somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি করোনায় আক্রান্ত একজন বলছি।পর্ব - ২

১৬ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্বীকার করছি,বেশ কষ্টের অসুখ,যন্ত্রণার তবে আমাদের কাছে তার চেয়ে বেশী আতঙ্কের।
কিন্তু আতঙ্ক কি বাস্তবে নাকি আমাদের অতি উৎসাহী অজ্ঞ অপপ্রচার!
শতকরা ৯৫ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে এবং যাদের মৃত্যু হচ্ছে তাদের বেশীরভাগই বয়স্ক ও নানাবিধ পুরাতন রোগে আক্রান্ত।যারা পুরাতন রোগের ধকলকেই সহ্য করতে হিমশিম খাচ্ছে,তারাই মৃত্যুর মিছিলে যোগদান করছে।এর সাথে আরেকটি বিষয় হল প্রথমদিকে মানুষের পাত্তা না দেয়ার মত অবহেলা এবং তাচ্ছিল্যের সুর।সময়ের সাথে সাথে দেশগুলো যখন গুছিয়ে নিয়েছে জনগণ তখন নিজদের দিকে মনোযোগ দিয়েছে এবং নতুন অন্ধকার আলোতে রূপ নিচ্ছে।
সেই সাথে আরেকটি কথা না বললেই নয়,প্রতিদিন যে আক্রান্তের খবর শুনতে পাচ্ছেন তার বেশীরভাগই যে ঘরে বসেই ভালো হচ্ছে তা কি জানেন?
অনেক রোগী যারা পরিসংখ্যানে আসেনি এবং ঘরে বসেই ভালো হচ্ছে।এটা শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এটাই সত্য।
আমি নিজে যেদিন আক্রান্ত হলাম,ভয়ানক জ্বর আর মাথা ব্যাথায় বিধ্বস্ত হয়ে গেলাম।ও আরেকটি কথা,আমি এমন দেশ থেকে বলছি,যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপক,মৃত্যুর মিছিল ও বড় এবং সুস্থ হওয়ার আনন্দ যাত্রাও অনেক অনেক লম্বা।
দীর্ঘ ১০ দিন ভয়ানক সমস্ত উপসর্গ গুলোর সাথেই যুদ্ধ করতে হল,এর পর থেকে একটা একটা কমতে থাকলো।মুখে স্বাদ না থাকা এবং নাকের স্মেল নেয়ার ক্ষমতা শূন্য হয়ে যাওয়া যে কি ভয়ানক সেই সাথে শ্বাস কষ্ট যেন ফাঁসির দড়ির মত লাগে।
ছোট্ট একটা কথা অবশ্য এর সাথে যোগ করতেই হয়।আমি আগে থেকেই ঠাণ্ডার রোগী।সারাবছর ঠাণ্ডা লেগে থাকে এমন ব্যাক্তি আমি।
আমার বন্ধু আমার সাথে একটা ফ্ল্যাটে থাকি।সবসময় আমাকে সাহস দিয়েছে।আমি প্রথম দিন থেকেই খেতে না পারলেও জোর করে সময় নিয়ে লেবু-লবণ উষ্ণ পানি,কালিজিরা,মধু,লবঙ্গ আর ভিটামিন সি টেবলেট খেয়েছি দিনে কয়েকবার করে।সাথে আইবুপ্রফেন টেবলেট,কফের সিরাপ কন্টিনিউ করেছি।তারপর আদা,রসুন,তেজপাতা,লবঙ্গ জ্বাল করে পানি খেয়েছি।বারবার এই পানি গুলো শরীরের ভিতরে ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করেছে এবং চূড়ান্ত প্রদাহ থেকে মুক্তি দিয়েছে বলেই আমার বিশ্বাস।এর মাঝে চতুর্থ দিন এম্বুলেন্স কল করলেও তখন পর্যন্ত শ্বাস প্রশ্বাসের খুব বেশী কষ্ট না থাকায় তারা বাসায়ই থাকতে বলে এই কারণে যে হসপিটাল তখন ধারণক্ষমতার বাইরে চলে গিয়েছে।তাই একেবারে চূড়ান্ত ধাপের ছাড়া তারা কাউকেই হসপিটালে নিচ্ছে না।এভাবে সপ্তম দিন গিয়ে অবস্থা আরও খারাপ হল,জ্বর বেড়ে প্রায় ১০৫ এ চলে গেলো।সাথে শ্বাস কষ্ট এবং ডাইরিয়া।ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার হাইদ্রক্লরনিক ট্যাবলেট এবং এজিথ্রমাইসিন দেয়।যা করোনার চিকিৎসায় সেদিন ই অনুমোদন পেয়েছিল।কিন্তু এর সাইড এফেক্ট এতোটাই ভয়ানক হতে পারে যে নিকট ভবিষ্যতে একজন মানুষ তার যে কোন অঙ্গকে পঙ্গু হয়ে গেছে এমন দেখতে হতে পারে। তাই সবকিছু ঘেঁটে ঔষধ কে ছুড়ে ফেলে নিজের মনোবল আর নিজস্ব চেষ্টার উপর নজর দিলাম।
১১ তম দিনে আইবুপ্রফেন ছেড়ে দিলাম,বাদ দিলাম সিরাপও কিন্তু গ্যাস্ট্রিক এবং ডাইরিয়া তখন পেটের ভিতরে এক ব্যাপক যুদ্ধ শুরু করে দিলো।বাধ্য হয়ে ইস্মপ্রাজল,আদা,এন্টাসিড খেলাম।দুই দিন কন্টিনিউ করলাম।১৭/১৮ দিনের দিন থেকে ভালো অনুভব করা শুরু করলাম।
আস্তে আস্তে মনে হচ্ছিল যেন পুনর্জীবন ফিরে পেলাম।চোখের সামনে থেকে একটি যুদ্ধকে উপলব্ধি করলাম আর জীবনের পূর্ববর্তী রোগগুলোর সাথে তুলনা করে দেখলাম কতটা ভয়ঙ্কর যন্ত্রণার এ রোগ কিন্তু সেই সাথে এও দেখলাম যে এটা ভালো হয়ে যাওয়ার মত অন্য দশটা রোগ ভিন্ন আর কিছুই না।
মনোবল আর সচেতনতাই এর অন্যতম বড় ঔষধ।
প্রথম পর্বে একটি চমৎকার উদাহরণ দিতে ভুলেই গিয়েছিলাম।এক স্ত্রী তার করোনা আক্রান্ত স্বামীর পূর্ণ সেবার পর তার স্বামী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠার পরও স্ত্রী আক্রান্ত হয় নি।সাহস সঞ্চারের জন্য এই বাস্তবতাটি কম শক্তিশালী উদাহরণ নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:২৯
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন পারাবার: শঠতা ও প্রতারণার উর্বর ভূমি

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪০


অনার্সের শেষ আর মাস্টার্সের শুরু। ভালুকা ডিগ্রি কলেজের উত্তর পার্শ্বে বাচ্চাদের যে স্কুলটা আছে (রোজ বাড কিন্ডারগার্টেন), সেখানে মাত্র যোগদান করেছি। ইংরেজি-ধর্ম ক্লাশ করাই। কয়েকদিনে বেশ পরিচিতি এসে গেল আমার।

স্কুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×