-আমি বিশ্বাস করি না, নীলা আবার বলল।
-ভালবাসলে আমাকে এত কষ্ট দিতে পারতে না।
-প্লিজ মাফ করে দাও। আর কখনো এমন করবো না।
-তোমাকে নিয়ে পারি না। অনেক হয়েছে। আর মাফ চাইতে হবে না।
-এখানে অনেক গরম। চল অন্য কোথাও যাই।
হাঁটতে হাঁটতে বকুল গাছটার নিচে এসে বসে। জায়গাটা নীলার খুব প্রিয়। কার্জন হলের এদিকটা বেশ নিরিবিলি। মৃদু-মন্দ বাতাস বইছে। সামনের পুকুরটায় কতগুলো হাঁস জলকেলী করছে। চুলের ক্লিপটা খুলে ব্যাগে রাখে।
অয়নের দিকে তাকায় সে। গাঢ় সবুজ ফতুয়াটা ওকে খুব মানিয়েছে। ওর ঐ এলোমেলো চুল, শ্যাম বর্ণ মুখ, রোদে পোঁড়া তামাটে দুটো পুরুষালী হাত, পাগল করা মায়াবী চেহারা, খুব সুন্দর দুটো চোখের তারায় বুদ্ধির দীপ্ত ঝিলিক- বারবার দেখেও যেনো আঁশ মেটে না।
-কি দেখছো অমন করে? অয়নের প্রশ্ন শুনে সম্বিত ফিরে।
-কিছু না, মুচকি হেসে উত্তর দেয়।
-একটা কথা বলব?
-কি কথা?
-আমি তোমাকে ভালবাসি।
অয়নের চোখে চোখ রাখে। এভাবে কতক্ষণ কেটে যায়, তা দুজনের কেউই জানে না। হয়তোবা জানার প্রয়োজনও মনে করে না।স্বর্গীয় প্রেম হয়তো তাদের এই ব্যস্ত পৃথিবীটাকে ভুলিয়ে দেয়।
তিন বছর পর।
রান্নাঘর থেকে নীলা ক্লান্ত শরীরে বের হয়ে আসে। ঘামে ভেজা ফর্সা মুখটা লাল হয়ে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অয়ন অফিস থেকে ফিরবে। আসার সাথে সাথেই ওর চা চাই।
আবার যদি দেখে এখনও ওর গোসল হয়নি, তবেই হয়েছে। নোংরা-ময়লা ও একেবারেই সহ্য করতে পারে না। দ্রুত ঘরটা ঝাঁট দিয়ে গোসল সেরে আসে। চায়ের কেটলীটা চুলায় বসাতেই কলিং-বেল বাজে।
-এতক্ষণ লাগে দরজাটা খুলতে?
-রান্নাঘরে ছিলাম।
-রান্নাঘরে ছিলাম! রান্নার যা শ্রী! মনে হলেই ঘেন্না লাগে।
নীলা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। বিয়ের আগের কথা মনে পড়ে যায়।
[-আমি কিন্তু রাঁধতে জানি না।
-এটা কোনো ব্যাপার হল? রান্নার লোক রেখে দিব।
-তোমার টাকা খরচ হবে।
-টাকার কথা বোলো না তো। গুলশানে একটা নতুন রেস্টুরেন্ট হয়েছে। চল সেখানে যাই।]
-হা করে কি দেখছো? তোমার এসব ঢং ভাল লাগে না। যেখানে ছিলে, সেখানে যাও।
ঢং ঢং ঢং।
ড্রয়িং রুমের ঘড়িটা রাত বারটা বাজার সংকেত দেয়।
সবকিছু গুছিয়ে বেডরুমে আসতেই অয়ন ওর হাতটা ধরে কাছে টানল। স্বামীর অধিকার সে কড়ায়-গন্ডায় আদায় করে নেয়।
হালকা নীল আলোয় ঘরটা ভরে আছে, যেনো জোছনা নেমেছে। হঠাৎই নীলার ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। চোখ মেলতেই দেখে দুটো হিংস্র চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে। গলায় সারাশীর মত চেপে বসেছে আঙ্গুল গুলো। চাপটা দ্রুত লয়ে বাড়ছে। এক সময় নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। কিন্তু তখনও তার শান্ত-স্নিগ্ধ চোখ অপলক তাকিয়ে থাকে ঐ হিংস্র চোখের দিকে। যেন তারা নি:শব্দে বলে যায় সেই একই কুহক-
আমি তোমাকে ভালোবাসি!!!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৪২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



