অনেক দিন পর গাঁয়ে বেড়াতে এসেছি। গাঁয়ের শান্ত স্নিগ্ধ রূপ আমাকে মুগ্ধ করে। ঐ পাখির কলতান, মাটির সোঁদা গন্ধ আমাকে অনাবিল শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। এই গাঁ, আমার পিতৃপুরুষের ভিটে-মাটি আমাকে যেন এক প্রচন্ড মায়ার বাঁধনে বেঁধে রেখেছে।
আজ ভোরে গাঁয়ের পথে হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। হাঁটতে হাঁটতে পৌছে গেলাম নদীর ধারে। এই সেই নদী যার সাথে কেটেছে আমার শৈশব, কৈশর।
একটু ক্ষন দেখে চলে আসছিলাম। হঠাৎ শুনি, কে যেনো আমায় বড় আক্ষেপের সুরে আমায় বলছে,"এতদিন পর এলে, এখনি চলে যাবে?"
-কে? কে ডাকে আমায়?
-আমাকে চিনলে না বুঝি? আমার সাথে কত খেলেছো। খেলতে খেলতে কত দিন আমার কাছে ঘুমিয়ে পড়েছো। আমাকে তোমার কত কিছুই না বলার ছিল। আর আজ আমাকেই ভুলে গেলে।
কথার মাঝে কী যে মায়া! আবার বসে পড়ি। কতটা সময় পার হল জানি না। আমি হাতে ঘড়ি পরি না, সাথে মুঁঠো ফোন ও আনিনি। কোন অতল ভাবনায় ডুবে গিয়েছিলাম। ডাক শুনে চমকে উঠি।
ও গলা তো ভোলার নয়। সেই পুরোনো ডাক- অহনা!
-কি?
-চিনতে পেরেছো?
-তোমাকে ভুলবো কি করে?
-তোমার সবকিছু মনে আছে?
-কি?
-তোমার আমার সেই সব দিনের কথা। আমাদের বন্ধুত্বের কথা, আমাদের ভালবাসার কথা!
-হুম, কিছুই ভুলিনি আমি।
-তোমার অনেক আগে আসার কথা ছিল। আমাকে তুমি কথা দিয়েছিলে কাজ শেষ করেই আমার কাছে একেবারে চলে আসবে। আর কখনো আমাকে ছেড়ে যাবে না। তুমি তোমার কথা রাখনি।
কন্ঠে প্রচ্ছন্ন অভিমানের সুর!
ফিরে চলে যাই বিশ বছর আগের সেই দিনে যেদিন আমি আমার প্রাণপ্রিয় বন্ধুটিকে কথা দিয়েছিলাম খুব শীঘ্রই ফিরে আসার। যে কথা আমি রাখতে পারিনি।
-অহনা!
-কি?
-কিছু বলছ না যে?
-কি বলব? সে অনেক কথা। শুধু এটুকুই বলি আমি তোমাকে ঠকাতে চাইনি। আমি ফিরে আসতে চেয়েছিলাম তোমার কাছে। পথে অনেক বাঁধা ছিল। তবুও আসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এ সমাজ, সংসার আমাকে আসতে দেয়নি। আমি তো মেয়ে। জান তো মেয়েদের পদে পদে বাঁধা।
-বিয়ে করেছো?
-করেছি। আমার পতি দেবতাটি খুব সজ্জন লোক। ফুটফুটে একটি মেয়ে আছে আমার। লোক-লৌকিকতার বেড়াজালে আমি ভালোই আছি।
তুমি কেমন আছ?
-আমিও ভালো আছি। অনেক অনেক বছর আগে ঐ দুর পাঁহাড়ের কোল থেকে জন্ম নিয়ে আজ অবধি ছুটে চলেছি সাগরের পানে। এত গুলো বছর ধরে এতটা পথ পারি দিয়ে আমি পৌছেছি সাগরসঙ্গমে। ঐ যে দিগন্তরেখা দেখা যায়, তার ওপাশে মোহনায় আমরা দু'জন ভালবাসার ডোর বেঁধেছি।
শুনে তৃপ্ত হই। দেখতে দেখতে কখন যে বেলা পড়ে এসেছে টের পাইনি। এবার আমাকে ঘরে ফিরতে হবে। ওখানে আমার জন্য অপেক্ষা করছে আমার স্বামী-সন্তান। আমিও যে ওদের সাথে ভালবাসার ডোর বেঁধেছি।
-এবার আমায় ফিরতে হবে। আর কখনো দেখা হবে কিনা জানি না। ভালো থেকো।
-বিদায় বন্ধু।
-বিদায়।।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৫৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



