বিরক্তি নিয়ে ফিরে তাকাই। দশ-বারো বছরের ছেলেটা। শীর্ণকায শরীর, বুকের হাড়গুলো গোণা যায়।মায়া ভরা মুখটার দিকে তাকাতেই বুকের ভিতরটা হুহু করে উঠে। ক্ষণিকের জন্য হারিয়ে যাই সুদুর অতীতে।
কলেজ থেকে হেঁটে বাসায় ফিরছিলাম সেদিন। তিনটা বাজে। দুপুরবেলা মতিঝিল আইডিযালের পাশের রাস্তাটা বেশ শাণ্ত। হঠৎ দেখি একটি হত-দরিদ্র ছেলে ফুটপাথে বসে কি যেনো করছে। কাছে যেতেই দেখি একটি পলিথিনে পোলাও আর রোষ্ট গোছের কিছু। রোষ্ট! ঐ গরিব ছেলেটা রোষ্ট পাবে কোথা থেকে? আবার ফিরে তাকাই। অবাক হয়ে দেখি- সবই যে অন্যর মুখের উচ্ছিষ্ট খাবার। হয়তো কাছাকাছি কোথাও কোনো রেষ্টুরেন্ট থেকে সে ওগুলো এনেছে। তার চোখে-মুখে সে কী আনন্দ!
মনটা গুমরে কেঁদে উঠে। আমার সাথের কত মেয়েকে দেখেছি খাবার নিয়ে কত বিলাসীতা করতে। এটা খাব তো ওটা খাব না। স্যারের কাছে পড়তে গিয়ে দেখতাম আমার সাথের ভিকারুননিসা, আইডিয়ালের মেয়েদের শত রকমের বাযনা। যে যত ধনীর দুলালী, তার বায়না তত ভয়ানক!
ঐ যে সামনে আইডিয়াল ষ্কুল। তার ভিতর হাজারো ধনীর সন্তান। তারা প্রতিদিন যে কত-শত টাকা নষ্ট করে তার ইয়ত্তা নেই। অথচ তারই পাশে কমলাপুর বস্তিতে ঠিক তার উল্টো চিত্র। সেখানে দু'বেলা দু'মুঠো খাবারের জন্য ঐ একই বয়সের বাচ্চাগুলো দিন-রাত সংগ্রাম করে। কখনো খেতে পায, কখনোবা পায় না। মাঝে মাঝে যাও জোটে তা হল এরকম অন্যের মুখের উচ্ছিষ্ট খাবার। এ যেনো ঠিক প্রদীপের নিচে অন্ধকার!
"আফা, দেন না দুইডা ট্যাহা।" ডাক শুনে সম্বিত ফিরে আমার। বাস টাও চলে এসেছে। ব্যাগ খুলে পাঁচ টাকার একটা নোট তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বাসে উঠে পড়ি। তখন নিজেকে খুব ছোট মনে হয়। আমিতো চাইলে তাকে কোথাও নিয়ে ভালো কিছু খাওয়াতে পারতাম! দেরীতো আমার হয়েইছিলো। কী এমন ক্ষতি হত একদিন অফিসে না গেলে!
নিজের এই ক্ষুদ্রতাটুকু ত্যাগ করতে পারি না বলেই হয়তো ঐ অসহায় শিশুগুলো প্রতিদিন জীবনের সাথে যুদ্ধ করে। কেউ কেউ হয়তো জিততে পারে, কিন্তু বাকি সবাই পথের কলির মত পথেই ঝরে পড়ে।।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১২:২৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



