার্কিন মুল্লুকের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে যুদ্ধাপরাধী জামাতীরা সেখানকার ইসলামী সংগঠনগুলোর ব্যানারে ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী অত্যাচারের ফিরিস্তি দিয়ে হিলারী ক্লিনটনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে।....

...আজকাল কোন কিছুতে আশ্চর্যান্বিত হই না। এর আগের দিনের দৈনিকের শিরোনামটা আবারও চোখে ভাসল যে জামাতীরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে ১০০ কোটি টাকা দেশে বিদেশে লগ্নি করেছে।....

....সকালে অফিসে যেতে যেতে বন্ধু আসিফের ই-মেইল আমার কম্পিউটারে এসে যোগ হয়। রাজাকার জামাতীরা খুব দ্রুত প্রেস রিলিজও বের করেছে " আমেরিকান মুসলিম টাস্কফোর্স অন সিভিল রাইটস এন্ড ইলেকশন" নামের গোত্রহীন এক সংগঠনের ব্যানারে। আমেরিকার মুসলিম সংগঠন ইসনা, কেয়ার, উম্মাহ যারা ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থে কাজ করে বলে দাবী করে তারা এবার সফলভাবে যুদ্ধাপরাধী জামাতীদের পকেটস্থ হলো। মুসলিম উম্মাহ ইমিগ্রান্ট জামাতীদের আমেরিকান সংগঠন বলেই খ্যাত যেখান থেকে জামাতী নেতাদের আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয় ও সাংগঠনিকভাবে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয় বলেও বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

নয়ন চৌধুরী ([email protected]) নামে এই পেইড ভলিন্টিয়ার অবশ্য প্রেস রিলিজ বিতরণ করেছে। প্রেস রিলিজে যা লেখা ছিল তা হচ্ছে:



The American Muslim Taskforce on Civil Rights and Elections (AMT), a coalition of major national Islamic organizations, hold a news conference today at the National Press Club in Washington, D.C., to call for an end to human rights violations in Bangladesh.

At the news conference, American Muslim leaders called for "among other things" an end to extra-judicial arrests and killings, ensuring multiparty democracy, stopping abuse of the police, judiciary and administration to subdue the opposition, restoration of the rule of law, and immediate release of all those who have been unlawfully detained.

AMT is an umbrella organization that includes American Muslim Alliance (AMA), American Muslims for Palestine (AMP), Council on American-Islamic Relations (CAIR), Islamic Circle of North America (ICNA), Muslim Alliance in North America (MANA), MAS-Freedom, Muslim Student Association-National (MSA-N), Muslim Ummah of North America (MUNA), and United Muslims of America (UMA). Its observer organizations include American Muslims for Civic Engagement (AMCE), Islamic Educational Council of Orange County (IECOC), the Islamic Society of North America (ISNA), and Muslim Public Affairs Council (MPAC).

Nihad Awad of CAIR , Imam Mahdy Bray of MAS-FF, Dr. Sulayman Nyang of MACC-PAC, Selim Akhtar of AMT, Dr. Abul Kashem of BAIS discussed wide spread human right violations, suppressing opposition and wrongful accusation and persecution of Islamic leaders in the name of so-called "war crime issues"“ was addressed. Deputy Ambassodor of BD in Washington DC was in the audiance, along with some local Awami League leaders.

প্রেস রিলিজের শেষ দু'লাইন পড়ে আমার আক্কেল গুড়ুম। মাথামোটা আওয়ামী কর্মী আর বাংলাদেশ দূতাবাসের উপপ্রধানও না-কি সেখানে হাজির ছিল। এরাই বুদ্ধির ঢেঁকি!!! আমি প্রেস রিলিজটা পড়ে বন্ধু আসিফকে ফোন করি: আচ্ছা বাংলাদেশ মিশন বা অন্য কেউ এই অপপ্রচারের প্রতিবাদ করে কি পাল্টা কোন প্রেস রিলিজ দিয়েছে? ফোনের অন্য পাশ থেকে আসিফের খিকখিক হাসিতে আমার মেজাজ বিগড়ে যায়। জামাতীরা মার্কিন মুল্লুকে "সেইভবিডিডট কম" বলে ওয়েবসাইট দিয়ে শুরু করেছে অপপ্রচার। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জোট সরকারের অনেক সমালোচনা থাকতে পারে। কিন্তু তাই বলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে কি কোন প্রশ্ন থাকবে?

যুদ্ধাপরাধী রাজাকার জামাতীদের রক্ষায় কড়ি আর বড়ি নিয়ে নেমেছে তখন সেখানকার মিশনের সরকারী কর্তাব্যক্তিরা আর মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিরা বসে বসে আঙ্গুল চুষছে। অনেক সময় মনে হয়, হয়তো সর্ষের ভেতরই ভূত থাকে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ঘন্টি যতো বাজবে, দেশে বিদেশে জামাতী বান্দরদের আস্ফালন ও নর্তন-কুন্দনও ততো বাড়বে। গোলাম আজম, নিজামী, সাঈদী সহ সকল যুদ্ধাপরাধীদের অপকর্মের ডোশিয়ার হিলারী ক্লিনটন আর আমেরিকান মিডিয়ার কাছে কারা পাঠাবেন? যেসব ইসলামী সংগঠনের ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলন হলো তাদের কাছে কেউ কি লিখবেন? সম্ভবত: কেউ না। এভাবেই যুদ্ধাপরাধী জামাতীরা শেষ পর্যন্ত আশ্রয় প্রশ্রয় পাবে। ফাঁক ফোকর দিয়ে বেরুবে।

মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির সবচেয়ে বড়ো দূর্বলতা হচ্ছে তাদের দূর্বল নেটওয়ার্ক। না হলে এতোক্ষণে আসিফ আবার ফোন করে বলতো: " আগামীকাল সকালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে ওয়াশিংটন ডিসি'র প্রেসক্লাবে এক পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলন ডাকা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের ইসলাম মুখোশধারী যুদ্ধাপরাধীদের অপকর্মের সচিত্র প্রতিবেদন দিয়ে হিলারী ক্লিনটনের কাছে পাল্টা প্রতিবেদন পাঠানো হবে। এছাড়া, ইসলামী বেনারের আড়ালে আমেরিকায় ধর্মীয় মৌলবাদী শক্তির উত্থানে উৎকন্ঠা প্রকাশ করে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার তদন্ত দাবী করা হয়েছে"।....



আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলো ধোয়া তুলসীপাতা এটা আমি বিশ্বাস করি না। ইদানিং দেশের আনাচেকানাচে তাদের নিয়ে প্রকাশিত খবরাখবর অসত্য, এ দাবিও আমি করবো না। কিন্তু সেসব প্রকাশে জামাতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের পেইড ব্লগাররা যেরকম তৎপর, তাতে সন্দেহ হতেই পারে ডালমে কুচ কালা হ্যায়। আর সেটা যে কি তাই জানা গেলো আড্ডাবাজের মাধ্যমে। তাই বন্ধুরা আর দেরী নয়, সময় হয়েছে এবার সরকারকে চাপে ফেলার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতে হবে দ্রুত, এটাই হতে হবে এখন একমাত্র প্রায়োরিটি। এটা শেষ করে ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে ভাবেন গিয়া, আগে ইতিহাসের আবর্জনা পরিষ্কার করাটা জরুরী।

শুয়োরের বাচ্চাদের প্রেস রিলিজ
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১০ বিকাল ৫:১৬
৫৯টি মন্তব্য ৫০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×